গেলে বাবা পাবে না।
.
ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো সুমন ! তার
,স্ত্রী অপর্না ব্যাগ গুছিয়ে রেডী
হচ্ছে।
: কি হলো? ব্যাগ গুছাচ্ছ কেনো?
কোথায়, যাচ্ছ?
: কই আবার ? আমার বাবার বাড়ি
যাচ্ছি!
: কেন?
: কেন তুমি বুঝো না? গত এক মাস ধরে
বলছি তোমার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে
পাঠিয়ে দিতে, তা তো তোমার
কানেই যায় না! এই বাড়ীতে হয়
তোমার বাবা থাকবে নয় আমি
থাকবো!
: বাবা থাকলে সমস্যা কি? (মিনমিন
করে বললো সুমন)
: তোমার বাবার কাশির শব্দে ঘুমাতে
পারিনা! কি দরকার এই বুড়ো টাকে
বাড়িতে রেখে? পাঠিয়ে দাও
বৃদ্ধাশ্রম। রুমটা ভাড়া দিলেও তো কিছু
টাকা পাওয়া যেতো!
অপর্নার কথা শুনে তাজ্জব বনে যায়
সুমন ! ভালবেসে বিয়ে করেছিল
অপর্নাকে। শিক্ষিত, সুন্দরী সব গুনই
ছিলো অপর্নার মধ্যে। সুমনের মা মারা
গেছে অনেক আগেই।
সুমন ছিলো একমাত্র ছেলে। সুমনের
মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে
করেননি ওর বাবা। সরকারি একটা
চাকরি করতেন তিনি।
: কি হল কথা বলছো না কেনো?
স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছিল সুমন। অপর্নার,
কথায় চমকে উঠলো।
: কি বলবো ?
: কি বলবো মানে, তোমার কি
সিদ্ধান্ত
বলো?
: সিদ্ধান্ত! আমি বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে
পাঠাবো না, এইটাই সিদ্ধান্ত! (জোর
দিয়ে বললো সুমন)
: আচ্ছা। থাকো তুমি তোমার বাবাকে
নিয়ে আমি চললাম !
ব্যাগ নিয়ে হনহন করে করে বেরিয়ে
গেলো অপর্না! সিদ্ধান্তহীনতায়
ভুগছে সুমন ! একদিকে বিবাহিত স্ত্রী
অন্যদিকে জন্মদাতা পিতা।
ধীর পায়ে বাবার রুমে এসে ঢুকলো সুমন ।
তখনই, মনে পড়লো বাবা কিছুদিন যাবত
অসুস্থ! বাবা বিছানায় শুয়ে আছে।
বিছানার পাশের চেয়ারে বসলো সুমন ।
বাবাঃ সুমন ! (ক্ষীণ কন্ঠে ডেকে
উঠলো সুমনের বাবা)
: জী বাবা?
: ইকটু পানি দিবি বাবা?
টেবিল থেকে পানি এনে দিলো সুমন।
: বুকের ব্যথাটা খুব বাড়ছে বাবা!
: আচ্ছা, কাল সকালে ডাক্তারের
কাছে নিয়ে যাবো।
: সকালে না তোর অফিস থাকে?
: একদিন অফিসে না গেলে কি হবে?!
পরম যত্নে বাবার গায়ের কাথাটা
ঠিক করে দিল সুমন। ঠিক যেমনিভাবে
তার বাবা ছোটবেলা সুমনের কাথা
ঠিক করে দিতো। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নিয়ে নিয়েছে সুমন।
বউ গেলে বউ পাবে, কিন্তু বাবা
গেলে বাবা পাবে না।
: