মৃত্যু আল্লাহ বানিয়েছেন তাই অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করলেও সেটার দায়ভার আল্লাহর?

Post a Comment


 

❌ প্রশ্নঃ মানুষের মৃত্যু হবে এটা আল্লাহ সৃষ্টি করেছে সুতরাং যত মানুষ মারা যাচ্ছে এর জন্য আল্লাহ দায়ী অতএব আল্লাহ বড় খুনি? আদালতে যেসব খুন খারাবীর বিচার হয়, সেগুলো মুলত আল্লাহই করেন। মানুষ উছিলা মাত্র। তিনি মৃত্যুর ফেরেশতা না পাঠালে কারও মরার ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ, এসব খুন খারাবি আল্লাহই করছেন। আল্লাহকে আগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত?

✍লিখেছেনঃ এম ডি আলী। 

👉 উত্তরঃ উপরের ভ্রান্ত অভিযোগটি আমি দুটো দৃষ্টিভঙ্গিতেই জবাব দিব। প্রথমে ইসলামের দৃষ্টিতে এবং পরে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে। মুক্তমনা ভঙ্গিতে দুই সাইডেই আমি যুক্তি দিয়ে দেখাবো অভিযোগটি আসলে দুর্বল, ভুল এবং মিথ্যা।

📶 কুরআনের আয়াত গুলো আগে পাঠ করে নেইঃ

* সুরা আল-ইমরানের ৩ঃ১৪৫ = আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। 

* সুরা আল-আনআম ৬ঃ৬১ = যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়।

* সূরা ফাতির ৩৫:১১ = কোন দীর্ঘায়ুর আয়ু দীর্ঘ করা হয় না আর না তার আয়ু কমানো হয়, কিন্তু তা লিপিবদ্ধ রয়েছে এক কিতাবে লাওহে মাহফুযে।

* সূরা ইউনুস ১০:৪৯ = “আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া আমি তো আমার নিজেরও কোন ক্ষতি কিংবা উপকার করতে পারি না। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নির্ধারিত সময় আছে। যখন তাদের সেই সময় আসে তখন তারা তা এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা এগিয়ে আনতে পারে না।” 

🔔 প্রাথমিক কথাঃ

কুরআনের কিছু আয়াত দেখেই যারা আল্লাহর প্রতি ভুল অভিযোগ করছেন তারা আসলে কুরআনটাই বোঝার যোগ্যতা রাখে না। যদি তারা কুরআনের সার্বিক অর্থ বুঝতে পারতো তাহলে এমন ভিত্তিহীন প্রশ্নই করতো না। সুরা আল ইমরান ৩ঃ৪ = ইতিপূর্বে মানুষের জন্য পথনির্দেশ হিসেবে, আর এখন সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী গ্রন্থ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। যারা আল্লাহর কিতাবের আয়াতসমূহ অবিশ্বাস করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

আল্লাহ কি ইচ্ছা করেছেন সেটা আমরা জানি না অথবা কেননা তা গায়েবের অংশ। কোন একটা ঘটনা দেখেই বলে দেয়া আল্লাহ এটাই লিখে রাখছে তাহলে সেটা ভুল হবে। কেননা আল্লাহ এটাই লিখে রাখছে সেটা আপনি কিভাবে দেখলেন? এটা সম্ভব নয়।

আল্লাহ মানুষকে অন্যায় ভাবে বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন এমনকি সকল প্রকার অশান্তি তিনি পছন্দ করেন না। এটা তিনি কুরআনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।

* সুরা বাকারা ২ঃ২০৫,২০৬ = ফিরে গিয়ে সে জমিনে অশান্তি সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু ধ্বংস করার প্রয়াস চালায়। আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না। যখন তাকে বলা হয়, “আল্লাহকে ভয় করো”, তখন তার অহংকার তাকে অপরাধের দিকে টেনে ধরে। অর্থাৎ অহমিকার কারণে সে অপরাধ ছাড়তে পারে না। অতএব, জাহান্নামই তার প্রাপ্য, নিশ্চয়ই তা বড় খারাপ ঠিকানা!

* ihadis.com, সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ৬৮৬৩, সহিহ হাদিসঃ আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যে সব বিষয়ে কেউ নিজেকে জড়িয়ে ফেলার পরে তার ধ্বংস থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় থাকে না, সেগুলোর একটি হচ্ছে হালাল ছাড়া হারাম রক্ত প্রবাহিত করা (অর্থাৎ অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা)। 

* ihadis.com,সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১২১, সহিহ হাদিসঃ জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ বিদায় হাজ্জের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেনঃ ‘আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কাফির (এর মত) হয়ে যেও না।

এখন ধরুন খুনির কাছে প্রশ্ন হলো আল্লাহ কি খুনিকে খুন করতে বলেছিলেন? নাকি সে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা পড়ে আসার পর বাস্তবায়ন করেছেন? — উত্তর হচ্ছে না। এছাড়া আল্লাহ কাউকে ফোর্স করেননি খুন করার জন্য। মৃত্যু আল্লাহই ঘটান তবে কাউকে উছিলা করতে বাধ্য করেন না। কার মৃত্যু কই হবে কীভাবে হবে তা আল্লাহ সব জানেন তাই তিনি লিখে রেখেছেন আর সেটা ভুলও হবে না। সুরা আল ইমরান ৩ঃ৫= আল্লাহর কাছে জমিনের কিংবা আসমানের কোন কিছুই গোপন থাকে না। 

বাধ্য করার কেউ প্রমান করতে পারলে বোঝা যাবে তিনি সরাসরি আল্লাহকে দেখেছেন। যা একেবারেই অসম্ভব। তাহলে বুঝতে পারি আল্লাহকে দায়ী করার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহকে দোষ দেওয়া সরাসরি ভুল।

⛔ দাবি ১:মানুষের মৃত্যু হবে এটা আল্লাহ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং যত মানুষ মারা যাচ্ছে এর জন্য আল্লাহ দায়ী অতএব আল্লাহ বড় খুনি?

👉 খণ্ডন ১:নাস্তিকের প্রথম বক্তব্যই হচ্ছে, মানুষের মৃত্যুকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যৌক্তিকভাবে বিপরীত বক্তব্য হল, মানুষের জন্মও আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ যিনি জীবন দান করেন, তিনি জীবন কেড়ে নেন। এখন স্বাভাবিকভাবে যে ব্যক্তি খুনি হয়, তার বৈশিষ্ট্য হল, সে কেবল খুন করতে পারে, কিন্তু জীবন দিতে পারে না৷ এখানে কতগুলো বিষয় রয়েছেঃ

১) যে ব্যক্তি খুন করে, সে জীবন দিতে পারে না।

২) যে ব্যক্তি খুন করে, সে আসলে জীবন কেড়েও নিতে পারে না। কারণ সে কেবল শরীরের ওপর আঘাত করে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে মাত্র। কিন্তু যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা চাইছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ার মৃত্যু আসে না। ফলে প্রকৃতপক্ষে জীবন কেড়ে নেন আল্লাহ। খুনির জীবন কাড়ার কোনো ক্ষমতা নেই; সে বড়জোর শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে মাত্র।

৩) খুনি প্রকৃতপক্ষে কারও অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে পারে না। সে কেবল শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু মানুষের শরীর ধ্বংস হলেও তার অস্তিত্ব ধ্বংস হয় না, বরং সেই অস্তিত্ব রূহ বা আত্মা এর মাধ্যমে তখনও অবশিষ্ট থাকে। আর এই রূহকে সংরক্ষণ বা ধ্বংস করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর যা খুনির মাধ্যমে সম্ভব নয়।

সুতরাং উপরের পয়েন্টগুলোর সাপেক্ষে বলা যায় যে, একজন খুনির সিফাত বা বৈশিষ্ট্যের সাথে মহান আল্লাহ তাআলার সিফাত একেবারেই ভিন্ন। আর তাই যৌক্তিকভাবে আমরা বলতে পারি যে, সিফাত ভিন্ন হওয়ার জন্য মহান আল্লাহকে খুনি বলা অযৌক্তিক। বরং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।

⛔ দাবি ২:আদালতে যেসব খুন খারাবীর বিচার হয়, সেগুলো মুলত আল্লাহই করেন। মানুষ উছিলা মাত্র..

👉 খণ্ডন ২:ভুল! আদালতে যে বিচার হয়, তা স্রষ্টা করেন - এটা ইসলামের আকিদা নয়, বরং হিন্দুদের আকিদা। ইসলামের আকিদা হল, আল্লাহ মানুষকে শক্তি-সামর্থ্য এবং জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন। ফলে আদালতে বিচার মানুষই করে। তবে এখানে আল্লাহ করান - এমনটা নয়, বরং আল্লাহ হওয়ার অনুমতি দেন। অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু সম্পন্ন হয় না। সেই ইচ্ছায় আল্লাহর সন্তুষ্টিও থাকতে পারে, অসন্তুষ্টিও থাকতে পারে। আল্লাহ মানুষের উত্তম কাজে সন্তুষ্ট হন, অনুত্তম কাজে অসন্তুষ্ট হন। কিন্তু তিনি দুই ধরণের কাজেরই অনুমতি দেন। এই অনুমতির অর্থ সুযোগ প্রদান। অর্থাৎ আল্লাহ ইচ্ছা করেন যে, তিনি মানুষকে সুযোগ প্রদান করবেন এবং মানুষই তখন নিজেদের ইচ্ছায় উত্তম বা অনুত্তম বিষয়টি বেছে নিয়ে কর্ম সম্পাদন করে।

⛔দাবি ৩:তিনি মৃত্যুর ফেরেশতা না পাঠালে কারও মরার ক্ষমতা নেই। অর্থাৎ, এসব খুন খারাবি আল্লাহই করছেন। আল্লাহকে আগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত?

👉 খণ্ডন ৩:মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। এখন, বিচারকের ফয়সালায় আদালতে মৃত্যদণ্ড হবে - এটা সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ জানতেন। এমনটা না যে, আল্লাহ জোর প্রয়োগ করছেন বলে মানুষ কাজ করছে। বরং মানুষ ভবিষ্যতে কী করবে সেটা আল্লাহ আগে থেকেই জানতেন। আর সেই অনুযায়ী তিনি মানুষের ভবিষ্যতের বিষয়কে ভাগ্যতে লিপিবদ্ধ করতেও সক্ষম। আর তাই বিচারকের রায়ে মৃত্যুদণ্ড হলে, সেই মৃত্যুদণ্ডের কথা আল্লাহ আগে থেকেই জানতেন। এখন আল্লাহ চাইলে এই সময়ে মৃত্যুকে নির্ধারণ করতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন। যদি আদালতে মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে মৃত্যু হয়, এর মানে হল, এই মৃত্যু অপরাধীর পার্থিব জীবনের পাপকর্মের ফলাফলের একটি অংশ হতে পারে যা দুনিয়ার বিচারকের মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে আর আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই সেটা হবে জানতেন বিধায় সেই সময়টাকে মৃত্যুর সময় হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আর যদি আদালতের বিচারে কারও মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে মৃত্যু না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, তার মৃত্যুর সময় অন্য সময়ে নির্ধারিত। এখন নির্ধারিত মৃত্যুর মাধ্যমে কি আল্লাহ খুনি হয়ে যাচ্ছেন? উত্তর হল - না, কারণ খুনির সিফাত থেকে আল্লাহর সিফাত ভিন্নতর যার ব্যাখ্যা খণ্ডন ১ - এ দেওয়া হয়েছে। আর যেহেতু আল্লাহ খুনির সিফাতেরও উর্ধ্বে, তাই পার্থিব আদালতের কাঠগড়ায়ও আল্লাহকে মাপা যৌক্তিকভাবেও সম্ভব নয়!

🔎 ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিঃ

নিন্মে আমরা চারটি পয়েন্ট বিশ্লেষণ করবো এবং একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত পেশ করবো। এই পয়েন্ট গুলোর সাথে নাস্তিকদের সম্পর্ক নেই। নাস্তিকদের জন্য শেষে আলাদা জবাব দেয়া হবে। পয়েন্ট গুলো বলার আগে প্রথমে কুরআনের আয়াত পাঠ করি। 

* সুরা বাকারা ২ঃ২৯ = পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। *আল-বালাদ ৯০ঃ ১০ = আমি কি তাকে ভালো-মন্দের পরিষ্কার দুটো পথ দেখিয়ে দেইনি? * সুরা কাহাফ ১৮ঃ২৯ = বল, “সত্য তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (এসেছে)। অতএব, যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক আর যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক। * ইউনুস ১০ঃ৪৪= নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো জুলুম করেন না, মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করে থাকে। * সুরা ইউনুস ১০ঃ ৮ = নিজেদের কৃতকর্মের কারণেই তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। * সুরা নাজম ৫৩ঃ২৪ = মানুষ যা চায় তাই কি সে পায়?* সুরা নাজম ৫৩ঃ ৩৯ = মানুষ যা চেষ্টা করে তাই সে পায়।

উপরের আয়াত সমূহ থেকে চারটি সুত্র পেলামঃ

🌟 ১/ আল্লাহ আমাদের জন্য সিস্টেম বানিয়েছেন।

🌟 ২/ ভাল-খারাপ কি সেটা আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। খারাপ কাজ করা যাবে না আর ভাল কাজ করতে হবে সেটা আল্লাহ বলে দিয়েছেন। মন্দ না থাকলে ভাল'র অস্তিত্বই মানুষ বুঝতো না।

🌟 ৩/ আল্লাহ খারাপ কাজ করতে কাউকেই বলেন না। এখন কেউ যদি খারাপ কাজ করে সেটার দায় আল্লাহর না, কারন তিনি সেই খারাপ কাজ করতেই বলেন নাই। 

🌟 ৪/ আল্লাহর দেয়া সিস্টেম না মেনে, আল্লাহর হুকুম অমান্য করে আল্লাহকে দোষারোপ করাটাই ভুল এবং মিথ্যা চিন্তা।

🎁  সিদ্ধান্ত। 

👉 🎙 আল্লাহর দেয়া নিয়ম না জেনে তথা সুত্র না বুঝে সুত্রের বাইরে থেকে প্রশ্ন করে আল্লাহকে দোষারোপ করা সম্পূর্ণ ভুল। উদাহরণ ২+২=৪ হয়। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে এটা কেনই বা ৪ হলো ৫ কেন হলো না সুতরাং গণিতবিদরা ভুল করেছে। এই টাইপের মানুষ আসলে অংকের সিস্টেম না বুঝে বাইরে থেকে নিজের ভুল সিস্টেমে প্রশ্ন করে একটা দাবি করছে যা আসলে ভিত্তিহীন। ঠিক একইভাবে আল্লাহর দেয়া সিস্টেম অমান্য করে উনাকেই দোষারোপ করাটা ভুল এবং অযৌক্তিক।

*সুরা নিসা ৪ঃ৭৯ = তোমার কাছে ভাল যা আসে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে; আর তোমার খারাপ যা ঘটে তা তোমার নিজের কারণে।

*সুরা আশ শুরা ৪২ঃ৩০ = তোমাদের যে বিপদ আসে তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। তিনি তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমাও করে দেন। 

* সুরা ফাতির ৩৫ঃ৪৫= যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের কাজ-কর্মের দরুণ পাকড়াও করতেন তবে দুনিয়ার বুকে একটি প্রাণীকেও রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি তাদেরকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। অতঃপর যখন এসে পড়বে তাদের সেই নির্দিষ্ট সময়, তখন তিনি তাদের কর্মের প্রতিফল দেবেন আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের বিষয়ে সর্বদ্রষ্টা।

* সুরা ফুসসিলাত ৪১ঃ৪৬= যে সৎকাজ করে তার সুফল সে-ই পাবে এবং যে খারাপ কাজ করে তার কুফল তার ওপরই পড়বে। আর তোমার প্রভু তো তাঁর বান্দাদের জন্য জুলুমকারী নন।

* সুরা ইনসান ৭৬ঃ৩= আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন; এখন তার ইচ্ছায় হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ। 

🔵 উদাহরণঃ ধরুন আপনি কোন এক ভাল উদ্দেশ্যে একটা রবোট বানালেন। সেটার মাঝে ভাল খারাপের অপশন রাখলেন যেন যে নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করতে পারে। কিছুদিন সেই রবোট ভাল কাজ করেছে এবং সেটার ক্রেডিট আপনার। কিন্তু ধরুন সেই রবোট একটা খারাপ কাজ করে ফেললো সেটার দায় কিন্তু আপনার না। কারন সেই খারাপ কাজ করতে আপনি বলেননি। যদি বলতেন তাহলে সেই খারাপ কাজের দায় আপনার উপর বর্তাতো। রবোট কে তার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সাধীন ইচ্ছার জন্যই ভাল খারাপের অপশন দিয়েছেন। রবোট আপনার কথা অমান্য করে যদি খারাপ কাজ করে সেটার দায়ভার তার আপনার নয়। বরং সেটার জন্য রবোটই দায়ী কেননা সে আপনার কথা অমান্য করে,আপনার দেয়া সিস্টেমের অপব্যবহার করেছে।

🚩 নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতেঃ

🔀 ১/ নাস্তিকরা আল্লাহর অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।

🔀 ২/ আল্লাহকে খুনি হিসেবে বিশ্বাস করাটা নাস্তিক্যবাদ বিরোধী। 

🔀 ৩/ অতএব আল্লাহকে দোষারোপ করার কোন যোগ্যতাই নাস্তিক্যবাদের নেই অথবা নাস্তিকদের নেই।

💠 বিশ্লেষণঃ

নাস্তিকরা আল্লাহকেই মানে না তাহলে আল্লাহকে অভিযোগ করে সেটা বিশ্বাস করাটা ভুল। যার অস্তিত্ব আপনি মানেনই না তাকে দোষারোপ করাটাই ভুল ও অযৌক্তিক।

নাস্তিকদের দাবি "আল্লাহ খুনি"। প্রশ্ন হচ্ছে এই দাবিতে নাস্তিকরা বিশ্বাস করে? যদি উত্তর হয় yes তাহলে নাস্তিকরা সাথে সাথে আস্তিক হয়ে গেলো কারন তারা স্রস্টাকে ঠিকই বিলিভ করছে কিন্তু খুনি হিসেবে। যদি উত্তর হয় No তাহলে নাস্তিকদের নিজেদের দাবির অভিযোগের প্রতিই তাদের নিজেদেরই বিশ্বাস নেই সেখানে আমরা কিভাবে সেটা মানতে পারি? কখনোই নাস্তিকদের এই মিথ্যা দাবী মানা যায় না।

"আল্লাহ মৃত্যুর সিস্টেম বানিয়েছেন এই কারনে মহাবিশ্বের স্রস্টা আল্লাহ খুনি" এই বিধান নাস্তিক্যধর্মের কোন সার্বজনীন কেতাবে লেখা আছে যে আমাদেরকে সেটা বিশ্বাস করতেই হবে আর সেই বিধান না বিশ্বাস করলে আমাদের পাপ হবে? সেই বিধান থাকলে কোন মানুষ বানিয়েছে? একজন মানুষ কি আরেকজন মানুষকে বিশ্বাস করতে পারে বিবর্তনবাদের সূত্র অনুযায়ী? যেমন একটা বাঘ তো হরিণকে বিশ্বাস করে না। একটা সাপ তো মানুষকে বিশ্বাস করে না। বিবর্তনবাদের সুত্র অনুযায়ী সবাই সমান। 

স্রস্টা খারাপ নাকি ভাল এসব নিয়ে নাস্তিক্যধর্ম ডিল করে না। স্রস্টার অস্তিত্ব আছে কি নেই সেটা নিয়ে ডিল করে। সুতরাং নাস্তিক্যবাদ যা নিয়ে ডিল করেনা নাস্তিকরা সেটা নিয়ে ডিল করলে বুঝতে হবে প্রকৃতপক্ষে সে আসলে নাস্তিকই না বরং প্রতারক এবং সত্য বিরুধী ডাকাত।

অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকরা ইসলামের প্রতি যেই মিথ্যাচার পূর্ণ অভিযোগ করে সেসবে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করা যাবেনা। সেসবের বিশ্বাস করলে জ্ঞান প্রাপ্তি লাভ হবে না। তাই করতে হবে অবিশ্বাস। কারনঃ

নাস্তিক্যধর্মের অবতার হুমায়ুন আজাদ তার "আমার অবিশ্বাস" নামক কেতাবের ভূমিকার শেষের দিকে বর্ণনা করেছেনঃ মানুষের জন্যে যা ক্ষতিকর , সেগুলোর শুরুতেই রয়েছে বিশ্বাস, বিশ্বাস সত্যের বিরোধী, বিশ্বাসের কাজ অসত্যকে অস্তিত্বশীল করা , বিশ্বাস থেকে কখনো জ্ঞানের বিকাশ ঘটে না, জ্ঞানের বিকাশ ঘটে অবিশ্বাস থেকে, প্রথাগত সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে না মেনে তা পরীক্ষা করার উৎসাহ থেকে। "আমার অবিশ্বাস" কেতাবের ২২ পৃষ্ঠায় আরও বর্ণনা করেছেন বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধরে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে, পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস।

তাই নাস্তিকদের কোনো কথার প্রতি বিশ্বাস করে নিজের সঠিক জ্ঞানকে বিকশিত করা পথ বন্ধ করবেন না।  তাই অবিশ্বাস করুন নাস্তিকদের সমস্ত কথা।  তাহলেই জ্ঞান বিকশিত হবে। 

🌐সমাপ্ত🌐

Related Posts

: