নাম তাঁর হুমায়ূন কবির। নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ভাই-বেরাদার গ্রুপে এসে হয়ে যান হুমায়ূন কবির সাধু!
ব্যক্তি হুমায়ুন সাধু বহুমুখী প্রতিভাধর। তিনি লিখেন, অভিনয় করেন, ডিরেকশন দেন। তরুণ এই মানুষটার স্বপ্ন সিনেমা বানাবেন।
তার প্রথম চলচ্চিত্র 'হোমো-সেপিয়েন্স'-এর কাজ শুরু করেছিলেন তিনি!
তার প্রথম শর্ট ফিল্ম 'গুঞ্জন' চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল।
তাঁর সে স্বপ্ন পূরণ হলো না আর।
৯ ভাইবোনের বিশাল পরিবারে সাধু ছিলেন সাত নাম্বার। ছোটখাটো মানুষটা জীবনের বিবিধ রং দেখেছেন। ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হওয়া নিয়ে এক কান্ড হয়েছিল।
সাধু দৈহিক গঠনে একটু ছোট হওয়ায় তার বাবা স্কুলে পাঠাতে চাইছিলেন না।
তার বড় বোনের কাছেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।
পরে বড় বোন তাকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
হুমায়ূনের বড় ভাই সাইফুল কবীর তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের ছাত্র।
তিনি আবার হুমায়ূনকে সেই স্কুলে নিয়ে যান এবং প্রথম সাময়িক পরীক্ষা পর্যন্ত তাকে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।
হুমায়ুন ২য় শ্রেণিতে ১৩০ জন ছেলে-মেয়েকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন।
দেখিয়ে দিলেন, তিনি সত্যিই ব্যতিক্রম!
সহপাঠীরা তখন হুমায়ূনকে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করে। হুমায়ুন পরিবারও মিষ্টি কিনে খাইয়েছিল পাড়ার লোকদের।
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর হাত ধরে শোবিজে হুমায়ূন সাধুর পথচলা শুরু।
অভিনয় দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন, নাটক নির্মাণ করেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সিনেমা দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হয় তার।
২০০০ সালে চট্টগ্রামে এক কর্মশালায় নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে দেখলেন সামনাসামনি। ফারুকিতে মুগ্ধ হয়ে ২০০৩ সাল ফারুকীর ভাই বেরাদার গ্রুপে ঢুকে পড়েন।
কিভাবে এসে ঢুকেন, ঢাকায় থাকার জায়গা ছিল না তার সে সবকিছুই ‘ঊনমানুষ’ নাটকে দেখানো হ’য়েছে।
২০০৫ সালে একটা গল্প লিখেছিলেন হুমায়ুন সাধু। মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী সেই গল্পকে ‘ঊন মানুষ’ নামে চিত্রনাট্যে রুপ দেন।
খুবই টাচি একটি নাটক, এর শেষ পার্ট আপনি দেখলে চোখ ছলছল করে উঠবে!
এই নাটকে সাধু অভিনয় করেন।
নাটকের শেষ দিকে এসে সাধুকে আকাশের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বলতে দেখা যায়, “ হে, আই এম টকিং টু ইউ, আমি কি পারি না, আমি অংক কষতে পারি না, আমি বংশ বৃদ্ধি করতে পারি না, কি পারি না আমি; দৈর্ঘ্য-প্রস্থে আর কতটুকু হলে একটা মানুষকে মানুষ বলা যায়?”
বডি শেমিংয়ের ব্যাপারটা কেই তিনি সামনে এনেছিলেন!
হুমায়ূন সাধু’র ‘চিকন পিনের চার্জার’ নাটকের কথা মনে আছে।
তাঁর জীবন থেকে নেওয়া গল্প তিনি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
নাটকটির পটভূমি ছিলো—
“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্মার্ট মেয়ের সঙ্গে আলাপসালাপ চলতে থাকে সাধুর।
প্রেমই হয়ে যায় একরকম।
মেয়েটির সঙ্গে যখন তিনি বাস্তবে দেখা করতে যান তখন মেয়েটি সব কিছু অস্বীকার করে বসে।
খুব দুঃখ পান সাধু।
পরে তিনি একটি কঠিন সত্যের মুখোমুখি হন—মেয়েরা যেমন হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, ছেলেরাও তো বেঢপ কাউকে গ্রহণ করে না।
তাহলে কি এই মানুষগুলো মানুষ নয়?”
বডি শেমিং নিয়ে যে কত বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন, শিকার হয়েছেন প্রবঞ্চনার, কত অপমানিত হয়েছেন সে গল্পগুলোই তিনি বলতে চেয়েছিলেন।
তিনি গল্প বলতে ভালবাসতেন, প্রচুর লিখতে ভালবাসতেন!
গত বইমেলায় ‘ননাই’ নামে একটি বই ও বের করেছিলেন।
গত পাঁচদিন যাবত লাইফ সাপোর্টে ছিলেন, কষ্ট পেয়েছেন অনেক, মৃত্যুর সাথে লড়েছেন, শেষ পর্যন্ত থেমে গেলেন!
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, হুমায়ূন সাধুকে পরপারে ভাল রাখুন।
: