​আমাদের সামনে অনেক বিপদ

Post a Comment


আমাদের সামনে অনেক বিপদ। আমরা যতক্ষণ বড় কোন বিপদে না পড়ি, ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝি না আমরা কত ভালো ছিলাম। এ কথাগুলো শঙ্কা না জাগালেও এগুলোই বাস্তব। কেন বললাম তা আমি এখনই স্পষ্ট করে বলছি...

এই কথার স্পষ্টতা দেখতে পাওয়া যাবে আমাদের ইতিহাসে। বিভিন্ন জায়গায় পড়তে গিয়ে দেখি অনেক বড় বড় দার্শনিকেরা মানুষকে ইতিহাস শিখতে বলেন। ইতিহাস আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, শেখায়। অথচ মুসলিমদের আল্লাহ দিয়েছেন কুরআন, তাতে রয়েছে নবীদের কাহিনী এবং আরো নানান রকম ঘটনা যা থেকে আল্লাহ 'শিক্ষা' রেখেছেন 'চিন্তাশীলদের' জন্য। এই চিন্তাশীল হওয়াটাও আমাদের দায়িত্বের মাঝে পড়ে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন, শ্রেষ্ঠ সময় সেই সাহাবী এবং পরবর্তী তাবিঈন ও তাবে'তাবিঈদের জীবন জানাটাও আমাদের মূল জ্ঞানার্জনের অন্তর্গত-- সেটা একটা জ্ঞানময় ইতিহাস, শিক্ষা ও অনুপ্রেরণায় ভরা। আমরা খুব কম, খুবই কম মানুষ এগুলোকে আগ্রহভরে পড়ি। বাঁচতে পড়িনা হয়ত, পড়ার জন্য পড়ি।



কথাগুলো বলছিলাম যে কারণে সেটা হলো। এই ইতিহাসের পথপরিক্রমায় আছে সোনালী সময়। একটা সময় ইসলাম এই গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে গিয়েছিলো। স্পেন, গ্রানাডা, চীন, শ্রীলংকা, বসনিয়া, সার্বিয়া, অস্ট্রেলিয়া--কোথায় নেই আজ ইসলামের বাণী? পৃথিবীর শীতলতম স্থানগুলোর অন্তর্গত রাশিয়ার ও বেশ ক'টা জায়গা দেখলাম মুসলিমদের নামকরণে। সেই ইতিহাস! একসময় স্পেন-গ্রানাডা থেকে মুসলিমদের হত্যা করে বের করা হয়েছিলো। ক্রুসেডের সময় রক্তের স্রোত বয়ে গিয়েছিলো অজস্র শহরে। লাখে লাখে মুসলিমের রক্তে বন্যা বয়েছিলো। কেন? আল-আকসা মুসলিমদের হয়েছিলো উমারের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সময়ে, হয়েছিলো সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর (রাহিমাহুল্লাহ) হাতে। এরপর একটা সময় পরে আবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। আজকেও পত্রিকায় পড়লাম একজন ফিলিস্তিনী বোনকে গুলি করে মেরেছে ইসরাইলি সেনারা ঠিক যেন পাখি মারার নিশানা অনুশীলন! মনে পড়ে উমারের(রা) বলা সেই কথাটি--“জাহিলিয়াতের প্রকৃতি অনুধাবনে ব্যর্থতা শুরু হলে একে একে ইসলামের বন্ধনী বিচ্ছিন্ন হতে থাকবে।”[১]

আমাদের এই মাটিতে আমরা খুব সুখে আছি না? এইতো খুব বেশি সময় আগে না, একশ বছর হয়নি এই মাটিতে মুসলিমরা নিকৃষ্টভাবে নির্যাতিত হতো। ১৮৫৭ এখনো দু'শ বছর হয়নি। হাজারে হাজারে আলেম-মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছিলো সিপাহী আন্দোলন করার জন্য। তারা মুক্তি চেয়েছিলেন মানবতার। ফরায়েজি আন্দোলনে হাজী শরীয়তুল্লাহরাও ফরজ পালনের সুযোগটুকু নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। এমন লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তভেজা মাটির উপরে দাঁড়িয়ে আমরা এখন ভুলে গেছি কোথায় আছি আমরা।

তবে এমনটা বেশিদিন থাকবে না, লক্ষণ তেমনই বলে। আমাদের এদেশের মুসলিমরা প্রচুর ভাগে বিভক্ত। বিভিন্ন মানহাজ, দল, মত, পীর-হুজুর, আকীদা, সংগঠন, তরীকতে বিভক্ত এই জনসাধারণে আমাদের মাঝে "এলিট" ফিলিংস বড্ড প্রকট। "আমরাই সহীহ" মানসিকতা দিয়ে অন্যদের বিচার করে তুলোধুনো করছি যখন, খেয়ালই নেই আমাদের এই 'কাউলাকাউলির' মূল সুযোগ নিচ্ছে সেকুলার-ইসলামবিদ্বেষীরা। আমাদের মাটিতে অনেক আগে থেকেই নীলনকশা চলছে ইসলামকে মূলোচ্ছেদ করার জন্য। এমতাবস্থায় আগামী প্রজন্মের জন্য শুধুমাত্র তাওহীদের বাণীকে জারী রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকলেও আমাদের উচিত পারস্পারিক ঐক্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া।

আমাদের আলেমরা অনেক বড় মানুষ। দ্বীনের ইলম খুব সহজ বিষয় নয়। আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেন, কেবল তাকেই সে সুযোগ দান করেন। ভুলত্রুটি সবারই থাকে, থাকবেই। কিন্তু আলেমদের, দা'ঈদের জীবন হলো কল্যাণময়তার জীবন। তারা আমাদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচানোর কাজটি জানপ্রাণ দিয়ে করেন। আমরা তাদের কাছ থেকে শিখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা। নিজের পছন্দের শাইখ/হুজুর/নেতার বিপরীতের কেউ কিছু করলে তাকে তেড়েফুঁড়ে গিয়ে মজা নেয়ার মানসিকতা আমাদেরকে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। আমাদের এই অনৈক্য ও ক্যাচালের বেনিফিশিয়ারি আমাদের মাটির নাস্তিক-মুরতাদ-ইসলামবিদ্বেষী-মুনাফিকের দল।

আমাদের মাঝে, বিশেষ করে অনলাইন কমিউনিটিতে "মজা নেয়ার' টেনডেন্সি চালু হয়ে আছে। আমরা নিয়মিত মজা নিই। নতুন নতুন ইস্যুতে পোস্ট দিয়ে সরগরম করে রাখি। এদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হাতিয়ে নিয়ে কী ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে জানিনা, আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য আজ ভরে যাচ্ছে শির্ক দিয়ে। এসবের মাঝে ডুবে শিশুরা বড় হচ্ছে। আমাদেরই ছোট ভাইবোনেরা ইসলামের ন্যুনতম শিক্ষাগুলো থেকেও যোজন-যোজন দূরে রয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা বাগাড়ম্বর করে, ফেসবুকে কাউকে ডুবিয়ে, ছোট করে, গালি দিয়েই তৃপ্তির ঢেঁকুড় তুলছি। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কথাটা আমার মনে পড়ে যায়, তিনি বলেছিলেন, "যতক্ষণ তোমার ভাইয়ের বলা কোন কথার ব্যাপারে তোমার কাছে ভালো কোন ব্যাখ্যা আছে ততক্ষণ  কোন খারাপ ধারণা পোষণ করবে না।"[২]

ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে আমার মতন বান্দা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, এই কওমের ভবিষ্যত বড় শঙ্কাময়। আমরা যদি শীঘ্রই প্রত্যেকে নিজেদের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে এই ধ্বংসস্তূপের সমাজে মুসলিমদের মাঝে ঐক্য গড়ে সামনে এগিয়ে যেতে না পারি তবে আমরা হয়ত রক্তাক্ত কোন ভুখন্ডে পরিণত হবো যারা ঈমানটুকু টিকিয়ে রাখতেই সর্বোচ্চ বিপদের সম্মুখীন হবে। আল্লাহ আমাদের জাতিকে রক্ষা করুন, আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাজত করুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের উপরে বিজয়ী হবার তাওফিক দিন।

# রেফারেন্স:
[১] ইসলামী পুনর্জাগরণ সমস্যা ও সম্ভাবনা, শাইখ ইউসুফ আল কারাদাওয়ি, পৃ-৬৯
[২] মাজমু' ফাতাওয়া, বিন বাজ, ২৬/৩৬৫

* * * * *
গোধূলীবেলা। ঢাকা।
০১ ডিসেম্বর, ২০১৪

Related Posts

: