মুখ দেখে মানুষ চেনা যায়না

Post a Comment

ভালো মানুষেরা কখনই বলে বেড়াই না যে সে ভালো।
তারা ক্রেডিট নিতেও চাই না, কিন্তু খারাপ কিছু ধান্দাবাজ লোক অন্যের ক্রেডিট নিজের বলে চালিয়ে দেবে।
আপনি বুঝতেও পারবেন না যে সে খারাপ লোক। কারন তার কথায় বেশ পটু হয়।
যাই হোক আজকের গল্প শুরু করি।
অটোতে করে একটা কাজে যাচ্ছিলাম।
একটু পরেই একটা মেয়ে হাত নেড়ে অটো থামালো।
মেয়েটা উঠে আমার পাশের সিটটাতে বসল। কিউট একটা মেয়ে। সুন্দর করে চুলগুলো আঁচড়ানো।
একটু পরপরই আমার হাতের হ্যান্ডসেটটার দিকে তাকাচ্ছে।
না, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। ও আসলে একটা বাচ্চা মেয়ে। বয়স হয়তো ছয় বছর হবে।
আমি বললাম "বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছো কিছু বলবে?"
মেয়েটি হাসি দিয়ে বলল "আমার বাবার ফোনটাও আপনারটার মত আংকেল।"
মেয়েটার মুখে সুন্দর করে আংকেল ডাক শুনতে ভালোই লাগলো। বললাম "কোথায় যাবে?"
বলে "যেখানে অটো থামবে সেখানে। আটো ড্রাইভার আংকেল আমার বাবাকে চেনে। বাবা ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য"।
বাহ! মেয়েটাতো ভারী সুন্দর করে কথা বলতে পারে। কথা বলতে বলতে অটোর গন্তব্য শেষ। আমিও নামলাম, নামলো মেয়েটাও।
একটু দূরেই দেখি আমার পুরনো একটা ফ্রেন্ড দাড়িয়ে আছে। কাছে যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরল।
অনেক দিন পর দেখা আপ্লুত হয়ে বলে - কতদিন পর দেখা। কেমন আছিসরে?
  • ভালোই। তুই কেমন ?
  • আমিও ভালো। আচ্ছা তুই ওই অটোটা করে এলিনা?
  • হ্যা।
  • ওটাতে একটা বাচ্চা আসার কথা।
  • একটা বাচ্চা এসেছে। তোর কি হয়? ছোট বোন?
  • আরে না।
  • ভাতিজি?
  • না।
  • তাহলে?
  • ও আমার মেয়ে। আমার পৃথিবী।
বেশ অবাক হলাম!
বললাম, বলিস কি তুই বিয়ে করেছিস। আবার এতবড় একটা মেয়েও!
ততক্ষনে পাপা বলে মেয়েটা দৌড়ে এসে ওর বাবাকে আঁকড়ে ধরলো। বেশ শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। বুকের সাথে মিশিয়ে নিল বাচ্চাটাকে।
একটা হোটেলে ঢুকলাম। বাচ্চাটা খাচ্ছিল। বন্ধুর মুখটা বেশ মলিন। আমার সিটে ওকে ডেকে আনলাম যাতে বাচ্চাটা যেন কিছু না শোনে।
বললাম, আসলে মেয়েটা কে? কেন যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা তোর মেয়ে!
"আসলে আমার দাদার মেয়ে। ওর মায়ের বিয়ের পাঁচ মাস পর ওর বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
ওর ভাগ্যটা এতই খারাপ যে, জন্মের সাত মাস পর মাকেও হারায়। তুইতো জানিস আমার বাবা মা নেই। আমি তখন একা আর ওর ববাতো পাগলই।
সবাই যখন মেয়েটাকে অন্য কাউকে দেবার কথা ভাবছে। কেউ কেউ নেবার জন্য এসেছিলও।
কেন যেন আমার কাছে খুব কষ্ট লেগেছিল। আমি কাউকে দেইনি ওকে। নিজের হাতে ওকে বড় করতে লাগলাম।
আজ ও এত বড় হয়েছে। বুঝতে শেখার পর থেকেই ওর বাবাকে দেখলে ভয় পায়। আমাকেই বাবা বলে ডাকে।
জানিস আমাকে যখন বাবা বলে ডাকে আমি সব কিছু ভুলে যাই। ও এক নাগাড়ে বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।
মেয়েটা উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলে "কাঁদছো কেন পাপা?"
কোনভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল "কিছুনা মা। চোখে কি যেন পড়েছে"।
বাচ্চা এই মেয়েটা বাবাকে ওড়না মুখে নিয়ে ফুঁ দিয়ে গরম করে চোখ মুছে দিচ্ছে।
আমি একটি কথাও বলতে পারিনি। চুপচাপ বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ঠিকানাটা রেখে দিলাম। অবশ্যই সময় অসময়ে যাবো।
মেয়েটার প্রতি আমারও বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছে।
ভালো মানুষকে, পরিস্থিতি আমাদের সামনে তুলে ধরে। কখনো কখনো ভালো মানুষের মানুষিকতা প্রকাশের জন্য কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়না।
আর আমরা জানতেও পারিনা চোখের সামনে থাকা একটা মানুষও হতে পারে মহত্বের প্রতীক।

Related Posts

: