এটা একটা প্রেমের কাহিনি -৩য় পর্ব

Post a Comment


valobashar golpo, ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প ভালবাসার গল্প

এটা একটা প্রেমের কাহিনী – ২য় পর্ব এর লিংক

আজ থেকে মবিন তার নতুন স্টুডেন্ট অভিকে প্রাইভেট পড়াতে শুরু করে, অভির সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে ওর পড়ালেখার কি অবস্থা, সিলেবাসে কি আছে, ও কেমন পারে ইত্যাদি খোজ খবর নিচ্ছে। এমন সময় একটা মেয়ে মবিনের পিছনে এসে দাড়ায়, মেয়েটা দুইটা কাশি দিয়ে মবিন কে আওয়াজ দেয়। মবিন পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে হাতে হাত বেঁধে, ঘাড় বাকিয়ে রুদ্রমূর্তি ধারন করে দাঁড়িয়ে আছে, যেন অনেকক্ষণ যাবত  ওকে সহ্য করছে, ছাড়া পেলে এখনই মবিনকে তুলধুল করবে।  মবিন হা করে তাকিয়ে আছে, যেন ও ভুত দেখছে, কিন্তু এটা ভুত না মবিনের ক্লাসমেট আইরিন। আইরিন নীরবতা ভেঙ্গে বলতে শুরু করে= কি ব্যাপার তুমি আমার ফোন কল রিসিভ করছ না, ম্যাসেজ রিপ্লে করছ না, ব্যাপার কি?
মবিন= তুমি এখানে কেন? দেখ এখানে কোন সিন ক্রিয়েট করবে না, এখানে আমি পড়াতে এসেছি।
আইরিন= জানি, আমার ছোট ভাই অভিকে পড়াতে এসেছ।
মবিন= মানে?
আইরিন= মানে এটা আমারই প্ল্যান, তুমি আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চাও তো? তারই ব্যাবস্থা করলাম। এখন থেকে আমাদের প্রতিদিন সাক্ষাৎ হবে, দেখা হবে, কথাও হবে। বুঝলে চান্দু।  

আইরিন ওর ছোট ভাই আবিরের দিকে তাকিয়ে আদেশ সূচক ভঙ্গিতে বলে= এই কিচেনে এক কাপ কফি রাখা আছে, নিয়ে আয়।
আইরিন আবার মবিনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে= শুনো তোমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়েছি, কফিটা খেয়ে একটা পিক তুলবা তাপর ফেইসবুকে পোস্ট করবা, ক্যাপশন দিবে তোমার গার্লফ্রেন্ড তোমাকে কফি বানিয়ে খায়িছে। মনে থাকে যেন। কথাটা বলেই পিছন দিকে ফিরে হাঁটতে শুরু করে আইরিন।

মবিন কিছুক্ষন থ হয়ে তাকিয়ে থাকে আইরিনের দিকে, পর মুহূর্তেই পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে নাভিদ কে একটা ফোন দেয়= কি হল ভাই এটা??
নাভিদ কোন কথা না বলে হাসতে থাকে।
মবিন আবারও প্রশ্ন করে= আপনে আগে থেকেই জানতেন এটা আইরিনদের বাসা?
নাভিদ= আসলে আইরিন তোমাকে অনেক পছন্দ করে, এই কারণে ও আমার সাথে মিলে এই প্ল্যান টা করছে।
মবিন= আর আপনেও রাজি হয়ে গেলেন!!
নাভিদ= কেন?? আইরিন কে কি তোমার ভালো লাগেনা??
মবিন= আপনে কি পাগল!!! আইরিন তো কোন মেয়েই না, একটা জংলী, একটা ফালতু মেয়ে। ওকে আমি লাইক করতে পারি আপনে ভাবলেন কিভাবে? ওকে দেখলেও আমার ঘৃণা হয়।

আইরিন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে নাভিদ ও মবিনের ফোন আলাপ শুনতে থাকে। কথাগুলো শুনার এক পর্যায় আইরিনের চোখ রক্তজবার মত লালবর্ণ ধারন করে, সুভ্র কোমল গাল বেয়ে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। আইরিন এতদিন ভাবত মবিন ওকে শুধু অপছন্দই করে কিন্তু মবিন ওকে এতোটা ঘৃণা করতে পারে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি।



                                        ***
নাভিদ মবিনের সাথে কথা শেষ করে আইরিন আর মবিনকে নিয়ে ভাবতে থাকে। এমন সময় হালিম জিজ্ঞেস করে= ভাই, মবিনের সাথে কি কথা বললেন?
নাভিদ= মবিনের লাভ ম্যাটার নিয়ে।
হালিম= ভাই আপনে ওদের লাভ ম্যাটার স্লভ করেন, আর আমি যে কিনা আপনের রুমমেট, আপনে না থাকলে আপনের মিল তুলি, আমরা এক প্লেটে খাই, এক রুমে থাকি...
নাভিদ= থাক থাক, আমরা এক খাটে ঘুমাই আবার এইসব বলতে যেওনা।
হালিম= তো ভাই আপনে আমার একটু হেল্প করেন
নাভিদ= কি সমস্যা আমাকে বল, দেখি পারি কিনা
হালিম= আমি কেন এখন সিঙ্গেল??
নাভিদ= মানে!!
হালিম= আমি যেই মেয়েকেই পছন্দ করি তার ই বিয়ে হয়ে যায়।
নাভিদ= তার মানে তুমিই সেই বেক্তি যার নজর লাগলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।
হালিম= আরে ভাই সব গুলা পালায়া বিয়ে করেছে। তাও আবার আমার ক্লাসমেট দের সাথে।
নাভিদ= আহা কি!!! কষ্ট তোমার ক্লাসমেট দের সাথে প্রেম করল কিন্তু তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে একবার দেখলনা। এই চোখে কত প্রেম।
হালিম= আরে ভাই বাদ দেন, সত্যিকারের ভালোবাসা কেওই বুঝে না।
নাভিদ= তাই নাকি, প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়ের প্রেমে পর আর তুমি কর সত্যিকারের প্রেম।
হালিম= আরে ভাই আল্লাহ আমার মনটা আকাশের মত বিশাল করে বানিয়েছে। এই কারণে আমার মনে আমি অনেক গুলো মেয়ে কে এক সাথে জায়গা দিতেই পারি।  আচ্ছা ভাই এসব বাদ দেন, এখন আমাকে আইডিয়া দেন, কিভাবে আমি মেয়েদেরকে পটাইতে পারি।
নাভিদ= এই ব্যাপারে তো আমি তেমন কিছু জানিনা
হালিম= আরে ভাই যা জানেন তাই বলেন।
নাভিদ= ওকে আমি তোমাকে দুই চারটা আইডিয়া দেই।
হালিম= ওকে দেন
নাভিদ= প্রথমে সকালে উঠে ক্লোজআপ টুথ পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করবা, তারপর রাস্তায় গিয়ে যেই মেয়েটাকে প্রথমে দেখবা তার সাথে জোরে একটা ধাক্কা খাইবা। তারপর মেয়েটা যখন রাগি রাগি চেহারা করে তোমার দিকে তাকাবে তুমি হা করে তোমার মুখের সুঘ্রাণ ওর নাকে দিয়া দিবা। যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে কাছে এসো গান শুনতে পাও তাহলে বুঝবা তোমার লাইন ক্লিয়ার।
হালিম= আর যদি মেয়েটা আমাকে থাপ্পড় দেয়??
নাভিদ= তাহলে বুঝবা টুথপেস্ট দুই নাম্বার ছিল
হালিম= ভাই এটা কোন আইডিয়া হল, একটা ভালো আইডিয়া দেন
নাভিদ= ওকে ওকে। শোনো একটা ভালো আইডিয়া দেই, সুন্দর করে একটা চিঠি লেখবা, তোমার মনে যত রঙ, যত কাব্যিক প্রতিভা আছে তার পুরটা প্রয়োগ করবা   তারপর দেখবা মেয়ে রাজি না হয়ে কই যায়
হালিম= আমার ভিতরে তো অতো কাব্যিক প্রতিভা নাই।
নাভিদ= সমস্যা নাই, আমাদের বাংলা স্যার কে বলবা, তিনি লিখে দিবেন।
হালিম= তাহলে ভাই এখন আমি কলেজে যাই, বাংলা স্যার কে দেখি রাজি করতে পারি কিনা।
নাভিদ= বেষ্ট অফ লাক



****
কলেজের নতুন টেম্পোরারি টিচার জহিরুল, বাংলা সিক্ষক হিসেবে তিন মাস হল জয়েন্ট করেছে। হালিম প্রত্যেকটা ফ্লোরে ফ্লোরে, রুমে রুমে, ঘুরে ঘুরে বাংলা স্যার কে খুজতে থাকে, হঠাৎ রাধার সাথে দেখা।
হালিম= আরে রাঁধা নাকি? তমারেই তো খুজি মনেমনে
রাঁধা= আমাকে খুজ কেন?
হালিম= একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল
রাঁধা= কি কথা??
হালিম= নাভিদ ভাইরে কি তুমি আগে থেকে চিনো??
রাঁধা= না, তুমি এই কথা জিজ্ঞেস করলে কেন?
হালিম= তোমাদের বাড়ি সুবর্ণগ্রাম না??
রাঁধা= হুম, তো কি হয়েছে?
হালিম= নাভিদ ভাইয়ের গ্রামের বাড়িও সুবর্ণগ্রাম। এখন সত্যি করে বলে নাভিদ ভাইয়ের সাথে তোমার আগে থেকে কোন পরিচয় আছে কিনা?
রাঁধা= আমি নাভিদ কে আগে কখন দেখি নাই।
হালিম= ওকে তুমি এখন যাও।

হালিম এইবার দুই হাতে নিজের মাথা চুলকায় আর একা একা বলতে থাকে= আল্লাহ গো  আমি তো পাগল অইয়া গেলাম, কিছুই বুঝিনা ..................এটা একটা কেমন প্রেমের কাহিনী

 এটা একটা প্রেমের কাহিনি -৪র্থ পর্ব 

Related Posts

: