আল্লাহ রিজিকদাতা হলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন ?

Post a Comment


প্রশ্নঃ আল্লাহ রিজিকদাতা হলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ প্রথমে আয়াতটি পড়ে নেইঃ

সূরা হুদ ১১:৬ = পৃথিবীতে চলমান সকল প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর । তিনি তাদের অবস্থানস্থল ও সংরক্ষণস্থল জানেন । সব কিছুই এক স্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে ।

এই আয়াত দেখিয়ে খগেন সমাজ দাবি করতে চান যেহেতু আল্লাহ সকলের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন সেহেতু আল্লাহ আসমান থেকে খাবার পাঠাবেন, আমরা পরিশ্রম করব না বরং বসে বসে খাব তবে যেহেতু আমরা পৃথিবীতে দেখতে পাই এমন অনেক জাগা আছে যেখানে মানুষ খাবার পায় না বরং খাদ্যের অভাবে মারা যায় তাই এখান থেকে বুঝা যায় আল্লাহ বলতে আসলে কেউই নেই অথবা কুরআনের আয়াত ভুল !

পাঠকগণ উপরের আয়াত সমূহ দ্বারা কখনোই প্রমান হয় না যে "আল্লাহর অস্তিত্ব নেই" এবং "মানুষের ক্ষুধার জন্য আল্লাহ দায়ী"

আল্লাহ সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন কথা সত্য কিন্তু এরমানে এই না যে মানুষ কোন কাজ করবে না, মানুষ হাত পা বেধে বসে থাকবে আর আল্লাহ উপরের থেকে খাবার পাঠাবেন ব্যাপারটা এরকম নয় । আল্লাহ আমাদের সবার রিজিকের মালিক এবং তিনি কিছু সিস্টেম তৈরি করেছেন যা মানুষের রিজিকের অভাব দূর করবে । যেমন ধরুন সুরা যারিয়াত ৫১:১৯ = ধনীদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাব গ্রস্থ ও বঞ্চিতদের অধিকার । এই আয়াত থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ চান যে তিনি যেই রিজিক ধনীদের দান করেছেন এখানে গরিবদের রিজিকও আছে সুতরাং ধনীদের সম্পদে যেই গরীবদের রিজিক আল্লাহ রেখেছেন সেই রিজিক ধনীরা যেন গরিবদের দান করে মূলত এটাই হল আল্লাহর সিস্টেম , এটাই আল্লাহর আদেশ ।

এই বিষয়ে আলোচনা করার আগে আপনাদেরকে কিছু ধনীদের সম্পদ অপচয়ের সিনেমা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি চলুনঃ

"বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২ নভেম্বর ২০১৯" সূত্রে "কে কিভাবে টাকা উড়ায়" শিরোনামে কিছু কোটিপতিদের টাকা উড়ানর কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে ।

হলিউডের তুমুল জনপ্রিয় সুন্দরী মডেল ও অভিনেত্রী "কিম কারদেশিয়ানের" সঙ্গে একটু সময় কাটাতে ৪০ কোটি টাকা ঢেলে দিতে একটুও কার্পণ্য বোধ করেনি রিচার্ড লাগনার । প্রতি সন্ধায় একজন সেলেব্রেটির সাথে একটু নাস্তা করা, নাচ গান না করলে তার চলেই না ।

রাশিয়ান ব্যবসায়ী সহস্র কোটিপতি "রোমান আব্রাহিমোভিচ" রেস্টুরেন্টে খেতে ৪০ লাখ টাকা খরচ করলেন একাই । "ম্যানহাটনের" এক রেস্টুরেন্টে অল্প কিছুক্ষণের জন্য বসেছিলেন, উদ্দেশ্য সামান্য নাস্তা করা । তিনি এমন ভাবে খাবারের অর্ডার করছিল যেন বেয়ারাদের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল । খাবারের বিল আসছে ৪০ লাখ টাকা । এনার মাত্র এক বেলার খাবারেই ৪০ লাখ !

দুবাইয়ের শেখ হামাদ বিন হামদান আল নাইয়ান , প্রায় ১২৫ কোটি টাকা খরচ করে দ্বীপজুড়ে খোদাই করেছেন নিজের নাম "হামাদ" । তার নাম এত সুবিশাল যে সেটি চাঁদ থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় । দ্বীপজুড়ে এ নামের দীর্ঘ ২ মাইল পর্যন্ত ।

ভারতীয় ধনকুবের "লাক্ষি মিত্তাল" তার মেয়ের বিয়েতে ৫০০ কোটি টাকা খচর করে বিয়ে দেন । এই বিয়েতে সোনালী রং বাছাই করার কারনে পুরো প্রাসাদ ও আসবাব মুড়ে দেয়া হয় সোনালী রঙে , ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাবহার করা হয় খাটি স্বর্ণ ।

"BBC News বাংলা, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭" সুত্র বলছেঃ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আট জন ব্যক্তির হাতে যতো সম্পদ আছে সেই সম্পদের পরিমাণ দুনিয়ার অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান, বলছে আন্তর্জাতিক এক দাতব্য সংস্থা অক্সফ্যাম। সংস্থাটি এসংক্রান্ত যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশই বাড়ছে। এবং এই ব্যবধান যতো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিলো আসলে তার চাইতেও অনেক বেশি। সবচে ধনী এই আট জনের মধ্যে রয়েছেন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ এবং ওয়ারেন বাফেট। অক্সফ্যাম বলছে, এই আট জনের হাতে যতো সম্পদ রয়েছে তার পরিমাণ বিশ্বের ৩৬০ কোটি দরিদ্র মানুষের সম্পদের সমান। তবে অনেকেই অক্সফ্যামের এই তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, প্রতি বছর অক্সফ্যাম সম্পদের যে পরিসংখ্যান তুলে ধরছে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু সংস্থাটি এর যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে সেটি ঠিক নয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অফ ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের একজন গবেষক মার্ক লিটলউড বলেছেন, অক্সফ্যামের উচিত প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উপায়ের দিকে জোর দেওয়া। অক্সফ্যামের প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হলো যখন সুইজারল্যান্ডে শুরু হয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলন। এই সম্মেলনে বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা অংশ নিচ্ছেন। অক্সফ্যামের একজন কর্মকর্তা ক্যাটি রাইট বলেছেন, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে ডাভোস সম্মেলন শুধু ধনী লোকেদের কথার ফুলঝুরির সম্মেলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলাম সম্পদকে অপচয় করাকে নিষেধ করে এবং গরীবদের দান করতে উৎসাহ প্রদান করেঃ
* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৫৯৭৫, সহিহ হাদিস ।
* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৬৪৭৩, সহিহ হাদিস ।
* ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২৮৭২, হাসান সহিহ ।
* ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ৬৭২, সহিহ হাদিস ।
* ihadis.com, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২২৯৪, সহিহ হাদিস ।
* ihadis.com, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৭১৮ , হাসান সহিহ ।
* ihadis.com, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩৬০৫, হাসান হাদিস ।
* ihadis.com, রিয়াদুস সালেহিন, হাদিসঃ ৩৪৫, সহিহ হাদিস ।
* ihadis.com, বুলগুল মারাম, হাদিসঃ ১৪৫৬, সহিহ হাদিস ।
* ihadis.com, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ৪২৭, হাসান হাদিস ।

এরকম আরও বহু তথ্য আছে যাইহোক,  এখন আসি আমার মূল আলোচনায় আপনাদের কি  আল্লাহর সেই আয়াতটি মনে আছে যেখানে তিনি বলেছিলেন ধনীদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হোক ! দেখুন এই আয়াত যদি বাস্তবে প্রয়োগ করা হত তাহলে দুনিয়াতে হয়ত আর গরীব থাকতো না একটি সুন্দর ভারসাম্যময় সমাজ বিরাজ করত । কিন্তু বড়লোকেরা যেভাবে টাকা অপচয় করে সেগুলা না করে যদি তারা অসহায়দের দান করত তাহলে কতই না উন্নত হত ।

ihadis.com, সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৪৪২ , সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেন শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে পণ্য বিক্রি করবে না । তোমরা লোকদের ছেড়ে দাও । মহান আল্লাহ এক দলের মাধ্যমে উপর দলের রিজিকের ব্যবস্থা করেন ।

ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৩৫২ , সহিহ হাদিসঃ এই হাদিসের শেষের অংশে রাসুল (সা) আম্মাজান আয়েশা (রা)কে উপদেশ দিচ্ছেন যেঃ হে আয়শা! তুমি যঞ্জাকারী দরিদ্রকে ফিরিয়ে দিও না । যদি দেয়ার মত কিছু তোমার না থাকে, তাহলে একটি খেজুরের টুকরা হলেও তাকে দিও । হে আয়েশা! তুমি দরিদ্রদের ভালবাসবে এবং তাদেরকে তোমার সান্নিধ্যে রাখবে । তাহলে কিয়াময়ের দিন আল্লাহ তোমাকে তার সান্নিধ্যে রাখবে ।

ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৭৩ , সহিহ হাদিসঃ রাসুল (সা) বলেছেন কেবল দুটি বিষয় ঈর্ষা করা বৈধ । ১/ সে ব্যাক্তির উপর যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন অতপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন । ২/ সে ব্যাক্তির উপর যাকে আল্লাহ প্রজ্ঞা দান করেছেন, অতপর সে তাঁর মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয় ।

আল্লাহর এই সিস্টেম যদি আমরা আমাদের বাস্তবে জীবনে প্রয়োগ করি তাহলে ধনী গরীবের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টি হবে এবং মানুষে মানুষে ভালবাসার বন্ধন তৈরি হবে । ধরুন আপনি প্রচুর কোটিপতি , এমন এক দ্বীপে গেলেন যেখানে মানুষ খাবার পাচ্ছে না এখন আপনি আপনার সম্পদ থেকে তাদেরকে খাবারের অবস্থান তৈরি করলেন এতে তাদের মধ্যে আর আপনার মধ্যে একটি ভাল সম্পর্ক হল । আর এটাই আল্লাহ চান বিধায় কুরআনে তাই বলেছেন ধনীদের সম্পদে রয়েছে গরীবদের হোক ।

{ক্ষুধা পরীক্ষার অংশ}

* সুরা বাকারা ২:১৫৫ = অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।

* সুরা ফজর ৮৯:১৬ =  যখন তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন বলেঃ আমার পালনকর্তা আমাকে হেয় করেছেন।
সুরা মুলক ৬৭:২ = যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।

* সূরা রাদ ১৩:২৬ = আল্লাহ তায়ালা যার রিজিকের প্রশস্ততা দিতে চান তাই করেন, আবার যাকে তিনি চান জীবিকা সংকীর্ণ করে দেন।

* সুরা বাকারা ২:২১২ = আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুযী দান করেন।

* সুরা আনকাবুত ২৯:৬২ = আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।

* সুরা সা’বা ৩৪:৩৬ = আমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং পরিমিত দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না।

{ধনীদের আদেশ দিচ্ছেন গরিবদের সাহায্য করতে,আল্লাহ}

* সুরা যারিয়াত ৫১:১৯ = ধনীদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাব গ্রস্থ ও বঞ্চিতদের অধিকার ।

* সুরা নিসা ৪:৫৮ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত সমূহ তাদের প্রাপকদের কাছে পৌছে দিতে ।তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কাজ পরিচালনা করবে তখন ন্যায়-পরায়নতার সাথে বিচার করবে ।

* সুরা যূখরুফ ৪৩:৩২ = তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের উপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম।

* সুরা সাজদা ৩২:১৬ =  আল্লাহ তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।

* সুরা বাকারা ২:১৭৭ = ভাল কাজ শুদু এই না যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে বরং বড় ভাল কাজ হল এই যে, ইমান আনবে আল্লাহ্‌র উপর, কিয়ামতের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রাসুলগণের উপর আর সম্পদ ব্যয় করবে আল্লাহ্‌র মহব্বতে আত্মীয়স্বজন,এতিম-মিসকিন,মুসাফির,ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী কৃতদাসদের জন্য । আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং নিজের ওয়াদা পালন করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারনকরে তারাই হল সত্যাশ্রয়ী আর তারাই হল পরহেযগার ।

* ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ১৯২২, সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না তাকে আল্লাহ্‌ তা‘আলাও দয়া করেন না।

* ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২০০৫, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা।
সুরা যিলযাল ৯৯:৭,৮ = কেউ অনু পরিমান ভাল কাজ করলে সে তা দেখতে পারবে এবং কেউ অনুপরিমান খারাপ কাজ করে থাকলেও তাও সে দেখতে পারবে ।

{রিজিক অনুসন্ধানের চেষ্টাও করতে হবে}

* সূরা মুলক ৬৭:১৫ = তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা পৃথিবীতে বিচরণ করো এবং তার দেয়া রিজিক আহার করো ।

* সূরা মুজ্জাম্মিল ৭৩:২০ = কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে।

* সুরা বাকারা ২:১৯৫ = তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না আর মানুষের সাথে ভাল ব্যাবহার করো , নিশ্চয় আল্লাহ্‌ভাল ব্যাবহারকারীদের ভালবাসেন ।

* সুরা নাজম ৫৩:৩৯,৪০ = মানুষ শুদু তাই পায় যা সে অর্জন করে এবং তার কর্ম শীঘ্রই তাকে দেখানো হবে।

* সুরা রাদ ১৩:১১ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে।

প্রশ্ন উত্তর পর্বঃ

১/ সূরা আনকাবুত ২৯:৬০ =  এমন কত জীবজন্তু আছে, যারা নিজেদের খাদ্য মজুদ রাখে না; আল্লাহই রিজিক দান করেন তাদের ও তোমাদের এবং তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ । - আয়াতে বলা হচ্ছে কিছু প্রাণী নিজেদের জন্য খাদ্য মজুদ রাখে না এরপরেও আল্লাহ তাদের রিজিক দান করেন ?

উত্তরঃ আয়াতে কি বলা হচ্ছে যে ঐ প্রাণী গুলা বসে থাকে অথবা কোন কাজই করে না এরপরেও আল্লাহ রিজিক দেন ? উত্তর হচ্ছে না । আমাদের কথা হল আল্লাহ ইচ্ছা করলেও মানুষকে বিনা কষ্টে রিজিক দিতে পারেন কিন্তু তিনি এরকম করবেন না কিন্তু যদি করেন সেটি তাহলে একান্তই আল্লাহর ব্যাপার । আল্লাহ কারো পরোয়া করেন না তবে কুরআনের আয়াতকে সামনে রেখে আমরা বলতেই পারি যে  আল্লাহ চান মানুষ যেন পরিশ্রম করে । এবং ধনীরা যেন গরীবদের দান করে ।

২/ সুরা মুলক ৬৭:২১ = তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযিক দিবে বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে। - এই আয়াত থেকে প্রশ্ন আসে যে সেসব দেশে দুর্ভিক্ষ আছে সেখানে তো আল্লাহ রিজিক দিচ্ছেন না কিন্তু ধনীরা ইচ্ছা করলে সেসব গরীবদের সাহায্য করতে পারে তাহলে আল্লাহ রিজিক বন্ধ করে দিলেও মানুষ কিন্তু ঠিকই এই সমস্যা সমাধান করতে পারেন ?

উত্তরঃ প্রশ্নকর্তা হয়ত ভুলে গেছেন এই আয়াতঃ সুরা রাদ ১৩:১১ = নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে। তাই মানুষ চেষ্টা করলে আল্লাহও সেই সমস্যা সমাধান করে দিবেন । তা ছাড়া এক মানুষ আরেক মানুষকে সাহায্য করবে এটাও আল্লাহ চান । আর আল্লাহ যদি এরকম সিস্টেম করেন যে দুনিয়াতে আর এমন কিছু সৃষ্টি হবে না যে মানুষ খাদ্য খেতে পারে ? এই ক্ষেত্রে মানুষ কিন্তু এমন কিছু সৃষ্টি করতে পারবে না যে তারা তাদের রিজিক বানাবে ।

ধরুন আল্লাহ সকল মানুষকেই পাগল বানিয়ে দিল আর এমন সিস্টেম করল যে তারা আর কোন খাবার খেতেই পারবে না এখন কি এই মুহূর্তে মানুষ কি বিন্দুমাত্র কিছু করতে পারবে আল্লাহর বিপক্ষে গিয়ে ? উত্তর হচ্ছে না । সুতরাং কুরআন ঠিকই বলছে যে সুরা মুলক ৬৭:২১ = তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযিক দিবে বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে।

৩/ ihadis.com, জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ২৩৪৪ , সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মত রুজি দান করবেন যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে। প্রশ্ন হল এখানে বলা হচ্ছে আল্লাহর উপর ভরসা করলে আল্লাহ রিজিক দিবে তাহলে তো শুধু ভরসা করলেই হয় রিজিক সন্ধান করার দরকার কি ?

উত্তরঃ হাদিসের এই লাইনটি খেয়াল করুনঃ "তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে" এই লাইন থেকে কি বুঝা যায় যে পাখিরা বাসায় বসে থাকে আর শুধুই আল্লাহর উপর ভরসা রাখে ? উত্তর হচ্ছে না । তাহলে হাদিস আসলে আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করবোই এবং পাখিদের মত সকাল বেলা বাসা থেকে বের হব রিজিক সন্ধানের জন্য তাহলে আল্লাহও আমাদের রিজিক দিবেন । এখানে আপনি ঘরে বসে থাকবেন কোন কাজ করবেন না আর আল্লাহ আসমান থেকে আপনার মুখে খাবার তুলে দিবেন এসব কিছুই বুঝানো হয়নি বরং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রিজিকের সন্ধানে বের হবেন আল্লাহ রিজিক দিবেন । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।

৪/ সবাইকে আল্লাহ কেন বড়লোক বানালেন না ?

উত্তরঃ হাস্যকর একটি প্রশ্ন । এক মিনিটের জন্য ভাবুন এই মুহূর্তে সবাই কোটিপতি হয়ে গেল । এমন কি আপনিও । এত এত কোটিপতি তারা তো মলমুত্র ত্যাগ করবে তাই না ! এইগুলা পরিস্কার করবে কে আপনারা ? বাড়ি বানাবে কে আপনারা নিজেরাই ? সকলের চিকিৎসা করবে আপনারাই ? সকলে কি ডাক্তার হবে ? মূলত সকলেই এক সাথে ধনী আবার একই সাথে সবাই কি সব কিছু পাড়বে ? উত্তর হচ্ছে না । সবাই যদি পুরুষ হয় নারী হবে কে ? সবাই যদি নারী হয় পুরুষ হবে কে ? সবাই যদি গরীব হয় ধনী হবে কে ? সবাই যদি ধনী হয় গরিব হবে কে ? এরকম হলে দুনিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে । এই কারনেই আল্লাহ সবাইকে এক সাথে বড়লোক বানাননি বরং আল্লাহ আমাদেরকে একে অপরের উপর নির্ভরশীল সিস্টেমে তৈরি করেছেন । আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।

পরিশেষে উপরের তথ্য প্রমান হাতে রেখে আমরা দাবি করছিঃ
১/ রিজিকের মালিক আল্লাহ , এতে কোন সন্দেহ নেই ।
২/ আল্লাহ মানুষকে রিজিক দিয়েও পরীক্ষা করেন ।
৩/ ধনীদেরকেও সম্পদ দিয়েও পরীক্ষা করেন ।
৪/ ধনীদের সম্পদে গরীবদের অধিকার রয়েছে ।
৫/ রিজিক পেতে হলে নিজেদেরকেও চেষ্টা পরিশ্রম করতে হবে ।
৬/ ইসলাম কখনোই বলে না যে মানুষ হাত পা বেধে বসে থাকুক এমনেই রিজিক আসবে ।
৭/ সুতরাং আল্লাহ রিজিকদাতা হলে মানুষ না খেয়ে মরে কেন এই প্রশ্ন অবান্তর এবং অযৌক্তিক ।

Related Posts

: