ভাবছিলাম এতোদিন, মুসলিমদের একতা নিয়ে কিছু লিখবো। কিন্তু খুবই ভয় লাগতো এই বিষয় লিখতে অথবা কিছু বলতে। কিন্তু আজকে আল্লাহর প্রতি ভরশা রেখে কলম চালিয়ে দিলাম। ভয় লাগতো এই কারনে যে এতো ফেরকা মুসলিমদের মাঝে তৈরি হয়েছে যে মনে হয় বাংলাদেশের জনসংখ্যা থেকেও বেশি! আমার ভুলও হতে পারে! অথচ আল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন।
* হে ইমানদারগণ আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যবরণ কর না। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ১০২, ১০৩)।
আল্লাহ আমাদেরকে একতা শিখাচ্ছেন আর আমরা নিজেরা এই দল, সেই দল বানাতে বিজি। আমরা যদি মুসলিম উম্মাহের একতা নিতে চিন্তা করি এবং হাল্কা বুদ্ধিও প্রয়োগ করি তাহলে খুবই সহজে এখতেলাফি মাসালা অথবা আকিদা নিয়ে আর আমাদের মাঝে তর্কাতর্কির সুযোগ থাকে না। মুসলিম মুসলিম তর্ক এই জিনিসটাই আমি পার্সোনালি অপছন্দ করি।
* নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। (সুরা হুজরাত ৪৯ঃ১০)
আমি অনেক আয়াত আর হাদিস পেশ করতে পারি যেখানে মুসলিমদেরকে একতাবদ্ধ থাকতে আল্লাহ এবং উনার রাসুল আদেশ করেছেন।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আমার জবাব গুলো আশা করি আপনারা প্রয়োগ করলে তর্ক বিতর্কই থাকবে না। বিনয়ের সাথে ঘটনা গুলো পড়ার চেষ্টা করবেন। হে মুসলিম ভাই তোমার অপর ভাইকে ভালবাসো ইসলামের খাতিরে!
কিছুদিন আগে এক ভাই আমাকে এসে বলে আলী ভাই আপনি হানাফি না আহলে হাদিস?
আমি খুব ভাল করেই জানি দুটোর যে কোনো একটা যদি জবাব দেই তাহলে সেই ভাইটি আরও তর্ক করতে চাইবে কিন্তু আমি তাকে সেই সুযোগই দেইনি আমি বলেছি আমার পরিচয় মুসলিম এবং এতে সবাই একমত আলহামদুলিল্লাহ। আগে এসব নিয়ে খুবই তর্ক করতাম কিন্তু হানাফি বা আহলে হাদিস নিয়ে এখন তর্ক করা আমি পছন্দ করি না। এসব নিয়ে বিতর্ক করলে লাভ তো হয়ই না বরং মুসলিম মুসলিম সম্পর্কে ফাটল ধরে। তাই বাদ দিয়েছি অনেক বছর আগেই।
অনেকে আমাকে আকিদা বিষয় জিজ্ঞেস করে যে ভাইয়া আল্লাহ কোথায়? আপনি কি আকিদা রাখেন?
আমি জবাব দেই "আল্লাহ কোথায়?" এই বিষয় নবীজি (সা) এবং উনার সাহাবাগণ যা আকিদা রাখতেন আমিও তাতে ইমান আনলাম এবং আমারও হুবহু তাই আকিদা। সাফ কথা। বেচারা, আমার সেই ভাইটি তর্ক করবে তো পরের কথা সে আমার জবাবে একমত না হয়ে পারলোই না। সে অনেক চেষ্টা করেছে কোনো এক ফরমেটে রেখে আমার সাথে বিতর্ক করবে কিন্তু আমি তো ওই যে মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই ☺
সেদিন ইউটিউবে একজনের ভিডিও দেখতেছিলাম বেচারা নবীজি (সা) কে কে এই নুর প্রমান করার জন্য মনে হচ্ছে জীবন দিয়ে দিবে,কবর থেকেও উঠে নাকি সে বাহাস করবে! আমি দেখে হাসলাম আর ভাবলাম আহারে এই সহজ বিষয় নিয়ে এতো চিল্লাচিল্লির কি আছে? আল্লাহ উনার প্রিয় রাসুল (সা) কে যা দিয়ে বানিয়েছেন আমিও তাতে ইমান আনলাম এবং আমার আকিদা হুবহু তাই। এই কথা বললেই তো আর ঝগড়াঝাটি হয় না। এটা প্রমান করার জন্য আবার কবর থেকে উঠতে হয় নাকি?
খুবই আফসোস লাগে, আমরা যদি একটু সাবধানতার সাথে খেয়াল করি তাহলে গোটা মুসলিম উম্মাহ এক হওয়া কয়েক মিনিটের ব্যাপার! অথচ! না! কেউ কাউকেই ছাড় দিতে রাজি নয়!
সেদিন মসজিদে দেখি দুই ছোট ভাই নামাজে হাত বাধা,আমিন আস্তে না জোরে, রাফে ইয়াদাইন ইত্যাদি নিয়ে খুবই তর্কাতর্কি করছে। আমাকে কিছু ভাই নিয়ে গেল, আমাকে যেহেতু ওরা উভয়েই শ্রদ্ধা করে তাই ভাবলাম একটা সমাধান দিয়ে দেই যেহেতু এক মুসলিম আরেক মুসলিমদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা ফরজ আলাদা হওয়া খারাপ।
তো আমি বলা শুরু করলামঃ
দেখো ভাই নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজের ভিতরে যা যা আছে হাত বাধা, আমিন আস্তে না জোরে ইত্যাদি এসব বিষয় সুন্নাহ অথবা জায়েজ পর্যায়ের আমল। কেউ বলেছে এটা ভাল সেও সহিহ হাদিস দেখাচ্ছে আবার কেউ বলছে ওটা ভাল সেও সহিহ হাদিস দেখাচ্ছে কিন্তু "নামাজ হবেই না" সেটা কিন্তু কেউই বলছে না। মাইন্ড ইট। মানে এই বিষয় সবাই একমত যে চাই কেউ হাত নাভির নিচে বাধুক অথবা বুকে, আমিন আস্তে অথবা জোরে, রাফে দাইন করুক বা না করুক উভয়ের নামাজ আদায় শুদ্ধ হয়ে যাবে। নামাজ হবেই না এই কথা কেউই বলে না। তাহলে নামাজ যখন আদায় হবেই তো এসব ছোট খাট বিষয় উভয়ের ঝগড়াঝাঁটি অবশ্যই ভয়ানক এবং ক্ষতিকর।
দেখো ভাই এই যে এক ঘন্টা ধরে তোমরা যে তর্ক করলে এতে কি লাভ হয়েছে? বরং যদি এটা না করে কুরআন পাঠ করতে কতোটা ভাল হতো ভাবতে পারো? নামাজে কিভাবে খুলুসিয়াত আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবো, সেটা নিয়ে কথা বলো। কেউ যদি নামাজ আদায় ঠিক ভাবে করতে নাও পারে কিন্তু তার অন্তরে খুলুসিয়াত আর চেষ্টা থাকে আল্লাহর কাছে তার আমল কবুল হয়ে যাবে। সন্দেহ নাই।
* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’ (ihadis.com, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিসঃ ৮, সহিহ হাদিস)
আমি সব সময় এসবই বলে থাকি আর আলহামদুলিল্লাহ কখনোই কারও সাথে এখতেলাফি বিষয় আলোচনা তো করি নাই উল্টো কিভাবে এক হওয়া যায় সেটাই চেষ্টা করে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার মুসলিম ভাইরা আমাকে মহাব্বত করে আমিও তাদেরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি। আমি যখন ওদেরকে এসব বলছিলাম ওরা আমাকে বলছে ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন জোহর থেকে নিয়ে একটু পর আসরের আজান দিবে আমরা অযথাই তর্ক করলাম। দেখো একটু আগে তোমাদের মাঝে হার জিতের একটা বিষয় কাজ করছিল অথচ এখন ভাইয়ে ভাইয়ে কতো মিল! সুবহানাল্লাহ! ইসলামের শত্রুরা এই মিলটাই সহ্য করতে পারে না।
শেষে একটি হাদিস বলে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছিঃ
* নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেয়ার জন্য যামীন, যে তর্ক পরিহার করে হক হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেয়ার জন্য যামীন, যে মিথ্যা পরিহার করে মযাক করে হলেও এবং আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চে নিয়ে দেয়ার জন্য যিম্মাদার, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে’। (ihadis.com ,ঊপদেশ, হাদিসঃ ৪৯, সহিহ হাদিস / আবু দাঊদ হাদিসঃ ৪৮০০ / বায়াহাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিদঃ ৪১৭৯)
☺☺☺
বিষয়ঃ এখতেলাফি ঐক্য
✍ এম ডি আলী।
: