বীথিকে যখন বিয়ে করি, আমার বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। ‘ফার্নিচার’ ছিল: একটি তোশক ও একটি চার শ টাকা দামের টেবিল, যেখানে কম্পিউটারটা রাখি।
খাট কেনার সামর্থ্য নেই। একজন বুদ্ধি দিল, জাজিম বানায়া ফ্লোরিং করো। এতে তোমরা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচবা, নিচ তলার লোকও রাত–বিরাতে ধুপধাপ শব্দ থেকে বাঁচবে।
বীথিকে নিয়ে যেদিন প্রথম রংপুর থেকে ঢাকায় এলাম, সেদিন বুঝলাম, আসল জিনিসটাই এখনো কেনা হয়নি। নববিবাহিতদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার জানালার পর্দা!
আরও বুঝলাম, পুরুষ মানুষের জামা যেখানে সেখানে রাখা যায়। মেয়েদেরগুলো যায় না। তার ওপর আমরা ওই বাসায় একটা রুমে থাকি, অন্য রুম দুই ব্যাচেলর ছেলে। কিন্তু আলমারি কেনার টাকা নাই।
সেই বুদ্ধিমান ব্যক্তির পরামর্শে নিউ মার্কেট থেকে ৬০০ টাকায় একটা ‘জিনিস’ কিনলাম, ওটার নাম যে কী এখনো জানি না।
দোকানের ছেলেটা বলে দিয়েছিল, টুকরো টুকরো স্টিকগুলা কীভাবে সেট করতে হয় ভেতরে একটা কাগজে লেখা আছে।
বিয়ের দুই বছর পর আমরা ‘হানিমুনে’ গেছি। সেন্ট মার্টিন। তখনই হঠাৎ করে খেয়াল হলো, বীথির একটা হ্যান্ডব্যাগ দরকার। বীথি নিউ মার্কেটের রাস্তায় বিক্রি হওয়া ব্যাগ কিনেছে হাসিমুখে। ফুটপাতে বিক্রি হওয়া একদাম তিন শ টাকার থ্রি পিস কিনেছে হাসিমুখে। ১২০ টাকার স্যান্ডেল কিনেছে হাসিমুখে।
আমি খুব বেশি দিন আগের গল্প করছি না। ষাটের দশকের সাদাকালো যুগের নয়। মাত্র কয়েক বছর আগে সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে এমনই ছিল বীথি–আমার লাল-নীল সংসার!
কাঁটাসুরে ২০০ স্কয়ার ফিটের যে বাসায় আমাদের দীর্ঘ দিনের সংসার ছিল, তখন একটা ছড়া লিখেছিলাম।
মোহাম্মদপুরে, ছোট্ট একটা পাখির বাসায়
সেই বাসাতেই ভালোবাসা, নতুন আশার দিন গুনি।
এখন কিন্তু আমাদের একটা পোনাপুনিও আছে, তার নাম ঋদ্ধি। এবং আপনাদের দোয়ায় সৎ উপার্জনের প্রতিটা পয়সায় ঢাকায় আমাদের ছোট হলেও ১০৬০ স্কয়ার ফুটের নিজেদের এখন একটা বাসা হয়েছে। ভালোবাসা থাকলে ভালো বাসাও হয়!
@রাজিব হাসান
: