ছোট গল্পঃ পকেট মারের প্রেম
হলের ভিতরে কেমন ঈদ ঈদ ভাব। প্রায় সবাই
এসেছে জোড়ায় জোড়ায়। আর আমি একা।
গুটিশুটি মেরে বসে পরলাম একটা কোণায়।
আমার চারপাশ প্রায় ফাকা। লজ্জা লজ্জা
লাগছে।
সিনেমার নাম দেখাচ্ছে। হঠাৎ শুনতে পেলাম
পাশ থেকে একটা মেয়ে বলছে "বসতে পারি?"
অন্ধকারের মধ্যে মেয়েটাকে আবছা দেখতে
পেলাম। লাল রঙের শাড়ি। মাথার খোপায়
গোলাপ ফুল। কপালে টিপ। হাতে লাল চুড়ি।
হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার
জিজ্ঞেস করলো "বসতে পারি? নাকি কোনো
অসুবিধা আছে?"
অবাক হওয়া মুখটা স্বাভাবিক করে বললাম "জ্বি
বসেন"
মেয়েটাকে ঠিক সুবিধার লাগছে না। গায়ে
পরা মেয়ে। মানিব্যাগটা গোপনে সরিয়ে
রাখলাম। বিশ্বাস নাই আজ কাল। সিনেমা
চলছে। নায়ক নায়িকার প্রেম ঠিক সেই সময়ে
পাশ থেকে বললো "পরিবেশটা সুন্দর না?"
পাশ ফিরে বললাম "হুম?"
-বললাম পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হইচই
আছে?
-হইচই নাই তবে সাউন্ডটা একটু বেশি।
-হ্যা তাও ঠিক। ডাল ভাজা খাবেন? ঢেলে
দেই?
অপরিচিতদের কাছ থেকে খাওয়া ঠিক হবে
না। মানিব্যাগটা চেক করে নিলাম। সহিহ
সালামতে আছে।
-কি হলো? ঢেলে দেই?
-না না, লাগবে না। আমি ডালভাজা খাই না।
- অপরিচিত বলে ভয় করছেন? আমি তেমন কেউ নই।
হাত দেন তো ঢেলে দেই।
ডালভাজা আমার ফেভারিট। আর না করলাম
না। দোয়াদরুদ পড়ে খাইলাম। কেমন যেনো
মেয়েটার দিকে আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। পাশ
ফিরে বললাম "কি করেন আপনি?
-অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী? আপনি?
-আমি বেকার। ৬ষ্ঠ বর্ষের ছাত্র।
-হিহিহিহি
মেয়েটার হাসির মধ্যে একটা মায়া আছে।
তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে শুধু। সে আমার
দিকে তাকাতেই আমি ঘুরে সিনেমা দেখতে
শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর বিরতি হলো। আমি
মেয়েটাকে রেখে বাহিরে গেলাম।
বাথরুমে গিয়ে মানিব্যাগটা চেক করলাম।
নাহ, টাকা পয়সা সব ঠিক আছে। পাঁচশ টাকার
নোট চারটা মানিব্যাগ থেকে বের করে
গোপন ব্যাগে সরিয়ে ফেললাম।
সিনেমা আবার শুরু হবে। ঘর অন্ধকার। ঢুকে দেখি
মেয়েটা নাই। মন খারাপ করে আবার বসলাম।
নাম্বারটা নেয়া হলো না। হঠাৎ পিছন থেকে
শুনলাম " কি হলো? সামনে বসলেন ক্যান?"
পিছনে মাথা ঘুরায় বললাম "আগে পিছনে
ছিলাম নাকি?"
-হুম আসেন।
পিছনে গিয়ে বসলাম। মেয়েটা আমার দিকে
তাকিয়ে বললো - আপনি খুব ভুলো মনের তাই
না?
-কেনো, হঠাৎ এই কথা কেনো?
-এই যে সামান্য একটা সিট ই মনে রাখতে
পারেন না।
- আসলে অন্ধকার তো? বুঝতে পারি নি।
- আপনি খুব সহজ সরল।
- হুম। খুব সহজে ঠগে যাই।
- আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
- ছিলো
-ওহ
মেয়েটা কিঞ্চিৎ মনে খারাপ করলো মনে
হচ্ছে। সাহস হচ্ছে না তবুও হাতটা ধরলাম।
- কি মন খারাপ হলো?
- মন খারাপ হবে কেনো?
- জানি না। মনে হলো। আসলে আমার
গার্লফ্রেন্ড ছিলো এখন নাই। বিয়ে হয়ে
গেছে।
- আপনি বিয়ে করবেন কবে?
- একটা চাকরি পেলেই বিয়ে করবো।
- চাকরি চিন্তা করলে বেলাদের সবার বিয়ে
হয়ে যাবে।
- তাই দেখছি।
মেয়েটা হাসিমাখা মুখ নিয়ে সিনেমায়
মনযোগ দিলো। আমি তাকিয়ে আছি। হাসলে
মেয়েটাকে খুব কিউট লাগে। গালে টোল
পরে। পুরো মুখে একটা সরলতা আছে। কপালের
টিপটা লাল। ছোট। মাথার খোপায় যেগুলো
গোলাপফুল ভেবেছিলাম সেগুলো আসলে
গোলাপ ফুল নয়। লাল ফিতে দিয়ে বাধা।
শাড়িটা মেবি সিলকের। হাতের চুড়ি গুলো
লাল। ম্যাচিং ব্লাউজ। সব মিলিয়ে পরীদের
তুলনায় কম সুন্দর হবে না।
মনে হচ্ছে প্রোপোজ করে ফেলি। আমি সহজ
সরল। অল্পতেই সবাইকে বিশ্বাস করি। প্রোপোজ
করতে ভয় করছে। আগে নাম্বার নেয়ার ব্যবস্থা
করতে হবে।
- কি হলো। তাকিয়ে আছেন কেন?
- আপনাকে দেখছি।
- দূরো আপনিও না। বেকাররা সবাই মনে হয়
লুচ্চা হয়, না?
-অন্যদের কথা জানি না। এখন নিজেকে মনে
হচ্ছে।
- ধ্যাৎ, সিনেমা দেখতে দেন।
সিনেমাটা হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে শেষ হলো।
মেয়েটা চলে যাবে বলে কষ্ট হচ্ছে। উঠে
দাড়ালাম।
মেয়েটা চলে যাচ্ছে। আমি পিছন পিছনে
যাচ্ছি। ডাকতে ইচ্ছে করছে। নামটা কি
মেয়েটার।
- এই যে হ্যালো। নামটা কি আপনার?
- সবার সামনে বলবো?
- কানে কানে বলেন।
মেয়েটি সত্যি সত্যি কানের কাছে এসে
বললো, "নাম আর নাম্বার আমাদের বসার সিটে
চিরকুটে আছে।"
আমি "যাস শালা" বলে দৌড় দিলাম। গিয়ে
দেখি সত্যি সত্যি একটা চিরকুট। চিরকুটটা
নিয়ে বেড়িয়ে এসে দেখলাম মেয়েটি চলে
গেছে।
একটা অটোরিকশা নিলাম। চারিদিকের
পরিবেশটা সুন্দর। কোনো হইচই নাই। চিঠিটা
খুললাম। লিখা আছেঃ
প্রিয় অজ্ঞাত পরিচয়হীন ব্যাক্তিটি,
হ্যা আপনাকেই বলছি। আপনি খুব সহজ সরল।
কোনো কঠোরতা নাই। বোকা। ভুলো মনা।
নিজেকে চালাক ভাবেন। আপনি আমাকে শুরু
থেকেই যা ভেবেছেন আমি তাই। পকেট মার।
আপনাকে মধ্যবিরতির আগেই পকেট মেরে চলে
যেতে পারতাম। কিন্তু যাই নি। আপনি এতটাই
বোকা আর খামখেয়ালি লোক যে, মাত্র
দু'হাজার টাকাটা বাচানোর জন্য নয় হাজার
নয়শত নিরানব্বই টাকার ফোনটা ফেলে রেখে
গেলেন। আপনার পকেটে ছিলো একটা
মানিব্যাগ, একটা লাইটার একটা বেন্সন
সিগারেট, আর একটা সানগ্লাস। সানগ্লাস
পকেটে রাখবেন না। ভেঙে যেতে পারে।
আপনার ফোনটা নিজের কাছে রেখে দিলাম।
সিমটার কোনো কাজ নেই। ফেরত দিলাম।
আপনার নাম্বারটা রেখে দিয়েছি। কথা হবে
কোনো এক বর্ষা দিনে।
ইতি
আপনার অজ্ঞাত পরিচয়হীন
হিংটিংটিংটিং
পকেটে হাত দিলাম। ফোনটা নাই। বেনসন
সিগারেট ধরিয়ে সানগ্লাসটা চোখে
দিলাম। প্রতিত্তোরে একটা চিঠি লিখতে
ইচ্ছে করছে। চিঠিটা হবে এমনঃ
প্রিয় অজ্ঞাত পরিচয়হীন হিংটিংটিংটিং,
আপনি সুন্দরী। মায়াবীনী। নিজেকে খুব
চালাক মনে করেন। আমি অনেক পকেট মার
দেখছি। তবে আপনার মত সুন্দরী পকেটমার এই
প্রথম দেখলাম। সব থেকে অবাক হয়েছি পকেট
মারতে কেউ স্বর্ণের আংটি আর স্বর্ণের চেইন
পরে আসে। আমার ফোনের নয় হাজার নয়শত
নিরানব্বই টাকার কোনো আপসোস নাই।
আংটি আর গলার চেইনটা আরামছে পনেরো
বিশ হাজার টাকা হয়ে যাবে। সিমটা ফেরত
দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। কোনো একটা বর্ষায় ফোন
দিয়েন। জমিয়ে পকেট মারের গল্প করা যাবে।
শুনেছি চোরে চোরে মাস্তুত ভাই হয়। পকেট
মারে,পকেট মারে প্রেমিক প্রেমিকা হলে
দোষ কি?
ইতি
আপনার অজ্ঞাত পরিচয়হীন ব্যাক্তিটি।
: