এটা একটা প্রেমের কাহিনী ৫পর্ব

Post a Comment
ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালবাসার গল্প, love story, valobashar golpo
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে গিয়ে ফুল গাছে পানি দেয়া, একা একা হাটা রাধার দৈনিক রুটিনএটা ওর ভালো লাগার কাজআরও অনেক কিছুই আছে যা রাধার করতে ভালো লাগে, যেমন বান্ধবীদের সাথে আড্ডা, ঘুরাঘুরি, গল্প করা, মাঝে মাঝে নাভিদ কে নিয়ে ভাবা, দিনের ভিতর একবার হলেও ওকে দেখা, যেকোনোবাহানায় নাভিদের সাথে কথা বলা

প্রতিদিনের মত আজও রাঁধা ছাদে যায়, কিন্তু গিয়ে দেখে আগে থেকেই একটা ছেলে তার ফুল গাছে পানি দিচ্ছে রাঁধা কোন কিছু না ভেবে ছেলেটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে=  কে আপনি? এখানেকি করছেন?
সুভ্র= দেখছনা কি করছি, গাছে পানি দিচ্ছি
রাঁধা= আপনাকে আমার গাছে পানি দিতে কে বলেছে?
সুভ্র= গাছে পানি দিতে কারো বলা লাগে নাকি
রাঁধা= হ্যাঁ লাগে, ভবিষ্যতে আর কখন আমার চারা গাছে হাত দিবেন না
সুভ্র= যদি দেই?
রাঁধা= থাপ্পড় দিয়ে সব গুলো দাঁত ফেলে দিব, বেয়াদব
সুভ্র= ওকে, কুল কুল, হাত দিব না  অপরিচিত মানুষের সাথে কেও এইভাবে কথা বলে?
রাঁধা= অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলতে আসছেন কেন?
সুভ্র= আমি আগে কথা বলেছি না তুমি আগে কথা বলেছ
রাঁধা= আপনি আমার গাছে হাত দিয়েছেন কেন?
সুভ্র= ঠিক আছেকিন্তু মনে রাখবে, কমলতা নারীর ভূষণ
রাঁধা= আপনার কাছ থেকে আমার ভদ্রতা শেখা লাগবেনা
সুভ্র= শেখার কোন শেষ নেই, জানার কোন বয়স নেই
রাঁধা= তাই নাকি?
সুভ্র= অবশ্যই
রাঁধা= মেয়ে মানুষ দেখলেই মুখ দিয়ে কথার ফুল ঝুরি বের হয় নাকিএটা কি ফ্লাট করার নতুন ট্রেন্ড
 সুভ্র= আমিতো জানিনা
রাঁধা= বেশি ভদ্র সাজার চেষ্টা করবেন নাআপনাদের মত ছেলেদেরকে আমার চেনা আছে
সুভ্র= মনে হয়, পৃথিবীর সব ছেলেদের কে টেস্ট করেছ
রাঁধা= আপনাদের মত গায়েপরা মানুষের সাথে কথা বলা ও পাপ
ছেঁচড়া টাইপের লোক, কি সব ফাজিল ছেলে, ছিঃ বলতে বলতে রাঁধা ছাদ থেকে নেমে যায়


কিছুক্ষনপরেই রাঁধা বইপত্র নিয়ে কলেজে যায়, ইদানিং কলেজে মবিন আর আইরিনের প্রেম কাহিনী নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছেবলা যায় এটা এখন কলেজের হট টপিকতার উপরে আছে নাভিদের ইন্টারফেয়ারকলেজে এসেই আইরিন কে খুজতে থাকে রাঁধা, কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর কলেজের শহিদ মিনারের সামনে বসে থাকতে দেখে আইরিন এর কাছে যায়
রাঁধা= কিরে, তোকে আমি খুজতে খুজতে শেষ, আর তুই এখানে
আইরিন= আমাকে খুঁজছিস কেন?
রাঁধা= শুনলাম তোর আর মবিনের লাভ স্টোরি নাকি জমে পুরা কুলফি
আইরিন= আরে নাহ, সব গুঁজব
রাঁধা, আরে হ্যাঁ, যাহা রটে কিছুটা হলেও ঘটে
আইরিন= ঘটলে তো ভালোই হত, কিন্তু জানিস, মবিন আমাকে একটু ও লাইক করে না
 রাঁধা= যেমন গুরু, তেমন তার শিস্যসারাদিন ঘুরে নাভিদের সাথেভালোবাসার মর্ম কিভাবে বুঝবে
কথা বলতে বলতে রাঁধা আর আইরিন হাঁটতে থাকে এমন সময় পিছন থেকে কেউ রাঁধা বলে ডাক দেয়রাঁধা পিছনে তাকিয়ে দেখে সকালের সেই ছেলেটা
রাঁধা= তুমি এখানে? আমার নাম জানলে কিভাবে?
সুভ্র= তুমি যেখানে আমি সেখানে, একই বাধনে বাধা দুজনে
রাঁধা= উলটা পাল্টা কথা বললে মেরে তক্তা বানিয়ে দিব 
এমন সময় পাশ থেকে আইরিন টিপ্পনি দেয়= কিরে বয়ফ্রেন্ড নাকি??
রাঁধা= বয়ফ্রেন্ড না হেডএক, একটা ফাজিল
পাশ থেকে আবারও সুভ্র বলে উঠে= তোমার দেয়া প্রত্যেকটা আঘাত সাদরে গ্রহন করবো প্রিয়তমা।
রাঁধা= আপনি কিন্তু আপনার লিমিট ক্রস করছেন।
সুভ্র= অতো কিছু জানিনা, আমি তোমাকে ভালবাসি, I love you, I am madly love with you.
কথাটা বলার সাথে সাথে কেউ জোরে পিছন থেকে সুভ্রের মাথায় একটা থাপ্পড় দেয়। পিছনে তাকিয়ে দেখে টয়া। থাপ্পড় দিয়েই বলে = কিরে তুই এখানে??
সুভ্র= তোদের কলেজে নতুন জয়েন্ট করেছি।
টয়া= আর আমাকে বল্লিওনা,
সুভ্র= আরে আজই তো প্রথম আসলাম।
রাঁধা বিস্ময় সহকারে ওদের কথা শুনছিল এতক্ষণ, রাঁধা নীরবতা ভেঙ্গে প্রশ্ন করে= তোরা দুজন দুজনকে চিনিস নাকি??
টয়া= ও আমার ফ্রেন্ড সুভ্র, তিন মাস আগে আমার এক সেলফিতে তোকে দেখেছিল, সেদিন থেকে তোর সাথে মিট করিয়ে দেয়ার জন্য পাগল করে ফেলছে। বলে ও নাকি তোকে ভালবেসে ফেলছে। 

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আইরিন, টয়া, সুভ্র আর রাঁধা কথা বলতে থাকে, হঠাৎ কথা বলার এক পর্যায় রাঁধা হোঁচট খেয়ে পরে যাবার অবস্থা হয়, কিন্তু সুভ্র রাধার হাত ধরে ফেলে। টয়া আর আইরিন মিট মিট করে হাসতে থাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে আগমন ঘটে নাভিদের। সুভ্র আর রাঁধা কে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে দেখে নাভিদ পিছন দিকে ফিরে হাটা শুরু করে। সাথে সাথে রাঁধা নিজের অবস্থা ঠিক করে দৌড়ে নাভিদের কাছে ছুটে যায়।
নাভিদের আগমন, আবার ফিরে যায়, রাধার অস্বাভাবিক ভাবে নাভিদের পিছনে পিছনে ছুটে যাওয়া দেখে সুভ্র প্রশ্ন করে বসে= ছেলেটা কে?
টয়া= ওর নাম নাভিদ
সুভ্র= ও কি রাধার বয়ফ্রেন্ড?
টয়া= আরে নাহ, ওরা তো একজন আরেকজনের জানে দুশমন।
সুভ্রের কাছে বিষয়টা খটকা লাগে, সুভ্র ঠিক করে যে কোন ভাবেই হোক রাঁধাকে ইম্প্রেস করা লাগবে। 

এদিকে রাঁধা নাভিদের পিছনে পিছনে গিয়ে নাভিদকে থামিয়ে বলতে শুরু করে= দেখ নাভিদ তুমি যা দেখেছ বিষয়টা তেমন না। আমার পরে যাবার অবস্থা হয়েছিল তখন ছেলেটা আমার হাত ধরে ফেলে...
আরও কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু নাভিদ ওকে থামিয়ে বলতে শুরু করে= দেখ, আমি তোমার কাছে কোন এক্সপ্লেনেশন চাইনি। তোমার আর আমার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই আর কখন ছিলও না তাই কে তোমার হাত ধরল, কার সাথে তুমি চলাফেরা কর সেটা একান্তই তোমার ব্যাপার। 
রাঁধা= ঐ ছেলেটা আমার হাত ধরাতে তোমার একটুও খারাপ লাগেনি?
নাভিদ= অবশ্যই না
কথাটা বলেই নাভিদ আবারও পিছন দিকে ফিরে হাটা শুরু করে। নাভিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাঁধা ভাবতে থাকে আর মনে মনে বলতে থাকে= কেন তোমার খারাপ লাগলো না নাভিদ? তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার তো খারাপ লাগে, তাহলে তোমার কেন খারাপ লাগে না? তোমার মনে কি আমার জন্য সামান্যতম জায়গাও নেই ? একবার পিছনে ফিরে দেখ নাভিদ আমার দুচোখে কত প্রেম শুধু তোমার জন্য, আমার এই অতৃপ্ত প্রেম তোমার অপেক্ষায় আছে। আমার মত করে তোমাকে কে ভালবাসবে? আমার সবকিছু শুধু তোমার জন্য, একবার পিছনে ফিরে তাকাও।

নাভিদ পিছনে ফিরে তাকায়, রাধার দিকে আবার হাঁটতে শুরু করে। নাভিদকে নিজের দিকে আসতে দেখে রাধার হৃদকম্পন বেড়ে যায়। আগামিকাল তোমার জন্য একটা সাপ্রাইজ আছে কথাটা বলেই নাভিদ চলে যায়।

রাঁধা আগামিকাল সকালের জন্য অপেক্ষা করছে, রাত পোহালেই নাভিদ ওকে সাপ্রাইজ দিবে। কি সেই সাপ্রাইজ? কি হতে পারে এগুলো ভেবেই রাঁধা বারবার অস্থির হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সুভ্র ভাবছে কিভাবে রাঁধাকে ইম্প্রেস করা যায়। মনে মনে অনেক কিছুই ভাবে কিন্তু কোন কিছুই যথাযথ মনে হয়না। অনেক ভেবে চিনতে ঠিক করে আগামিকাল সকালে ছাদে অনেকগুলো বাহারি রঙের  ফুলের চারা দিয়ে ছাদটাকে আরও সুন্দর করে সাজাবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

পরের দিন সকালে ছাদে গিয়েই রাঁধা অবাক, এতো সুন্দর সুন্দর বাহারি রঙের ফুল চারা, তার মধ্য থেকে একটা চারার মধ্যে একটা চিরকুট ঝুলানো, সেটার মধ্যে বড় করে লেখা “I love you radha, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। রাঁধা ধরে নেয় এটাই নিশ্চয় নাভিদের সাপ্রাইজ। রাঁধা খুব খুশি, আজ সে একটু অন্যরকম ভাবে সাজবে। তবে নিজের জন্য না, নাভিদের জন্য। 

Related Posts

: