ভালোবাসার গল্প- জান্নাতের পথে

Post a Comment
ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালবাসার গল্প, love story, valobashar golpo
Add caption
মেলায় রঙ বেরঙের চুড়ি নেড়েচেড়ে দেখছে অরু। পেছন ফিরে দেখে সজল খানিকটা দূরে কারও সাথে আলাপে মশগুল। ওকি! সজলের হাতে সিগারেট যে! অরুর মেজাজ দপ করে গরম হয়ে গেলো।
আলাপ শেষে হাসি হাসি মুখ করে অরুর দিকে এগিয়ে এলো সজল।
'ফের সিগারেট?' - কালো নিকাবের আড়ালে অভিমানী চোখ পাকিয়ে অরু সজলের দিকে চায়।
'আরে, আমি তো খাইনি। রাকিব জোর করে ধরিয়ে দিলো হাতে। এতোদিন পর দেখা, বন্ধুমানুষ, তাই মানা করতে পারিনি বউ।'
'আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি ঠোঁটে দিয়েছো।' - বলেই হনহন করে হাঁটা দিলো অরু।
'আরে বউ, কই যাও? আর কখনও হবে না। কান ধরছি। কেউ শত সাধলেও নিবো না। বউউউউ' - অরুর পেছন পেছন ছুটে যায় সজল।

অরুর রাগ তো ভাঙে না সহজে। পাশেই একটা আবায়ার স্টল। সজল খেয়াল করে, অরুর চোখ আটকে গেছে একটা কারুকার্য খচিত সুন্দর আবায়ার দিকে। সজল এক দৌঁড়ে গিয়ে ওটা কিনে নিয়ে আসে। অরুর দিকে বাড়িয়ে দেয় -
'কান ধরছি বউ। আর কখনো ভুল হবে না। দয়া করে আমার এই সামান্য উপহার গ্রহণ করুন, মহারাণী।'
সজলের ভাব দেখে বড্ড হাসি পায় অরুর। তবুও গম্ভীরমুখে বলে,
'এটা কেন? চেয়েছি? এসব পড়ি আমি? তুমি জানো না, এতো বাহারি পোশাকে বাইরে বেরোই না এখন! তাছাড়া কিছুদিন আগেও তো আওরাতুন নিসা'র একটা সুন্দর জিলবাব কিনে দিলে।'
সজলের মনে পড়ে যায় এক বছর আগের কথা। যখন অরু ব্র‍্যান্ডের দামী স্টাইলিশ পোশাক ছাড়া পড়তো না কিছুই। নিত্যনতুন ফ্যাশন ওর নেশা ছিলো। আর এখন? মনে মনে মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে শুকরিয়া জানায় সজল। ওদের দু'জনকেই শেষমেশ হেদায়াত দান করেছেন তিনি, আলহামদুলিল্লাহ্
কোমরে হাত রেখে কপট রাগে অরু বলতে থাকে -
"যাও ভাগো। বিড়িখোড়ের সাথে কথা নাই। তাছাড়া তুমি জানো না যে, সিগারেট খাওয়া আর আত্মহত্যা একই বিষয়? সূরাহ বাক্বারাহ'র ১৯৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, 'তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।'
আর ধূমপান তো এক ধরনের ধীর গতিসম্পন্ন বিষক্রিয়া, তাই এটা আত্মহত্যা করার মতোই। এ ব্যাপারে চারশো’র বেশি ফতোয়া দেওয়া হয়েছে যে, ধূমপান করা হারাম। বুঝছো?"

নিকাবের ওপর দিয়েই অরুর নাক টিপে দেয় সজল। আদুরে গলায় বলে -
"আহা আমার লক্ষী বউ। বুঝেছি সব। জীবনেও আর এমন ভুল হবে না। প্রয়োজনে অমন বন্ধু এড়িয়ে চলবো, ইনশা আল্লাহ্। আর এই আবায়াও বাইরে পড়তে হবে না আপনাকে। ঘরে পড়েই আমায় দেখাবেন। বাইরে পড়ার জন্যে 'আওরাতুন নিসা' থেকেই সাদাসিধে সুন্দর জিলবাব কিনে দেবো, কেমন?
এবার এই অধমকে কি একটু ক্ষমা করা যায়, মহারাণী?"
মুখে হাত চেপে ফিক করে হেসে দেয় অরু। সজল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হাত ধরাধরি করে রাজ্যের কথার ফুলঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে যায় দু'জনেই, জান্নাতের পথে...

Related Posts

: