গল্পঃ ভালোবাসা
হাসেম সাহেবের এখন রাতে ঘুম হয়না। কিন্তু মাসখানেক আগেও ডিনার শেষ করে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিতে না দিতেই ঘুমিয়ে পড়তেন। হাসেম সাহেবের তেষ্টা পেয়েছে। হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালালেন। জাহানারা জগ ভর্তি পানি এনে রেখেছে কিন্তু গ্লাস আনতে ভুলে গেছে। হাসেম সাহেব লেপের ভেতর থেকে বের হলেন। জাহানারা ঘুমাচ্ছে। জাহানার মুখের দিকে তাকালে বড্ড মায়া হয় তার। ইদানিং হাসেম সাহেবের মনে হয় তিনি জাহানারার প্রতি সারা জীবন অন্যায় করেছেন। এই সংসারে হয়তো জাহানারা সুখী হতে পারেনি। যখন প্রথম জাহানারা এই সংসারে আসে তখন সে ছিলো এক হাস্যোজ্জল যুবতী। যার ঠোটের কোনে সবসময় হাসি লেগেই থাকতো। যেই মেয়েটা ছোট ছোট কারনে হাসতে ভালোবাসতো, আয়নার সামনে বসে সাঁজতে ভালোবাসতো, খুব মনোযোগ দিয়ে পায়ে আলতা পরতে ভালোবাসতো, রাত জেগে বই পড়তে ভালোবাসতো। যেই জাহানারা আজ হাসতে ভুলে গেছে। শেষ কবে জাহানারাকে তিনি হাসতে দেখেছেন তার মনে পরেনা। অফিসের ক্লান্তিকর দিনগুলোর শেষে হাসেম সাহেবের কখনো মুগ্ধ চোখে জাহানারার দিকে তাকানোর সময় হয়নি বলে, ভালোবেসে জাহানারার সাঁজের প্রশংসায় দুটো কথা বলা হয়নি বলে জাহানারা আয়নার সামনে বসা ছেড়েছে সেই কতো বছর আগে। রাতে ঘরে আলো থাকলে হাসেম সাহেব ঘুমাতে পারেন না। দু একবার একটু রুক্ষ স্বরে জাহানারাকে বলেছিলেন “রাত জেগে কি সব বই পড়ো। এসব পড়ার কোন মানে হয়। অযথা সময় নষ্ট। লাইট বন্ধ করো প্লিজ আমার ঘুমাতে হবে কাল অফিস আছে।” (Bangla Love Story 2019)
জাহানারা প্রতিবাদ করেনি বই রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছিলো। হাসেম সাহেব অন্ধকারে জাহানারার উষ্ণ নরম শরীরটাকে ঠিকই কাছে টেনে নিয়েছিলেন। ভালোবাসায় নয় চাহিদা থেকে। শরীরের প্রতি শরীরের চাহিদা।
দেখতে দেখতে কতোগুলো বছর কেটে গেছে। জাহানারার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। বয়সের কারনে সাদা হয়ে যাওয়া ঘনকালো চুলগুলো মেহেদির রঙে রাঙানো হয়েছে। তবুও তার সৌন্দর্য যেন কমেনি। আশ্চর্যের কথা এতো বছর সংসার করার পরে এখন মাঝে মাঝে হাসেম সাহেব জাহানারার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হন। কিন্তু তিনি কিছু বলতে পারেন না। প্রশংসা করার মতো বা ভালোবেসে দুটো প্রেমের কথা বলার মতো সম্পর্ক তাদের মাঝে কখনো গড়ে উঠতে পারেনি। তিনিই কখনো চেষ্টা করেননি। (Bangla Love Story 2019)
.
রান্নাঘরে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে দরজার দিকে তাকালেন হাসেম সাহেব। তার মনে পড়লো তার তেষ্টা পেয়েছে। তিনি গ্লাস আনার জন্য বিছানা থেকে নেমেছেন। হাসেম সাহেব ঘর থেকে বের হয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলেন। এতো রাতে রান্না ঘরে জাহিদকে দেখে তিনি বেশ অবাক হলেন।
বাবাকে দেখে জাহিদ বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। এমনিতে সে বাবাকে ছোট থেকে বেশ ভয় পায়। তার উপর অনেকটা বাবার অমতেই সম্পর্ক করে বিয়ে করেছে এবং বাবার ঘাড়ে বসে খাচ্ছে। কেননা পড়ালেখা শেষ করেও সে বেকার ঘুড়ছে। তার স্ত্রী তিথির ধারণা সে বোকা ধরনের মানুষ এজন্য চাকরি সে এতো সহজে পাবেনা। এতোকিছুর পরেও বাবা তাকে বাসায় রাখছেন খাওয়াচ্ছেন এটা অনেক বড় ব্যাপার। জাহিদ চেষ্টা করে সবসময় বাবাকে এড়িয়ে চলার। চেষ্টা করে যাতে বাবার মুখোমুখি না হতে হয়। ভুল করে মুখোমুখি হয়ে গেলেও সে মাথা নিচু করে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরে। এ নিয়ে অবশ্য তিথি তাকে নিয়ে বেশ হাসাহাসি করে। ভীতুর ডিম বলে ডাকে। জাহিদের ইচ্ছা করছে দ্রুত এখান থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু সম্ভব না কেননা বাবা তার দুহাতে দুকাপ গরম চা। জাহিদকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসেম সাহেব বললেনঃ
-এতো রাতে চা কে খাবে?
.
--জ্বি বাবা আমি।
.
-তাহলে দুকাপ কেন? (Bangla Love Story 2019)
.
এ প্রশ্নের জবাবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা জাহিদ। এককাপ তার জন্য অন্যকাপ তিথির জন্য। বাবাকে এটা বললে বাবা নিশ্চই বলবেন “ভালো তো বউকে মাঝ রাতে চা বানিয়ে খাওয়াও। পারলে রান্না করাটা শিখে নাও। শাড়ি পরে ঘরে থাকো। কাজ কর্ম তো তোমাকে দিয়ে হবেনা।”
বাবা ছেলের মাঝে একধরনের নিরবতা। নিরবতা ভাঙ্গলো তিথি। “দুকাপ চা বানাতে তোমার এতোক্ষন সময় লাগে।” কথাটা বলতে বলতে তিথি রান্না ঘরের সামনে এসে হাসেম সাহবকে দেখে চুপ করে গেলো। তিথি তার শশুড়কে দেখে কোন কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। হাসেম সাহেব একটু সরে দাঁড়াতেই জাহিদ রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেলো। হাসেম সাহেব পানি খেয়ে নিজের ঘরে ফেরার সময় তিথির হাসির শব্দ শুনতে পেলেন। এক মুহূর্তের জন্য তার মনে হলো তিথি মেয়েটা ভাগ্যবতী। তার ছেলে জাহিদ একটু বোকা এবং কর্মক্ষেত্রে অপদার্থ হলেও স্বামী হিসেবে তার থেকেও যোগ্য এবং উত্তম কেননা তিথি মেয়েটা তার সংসারে সুখী।
হাসেম সাহেব বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। (Bangla Love Story 2019)
.
তার ঘুম ভাঙ্গলো বেশ দেরিতে। চোখ খুলে দেখলেন জাহানারা পাশে নেই। ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় চেয়ারে বসলেন। জাহানারা তাকে চা দিয়ে গেলো। তিনি লক্ষ্য করেছেন জাহানারা প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে তেমন কথা বলেনা। এ বাসার সবার সাথেই তার কেমন যেন একটা দূরত্ব। তার স্ত্রী তার ছেলে কিন্তু তবুও অনেক সময় মনে হয় তিনি তাদের আপন কেউ নন। তারা সবাই তাকে পর ভাবে। অথচ এই মানুষগুলোর জন্য তিনি কি না করেছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করে আরামের একটা জীবন দিয়েছেন। কোনকিছুর অভাব বোধ করতে দেননি কখনো। এমনকি জাহিদের বউ তিথি মেয়েটাও তাকে প্রচন্ড ভয় পায়। জাহানারা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হাসেম সাহেব বললেনঃ
-কিছু বলবে?
.
--জাহিদ কিছু টাকা চেয়েছিলো।
.
-কেন?
.
--তার নাকি কি প্রয়োজন।
.
-তার শশুড়বাড়ি থেকে নাকি টাকা দেয়ার কথা। কই কিছুই তো দিলোনা। নাকি দিয়েছে আমি জানিনা?
.
--বৌমা বলেছে তার বাসায় সমস্যা। টাকা দিতে দেরি হবে। (Bangla Love Story 2019)
.
-টাকা দিবেনা ভালো কথা। আমি তো টাকা চাইনি তাদের কাছে। তারা নিজেরাই বলেছে ছেলেকে টাকা দিবে। মানুষ শুনিয়ে এসব কথা বলার কি কোন প্রয়োজন ছিলো? আমার তো টাকার অভাব নেই। মানুষকে শুনিয়েছে যখন তাহলে এখন টাকা দিচ্ছেনা কেন? বিয়ে বাড়িতে এমনিতেই ঠিকমতো অতিথী আপ্যায়ন করতে পারেনি। থাক ওসব কথা মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দাও। তোমার অষুধ আছে?
.
--না।
.
-অষুধ শেষ হয়েছে আনতে হবেনা। ছেলেকে তোমার অষুধ আনার জন্যেও টাকা দিয়ো।
.
জাহানারা হ্যাঁ না কিছু না বলে ঘরে ঢুকলো। খবরের কাগজ পড়তে ভালো লাগছেনা হাসেম সাহেবের। দিনের এই সময়টা তার খুব বিরক্তিতে কাটে। কি করে সময় কাটাবে ভেবে পায়না। টিভি দেখার অভ্যাস তার কখনই ছিলোনা। পাঞ্জাবীর উপর চাদরটা পেঁচিয়ে বাসা থেকে বের হলেন তিনি। বন্ধুর কাছে যাওয়া যায়। হাসেম সাহেবের বন্ধু রায়হান পেশায় একজন হোমিও চিকিৎসক। পরিপাটি শীতাতাপনিয়ন্ত্র
িত চেম্বারে বসে থাকেন। রোগি তেমন নেই বললেই চলে। হোমিও চিকিৎসায় মানুষের আস্থার জায়গা কম। সেই কম মানুষদের মধ্যে ভাগ বসাচ্ছে বিভিন্ন হারবাল চিকিৎসা। হাসেম সাহেব মাঝে মাঝেই সেখানে যান গল্প করতে। চেম্বারে ঢুকার সময় হাসেম সাহেব লক্ষ্য করলেন পশ্চিম দেয়ালে রায়হান আর তার স্ত্রী দুজনের হাসি মুখের একটা বিশাল বাঁধাই করা ছবি টাঙ্গানো। এর আগে তিনি অনেকবার এসেছেন কিন্তু ছবিটা আগে কখনো লক্ষ্য করেননি। এটা কেমন কথা। এতো বড় ছবি কিভাবে চোখ এড়িয়ে যায়। হাসেম সাহেবকে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়হান সাহেব বললেনঃ
. (Bangla Love Story 2019)
-ছবিটা সেন্ট মার্টিনে তোলা। গত মাসে তোর ভাবিকে নিয়ে গেছিলাম। বাঁধাই করতে দিয়েছিলাম পড়শু দিয়ে গেছে। ডাক্তাররা কেউ তাদের চেম্বারে এভাবে ছবি টাঙ্গিয়ে রাখেনা। তাই হয়তো অবাক হচ্ছিস। আয় বোস।
.
হাসেমের যখন নতুন বিয়ে হয় তখনো হাসেম নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত। বিয়ের কিছুদিন পরে জাহানারা বায়না ধরেছিলো তার খুব পাহাড় দেখার শখ। হাসেম বলেছিলো নিয়ে যাবে একসময় এখন নয়। পরে জাহানারা আর কখনো বলেনি হাসেম সাহেবের ও সময় হয়নি নিয়ে যাওয়ার। ছবিটা দেখে হাসেম সাহেব মনে করার চেষ্টা করলো তাদের কি এমন কোন ছবি আছে? নাহ্ নেই তো। কখনো তোলা হয়নি। অথচ ছবি তোলা জাহানারার ভালো লাগার ব্যাপার ছিলো। বিয়ের আগে মামা জাহানারার এক এলবাম ছবি নিয়ে এসেছিলেন। সাদা কালো ছবিতে হাস্যোজ্জল এক যুবতীর ছবি দেখেই হ্যাঁ বলেছিলো হাসেম। নারীর জীবন বড়ই অদ্ভুত। তারা খুব সহজে নিজেকে মেরে ফেলে বিয়ের পরে নতুন কনে জন্ম নেয়। যে জন্মে তাদের শখ, স্বপন. আর চাওয়াগুলো বিসর্জন দেয়। আসলেই কি এটা তাদের জন্য খুব সহজ? নাকি খুব কষ্টের যেটা কখনো কেউ উপলব্ধি করতে পারেনা।
বন্ধুর অনুরোধে তার বাসায় দুপুরের খাবার খেলেন হাসেম সাহেব। তাদের সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে আড্ডা দিলেন। আশ্চর্যের বিষয় দুপুরের চা টা রায়হান সাহেব নিজে বানালেন। হাসেম সাহেব লক্ষ্য করলেন বন্ধু আর বন্ধু পত্নীর ভালোবাসা আর খুনসুটি দেখে তার ঈর্ষা হচ্ছে। এমন একটা সংসার তার হলে কি এমন ক্ষতি হতো। বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটছেন তিনি। রিকশা পাচ্ছেন না। একটা রিকশায় দুজন যুবক যুবতিকে যেতে দেখলেন। কি অদ্ভুত তিনি পুরো জীবন কাটিয়ে দিলেন ভালোবাসার স্বাদ না নিয়ে। রাস্তার পাশে একজন লোক বই বিক্রি করছে। হাসেম সাহেব কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আবার ভ্যানগাড়ির কাছে ফিরে আসলেন। দুটো বই কিনে ফেললেন। জাহানারা বই পেলে খুশি হবে কি না তিনি জানেন না। তবুও কেনা।
ঘন কুয়াশা পড়েছে। রিকশা পাওয়া যাচ্ছেনা। একটা খালি রিকশা দেখে ডাক দিলেন। বৃদ্ধ একজন রিকশা চালক রিকশা নিয়ে এগিয়ে এলো।
.
--কই যাবেন? (Bangla Love Story 2019)
.
-তোমার রিকশায় ব্যাটারি লাগাওনি। এখন তো সব রিকশা ভ্যানে দেখি ব্যাটারি লাগিয়ে ফেলেছে। কেউ প্যাডেল মারতে চায়না।
.
--ব্যাটারি লাগানোর টাকা নাই স্যার। যাবেন না? কেউ চড়তে চায়না স্যার। ব্যাটারি ওয়ালা রিকশা তাড়াতাড়ি পৌঁছায় দেয়। ভাড়া নাইলে দুই টাকা কম দিয়েন, চলেন স্যার।
.
-ধার নিয়ে তো ব্যাটারি লাগিয়ে নিতে পারো।
.
--টাকা জমাচ্ছি স্যার। মেয়েটার বিয়া সামনে। মেলা টাকার দরকার।
.
কথার প্রতিউত্তরে বলার মতো কিছু পেলেন না হাসেম সাহেব। রিকশায় বসে বসে তিনি তিথির বাবার অবস্থার কথা ভাবছেন। কেন যেন বারবার তিথির বাবার সাথে লোকটার বড্ড মিল খুঁজে পাচ্ছেন। বাসা পৌঁছে ভাড়ার থেকে দশ টাকা বেশি দিলেন। দরজা খুললো তিথি। দরজা খুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়েটা এ বাসায় এতোদিন যাবদ থাকছে কিন্তু হাসেম সাহেব কখনো কথা বলেননি। কিন্তু কি মনে করে আজ কথা বললেনঃ
-তোমার মা কোথায়?
.
--জ্বি ঘুমাচ্ছেন।
.
-অসময়ে ঘুমাচ্ছে কেন?
.
--মায়ের শরীর ভালো নেই। ব্লাড প্রেসারটা হুট করে বেড়ে গেছিলো। আপনার ছেলে বাসায় ডাক্তার নিয়ে এসেছিলো।
.
-আচ্ছা।
.
তিথি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো। হাসেম সাহেব ঘরে ঢুকে আলো জ্বালালেন। হাতের বই দুটো টেবিলের উপর রেখে জাহানারার পাশে এসে বসলেন। জাহানারা ঘুমাচ্ছে, তিনি জাহানারার কপালে হাত রাখতেই জাহানারা চোখ খুলে বসতে যাচ্ছিলো। হাসেম সাহেব উঠতে বাধা দিয়ে শুয়ে থাকতে বললেন।
-এখন কেমন লাগছে?
.
--ভালো।
.
-জাহানারা…
.
--কিছু বলবে?
.
-তুমি পাহাড় দেখতে যাবে?
.
জাহানারা অবাক হয়ে হাসেম সাহেবের দিকে তাকায়ে আছে। হাসেম সাহেব বললেনঃ
-আচ্ছা তুমি এখন রেস্ট নাও এ নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো।
.
হাসেম সাহেব রান্নাঘরের দিকে গেলেন। তিথি রান্না করছে। তিনি রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বললেনঃ
-বৌমা এককাপ চা দিতে পারবে?
.
শশুড়ের মুখে এই প্রথম বৌমা ডাক শুনলো তিথি। তিথির ধারণা মানুষটা তাকে একদম পছন্দ করেনা। কিন্তু আজকের এই মানুষটা অন্যদিনের মানুষের সাথে বড্ড বেমানান। আজকের এই মানুষটাকে কেন যেন হুট করে পরিবারের অংশ মনে হলো তার। তিথি বললোঃ
--জ্বি বাবা দিচ্ছি।
.
-তোমার বাবা মা কেমন আছেন?
.
--জ্বি ভালো আছেন।
.
-তোমাদের বিয়ের পরে তাদের কখনো এ বাসায় আসতে দেখলাম না। একদিন দাওয়াত করো তাদের। আর শোন তোমার বাবাকে বলবে টাকা পয়সার কথা যেন না ভাবে। আমিতো তাদের কখনো নিজের থেকে টাকা চাইনি। তারাই বলেছিলেন।
.
--জ্বি বাবা।
.
একটা মানুষ যতোই নিজের ভুল বুঝতে পারুক রাতারাতি বদলাতে পারেনা। বদলাতে সময় লাগে। তাড়াতাড়ি বদলে গেলেও বাকি সবাই সেটা সহজে নিতে পারেনা। হাসেম সাহেব সিন্ধান্ত নিয়েছেন তিনি বদলাবেন। জাহানারার আপন হওয়ার চেষ্টা করবেন। হাসেম সাহেবের ইচ্ছা করছে জাহানারার সাথে একটু কথা বলতে। বই দুটো তার হাতে দিয়ে বলতে তুমি বসে পড়ো। কিন্তু পারছেন না। কেননা জাহানারা ঘুমাচ্ছে আর তারও সংকোচ বোধ হচ্ছে। জাহানারা একটু সুস্থ্য হলে তাকে নিয়ে সিলেট যাবেন পাহাড় দেখতে। জাহানারার সাথে হাসি হাসি মুখে বসে গল্প করবেন। একটা ক্যামেরা ভাড়া করতে হবে দুজনের ছবি তোলার জন্য। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হাসেম সাহেব ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমিয়ে পড়তেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন স্বপ্নে তিনি আর জাহানারা দুজনে পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। মেঘগুলো খুব কাছে মনে হচ্ছে। চারিদিক ঘন কুয়াশা। স্বপ্নে তিনি দেখছেন তাদের বয়সটা কমে গেছে। জাহানারাকে কুড়ি বছরের যুবতিদের মতো দেখাচ্ছে। পায়ে আলতা দিয়েছে। জাহানারার হারানো মুখের হাসিটা ফিরে এসেছে। তাদের আত্মার মাঝের দূরত্বটা যেন কমে গেছে। জাহানারা তার হাতটা ধরে রেখেছে। খুব আপন মানুষের মতো কথা বলছে।
.
ঘুম ভাঙ্গার পরে কিছু স্বপ্নের রেষটা থেকে যায়। হাসেম সাহেব আজ তেমনি একটা স্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্নের কারনে আনন্দে যেন তার বুকটা ভরে গেছে। জাহানারা তখনো দেয়ালের দিকে পাশ ফিরে ঘুমাচ্ছে। হাসেম সাহেব জাহানারার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য তার গায়ের উপর হাত রাখলেন। জাহানারার গায়ে হাত রাখতেই হাসেম সাহেবের বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। তিনি বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলেন। জাহানারাকে তারপাশে ফিরালেন। হাসেম সাহেবের পুরো শরীরটা ঘামে ভিজে গেছে। চোখ ছলছল করছে। জাহানারার প্রাণহীন দেহটা তার চোখের সামনে। তিনি বারবার জাহানারার নাম ধরে ডাকছেন। কিন্তু জাহানারার এ ঘুম যে ভাঙ্গবার নয়।
ভালো লাগলে আমার ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করবেন..এখানে নিয়মিত ভালোবাসার গল্প ও অন্যান্য গল্প পোষ্ট করা হয়.. আপনাদের গল্পটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাবেন...আপনাদের মতামতের আশায় থাকবো...
Key Words:
bangla love story, love story, bangla, facebook love story, love, valobashar romantic premer golpo bangla, romantic valobashar golpo, valobashar koster golpo bangla, bangla, valobashar golpo, valobashar golpo sms, bangla sad valobashar golpo, romantic love story in bengali, valobashar golpo kotha, ভালোবাসার গল্প 2018, ভালোবাসার গল্প কাহিনী, ভালোবাসার গল্প ছবি, ভালোবাসার গল্প 2017, ভালোবাসার গল্প পরতে চাই, ভালোবাসার গল্প সিনেমা, ভালোবাসার গল্প ও কবিতা, ভালোবাসার গল্প পড়তে চাই, bangla love story book, bangla love story facebook, bangla love story kobita, bangla sad love story pdf, bengali love story golpo mp3, bangla love story video, bengali love story poem, bangla love story mp3, বাংলা ভূতের গল্প, ভুত, ভয়ানক ভূতের গল্প ২০১৮, bangla vuter গল্প, ২০১৯ এর ভালোবাসার গল্প, 2019 love story, 2019 best love story, valobasar golp 2019
: