বিবাহিত জীবন

Post a Comment

গল্পের নাম:- বিবাহিত জীবন 


'এই যে স্বামী ঘুম থেকে উঠেন।'
- হু (ঘুম কাতর স্বামী)
- 'এই যে, এই যে স্বামী, তাড়াতাড়ি উঠেন।'
- 'আর একটু ঘুমাই না?'
- 'না, আর ঘুমানো চলবে না।ফজরের আযানের সময় হয়েছে।'
- কিন্তু তাওহীদ ছায়ার কথা কানে না নিয়েই আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
- 'আচ্ছা ঠিক আছে! কিভাবে ঘুম ভাঙাতে হয় আমার জানা আছে।'
বউয়ের এমন কথা শুনে তাওহীদ বলে
- 'কে বলেছে আমি ঘুমিয়েছি? আমি তো ঘুমের ভাব ধরেছি।'
কথা শুনে ছায়া মুচকি মুচকি হাসছে। তাওহীদ ঘুম ঘুম চোখে ছায়াকে দেখছে।
- 'এভাবে কি দেখছেন?'(লজ্জামাখা সুরে বলে)
- 'আমার বউটাকে দেখছি।'
- 'তাই! সকাল সকাল পটানোর ধান্দা না?'
- 'পটানোর কি আছে! তুমি তো সব সময় পটেয় থাক।'
- 'কিহ, এতো বড় কথা!'(মিথ্যা রাগের অভিনয়)
- 'হ্যা, তা নয়তো কি?'(কাছে টেনে)
- 'ছাড়েন, আমাকে ছাড়েন বলছি।'
- 'না ছাড়ব না ভালোবাসার চাদরে বেঁধে রাখব।'
তাওহীদ ছায়াকে বুকে জড়িয়ে রাখে।ছায়া চুপ করে স্বামীর আদর নিতে থাকে।অনেকটা সময় চলে যাওয়ার পর ছায়া বলে ওঠে
- 'অনেক হয়েছে, এখন ভালোবাসা রাখেন যান অযু করে আসেন।'
- 'জ্বী হুকুম মহারানী।'(কপালে চুমু খেয়ে)
পাখিরা কিচির মিচির করছে। দূরের মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে।ছায়াও অযু করে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাওহীদ অযু করে আসে।তারপর দু'জন এক সাথে নামাজে দাঁড়ায়।
.
আধো আলো আধো ছায়া।এখনও সূর্য উঠেনি। তাওহীদ ও ছায়া সূর্য ওঠার অপেক্ষায় আছে। সূর্যের লাল আভা উঠছে, ছায়া আপন মনে দেখছে।তাওহীদ অপলক দৃষ্টিতে ছায়াকে দেখছে।হঠাৎ ছায়া তাওহীদের দিকে তাকায়।তার তাকানো দেখে ছায়া লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে যায়।কিছু বলতে পারছে না।মনে মনে হাসছে, লজ্জা পাচ্ছে।আবার আড় চোখে তাওহীদকে দেখছে।তাকে অজানা সুখ ঘিরে ধরছে।তাওহীদ ছায়ার দিকে এক নজরে তাকিয়েই আছে।নতুন ভোরের আলোতে সব মরিচিকায় পরিণত হয়।
.
- 'ছায়া, ছায়া, এই ছায়া।'
.
কিন্তু কোথাও ছায়া নেই। তাওহীদের মনে পড়ে ছায়া আর ফিরবে না।ছায়া তাকে ছেড়ে হারিয়েছে না ফেরার দেশে।"ছায়া কখনও ফিরবে না" এই কথাটা মনে হতেই বুকের ভিতরটা হু হু করে কেঁদে ওঠে।বুকের ভিতরটায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নতুন ভোরের আলোর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তাওহীদের চোখে পানি ছল ছল করছে।তার বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।তাকে চারদিক থেকে ব্যথার যন্ত্রনা ঘিরে ধরছে।
রাত্রি আকাশ, তাওহীদ ও ছায়া ছাদের এক কোণে বসে চাঁদ দেখছে।
- 'চাঁদটা কত সুন্দর তাই না?'(ছায়া)
- 'হ্যা, তার থেকেও আরও অনেক সুন্দর চাঁদ আমার বুকে মাথা রেখে আছে।'(তাওহীদ)
.
ছায়া লজ্জায় স্বামীর বুকে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। তাওহীদ পরম আদরে ছায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে।
.
- 'একটা কথা বলব?' (ছায়া)
- 'হ্যা বল।'
- 'যদি মরে যাই আমাকে মনে রাখবেন?'
- 'ঠাসসসস।' (ছায়ার চোখে পানি চলে আসে)
- 'কতবার না করেছি এই কথাটা না বলতে? আর একবার বললে আমি নিজেই মেরে ফেলব।'(তাওহীদ রাগ করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়)
.
ছায়া গালে ব্যথা ও মনে আনন্দ নিয়ে কাঁদছে।
- 'আর কখনও বলব না তবুও রাগ করে থাকবেন না। আমাকে আরও মারেন যা ইচ্ছা তাই করেন।তবুও আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখবেন না।তাহলে আমি মরেও শান্তি পাব না।'
.
ছায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে
- 'আবার মারি? মরে যাওয়ার কথা বল কেন? তোমাকে ছাড়া আমি ছন্নছাড়া।তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।তুমি জানো না? আর কখনও মরে যাওয়ার কথা বলবে না।'
- ছায়া ভেজা চোখে তাওহীদের বুকে মাথা রেখে চুপ করে থাকে।সে যেন সুখের পৃথিবীতে হারিয়ে যাচ্ছে।
একটু একটু ভালোবাসা। অল্প অল্প কাছে আসা। মাঝে মাঝে রাগ-অভিমান করা।কখনও কখনও ভালোবাসার খুনসুটিতে মেতে ওঠা।এভাবেই তাদের দিনগুলি কেটে যাচ্ছিল।হঠাৎ কালো মেঘের ছায়া তাদের জীবনে নেমে আসে।কালবৈশাখী ঝড়ের মতো তাদের জীবনটাতেও ঝড় বয়ে যায়।
.
প্রাইভেট কার দিয়ে তাওহীদ ও ছায়া বাড়ি ফিরছে।দু'জনেই খুনসুটিতে মেতে ওঠে। আবার মুচকি মুচকি হেসে ছায়া বলে
- 'এই যে কি শুরু করেছেন! দুষ্টামি রেখে গাড়ি চালানোতে মন দেন।'
- 'আমি শুরু করেছি না তুমি শুরু করেছ? আমাকে ঠিকমতো গাড়ি চালাতে দিচ্ছো?'
- 'কি এতো বড় অপবাদ আমার নামে?'
- 'অপবাদের কি আছে যা সত্যি তাই বলেছি।'
- 'ঠিক আছে।(ছায়া মিথ্যা অভিমান করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে)
- 'ছায়া, এই ছায়া।'
মিথ্যা অভিমানের ভাব ধরে আছে।
আবার যখন ছায়ার দিকে ফিরে ডাক দিবে তখনেই একটা ট্রাক তাদের কারের সামনে চলে আসে। তাওহীদ সংঘর্ষ এড়াতে গিয়ে খাদে পড়ে।
তিনদিন পর তাওহীদের জ্ঞান ফিরে।কিন্তু ছায়া না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।তাওহীদের জ্ঞান ফিরতেই ছায়াকে খুঁজে।ছায়া নেই এই কথাটা বলতে তার চাচা চাচী সাহস পাচ্ছে না।কিন্তু তাওহীদ যা বোঝার বুঝে নিয়েছে।তার চাচা চাচীকে বলে, 'ছায়ার লাশটা কোথায়?' কথাটা বলতে তাওহীদের গলাটা ধরে আসে।তবুও তাওহীদ কথাটা বলে। তাওহীদ ছায়ার লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখে জল নেই মনে ব্যথা নেই চুপ করে মন ভরে ছায়াকে দেখছে।ছায়া কত শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।
.
মনে মনে ছায়াকে বলছে, 'ছায়া, এই ছায়া কথা বলবে না? আমার সাথে কথা বলবে না? এখনও অভিমান করে থাকবে? এই ছায়া চোখ মেলে তাকাও না! একটাবার আমার সাথে কথা বলো না! তুমি না আমাকে না দেখে একটাদিন থাকতে পারো না? তাহলে এখন কিভাবে পারছ? ছায়া, এই ছায়া একবার তাকাও না! তোমার চোখ দু'টি মন ভরে একটিবার দেখি আমি।'
.
কিন্তু ছায়া কথা বলে না।তার দিকে চোখ মেলে তাকায় না।চুপ করে ঘুমিয়ে আছে। তাওহীদ চুপ করে আছে আর মনে মনে কত কথা বলে যাচ্ছে।কিন্তু ছায়া তার কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না।তাওহীদের চোখে পানি চলে আসে।চোখের পানি মুছে অবাক দৃষ্টিতে ছায়ার দিকে তাকিয়েই থাকে।মনে মনে বলে, 'আল্লাহ আমাকে একা কেন বাঁচিয়ে রাখলে? আমাকেও ঐপাড়ে নিয়ে যেতে।আমি পারব না একা বাঁচতে।'
ঐদিন এর পর থেকে তাওহীদ কেমন যেন হয়ে যায়।তার গুছালো জীবনটা আবার এলোমেলো হয়ে যায়।সব সময় কেমন যেন চুপ হয়ে থাকে।আর ছায়ার সাথে কাটানো দিন গুলোর কথা শুধু ভাবে।সুখের স্মৃতি মনে করে কখনও কাঁদে, কখনও হাসে।আবার কখনও চোখের পানি ঝরে।কখনও চোখের পানি চোখেই থাকে।তার খুব কষ্ট হয়।তার বুকের বাম পাশে চাঁপা একটা কষ্ট হয়। কিন্তু এই কষ্ট কাউকে বলতে পারেনা, কাউকে বোঝাতে পারেনা।শান্তনা পাওয়ার মতো কাছেও কাউকে পায়না।তাওহীদ বুক ভরা কষ্ট নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে আকাশের বুকে তাকিয়ে থাকে।
.
তাওহীদ মনে করে নতুন ভোরের আলোতে, শেষ বিকালের ছায়াতে, জোছনা রাতের আঁধারে ছায়া সব সময় তার সাথে আছে।তাওহীদ মনে করে ছায়া প্রতিটা সময় তাকে কানে কানে বলছে, এখন এটা করবেন কিছুক্ষণ পর ওটা করবেন।তারপর অন্য একটা করবেন।তাওহীদ বাধ্য ছেলের মতো কাজ শেষ করে ছায়াকে বলে, 'ছায়া এই মাত্র এটা শেষ করলাম।এখন এটা করব তারপর ওটা করব।'
.
হঠাৎ মনে হয় ছায়া তো বেঁচে নেই।তাহলে কে তাকে বলছে? কে তাকে শান্তনা দিচ্ছে? সে কার সাথে কথা বলছে? কার কথা মেনে চলছে?
.
এটা মনে হতেই তাওহীদের দু'চোখ বেয়ে পানি ঝরে।কিছু বলতে পারেনা।কিছু করতে পারেনা।শুধু অঝর ধারায় চোখের পানি ছাড়ে।তারপর অবুঝ শিশুর মতো ছায়ার ছবি হাতে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে।আর বিড়বিড় করে বলবে, 'ছায়া, ছায়া, এই ছায়া।' এভাবে এক টানা বলে যাবে।
হঠাৎ রাস্তার এক পাগলের চিৎকারে বাস্তবে ফিরে আসে।ততক্ষণে সূর্যের আলোটা অনেক উপরে ওঠে আসে।পাগলটা চিৎকার করে বলছে, 'ভালোবাসি তোমাকে খুব ভালোবাসি যতদিন বেঁচে আছি বলে যাব তোমাকে আমি ভালোবাসি।' তাওহীদ অনুভব করে তার বেয়ে পানি পড়ছে।চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে এক দৃষ্টিতে সকালের সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
ছায়া হারাবে না।ছায়া বেঁচে থাকবে তাওহীদের হৃদয় জুড়ে।ছায়া বসবাস করবে তাওহীদের নীল পৃথিবীতে।তাওহীদ যতোদিন বেঁচে আছে ততোদিন ছায়াও বেঁচে থাকবে এই দুনিয়াতে।ছায়া হারাবে না, ছায়া হারাবে না, ছায়া বেঁচে থাকবে তাওহীদের মাঝে।
"সময় থাকতে কেউ ভালোবাসার মর্ম বুঝে।আবার কেউ অসময়ে বুঝে তখন কিছু করার আর থাকেনা।এক বুক কষ্ট নিয়ে সারাজীবন এই কষ্ট বয়ে যাবে।" তাই সময় থাকতে ভালোবাসার মর্ম বুঝেন।ভালো থাকবেন।
গল্পঃ """ছায়া"""

ভালো লাগলে আমার ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করবেন..এখানে নিয়মিত ভালোবাসার গল্প ও অন্যান্য গল্প পোষ্ট করা হয়.. আপনাদের গল্পটি কেমন লাগলো  তা কমেন্ট করে জানাবেন...আপনাদের মতামতের আশায় থাকবো...







Key Words:
bangla love story, love story, bangla, facebook love story, love, valobashar romantic premer golpo bangla, romantic valobashar golpo, valobashar koster golpo bangla, bangla, valobashar golpo, valobashar golpo sms, bangla sad valobashar golpo, romantic love story in bengali, valobashar golpo kotha, ভালোবাসার গল্প 2018, ভালোবাসার গল্প কাহিনী, ভালোবাসার গল্প ছবি, ভালোবাসার গল্প 2017, ভালোবাসার গল্প পরতে চাই, ভালোবাসার গল্প সিনেমা, ভালোবাসার গল্প ও কবিতা, ভালোবাসার গল্প পড়তে চাই, bangla love story book, bangla love story facebook, bangla love story kobita, bangla sad love story pdf, bengali love story golpo mp3, bangla love story video, bengali love story poem, bangla love story mp3, বাংলা ভূতের গল্প, ভুত, ভয়ানক ভূতের গল্প ২০১৮, bangla vuter golpo

Related Posts

: