গার্লফ্রেন্ড এর বিয়ে হয়ে গেছে ।
আমার অবস্থা মারাত্মক খারাপ, কতটা খারাপ বলে বুঝানো যাবে না, আমি একের পর এক আইডি পাল্টাই, মাঝেমাঝে আগের আইডিতে এসে দেখে যাই কে কেমন আছে। এক আইডিতে কিভাবে যেন একটা মেয়ে এড হয়। আইডির লাস্টের দিকে মেয়েটা আমারে নক দেয়। হু হা রিপ্লাই দিয়া আমি আইডি ডিয়েক্টিভেট করে ফেলি। দশ দিন পনেরো দিন পরপর এক রাতে হুট করে ফেসবুকে আসি, কেমন আছেন,এখন কি করতেছেন , এত ম্যাসেজ দেই রিপ্লাই কই এইসব হাবিজাবি কয়েকজনরে লিখেই আবার ডিয়েক্টিভেট করি। ইচ্ছাকৃত ফাইজলামি , চলতেই থাকে এমন ।
এক রাতে আইডি একটিভ করে ম্যাসেজ দেয়ার সাথে সাথেই রিপ্লাই । প্রথম কথাটা আমার এখনো মনে আছে " আপনার নাম মাঝেমাঝে এমন কালা হই যায় কেন " অনেকক্ষন চ্যাট হয়, পরেরদিন আবার কথা বলবো কথা দিয়ে তারপর বিদায়।
এইটা সম্ভবত চোদ্দোর শুরুর দিকে ঘটনা। আমার সময় তারিখ ঠিক মনে থাকেনা।
আগের বছর প্রথম প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ভার্সিটিতে চান্স হয়নাই, হইছিলো আসলে। সাবজেক্ট ভালোনা দেখে ভর্তি হইনাই। একগাদা বই কিনে বসে আছি, সেকেন্ড টাইম প্রিপারেসন, পড়তে পারিনা, একা থাকি সারাক্ষন, ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজি, একশ দুই ডিগ্রি জ্বর নিয়া বৃষ্টির ভেতর রাত বিরাতে ঘুরে বেরাই , পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে থাকি , বাবা মার সাথে সম্পর্ক খারাপ ।
ঠিক এইসময় মেয়েটা পাশে আসে। সম্ভবত আমিই তারে নিয়ে আসি, অবচেতন ভাবে ।
প্রথম কয়েকদিন চ্যাট করেই শুনলাম তার বিয়ের কথা হচ্ছে, এর আগে একটা বিয়ে ভেঙ্গেও দিছে, বিয়ে সে খুব ভয় পায়, আমি তারে সাহস দেই, বিয়ে করতে বলি, হুদাই বলি, বলার সময় বুকের ভেতর কেমন জানি লাগে, কেন লাগে আমি জানিনা।
মানুষ ডুবে যাওয়ার সময় খড়কুটো ধরে বাচার চেষ্টা করে, আমার নিজের কাছে নিজেরে খুব শক্ত মনে হয়, আমি বাচার চেষ্টা করিনা, খুব খারাপ সময়গুলো পার করার চেষ্টা করি একটা ফেক আইডিকে নিয়ে , যার প্রোফাইল পিকচার নাই, ছেলেদের মতো নাম, টাইমলাইন ফাকা।
মেয়েটা খাইতে চাইতোনা, ঠিকমতো ঘুমাতোনা, জীবনের কোন শৃঙ্খলা নাই, কেমন মায়া লাগতো আমার। হুট করেই একদিন বলে ফেলি তুমি না খাইলে আমি খাবোনা, এবং না খেয়েও থাকি । ভালোবাসার টানে না, খাইলে মিথ্যে বলা হবে এইজন্য।
ফোন নাম্বার নেই, আমার স্পষ্ট মনে আছে প্রথম যেদিন কথা বলি সেদিন সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হয়, বিকেলে বাড়ির পাশে দোকানের সামনে কথা বলতেছি , বৃষ্টি থেমে গেছে , পরিষ্কার আকাশ , একটু কেমন শীতশীত করছে, আমি অবাক হয়ে শুনতেছি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়া একটা মেয়ে কিভাবে ক্লাস টুয়ের বাচ্চার মতো চিকণ গলায় একনাগারে বকবক করতে পারে।
কয়েক মাস চলে গেছে , আমি একটু একটু করে মেয়েটার প্রেমে পরতেছি , ওর পিছনে আরেক ছেলে লাগছে , ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার কথা বলে , আমি একদিন কিছু না ভেবেই ভালোবাসি বলে দেই, প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি এমন না, এইটারে বলে আগে সিভি জমা দেয়া । প্রথমেই রিজেক্ট, সে প্রেম করবেনা । আমি আমার মতো করে পটাই , কি অদ্ভুত অদ্ভুত সব পটানের সিস্টেম ।
একরাতে ঝগড়া করে শুয়ে আছি, রাত তিনটা বাজে, কেউ কাউকে নক দিচ্ছেনা, হঠাৎ করে মনে হলো আমার প্রথম প্রেমের মতো কষ্ট হচ্ছে, গলা শুকাই যাচ্ছে, কান্না পাচ্ছে খুব , মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে আমি মেয়েটার সাথে একবার কথা বলতে চাই । আমি বুঝলাম আমি আটকে গেছি আবার।
সামনে অশেষ দূর্গতি। আমি এমন একটা মেয়েকে ভালোবাসছি যাকে আমি দেখিনি , যাকে আমি চিনিনা, যার শহরে আমি কখনো যাইনি, আমার বাসা বের হলে যার বাসায় যাইতে সাড়ে এগারো ঘন্টা লাগে, যাকে নিয়ে আমি কোন ভবিষ্যৎ জানিনা। আচ্ছা মেয়েটা মেয়েটা না করে নাম বলি, ওর নাম রূপা।
রূপার নিজের কোন ফোন নাই, মায়ের ফোনে চ্যাট করে, মাঝেমাঝে যেটুকু কথা হয় সেইটা ওই ফোন দিয়েই। নোকিয়া এন 75 ।
আমি এখন যেই ভার্সিটিতে পড়ি, ডিপার্টমেন্টের নাম বলে ভাব নেই, সেইটা সম্পূর্ণই রূপার জন্য। এতে আমার বিন্দুমাত্র অবদান নাই ।
রুপা জানতো আমার তার ছেড়া , আমি মাথা খারাপ থাকলে পড়তে পারিনা, একা হলেই পাগলের মতো আচরন করি , ও আমার সাথে জেগে থাকতো সারারাত, আমি একমিনিট দুইমিনিট পড়ে রিপ্লাই দিতাম, ও একা একাই কথা বলতো , পড়া শেষ করে যখন আমি ঘুমাই যাইতাম, ও তারপর ঘুমাতো, সকাল আটটায় উঠে ক্লাস করতো, আমি দুপুরে ঘুম থেকে উঠতাম, ফ্রেস হয়ে পড়তে বসতাম, মেয়েটা ততক্ষনে কলেজ থেকে এসে আমার খোজ নেয়া শুরু করছে। আবার কথা চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। রুপা জেগে থাকতো আমার সাথে ।
মেয়েটা সবসময় আমার পাশে থাকছে, প্রত্যেকটা সময়। এক্সের কথা মনে পরে খুব কষ্ট লাগলে ও ক্যাম্নে ক্যাম্নে যেন বুঝে যায়, মন ভালো করার জন্য উঠে পরে লাগে, পরম মমতায় আগলে রাখে বুকের ভেতর।
আমি ভালোবাসি বলেই থেমে আছি, ছবি দেখতে চাইনা, দেখতে ইচ্ছে করছে এমন কথাও তুলিনা। ভালোবাসি বলার মাস চারেক পরে একরাতে আমারে ছবি পাঠায়, ছবি দেখে প্রথম যেই শব্দ আমার মুখে আসে সেইটা হলো " আল্লাহ, এইটা তুমি কোন কাজ করলা "
কেমন গেয়ো একটা মেয়ে, গলায় মালা দিয়া আরো জঘন্য লাগতেছে । পরে আরো অনেকগুলা ছবি দেয়, এইগুলা সুন্দর আছে, শ্যামলা, চিকন নাক, গালের ভেতর ইয়া বড় টোল। আগেরটা নাকি ওর ছোটবেলার ছবি। আমার টোল ভাল্লাগে খুব, আর চেহারা যেমন হোক হোক, ভালোবাসি বলছি যখন, ভালোবাসিই ।
মেয়েটা ভালোবাসি না বলেই আমার সাথে সম্পুর্ণ মিশে যায়, আমার জীবন তখন রূপাময়, সারাদিন পড়ো আর রূপার সাথে গল্প করো ।
এডমিশন চলে আসে, পরিক্ষা দেই, ঢাবির ঘ ইউনিটে সায়েন্স থেকে 300+ সিরিয়াল, সিট 1200+ পজিশন ঠিক আছে, ইংলিশে কম পাইছি । আগেরবার পাইছিলাম 13 ,একবছর প্রিপারেসন নিয়া সেইটা এগারো। আমি জানি আমার কপালে ভালো সাবজেক্ট নাই, মাথায় আবার আকাশ ভেঙ্গে পরে, মায়ের মুখের দিকে তাকাতেও কষ্ট লাগে, মনে হয় এখনই কান্না করে দিলো, শুধু আমার জন্য পারতেছেনা ।
রুপার সাথে আমার ঝগড়া হইছে কয়েকদিন আগে, কথা নাই। রেসাল্টের পরের দিন মেয়েটা কল দিলো, আমি রেসাল্ট বলার পর অনেকক্ষন চুপ করে থাকলো, তারপর আস্তে করে বললো , ভাবছিলাম তোমার পছন্দের জায়গায় ভর্তি হলে আমি চলে যাবো একেবারে, এখন আমি তোমারে একা একা ক্যাম্নে ছাড়ি।
আর একটু কথার পর টাকা শেষ।
পরদিন আবার ফোন দেয়, আমার এমনিতেই ম্যাজাজ খারাপ, যোগাযোগ না করতে বলি কড়া সুরে। রুপা হঠাৎ কান্না করে উঠে, কান্না মিশ্রিত সুরে বলে "তোমাকে ভালোবাসি ফারহান " কানতেই থাকে পাগলের মতো , দুইঘন্টা চলে যায়, কান্না থামে না , ফিক উঠে যায় কানতে কানতে, এরমাঝে যেটুকু কথা কানে আসে সব এক,
আমি বাচবোনা তোমারে ছাড়া, পায়ে পড়ি কখনো ছেড়ে যেওনা, আমি ছাড়তে চাইলেও তুমি ধরে রেখো আমারে, কিভাবে ধরে রাখবা তুমি জানো, কিভাবে আমারে বিয়ে করবা তুমি জানো, আমি কিচ্ছু জানিনা, শুধু আমারে তোমার সাথে রাখো।
রুপা আমারে ভালোবাসি বলার সাতদিন আগে বাসায় ধরা খায়, আমার ভয়েস রেকর্ড শুনতেছিলো, ওর বাবা দেখে ফেলে, ফোন নিয়ে নেয় । ও আমারে ভালোবাসি বলে বাসায় পরে থাকা এক পুরোনো ফোন দিয়ে।
ভালোবাসি বলার দশদিন পর রূপার বিয়ে ঠিক হয় , মেয়ে পছন্দ , রূপা না করে, পাগলের মতো আচরন করে, বালিশের নিচে চাকু রাখে, মা ভয় পেয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।
দুইহাজার পনেরোর শুরুর থেকে ষোলোর শুরু পর্যন্ত ও মুটামুটি পনেরোটা ফোন ধরা খায় , গোটা পাঁচেক বিয়ে ভাঙ্গে, নরমাল বিয়ে ভাঙ্গা না, হাতে আংটি পড়িয়ে যাওয়ার পরও বিয়ে ভাঙ্গে। আংটি ফেরত দেয়া হয়।
একবার বরপক্ষের ছেলে এসে খুব আদূরে গলায় জিজ্ঞেস করলো, আপনারকি পছন্দের কেউ আছে? থাকলে নিশ্চিন্তে বলতে পারেন, আমি কাউকে বলবোনা , আমি অমন ছেলেই নাহ।
রুপা আমার কথা বলে, পরদিন লোকমুখে ফিসফিসানি শুনা যায়, ওমুকের মেয়েতো বগুড়ার এক ছেলের সাথে প্রেম, এইজন্যই তাইলে এতগুলা বিয়া ভাঙছে।
রুপা আমার কাছে পুরাই একটা প্যারানরমাল ক্যারেক্টার, আমি তারে দেখিনি, হাত ধরিনি, ভালোবাসি বলিনি ঠোটের সামনে, হুদাই ভালোবাসি, অযৌক্তিক ভালোবাসা। আমি কখনো ভাবিওনাই ওর সাথে আমার দেখা হবে।
মার্চ এপ্রিল থেকে কথা , নভেম্বর এ প্রেম, পরের বছর জানুয়ারিতে সে যখন তৃতীয়বারের মতো ফোন ধরা খায়, তখন ওর ক্লাস অফ করে দেয়া হয় , ক্লাসের বই, কলেজ ড্রেস, ছোটবেলার ডায়েরি, আনাড়ি হাতে আকানো ড্রয়িং এর খাতা পুড়ায় ফেলা হয় সব ।
আমি কখনো ভাবিনি রূপাকে আর দেখবো, কারন অনেকগুলা, আমার কাছে ওতদূর যাওয়ার টাকা নাই, একা একা জার্নি করিনি কখনো, আমি হইলাম ফার্মের মুরগি, রূপাও বের হতে পারবেনা ।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির হরতাল চলতেছে, ক্লাস শুরু হয়নি পুরোপুরি, বাবার বাইকে চড়ে বাসায় আসার সময় ফোনে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছি, জিজ্ঞেস করলাম কই তুই, সে উত্তর দিলো, ময়মনসিংহ, গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে আসছি।
আমার কি হইলো আমি জানিনা, বাইকে থেকেই রুপারে ম্যাসেজ দিলাম , আমি আসতেছি। আমার পকেটে তখন দুই টাকা ।
এক বড় ভাইরে ফোনে বললাম, ভাই চিটাগাং যাবো আপনারে নিয়া , টাকা নাই, ম্যানেজ করেন। ভাই রাতেই এক হাজার টাকা পাঠাইলো ।
বগুড়া থেকে গাড়ি বন্ধ, দুইমাসের হরতাল চলতেছে, আমি যাবই, পরদিন দুপুরে পাচশ টাকা টিকেট দিয়া একটা মফিসে করে ঢাকায় আসলাম । আসার পর বাসায় বললাম ঢাকায় আসছি, বাবা অতি রাগে পাথর হয়ে ফোন কেটে দিলেন।
বিমানবন্দর রেলস্টেশন এ দাড়ায় আছি ওই ভাইরে নিয়ে, সাতটা থেকে পাক খাচ্ছি, ট্রেন নাই, এখনো আসেনি, মশার কামরে পা ফুলে কলাগাছ।
একসময় ভাবলাম কমলাপুর যাই, কমলাপুরে সিট পাবো, এইখানে ভিড় বেশি, ট্রেনে করেই কমলাপুর গেলাম, নেমে শুনলাম চট্টগ্রাম গামী ট্রেনটি এইমাত্র প্লাটফরম ছেড়ে চলে গেলো। বড়ই সৌন্দর্য ।
আস্তে করে দেয়াল টপকাইলাম, টিকেট নাই আমাদের কাছে।
রাত সাড়ে বারোটা বাজে । সায়েদাবাদে বাস নাই একটাও । এই পরিস্থিতিতে বাস যাবেনা । আমার জিদ চেপে গেছে ,আমি যাবো, আজকেই যাবো ।
পত্রিকা নিয়া এক মাইক্রো যাচ্ছে ওইদিকে, দুইজন মিলে উঠে বসলাম । মাইক্রো যাচ্ছে
একদম ফাকা রাস্তা, রোডলাইট ছাড়া কিচ্ছু চোখে পরেনা, গাড়িতো দূরের কথা, একটা কুত্তাও নাই । আমার ভয়ে কলিজা শুকাই যাচ্ছে, পেছনে দুইজন অপরিচিত মানুষ, অন্ধকারে তাদের চেহারা দেখা যাচ্ছেনা, আমাদের জবাই করে ফালায় রাখলেও দেখার কেউ নাই। আগের দিন পেট্রোল বোমায় চারজন মরে গেছে, এই গাড়িভর্তি কাগজ, একবার আগুন লাগলে আমার খোরমাও পাওয়া যাবেনা। ভুতুরে পরিবেশে দুইভাই অন্ধকারে গুটিসুটি মেরে বসে আছি।
কুমিল্লার আগে আগে দ্রিম করে একটা শব্দ হলো, গাড়ি লাফায় উঠলো একহাত, চোখের সামনে মায়ের মুখ , পাশে বসা ভাই দেখি আমারে শক্ত করে চেপে ধরছে। সামনে থেকে কে যেন বলে উঠলো গাড়ির টায়ার পাংচার। আমি বুকে পানি পাইলাম।
কুমিল্লা না গেলে চাকা ঠিক করা যাবেনা, ওই অবস্থাতেই খোড়ায় খোড়ায় মাইক্রো যাচ্ছে। ফেটে যাওয়া চাকা থেকে পর্যাবৃত্ত ছন্দে বিকট কটকট শব্দ। একটু পরপর মাইক্রো একদিকে কাইত হয়ে যায়।
কুমিল্লায় চাকা ঠিক করা হলো , রওনা দিলাম , আধাঘণ্টা পর আবার পাংচার ।
এইবার পত্রিকা তোলা হলো ছোট পিকাপের উপর, কাগজ নেয়ার পর দেখা গেলো মানুষ উঠার জায়গা নাই , শীতের রাত, তিনটা বাজে, রাস্তায় গাড়ি নাই, আমরা কই যাবো ।
বিসমিল্লাহ বলে পিকাপের মাথায় কাগজের বান্ডিলের উপর বসে গেলাম , আসলে বসা না, ঝুলে থাকা, পাছার একপাশের নিচে কাগজ আরেকপাশ শূণ্যে। হাতের ভেতর প্রাণপনে একটা দড়ি ধরে রাখছি , ফাকা রাস্তা, বুলেটের মতো গাড়ি যাচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস চামড়া ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে হাড়ের ভেতর । প্রবল বেগে মোড় নেয়ার সময় পুরো শরীর পিকাপের ছাদ ছেড়ে রাস্তার উপর চলে যাচ্ছে, আমি হাতের ভেতর পুলসিরাতের দড়ি ধরে গুণগুণ করে গান গাচ্ছি, এই পথ যদি না শেষ হয় ......
রূপার সাথে আমার দেখা হলো পরিচয়ের এক বছর দুইমাস পর এক পুরোনো মহাসড়কের পাশের অখ্যাত পার্কে, ও বোরকা পরে আসছে , এক সিমেন্টের বেঞ্চে বসে আমি রুপার দিকে তাকায় আছি, আমি আমার জীবনে এত ফর্সা মেয়ে দেখিনি ,এত সুন্দর মেয়ে দেখিনি, টিভিতেও দেখিনি । এই মেয়েটা আমার সাথে প্রেম করলো কেন, রূপা এত বোকা আমিতো আগে জানতাম না।
আমি ঘোর লেগে কথা বলতেছি, বারবার গালের দিকে তাকাচ্ছি , চুমু দিতে ইচ্ছা করতেছে , সাহস হচ্ছেনা আমার, কি নাকি মনে করবে। দেড়ঘন্টা হাত ধরে বসে থাকলাম, আমি যখন রুপাকে চুমু দেই তখন প্রায় চলে আসবো আসবো অবস্থা। রুপা কিচ্ছু করেনি, বাধাও দেয়নাই । পরে বলছে ও নাকি আমার থেকেও বেশি ঘোরের মাঝে ছিলো , নাইলে মুখের উপর হাত দেয়ার কথাটা অন্তত মনে থাকতো ।
বাসায় আসার একদিন পর এক আননোন নাম্বার থেকে কল আসে, রূপার ফোন, ওর মা ফোন দেখে ফেলছে, নিয়ে নিছে ওইতা , মারছে ওরে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো, ও আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারেনা, দমবন্ধ হয়ে যায়, সারা রাত কান্না করে, আমার নিজের কষ্ট আমার কাছে ব্যাপার না, ওই কষ্ট পাচ্ছে ভাবতেও ইচ্ছা করেনা কখনো , ওকে যেভাবেই হোক ফোন কিনে দিতে হবে, টাকা লাগবে আমার, কি করবো এখন ?
মাস দুইয়েক আগে এক কাজিন ক্যামেরা পাঠাইছে, স্যামসাং, এখনো দশটা ছবি তুলিনি। আমি সকাল দশটায় রূপার সাথে কথা বলে দুইটায় ক্যামেরা বিক্রি করে দেই, দামদর করার সময় নাই। পুরা তিনহাজার টাকা ওরে পাঠাই, এক হাজার টাকা দিয়ে ফোন কেনো, বাকি দুইহাজার রেখে দাও , পরে ধরা খাইলে কিনে নিবা।
আমার ফাস্ট ইয়ারটায় আমার কাছে খাওয়ার টাকা না থাকলেও পকেটে এক্সট্রা একহাজার টাকা সবসময় থাকছে, যেকোনো সময় যোগাযোগ বন্ধ হবে, মেয়েটা আমার সাথে কথা না বলতে পারলে পাগলের মতো কান্নাকাটি করবে, আমি সহ্য করতে পারবোনা।
বিকেলে রুমে আসার সময় প্রথমে ফোনের কার্ড কিনতাম, তারপর টাকা থাকলে বাকিসব।
আমি প্রত্যেকবার রূপার সাথে কথা বলতাম জীবনের শেষ কথা মনে করে, এ কল কাটার পরেই হয়তো ওর ফোন নিয়ে নিবে ,তারপর দিন বিয়ে, মেয়েটাকে আর পাবোনা কখনো, আমার ফোনে ওর কল আসা মাত্র আমার পৃথিবী শূন্য হয়ে যেতো, পৃথিবীতে কেউ নাই আমার, কিচ্ছু নাই, আমি আমার প্রেমিকাকে জীবনের শেষবার ভালোবেসে নিচ্ছি।
কথা বলতে বলতে ফোন কেটে গেলে, কিংবা একটু শব্দ হলে আমার কলিজা উড়ে যায়, এই হয়তো ওর আম্মু দেখে ফেলছে, ফোন কেড়ে নিচ্ছে এখন ।
আমি ফোনের এপাশ থেকে আমার প্রেমিকার চিৎকার শুনছি অসংখ্যবার , লাল বাটনে তখনো হয়তো চাপ পরেনি , রূপার মা ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়ার জন্য ওরে মারতেছে। আমার সব মনে আছে একদম নতুনের মতো।
রুপা আমার সাথে কথা বলতো মুটামুটি সংগ্রাম করে, সিড়িঘর, বেলকোনির কোন, দরজার পেছনে । শুধু ওর ফোনে চার্জ দেয়ার গল্প দিয়েই একটা উপন্যাস লেখা যাবে ।
ওর সাথে আমার দ্বিতীয় বার দেখা হয় পনেরো সালের এপ্রিল মাসের পাচ তারিখ। এইটাই শেষ। এরপর রুপাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। দরজার সিটকিনি ভেঙ্গে ফেলা হয়, ঘুমাইতে দেয়া হয় মায়ের সাথে , ওর খুব ঘনঘন ফোন ধরা খাইতে থাকে, আমার দিনরাত সব সমান হয়ে যায়, লেখাপড়া করিনা, ক্লাসে যাইনা, মাসের পর মাস মাথার উপর টেনশন , আমি বিয়ের জন্য জোরাজুরি করি, ও পালায় আসবেনা, অনেক কষ্টে রাজি করাই, টাকা ম্যানেজ করি, বাহিরে থাকার জায়গা ম্যানেজ করি , রুপা বসে থাকে, ডেট পিছায় দেয়, ওর ছোটভাই দেশে আসবে , তিনি অনেক ভালো, রুপাকে ভালোবাসেন খুব, ছোটভাই দেশে আসেনা , আবার আসার পর একের পর এক পলিটিক্স শুরু করে, আমি বড়শিতে লটকে থাকি মাসের পর মাস। ফলাফল আমার একটা ইয়ার ড্রপ।
রূপার ঘর থেকে কয়েকবার দড়ি খুজে পাওয়া যায়, একবার দরজা ভেঙ্গে নিয়ে আসা হয় যখন ও দড়িতে প্রায় ঝুলে যাচ্ছে। হাতে কেটে ভেসে দেয়, কিচ্ছু নাহ খেয়ে থাকে দশদিন পনেরোদিন।
আমার বাসা থেকে চেষ্টা করা হয় অসংখ্যবার, তারা পরোক্ষভাবে অপমান করে, আমার বাবা সরাসরি একবার রুপারেই বলে, মা, তুমি আসতে চাইলে চলে আসো, আমি নিজে যেয়ে তোমারে নিয়ে আসবো। রুপা আসতে চায়নি, কেন আসতে চায়নি আমি জানিনা, শেষের দিকে আমার বাবা মার ফোন ধরাই বাদ দিয়ে দেয়।
তখনো আমার সাথে সুযোগ পেলেই যোগাযোগ করতো , সাহস দেয় আমারে, অপেক্ষা করো বাবু , সব ঠিক হয়ে যাবে ।
কিচ্ছু ঠিক হয়না আমার, ওর বিয়ে দেখা হচ্ছে, ছেলের খবর পাচ্ছি, ওর ভাই আমারে সরে যেতে বলছে, মেরে ফেলার জন্য লোকজন ঠিক করছে, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি পুরোপুরি, হাত পা ধরে চলে আসতে বলি, যেই আমি এতটাই নির্লিপ্ত যে চোখ পানি দিয়ে ভরে গেলেও গলা কখনো কাপতোনা , সেই আমি রাতে দিনে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করি, আমার কসম দিয়ে দেই, বিয়ে কইরোনা তুমি, আমি মরে যাবো সোনা। সময় কাটে না, ট্যাবলেট খেয়ে দিনের পর দিন পরে থাকি।
এপ্রিলের দিকে মাসে রুপার হাতে আংটি পড়ায় দিয়ে যায় , তখন ও খালার বাসায় , রুপা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই হারপিক খায়, চারদিন হাসপাতালে থাকে, বাসায় এসে কয়েকমিনিট কথা হয়, আমি পাগল হয়ে যাই একেবারে, যেভাবেই হোক তক্ষুনি খালার বাসা থেকে চলে আসতে বলি,রাখছি বাবু বলে ফোন কেটে যায়, যোগাযোগ শেষ। ও আর আসেনা।
দুইহাজার ষোল সালের এপ্রিল মাসের ঊনত্রিশ তারিখ মধ্যরাতে আমি যখন উন্মাদের মতো রুপার আইডি থেকে ওর পরিচিতদের আইডিতে একটাবার ওর খবর পাওয়ার জন্য ঘুরে বেরাচ্ছি তখন ওর ইনবক্সে একটা ম্যাসেজ আসে ,
আপনেকি ফারহান
- হ্য, রুপা কেমন আছে?
রূপার আজকে বিয়ে হইলো, এতদিনে সে বিয়ের পিড়িতে বসছে।। রূপার আশেপাশে অনেক মানুষ , এরমাঝে সে একবার হাত ধরে আমারে বললো আপনারে খবরটা জানাইতে , তাই জানাইলাম, ভালো থাকবেন , বাই।
সময় অনেক দ্রুত যায় , সময় অনেক দ্রুত যাচ্ছে ।আজ দিয়ে দুইবছর হয়ে গেলো। রুপা জানো , তুমি আমার প্রথম প্রেম না , আমি কথা দিচ্ছি বাবুনি, তুমিই আমার শেষ প্রেম।
যেখানেই থাকো ভালো থাইকো , ভালোবাসি এখনো , অনেক ভালোবাসি।
লেখা :
ফয়সাল আমিন
আমার অবস্থা মারাত্মক খারাপ, কতটা খারাপ বলে বুঝানো যাবে না, আমি একের পর এক আইডি পাল্টাই, মাঝেমাঝে আগের আইডিতে এসে দেখে যাই কে কেমন আছে। এক আইডিতে কিভাবে যেন একটা মেয়ে এড হয়। আইডির লাস্টের দিকে মেয়েটা আমারে নক দেয়। হু হা রিপ্লাই দিয়া আমি আইডি ডিয়েক্টিভেট করে ফেলি। দশ দিন পনেরো দিন পরপর এক রাতে হুট করে ফেসবুকে আসি, কেমন আছেন,এখন কি করতেছেন , এত ম্যাসেজ দেই রিপ্লাই কই এইসব হাবিজাবি কয়েকজনরে লিখেই আবার ডিয়েক্টিভেট করি। ইচ্ছাকৃত ফাইজলামি , চলতেই থাকে এমন ।
এক রাতে আইডি একটিভ করে ম্যাসেজ দেয়ার সাথে সাথেই রিপ্লাই । প্রথম কথাটা আমার এখনো মনে আছে " আপনার নাম মাঝেমাঝে এমন কালা হই যায় কেন " অনেকক্ষন চ্যাট হয়, পরেরদিন আবার কথা বলবো কথা দিয়ে তারপর বিদায়।
এইটা সম্ভবত চোদ্দোর শুরুর দিকে ঘটনা। আমার সময় তারিখ ঠিক মনে থাকেনা।
আগের বছর প্রথম প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ভার্সিটিতে চান্স হয়নাই, হইছিলো আসলে। সাবজেক্ট ভালোনা দেখে ভর্তি হইনাই। একগাদা বই কিনে বসে আছি, সেকেন্ড টাইম প্রিপারেসন, পড়তে পারিনা, একা থাকি সারাক্ষন, ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজি, একশ দুই ডিগ্রি জ্বর নিয়া বৃষ্টির ভেতর রাত বিরাতে ঘুরে বেরাই , পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে থাকি , বাবা মার সাথে সম্পর্ক খারাপ ।
ঠিক এইসময় মেয়েটা পাশে আসে। সম্ভবত আমিই তারে নিয়ে আসি, অবচেতন ভাবে ।
প্রথম কয়েকদিন চ্যাট করেই শুনলাম তার বিয়ের কথা হচ্ছে, এর আগে একটা বিয়ে ভেঙ্গেও দিছে, বিয়ে সে খুব ভয় পায়, আমি তারে সাহস দেই, বিয়ে করতে বলি, হুদাই বলি, বলার সময় বুকের ভেতর কেমন জানি লাগে, কেন লাগে আমি জানিনা।
মানুষ ডুবে যাওয়ার সময় খড়কুটো ধরে বাচার চেষ্টা করে, আমার নিজের কাছে নিজেরে খুব শক্ত মনে হয়, আমি বাচার চেষ্টা করিনা, খুব খারাপ সময়গুলো পার করার চেষ্টা করি একটা ফেক আইডিকে নিয়ে , যার প্রোফাইল পিকচার নাই, ছেলেদের মতো নাম, টাইমলাইন ফাকা।
মেয়েটা খাইতে চাইতোনা, ঠিকমতো ঘুমাতোনা, জীবনের কোন শৃঙ্খলা নাই, কেমন মায়া লাগতো আমার। হুট করেই একদিন বলে ফেলি তুমি না খাইলে আমি খাবোনা, এবং না খেয়েও থাকি । ভালোবাসার টানে না, খাইলে মিথ্যে বলা হবে এইজন্য।
ফোন নাম্বার নেই, আমার স্পষ্ট মনে আছে প্রথম যেদিন কথা বলি সেদিন সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হয়, বিকেলে বাড়ির পাশে দোকানের সামনে কথা বলতেছি , বৃষ্টি থেমে গেছে , পরিষ্কার আকাশ , একটু কেমন শীতশীত করছে, আমি অবাক হয়ে শুনতেছি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়া একটা মেয়ে কিভাবে ক্লাস টুয়ের বাচ্চার মতো চিকণ গলায় একনাগারে বকবক করতে পারে।
কয়েক মাস চলে গেছে , আমি একটু একটু করে মেয়েটার প্রেমে পরতেছি , ওর পিছনে আরেক ছেলে লাগছে , ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসার কথা বলে , আমি একদিন কিছু না ভেবেই ভালোবাসি বলে দেই, প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি এমন না, এইটারে বলে আগে সিভি জমা দেয়া । প্রথমেই রিজেক্ট, সে প্রেম করবেনা । আমি আমার মতো করে পটাই , কি অদ্ভুত অদ্ভুত সব পটানের সিস্টেম ।
একরাতে ঝগড়া করে শুয়ে আছি, রাত তিনটা বাজে, কেউ কাউকে নক দিচ্ছেনা, হঠাৎ করে মনে হলো আমার প্রথম প্রেমের মতো কষ্ট হচ্ছে, গলা শুকাই যাচ্ছে, কান্না পাচ্ছে খুব , মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে আমি মেয়েটার সাথে একবার কথা বলতে চাই । আমি বুঝলাম আমি আটকে গেছি আবার।
সামনে অশেষ দূর্গতি। আমি এমন একটা মেয়েকে ভালোবাসছি যাকে আমি দেখিনি , যাকে আমি চিনিনা, যার শহরে আমি কখনো যাইনি, আমার বাসা বের হলে যার বাসায় যাইতে সাড়ে এগারো ঘন্টা লাগে, যাকে নিয়ে আমি কোন ভবিষ্যৎ জানিনা। আচ্ছা মেয়েটা মেয়েটা না করে নাম বলি, ওর নাম রূপা।
রূপার নিজের কোন ফোন নাই, মায়ের ফোনে চ্যাট করে, মাঝেমাঝে যেটুকু কথা হয় সেইটা ওই ফোন দিয়েই। নোকিয়া এন 75 ।
আমি এখন যেই ভার্সিটিতে পড়ি, ডিপার্টমেন্টের নাম বলে ভাব নেই, সেইটা সম্পূর্ণই রূপার জন্য। এতে আমার বিন্দুমাত্র অবদান নাই ।
রুপা জানতো আমার তার ছেড়া , আমি মাথা খারাপ থাকলে পড়তে পারিনা, একা হলেই পাগলের মতো আচরন করি , ও আমার সাথে জেগে থাকতো সারারাত, আমি একমিনিট দুইমিনিট পড়ে রিপ্লাই দিতাম, ও একা একাই কথা বলতো , পড়া শেষ করে যখন আমি ঘুমাই যাইতাম, ও তারপর ঘুমাতো, সকাল আটটায় উঠে ক্লাস করতো, আমি দুপুরে ঘুম থেকে উঠতাম, ফ্রেস হয়ে পড়তে বসতাম, মেয়েটা ততক্ষনে কলেজ থেকে এসে আমার খোজ নেয়া শুরু করছে। আবার কথা চলতো গভীর রাত পর্যন্ত। রুপা জেগে থাকতো আমার সাথে ।
মেয়েটা সবসময় আমার পাশে থাকছে, প্রত্যেকটা সময়। এক্সের কথা মনে পরে খুব কষ্ট লাগলে ও ক্যাম্নে ক্যাম্নে যেন বুঝে যায়, মন ভালো করার জন্য উঠে পরে লাগে, পরম মমতায় আগলে রাখে বুকের ভেতর।
আমি ভালোবাসি বলেই থেমে আছি, ছবি দেখতে চাইনা, দেখতে ইচ্ছে করছে এমন কথাও তুলিনা। ভালোবাসি বলার মাস চারেক পরে একরাতে আমারে ছবি পাঠায়, ছবি দেখে প্রথম যেই শব্দ আমার মুখে আসে সেইটা হলো " আল্লাহ, এইটা তুমি কোন কাজ করলা "
কেমন গেয়ো একটা মেয়ে, গলায় মালা দিয়া আরো জঘন্য লাগতেছে । পরে আরো অনেকগুলা ছবি দেয়, এইগুলা সুন্দর আছে, শ্যামলা, চিকন নাক, গালের ভেতর ইয়া বড় টোল। আগেরটা নাকি ওর ছোটবেলার ছবি। আমার টোল ভাল্লাগে খুব, আর চেহারা যেমন হোক হোক, ভালোবাসি বলছি যখন, ভালোবাসিই ।
মেয়েটা ভালোবাসি না বলেই আমার সাথে সম্পুর্ণ মিশে যায়, আমার জীবন তখন রূপাময়, সারাদিন পড়ো আর রূপার সাথে গল্প করো ।
এডমিশন চলে আসে, পরিক্ষা দেই, ঢাবির ঘ ইউনিটে সায়েন্স থেকে 300+ সিরিয়াল, সিট 1200+ পজিশন ঠিক আছে, ইংলিশে কম পাইছি । আগেরবার পাইছিলাম 13 ,একবছর প্রিপারেসন নিয়া সেইটা এগারো। আমি জানি আমার কপালে ভালো সাবজেক্ট নাই, মাথায় আবার আকাশ ভেঙ্গে পরে, মায়ের মুখের দিকে তাকাতেও কষ্ট লাগে, মনে হয় এখনই কান্না করে দিলো, শুধু আমার জন্য পারতেছেনা ।
রুপার সাথে আমার ঝগড়া হইছে কয়েকদিন আগে, কথা নাই। রেসাল্টের পরের দিন মেয়েটা কল দিলো, আমি রেসাল্ট বলার পর অনেকক্ষন চুপ করে থাকলো, তারপর আস্তে করে বললো , ভাবছিলাম তোমার পছন্দের জায়গায় ভর্তি হলে আমি চলে যাবো একেবারে, এখন আমি তোমারে একা একা ক্যাম্নে ছাড়ি।
আর একটু কথার পর টাকা শেষ।
পরদিন আবার ফোন দেয়, আমার এমনিতেই ম্যাজাজ খারাপ, যোগাযোগ না করতে বলি কড়া সুরে। রুপা হঠাৎ কান্না করে উঠে, কান্না মিশ্রিত সুরে বলে "তোমাকে ভালোবাসি ফারহান " কানতেই থাকে পাগলের মতো , দুইঘন্টা চলে যায়, কান্না থামে না , ফিক উঠে যায় কানতে কানতে, এরমাঝে যেটুকু কথা কানে আসে সব এক,
আমি বাচবোনা তোমারে ছাড়া, পায়ে পড়ি কখনো ছেড়ে যেওনা, আমি ছাড়তে চাইলেও তুমি ধরে রেখো আমারে, কিভাবে ধরে রাখবা তুমি জানো, কিভাবে আমারে বিয়ে করবা তুমি জানো, আমি কিচ্ছু জানিনা, শুধু আমারে তোমার সাথে রাখো।
রুপা আমারে ভালোবাসি বলার সাতদিন আগে বাসায় ধরা খায়, আমার ভয়েস রেকর্ড শুনতেছিলো, ওর বাবা দেখে ফেলে, ফোন নিয়ে নেয় । ও আমারে ভালোবাসি বলে বাসায় পরে থাকা এক পুরোনো ফোন দিয়ে।
ভালোবাসি বলার দশদিন পর রূপার বিয়ে ঠিক হয় , মেয়ে পছন্দ , রূপা না করে, পাগলের মতো আচরন করে, বালিশের নিচে চাকু রাখে, মা ভয় পেয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।
দুইহাজার পনেরোর শুরুর থেকে ষোলোর শুরু পর্যন্ত ও মুটামুটি পনেরোটা ফোন ধরা খায় , গোটা পাঁচেক বিয়ে ভাঙ্গে, নরমাল বিয়ে ভাঙ্গা না, হাতে আংটি পড়িয়ে যাওয়ার পরও বিয়ে ভাঙ্গে। আংটি ফেরত দেয়া হয়।
একবার বরপক্ষের ছেলে এসে খুব আদূরে গলায় জিজ্ঞেস করলো, আপনারকি পছন্দের কেউ আছে? থাকলে নিশ্চিন্তে বলতে পারেন, আমি কাউকে বলবোনা , আমি অমন ছেলেই নাহ।
রুপা আমার কথা বলে, পরদিন লোকমুখে ফিসফিসানি শুনা যায়, ওমুকের মেয়েতো বগুড়ার এক ছেলের সাথে প্রেম, এইজন্যই তাইলে এতগুলা বিয়া ভাঙছে।
রুপা আমার কাছে পুরাই একটা প্যারানরমাল ক্যারেক্টার, আমি তারে দেখিনি, হাত ধরিনি, ভালোবাসি বলিনি ঠোটের সামনে, হুদাই ভালোবাসি, অযৌক্তিক ভালোবাসা। আমি কখনো ভাবিওনাই ওর সাথে আমার দেখা হবে।
মার্চ এপ্রিল থেকে কথা , নভেম্বর এ প্রেম, পরের বছর জানুয়ারিতে সে যখন তৃতীয়বারের মতো ফোন ধরা খায়, তখন ওর ক্লাস অফ করে দেয়া হয় , ক্লাসের বই, কলেজ ড্রেস, ছোটবেলার ডায়েরি, আনাড়ি হাতে আকানো ড্রয়িং এর খাতা পুড়ায় ফেলা হয় সব ।
আমি কখনো ভাবিনি রূপাকে আর দেখবো, কারন অনেকগুলা, আমার কাছে ওতদূর যাওয়ার টাকা নাই, একা একা জার্নি করিনি কখনো, আমি হইলাম ফার্মের মুরগি, রূপাও বের হতে পারবেনা ।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির হরতাল চলতেছে, ক্লাস শুরু হয়নি পুরোপুরি, বাবার বাইকে চড়ে বাসায় আসার সময় ফোনে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছি, জিজ্ঞেস করলাম কই তুই, সে উত্তর দিলো, ময়মনসিংহ, গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে আসছি।
আমার কি হইলো আমি জানিনা, বাইকে থেকেই রুপারে ম্যাসেজ দিলাম , আমি আসতেছি। আমার পকেটে তখন দুই টাকা ।
এক বড় ভাইরে ফোনে বললাম, ভাই চিটাগাং যাবো আপনারে নিয়া , টাকা নাই, ম্যানেজ করেন। ভাই রাতেই এক হাজার টাকা পাঠাইলো ।
বগুড়া থেকে গাড়ি বন্ধ, দুইমাসের হরতাল চলতেছে, আমি যাবই, পরদিন দুপুরে পাচশ টাকা টিকেট দিয়া একটা মফিসে করে ঢাকায় আসলাম । আসার পর বাসায় বললাম ঢাকায় আসছি, বাবা অতি রাগে পাথর হয়ে ফোন কেটে দিলেন।
বিমানবন্দর রেলস্টেশন এ দাড়ায় আছি ওই ভাইরে নিয়ে, সাতটা থেকে পাক খাচ্ছি, ট্রেন নাই, এখনো আসেনি, মশার কামরে পা ফুলে কলাগাছ।
একসময় ভাবলাম কমলাপুর যাই, কমলাপুরে সিট পাবো, এইখানে ভিড় বেশি, ট্রেনে করেই কমলাপুর গেলাম, নেমে শুনলাম চট্টগ্রাম গামী ট্রেনটি এইমাত্র প্লাটফরম ছেড়ে চলে গেলো। বড়ই সৌন্দর্য ।
আস্তে করে দেয়াল টপকাইলাম, টিকেট নাই আমাদের কাছে।
রাত সাড়ে বারোটা বাজে । সায়েদাবাদে বাস নাই একটাও । এই পরিস্থিতিতে বাস যাবেনা । আমার জিদ চেপে গেছে ,আমি যাবো, আজকেই যাবো ।
পত্রিকা নিয়া এক মাইক্রো যাচ্ছে ওইদিকে, দুইজন মিলে উঠে বসলাম । মাইক্রো যাচ্ছে
একদম ফাকা রাস্তা, রোডলাইট ছাড়া কিচ্ছু চোখে পরেনা, গাড়িতো দূরের কথা, একটা কুত্তাও নাই । আমার ভয়ে কলিজা শুকাই যাচ্ছে, পেছনে দুইজন অপরিচিত মানুষ, অন্ধকারে তাদের চেহারা দেখা যাচ্ছেনা, আমাদের জবাই করে ফালায় রাখলেও দেখার কেউ নাই। আগের দিন পেট্রোল বোমায় চারজন মরে গেছে, এই গাড়িভর্তি কাগজ, একবার আগুন লাগলে আমার খোরমাও পাওয়া যাবেনা। ভুতুরে পরিবেশে দুইভাই অন্ধকারে গুটিসুটি মেরে বসে আছি।
কুমিল্লার আগে আগে দ্রিম করে একটা শব্দ হলো, গাড়ি লাফায় উঠলো একহাত, চোখের সামনে মায়ের মুখ , পাশে বসা ভাই দেখি আমারে শক্ত করে চেপে ধরছে। সামনে থেকে কে যেন বলে উঠলো গাড়ির টায়ার পাংচার। আমি বুকে পানি পাইলাম।
কুমিল্লা না গেলে চাকা ঠিক করা যাবেনা, ওই অবস্থাতেই খোড়ায় খোড়ায় মাইক্রো যাচ্ছে। ফেটে যাওয়া চাকা থেকে পর্যাবৃত্ত ছন্দে বিকট কটকট শব্দ। একটু পরপর মাইক্রো একদিকে কাইত হয়ে যায়।
কুমিল্লায় চাকা ঠিক করা হলো , রওনা দিলাম , আধাঘণ্টা পর আবার পাংচার ।
এইবার পত্রিকা তোলা হলো ছোট পিকাপের উপর, কাগজ নেয়ার পর দেখা গেলো মানুষ উঠার জায়গা নাই , শীতের রাত, তিনটা বাজে, রাস্তায় গাড়ি নাই, আমরা কই যাবো ।
বিসমিল্লাহ বলে পিকাপের মাথায় কাগজের বান্ডিলের উপর বসে গেলাম , আসলে বসা না, ঝুলে থাকা, পাছার একপাশের নিচে কাগজ আরেকপাশ শূণ্যে। হাতের ভেতর প্রাণপনে একটা দড়ি ধরে রাখছি , ফাকা রাস্তা, বুলেটের মতো গাড়ি যাচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস চামড়া ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে হাড়ের ভেতর । প্রবল বেগে মোড় নেয়ার সময় পুরো শরীর পিকাপের ছাদ ছেড়ে রাস্তার উপর চলে যাচ্ছে, আমি হাতের ভেতর পুলসিরাতের দড়ি ধরে গুণগুণ করে গান গাচ্ছি, এই পথ যদি না শেষ হয় ......
রূপার সাথে আমার দেখা হলো পরিচয়ের এক বছর দুইমাস পর এক পুরোনো মহাসড়কের পাশের অখ্যাত পার্কে, ও বোরকা পরে আসছে , এক সিমেন্টের বেঞ্চে বসে আমি রুপার দিকে তাকায় আছি, আমি আমার জীবনে এত ফর্সা মেয়ে দেখিনি ,এত সুন্দর মেয়ে দেখিনি, টিভিতেও দেখিনি । এই মেয়েটা আমার সাথে প্রেম করলো কেন, রূপা এত বোকা আমিতো আগে জানতাম না।
আমি ঘোর লেগে কথা বলতেছি, বারবার গালের দিকে তাকাচ্ছি , চুমু দিতে ইচ্ছা করতেছে , সাহস হচ্ছেনা আমার, কি নাকি মনে করবে। দেড়ঘন্টা হাত ধরে বসে থাকলাম, আমি যখন রুপাকে চুমু দেই তখন প্রায় চলে আসবো আসবো অবস্থা। রুপা কিচ্ছু করেনি, বাধাও দেয়নাই । পরে বলছে ও নাকি আমার থেকেও বেশি ঘোরের মাঝে ছিলো , নাইলে মুখের উপর হাত দেয়ার কথাটা অন্তত মনে থাকতো ।
বাসায় আসার একদিন পর এক আননোন নাম্বার থেকে কল আসে, রূপার ফোন, ওর মা ফোন দেখে ফেলছে, নিয়ে নিছে ওইতা , মারছে ওরে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো, ও আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারেনা, দমবন্ধ হয়ে যায়, সারা রাত কান্না করে, আমার নিজের কষ্ট আমার কাছে ব্যাপার না, ওই কষ্ট পাচ্ছে ভাবতেও ইচ্ছা করেনা কখনো , ওকে যেভাবেই হোক ফোন কিনে দিতে হবে, টাকা লাগবে আমার, কি করবো এখন ?
মাস দুইয়েক আগে এক কাজিন ক্যামেরা পাঠাইছে, স্যামসাং, এখনো দশটা ছবি তুলিনি। আমি সকাল দশটায় রূপার সাথে কথা বলে দুইটায় ক্যামেরা বিক্রি করে দেই, দামদর করার সময় নাই। পুরা তিনহাজার টাকা ওরে পাঠাই, এক হাজার টাকা দিয়ে ফোন কেনো, বাকি দুইহাজার রেখে দাও , পরে ধরা খাইলে কিনে নিবা।
আমার ফাস্ট ইয়ারটায় আমার কাছে খাওয়ার টাকা না থাকলেও পকেটে এক্সট্রা একহাজার টাকা সবসময় থাকছে, যেকোনো সময় যোগাযোগ বন্ধ হবে, মেয়েটা আমার সাথে কথা না বলতে পারলে পাগলের মতো কান্নাকাটি করবে, আমি সহ্য করতে পারবোনা।
বিকেলে রুমে আসার সময় প্রথমে ফোনের কার্ড কিনতাম, তারপর টাকা থাকলে বাকিসব।
আমি প্রত্যেকবার রূপার সাথে কথা বলতাম জীবনের শেষ কথা মনে করে, এ কল কাটার পরেই হয়তো ওর ফোন নিয়ে নিবে ,তারপর দিন বিয়ে, মেয়েটাকে আর পাবোনা কখনো, আমার ফোনে ওর কল আসা মাত্র আমার পৃথিবী শূন্য হয়ে যেতো, পৃথিবীতে কেউ নাই আমার, কিচ্ছু নাই, আমি আমার প্রেমিকাকে জীবনের শেষবার ভালোবেসে নিচ্ছি।
কথা বলতে বলতে ফোন কেটে গেলে, কিংবা একটু শব্দ হলে আমার কলিজা উড়ে যায়, এই হয়তো ওর আম্মু দেখে ফেলছে, ফোন কেড়ে নিচ্ছে এখন ।
আমি ফোনের এপাশ থেকে আমার প্রেমিকার চিৎকার শুনছি অসংখ্যবার , লাল বাটনে তখনো হয়তো চাপ পরেনি , রূপার মা ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়ার জন্য ওরে মারতেছে। আমার সব মনে আছে একদম নতুনের মতো।
রুপা আমার সাথে কথা বলতো মুটামুটি সংগ্রাম করে, সিড়িঘর, বেলকোনির কোন, দরজার পেছনে । শুধু ওর ফোনে চার্জ দেয়ার গল্প দিয়েই একটা উপন্যাস লেখা যাবে ।
ওর সাথে আমার দ্বিতীয় বার দেখা হয় পনেরো সালের এপ্রিল মাসের পাচ তারিখ। এইটাই শেষ। এরপর রুপাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। দরজার সিটকিনি ভেঙ্গে ফেলা হয়, ঘুমাইতে দেয়া হয় মায়ের সাথে , ওর খুব ঘনঘন ফোন ধরা খাইতে থাকে, আমার দিনরাত সব সমান হয়ে যায়, লেখাপড়া করিনা, ক্লাসে যাইনা, মাসের পর মাস মাথার উপর টেনশন , আমি বিয়ের জন্য জোরাজুরি করি, ও পালায় আসবেনা, অনেক কষ্টে রাজি করাই, টাকা ম্যানেজ করি, বাহিরে থাকার জায়গা ম্যানেজ করি , রুপা বসে থাকে, ডেট পিছায় দেয়, ওর ছোটভাই দেশে আসবে , তিনি অনেক ভালো, রুপাকে ভালোবাসেন খুব, ছোটভাই দেশে আসেনা , আবার আসার পর একের পর এক পলিটিক্স শুরু করে, আমি বড়শিতে লটকে থাকি মাসের পর মাস। ফলাফল আমার একটা ইয়ার ড্রপ।
রূপার ঘর থেকে কয়েকবার দড়ি খুজে পাওয়া যায়, একবার দরজা ভেঙ্গে নিয়ে আসা হয় যখন ও দড়িতে প্রায় ঝুলে যাচ্ছে। হাতে কেটে ভেসে দেয়, কিচ্ছু নাহ খেয়ে থাকে দশদিন পনেরোদিন।
আমার বাসা থেকে চেষ্টা করা হয় অসংখ্যবার, তারা পরোক্ষভাবে অপমান করে, আমার বাবা সরাসরি একবার রুপারেই বলে, মা, তুমি আসতে চাইলে চলে আসো, আমি নিজে যেয়ে তোমারে নিয়ে আসবো। রুপা আসতে চায়নি, কেন আসতে চায়নি আমি জানিনা, শেষের দিকে আমার বাবা মার ফোন ধরাই বাদ দিয়ে দেয়।
তখনো আমার সাথে সুযোগ পেলেই যোগাযোগ করতো , সাহস দেয় আমারে, অপেক্ষা করো বাবু , সব ঠিক হয়ে যাবে ।
কিচ্ছু ঠিক হয়না আমার, ওর বিয়ে দেখা হচ্ছে, ছেলের খবর পাচ্ছি, ওর ভাই আমারে সরে যেতে বলছে, মেরে ফেলার জন্য লোকজন ঠিক করছে, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি পুরোপুরি, হাত পা ধরে চলে আসতে বলি, যেই আমি এতটাই নির্লিপ্ত যে চোখ পানি দিয়ে ভরে গেলেও গলা কখনো কাপতোনা , সেই আমি রাতে দিনে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করি, আমার কসম দিয়ে দেই, বিয়ে কইরোনা তুমি, আমি মরে যাবো সোনা। সময় কাটে না, ট্যাবলেট খেয়ে দিনের পর দিন পরে থাকি।
এপ্রিলের দিকে মাসে রুপার হাতে আংটি পড়ায় দিয়ে যায় , তখন ও খালার বাসায় , রুপা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই হারপিক খায়, চারদিন হাসপাতালে থাকে, বাসায় এসে কয়েকমিনিট কথা হয়, আমি পাগল হয়ে যাই একেবারে, যেভাবেই হোক তক্ষুনি খালার বাসা থেকে চলে আসতে বলি,রাখছি বাবু বলে ফোন কেটে যায়, যোগাযোগ শেষ। ও আর আসেনা।
দুইহাজার ষোল সালের এপ্রিল মাসের ঊনত্রিশ তারিখ মধ্যরাতে আমি যখন উন্মাদের মতো রুপার আইডি থেকে ওর পরিচিতদের আইডিতে একটাবার ওর খবর পাওয়ার জন্য ঘুরে বেরাচ্ছি তখন ওর ইনবক্সে একটা ম্যাসেজ আসে ,
আপনেকি ফারহান
- হ্য, রুপা কেমন আছে?
রূপার আজকে বিয়ে হইলো, এতদিনে সে বিয়ের পিড়িতে বসছে।। রূপার আশেপাশে অনেক মানুষ , এরমাঝে সে একবার হাত ধরে আমারে বললো আপনারে খবরটা জানাইতে , তাই জানাইলাম, ভালো থাকবেন , বাই।
সময় অনেক দ্রুত যায় , সময় অনেক দ্রুত যাচ্ছে ।আজ দিয়ে দুইবছর হয়ে গেলো। রুপা জানো , তুমি আমার প্রথম প্রেম না , আমি কথা দিচ্ছি বাবুনি, তুমিই আমার শেষ প্রেম।
যেখানেই থাকো ভালো থাইকো , ভালোবাসি এখনো , অনেক ভালোবাসি।
লেখা :
ফয়সাল আমিন
: