বাড়ি ওয়ালি যখন বউ | Bangla Love Story 2021

Post a Comment

 গল্পের নাম: বাড়ি ওয়ালি যখন বউ

তন্ময়: সুভা...এই সুভা....।

টেপে পানি আসছে না কেন? মটর চালিয়ে দাও প্লিজ। আমার দেরি হয়ে যাবে তো। আউচচচ.... চোখে সাবানের ফেনা ঢুকে গেছে। ভীষণ জ্বালা করছে প্লিজ মটরটা চালিয়ে দাও। উত্তরে বিপরীত পাশ থেকে খিলখিল হাসির শব্দ ভেসে এলো। এর মানে আজকেও ইচ্ছে করে এমন করেছে ঐ ফাজিল মেয়েটা। অসভ্যের গোডাউন একটা। মটর যে এখন চলবে না তা আমি বুঝে গেছি। যতোক্ষন না মটর চলছে আমি বরং আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই। আমি তন্ময় হাসান। পড়াশোনা শেষ করে একটি কম্পানিতে চাকরি করছি। বাবা মা গ্রামে থাকে বিধায় আমাকে শহরে একাই থাকতে হয়। নিজের রান্না নিজেই করি, নিজের কাপড় নিজেকেই ধুতে হয়। এক কথায় সংসারের সব কাজ আমিই করি থুক্কু করতাম। করি থেকে করতাম বললাম তার একটি কারণ আছে। কারন এখন আর আমাকে কিছু করতে হয় না। একটু আগে গলা ফাটিয়ে যার নাম ধরে ডাকলাম সেই মেয়েটিই করে সব। কেন করে সেইটাও বিস্তারিত ভাবে বলছি। ঐ ফাজিল মেয়েটি হচ্ছে আমার বউ। গত সপ্তাহে জোর করে আমার গলায় ঝুলে পড়েছে। এখনো পড়াশোনা শেষ করেনি। অনার্স করছে সবে। বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে যেমন হয় তার থেকেও বেশি ফাজিল মেয়ে। এই এলাকার ছেলেরা এই একটা মেয়ে দ্বারাই নির্যাতিত। কথায় কথায় চড় থাপ্পর মারার স্বাভাব আছে গুন্ডাদের মতো। সুভার বাবা সুমন সাহেব মেয়েকে এতো আদর দিয়ে মানুষ করেছে যে এখন নিজেই মেয়েকে জমের মতো ভয় পায়। সুভার মা নেই। ওদের বাড়িটা পাঁচ তলা। আগে এই পাঁচ তলা বাসার একটি চিলেকোঠায় পড়ে থাকতাম আমি। তখন সুভা তার ফুপির বাসায় পড়াশোনা করতো। সেখানের কলেজে মারপিট করে এখন চলে এসেছে এখানে। আর এখানে এসেই আমার ঘাড়ে চেপে বসেছে। একদিন ফরমাল ড্রেসে অফিসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সুভা পথ আটকে দাঁড়ালো। জিন্স প্যান্ট পড়া সুন্দর রমনীর হাবভাব মোটেও সুবিধার লাগেনি আমার। সুভা গুন্ডাদের মতো হাতে এক ফালি কাপড়ের টুকরো পেঁচাতে পেঁচাতে আমাকে বলে....

সুভা: হ্যালো মিস্টার, আপনার নামটা কি?

আমি: তন্ময় হাসান।

সুভা: তা চাকরি বাকরি করেন নাকি?

আমি: হ্যাঁ আমি চাকরি করি। এখন আমি অফিসেই যাচ্ছি। আপনি প্লিজ পথ ছাড়ুন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

সুভা: বাহ্! সুভার সাথে এটিটিউড? এতো সাহস এই এলাকায় কারো আছে জানতাম না তো। 

আমি: আমি কোন এটিটিউড দেখাচ্ছি না। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই আপনাকে পথ ছাড়তে বলছি। পথ ছাড়ুন প্লিজ।

সুভা: আপনি জানেন আমি কে?

আমি: আপনি যেই হোন তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট না যে আপনাকে চিনতে হবে। পথ ছাড়ুন।

সুভা: মেজাজ দেখি ফিফটি ফোর হয়ে আছে। আপনি অপরের চিলেকোঠায় থাকেন না?

আমি: হ্যাঁ তো?

সুভা: আমার বাবার বাসায় থেকে আমার সাথে এটিটিউড দেখাচ্ছেন? আমি চাইলে না তুরি মেরে আপনাকে বাড়ি ছাড়া করতে পারি। 

আমি: এমন ভাবে বলছেন যেন আপনার বাবা আমার থেকে ভাড়াই নেয় না? আর বাড়ি ছাড়ানোর খোটা আমাকে দিবেন না। টাকা থাকলে এমন চিলেকোঠার অভাব হবে না। এখন পথ ছাড়ুন। বলেই হনহন করে অফিসে চলে যাই আমি। 

সেদিনের সেই ঝগড়াই কাল হয়ে এলো আমার জীবনে। রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখি চিলেকোঠা পুরো খালি পড়ে আছে। আমার কোন জিনিস পত্র সেখানে নেই। দৌড়ে গেলাম বাড়ি ওয়ালার কাছে। কিন্তু তার রুমে ঢুকতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। এতোক্ষণে খেয়াল করলাম যে শুধু এই রুম না পুরো বিল্ডিংটাই সাজানো ছিল। ক্লান্ত চোখে কিছুই খেয়াল করিনি আগে। কিন্তু হঠাৎ এমন করে পুরো বিল্ডিংটা কেন সাজানো হয়েছে সেইটাই ধরতে পারছি না। আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার উপলক্ষে কি এই আয়োজন? কিসব ভাবছি আমি! এমন অদ্ভুত কাজ আবার হয় নাকি? হতেও পারে, বড়লোকদের বড়সড কারবার। যাক গে,আমি যে কাজে এসেছি সেইটা করি আগে। এগিয়ে গিয়ে সুমন চাচাকে ডাকলাম। উনি আমাকে দেখে আচমকা জড়িয়ে ধরল। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইলাম। সুমন চাচা চারপাশে তাকাতে তাকাতে বললো....

চাচা: বসো বাবা বসো। এই কে কোথায় আছিস তন্ময় বাবার জন্য শরবত নিয়ে আয়। চা নাস্তার ব্যবস্থা কর।

আমি: চাচা এতো ব্যাস্ত হতে হবে না। আমি এখন কিছুই খাবো না। আমি শুধু জানতে এসেছি আমার জিনিস পত্র কোথায়? চিলেকোঠা খালি কেন? আর সারা বিল্ডিং এমন সাজানোই বা হয়েছে কেন হঠাৎ করে? হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল.....

সুভা: আমি বলছি মিস্টার তন্ময় হাসান।

চাচা: এমন করে বলতে নেই মা। ও তোমার থেকে বয়সে বড়।

সুভা:  বাবা তুমি সব কিছু রেডি কর আমি উনাকে বলছি সবটা। চাচা মাথা কাত করে উঠে গেল। সুভা আমার পাশে ঘেঁষে বসতে বসতে বলল আপনার জন্যই এতো আয়োজন মিস্টার। এই যে পুরো বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সেইটাও আপনার জন্য। আপনার সব জিনিস পত্র চিলেকোঠা থেকে সরিয়ে এই বিল্ডিংয়ের সব থেকে বড় রুমটায় রাখা হয়েছে। চিন্তা করবেন না আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই বিল্ডিংয়ের সব থেকে দামি জিনিসটাও আপনার হয়ে যাবে। শয়তানি হেসে বলল সুভা।

আমি: মানে? কি বলছেন এইসব? আমার জন্য এতো আয়োজন কেন হবে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।

সুভা: আরিবাসস.. আপনি এই বিল্ডিংয়ের মালিকের মেয়ে জামাই হবেন আর আপনার জন্য আয়োজন হবে না? কি আশ্চর্য! সুমন চৌধুরীর একমাত্র মেয়ের বিয়ে এমনি এমনি হবে নাকি?

আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ভয়ে বিষ্ময়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। এই মেয়ে কি বলে এইসব? আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ঐ ফাজিল মাইয়া আমাকে আটকে দেয়। হাত পা কেটে মরে যাবো হেনতেন বলে আমাকে বিয়েই করে নিলো। আমি বেচারা অতিষ্ঠ হয়ে কবুল বলে করে নিলাম বিয়ে। অবশেষে বাসর রাত কাটাতে হলো লেপ তোষক বিহীন চিলেকোঠায়। না পেলাম বউ আর না পেলাম আয়েশের জীবন। আমার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। তবে মেয়েটির প্রতি মায়া জমে যাচ্ছে। কিন্তু এই কথা ভুলেও ঐ বাড়ি ওয়ালিকে বুঝতে দিলে চলবে না। শেয়ানার এক সের ঐ ফাজিল মেয়েটা। এমন সময় ঝুপুত করে টেপে পানি এলো। যাক বাবা বাঁচা গেল। আধঘন্টা যাবত বাথরুমে আটকে রেখে যে টর্চার করলো সুভা তার শোধ আমিও তুলবো। এবার মানে মানে কেটে পড়তে পারলে বাঁচি।

____________

বিকেল সাড়ে তিনটা......

কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছি ছাদে। ধোঁয়া ওঠা কফির মগ ঠান্ডা পানি হয়ে গেছে। ছাদটা কেমন খসখসে হয়ে গেছে। শ্বশুর মশাইকে বলে ছাদটা মসৃণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। বড়লোক শ্বশুর পেয়েছি একটু টাকা না খসালে চলে নাকি। কিন্তু শ্বশুর একপিচ মেয়ে তৈরি করেছে। সবসময় জলন্ত অগ্নিশিখার মতো ধোঁয়া ছাড়ে। নামের সাথে কাজের কোন মিল নাই। সুভা নামের মেয়ে হবে নম্র,ভদ্র, সুশীল। কাছে আসলেই লাক্স সাবানের মতো হাজারো ফুলের সুবাস আসবে। কিন্তু এর তো আছে খালি রাগ রাগ আর রাগ। এমন সময় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো কেউ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার আগেই সারা শরীর জুড়ে সুরসুরি অনুভব করলাম। লাফিয়ে লাফিয়ে কয়েক কদম পেছিয়ে দম ছেড়ে শ্বাস টানলাম। সুভা খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল....

সুভা: সামান্য সুরসুরিতেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমার হাতের মার খেলে কি হবে ভেবেই পাচ্ছি না আমি। কি দেবো নাকি কয়েক ঘাঁ? বলেই শার্টের হাতা গোটাতে লাগলো।

আমি: শান্ত হয়ে হেলান দিলাম ছাদের দেয়ালে। চোখ মুখ সুভার দিকে স্থির করে বললাম সব সময় গুন্ডামি না করে একটু ভালো টালোও তো বাসতে পারো নাকি? জোর করে বিয়ে করে আমার বউ হয়ে এলে অথচ কোন পরিবর্তন নেই তোমার মাঝে। বলি এই সব ছেড়া ফাটা জিন্স প্যান্ট ছেড়ে একটু শাড়িও তো পড়তে পারো। লোকে কি বলবে? 

সুভা: লোকে যা ইচ্ছে বলুক আমি কারো কথায় চলতে পারবো না। আমার যা ইচ্ছে হবে আমি তাই করবো। বলেই সুভা হনহন করে নীচে নেমে গেল। 

আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিন্তু একি!? দরজা লাগানো কেন? তখনি মাথায় আসলো নিশ্চয় সুভা করেছে এই মহান কাজ। দরজায় কয়েক দফা লাথি মেরে আবার আগের জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। বাড়ি ওয়ালি বিয়ে করার ফল ভালো করেই ভুগতেছি।কতোক্ষণ এখানে থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।

রাত সাড়ে সাতটার দিকে খট করে দরজা খোলার শব্দ পেলাম। তাড়াহুড়ো করলাম না যাওয়ার জন্য। রাগে দুঃখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে ঠিক করলাম যাবো না আর ঐ ঘরে যেখানে জোর করে বাসা বেঁধেছে কানা বগির ছা। ও একাই থাকুক নিজের বাপের রাজ্যে। কোন আদব কায়দা নেই আছে শুধু গিজগিজে রাগ আর রাগ। ওমন বউয়ের কোন দরকার নেই আমার। আজকেই কথা বলে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আমি যখন রাগে গজগজ করছি তখন পেছন থেকে সুভা বলে উঠলো....

সুভা: বাব্বাহ! মশাই দেখি রাগও করে আবার! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারা গুনছেন নাকি? তা কয়টা গুনেছেন?

আমি:.............

সুভা: হুম বেশ গুরুগম্ভীর পরিবেশ। মনে হচ্ছে মেঘ জমছে। বর্ষন যদিও হবে না তবুও এই দুংখি দুঃখি মুখখানা দেখার বড় শখ হচ্ছে আমার। আহারে বেচারা, এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নিশ্চয় পা ব্যাথা হয়ে গেছে। কি করবো বলুন? আপনিই তো ফাজিল মেয়ে ফাজিল মেয়ে বলে সারাক্ষণ খোঁটা দেন। এই জন্যই তো আমার ভালো হওয়াটা হচ্ছে না। 

আমি: আমার কাছে এই মুহূর্তে এইসব কথাই বিশের মতো তেতো লাগছে। আমি কোন রকম ভূমিকা ছাড়াই বলে ফেললাম.... তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার। বেশ গম্ভীর হয়েই বললাম।

সুভা: হ্যাঁ বলুন বলুন। এতো ফরমালিটি করার কি আছে? আপনার বউকে আপনি কিছু বলতেই পারেন তার জন্য অনুমতি লাগবে কেন?

আমি: ওহহ রিয়েলি? আমার বউ? তা কেমন বউ তুমি? বাড়ি ওয়ালি বউ তাই তো? যে কথায় কথায় বাথরুমের পানি আটকে দেয়, ছাদের দরজা বন্ধ করে দেয়, বিছানায় জায়গা না দিয়ে সোফায় পাঠিয়ে দেয়,সেই রকম বউ? যে বউ স্বামীর কথা শুনে না বরং স্বামীকে তার কথা শুনতে বাধ্য করে সেই বউ? পাড়ার গলিতে গলিতে যে মারপিট করে বেড়ায় সেই বউ? তোমার কাছে এইটাই জীবন হতে পারে কিন্তু আমার কাছে জীবন মানে এইসব না। আমি খুব সাধারণ একটা ছেলে। তোমার মতো আমি এতো বড়লোক বাপের ছেলে না। তোমাদের সোসাইটিতে এইসব স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও আমাদের সোসিইটিতে এইসব বিরাট কিছু। তোমার বাবা তোমাকে আদর দিয়ে দিয়ে এতোটাই মাথায় তুলেছে যে এখন আর মাথা থেকে নামাতে পারছেনা। কিন্তু আমি এইসব পারবোনা। তোমার সাথে সারাজীবন থাকার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। আমার ডিভোর্স লাগবে। দয়া করে আমাকে মুক্তি দাও তুমি। পেছন ফিরে কথাগুলো বললাম। জানি মুখোমুখি এইসব বলার সাহস আমার হবে না। ওর মায়ায় আর জড়াতে চাইনা তাই আলাদা হওয়ার কথা বলেই দিলাম। সুভার মুখে কি প্রভাব পড়েছে এখনো জানি না আমি। হঠাৎ সুভা গম্ভীর হয়ে বললো.....

সুভা: ডিভোর্স লাগবে?

আমি: হুম।

সুভা: সতি সত্যিই ডিভোর্স লাগবে?

আমি: ডিভোর্স আবার মিথ্যে মিথ্যে লাগে নাকি?

হঠাৎ অনুভব করলাম সুভা আমার কলার ধরে তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তার চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে। পেছনে ঘুরে থাকায় খেয়াল করতে পারিনি যে সুভা শাড়ি পড়ে এসেছে। নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল টিপ, সিলভার রঙের ঝুমকো, চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। খোলা চুলের একপাশে গুজে রেখেছে নীল পদ্ম। আমার মুখ হাঁ হয়ে গেল। সুভা এমনিতেই সেরা সুন্দরীদের তালিকার একজন। ছেড়া ফাটা জিন্স আর শার্টেই ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। কিন্তু শাড়ি পড়লে যে ওকে এতো সুন্দর লাগতে পারে কল্পনা করতে পারিনি আমি। সুভা আমার মুখের সামনে তুলি বাজিয়ে বললো......

সুভা: ডিভোর্স লাগবে তোর না? ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তোকে বিয়ে করেছি আমি? যদি এই নিয়ত থাকতো তাহলে তো কয়েক মাস প্রেম করে চলে আসতে পারতাম। এতো ঢং করে বিয়ে করতাম নাকি? আর তুই এখন বলছিস তোর ডিভোর্স লাগবে? ডিভোর্স! কি ভাবিস তুই নিজেকে হ্যাঁ? থাকিস তো আমার নখের ডগায় আবার তেজ দেখাও আমাকে?

আমি: তুমি এভাবেএএ আমাকেএএ তুইই তুকারিই করতে পারো নাহহ। আমতা আমতা করে বললাম আমি।

সুভা: তাই নাকি? তা কেন পারিনা শুনি? 

আমি: কারণ আমি তোমার স্বামী।

সুভা: স্বামী? তা মিস্টার হাসবেন্ড হঠাৎ ডিভোর্সের ভুত মাথায় আসলো কেন শুনি? কোন চক্কর ফক্কর চলে নাকি হুঁ? 

আমি: কোন কিছুই চলে না। এমন ফাজিল বউ নিয়ে আমি সংসার করতে পারবোনা। তাই ডিভোর্স চাইছি আমি।

সুভা: তা ফাজিল বউটাকে কখনো সোজা করার চেষ্টা করেছেন মিস্টার হাসবেন্ড? কখনো ভালোবেসে দুটো কথা বলেছেন? এখন তো বলবেন আমি সুযোগই দেইনি। কিন্তু সবসময় সুযোগ দিতে হবে কেন? আপনি সুযোগ করে নিতে পারেননি? বউকে সামলাতেই পারে না এই নাকি আবার পুরুষ মানুষ। সব পাওয়ার তো শুধু মুখে মুখে। কাজের কাজ তো কিছুই পারেননা। আবার আইছে ডিভোর্স নিতে। একদম খুন করে ফেলবো আবার যদি এই কথা কস বলে দিলাম। (মুখের উপর ঘুসি এনে বললো।) কোন ডিভোর্স ভিভোর্স দেবো না আমি। সারা জীবন থাকতে হবে আমার সাথে। বেশি ঘ্যানঘ্যান করলে সোজা বধু নির্যাতনের কেস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবো। সুতরাং নো তেরিবেরি।

আমি: তুমি জীবনেও সুধরোবে না, জীবনেও না।

সুভা: তাই নাকি? কিন্তু আমি যদি বলি আমি অলরেডি সুধরাতে শুরু করেছি তাহলে?

আমি: তা কখনোই সম্ভব নয়। বরং তুমি আরো অধঃপতনে যাচ্ছো।

সুভা: যদি সেইটাই হয় তাহলে তো দোষ আমার নয়। দোষ তো আপনার। না হলে আপনার সাথে বিয়ে হওয়ার পর এতো অধঃপতন আমার হতো না। ইন্নোসেন্ট ফেইস করে বললো সুভা।

আমি: একদম আমার দোষ দিবে না। আমি তোমাকে কখনোই এইসব শেখাইনি।

সুভা: অনেক কথা বলেছেন এবার চোখ বন্ধ করে আমার সাথে চলুন তো।

আমি: অসম্ভব! তোমাকে আমি একটুও ভরসা করিনা। যেকোন সময় ছাদ থেকে ফেলে দিতেই পারো আমি আশ্চর্য হবো না। কিন্তু যেনে শুনে এ বিপদ আমি ঘাড়ে নিতে পারবোনা।

সুভা: বড্ড বেশি কথা পেঁচান আপনি। যেটা বলেছি সেইটা করেন না। এতো কথা কেন? সিঁড়ি থেকে নেমে রুমের দরজার বাইরে থেকে চোখ বন্ধ করে রাখবেন। এবার হয়েছে?

আমি: হুঁ, কিন্তু কেন?

সুভা: সেইটা গেলেই জানতে পারবেন। এখন চলুন তো। আমি সুভার পেছন পেছন চলে গেলাম রুমের দরজার কাছে। সুভা আমার চোখ বন্ধ করে রুমে প্রবেশ করলো। আমার চোখ ছেড়ে দিতেই আমি হাঁ হয়ে গেলাম। পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। মৌ মৌ ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। আহ্ কি সুভাস! আমি অবাক হয়ে সুভার দিকে তাকিয়ে আছি। মনে যে অনেক প্রশ্ন! হঠাৎ সুভা আমার হাত ধরে বললো.....এই ফাজিল মেয়েটাকে শুধরানোর দায়িত্ব কি আপনি নেবেন? ভুল করলে শাসন করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আপন করে নেবেন আমায়? আমার সমস্ত রাগ অভিমানের কারণ হবেন আপনি? সীমাহীন ভালোবাসার গভীরতা বুঝার চেষ্টা করবেন? এই ফাজিল বাড়ি ওয়ালির সাথে কাটাবেন সারা জীবন? প্লিজ রেখে দিন আমায়,আমি থেকে যাবো সারা জীবন ধরে। শুধরে নেবো নিজেকে। আমি কোন কথা বলতে পারলাম না। নয়ন ভরা জল নিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম সুভার ঠোঁটে। বিসর্জন দিলাম ভারি মেঘের। সুভা ভুল বলেছিল,ভারি মেঘ গলে বর্ষন হয়েছে আজ। অনাকাঙ্ক্ষিত বর্ষন। আর সেইটা শুধুমাত্র আমার বাড়ি ওয়ালি বউয়ের জন্য।

                              _সমাপ্ত_


Related Posts

: