মজার হাসির গল্প না পড়লে মিস || বিদঘুটে হাসি || Bangali New Funny Story 2021

Post a Comment

                            গল্পের নাম: বিদঘুটে হাসি

 একটু পরই আমার বিয়ে। বাবার বন্ধুর ছেলে অয়নের সাথে।

বিয়েতে আমার মত থাকলেও আমি খুশি না। মনের ভেতর অজানা

ভয় কাজ করছে। ছাদে বসে আছি কিছুটা সময়ের জন্য একা

থাকবো বলে। এমন সময় কোত্থেকে একটি মেয়ে এসে

দাঁড়ালো ঠিক আমার পাশে। বলে উঠলো, "কি ভয় পাচ্ছেন?"

আমি অবাক ও বিরক্ত হয়ে তাকালাম মেয়েটির দিকে। সারা বাড়ি ভর্তি

মেহমান, মেয়েটি হয়তো তাদেরই একজন। কিন্তু তার পোশাকটা

খুবই সাধারন। মেহমানদের ভীরে ছাদেও একমুহুর্ত শান্তি নেই

ভেবে বিরক্ত লাগছে খুব। এমন সময় সে বলে উঠল, "একটা

গল্প শুনবেন?"

আমি অবাক হয়ে তাকালাম তার দিকে।

আমিঃ আপনি কে? ঠিক চিনলাম না।

সেঃ গল্পটা কিন্তু ভীষন এক্সাইটিং। আপনার খুব পছন্দ হবে

জানেন?

আমিঃ দেখুন, এই মুহুর্তে আমার কোনো প্রকার গল্প শোনার

ইচ্ছে নেই। আমি কিছুক্ষনের জন্য একা থাকতে চাই।

সে হো হো করে হেসে উঠলো, তার হাসির শব্দ যেনো

ঘন কালো মেঘের গর্জনের মতো। কোনো মেয়ের

হাসি এতো ভয়ঙ্কর এবং বিদঘুটে হতে পারে তা আমার জানা ছিলো

না। হঠাৎ সে নিজেই থামলো। আমি তার হাসির কারন খুঁজে পাচ্ছিলাম

না। এমন সময় সে বলতে শুরু করলো,

সেঃ জানেন, চাইলেই একা থাকা যায়, কিন্তু হাজার চেষ্টা করলেও

একাকীত্ব দুর করা যায় না। এই যেমন দেখুন আমাকে। এই নিঝুম

সন্ধ্যায় একাকীত্ব দুর করতেই তো আপনার কাছে আসা।

আমিঃ আপনি কি বলতে চাইছেন?

মেয়েটা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে

বলতে শুরু করলো।

সেঃ জানেন, এমন একটা সন্ধ্যায় জীবনের সব আলো ফুরিয়ে

যেতে পারে। এমনি এক সন্ধ্যায়, যেদিন আমার বিয়ে

হয়েছিলো। আপনি জানেন কোনো মেয়ে যখন জানতে

পারে তার স্বামী তাকে চায় না, তার পুরো পৃথিবী তখন একমুঠো

ছাই হয়ে যায়।কখনো কখনো কওকে বোঝানো যায় না সেটা।

মেয়েটা এক মুহুর্ত থামলো, তার চোখ চিকচিক করছে।

হয়তো সে কাঁদছে। আমি অবাক হয়ে দেখছি তাকে।

মেয়েটিকে ঠিক চিনতে পারছি না। কে হতে পারে ভাবছি। এমন

সময় মেয়েটি আবার বলতে শুরু করলো।

সেঃ জানেন, আমি দেখতে ভালো নই বলে ৬ বার বিয়ে

ভেঙেছে আমার। আমার বাবার অনেক টাকা, লোভে পরে

অনেকেই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত আমাকে

আর কেওই......

মেয়েটির চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে, জোৎস্নার

আলোয় তাকে মায়াবী দেখাচ্ছে। জানি না কেনো এমন

মায়াবতীকে কেও গ্রহন করতে পারেনি। মেয়েটার জন্য দুঃখ

হয় আমার। এমন সময় সে আবার বলতে শুরু করলো।

সেঃ জানেন, শেষ বার যখন আমার বিয়ে ভাংলো, বাবা নিজের

ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে গলায় দড়ি দিলো। সৌভাগ্য

ক্রমে সেদিন দরজা ভেঙে বাবাকে বাঁচানো হলো। সেই

একেকটা সময়, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধী

মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো সব কিছু.... সব কিছু আমার জন্য

হয়েছে। সেদিন আত্মীয়দের মধ্যে থেকে একটা কথারই

গুঞ্জন উঠেছিলো, "অপয়া" লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে

করছিলো আমার।

মেয়েটি কথা ক্রমাগত দ্রুত হচ্ছে। ভারী হয়ে আসছে

কন্ঠস্বর। যেন মনে হয় এখনি বৃষ্টির মতো প্রবল বেগে

ঝরে পরবে অশ্রুধারা। কিন্তু না মুহুর্তেই যেনো মেয়েটির

কন্ঠে উচ্ছ্বাস ভেসে আসে। বলতে শুরু করে আবার।

সেঃ জানেন, আমার চাচা আমাকে খুব আদর করতেন, হয়তো

আমার বাবার চেয়েও বেশী। নয়তো কেই বা আমার মতো

অসুন্দর, অপয়া মেয়েকে তার পুত্রবধূ করতে চাইবে?

জানেন, সেদিন আমি বড্ড স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের

চিন্তায় এতোটা বিভোর ছিলাম যে একটিবার এর জন্যও,

আরফানের কথা ভাবি নি।

মেয়েটির কথা শুনে থমকে গেলাম। সত্যিই তো, ছেলেটার

কি অপরাধ ছিলো, সেই বা কেনো এ বিয়েতে রাজী হবে?

হুট করে অন্যের বিয়েতে এসে নিজের বিয়ের কথা শুনলে

কারই বা মাথা ঠিক থাকবে? তাছাড়া এমনও হতে পারে সে অন্য

কাওকে ভালোবাসে। তাহলে কি সে বিয়েতে রাজী হয় নি?

এক রাশ কৌতুহল নিয়ে পশ্ন করলাম,

আমিঃ তারপর?

আমার কথা শুনে মেয়েট পাগলের মতো হেসে উঠলো।

তার হাসির শব্দে আমার প্রতিটা সেকেন্ড যেন অসহ্য হয়ে

উঠছে। কিন্তু তাতে তার কোনো ভূরুক্ষেপ নেই। হঠাৎ সে

থেমে গেলো। আমার দিকে ফিরে কাঁদো কাঁদো হয়ে

প্রশ্ন করল।

সেঃ আচ্ছা, আরফান কে বিয়ে করে কি আমি ভুল করে ছিলাম?

আমি কি ওর জীবনটা নষ্ট করেছিলাম?আমি কি সত্যিই স্বার্থপর?

আমি কিছু বলার আগেই সে আবার বলতে শুরু করলো।

সেঃ হয়তো তাই হবো। নয়তো বাসর ঘরে ঢুকে কেই বা নতুন

বৌকে চড় মারে? কেই বা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে? কে

করে? বলতে পারেন? হ্যা আমি অসুন্দর, অপয়া, স্বার্থপর। একটা

বিশ্রী মেয়ে আমি।

মেয়েটা দু হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কাঁদতে

থাকে। আমি মেয়েটির প্রতি সহানুভূতি অনুভব করি। কিন্তু

ছেলেটির কোনো দোষ দেখিনা। যেখানে ভরা মজলিশে

নিজের বাবা তার ছেলের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়, সেখানে

সেই বিয়েতে অমত করা মানে নিজের বাবাকে সকলের

সামনে ছোট করা। এদিকে ছেলেটির বাবার দোষটাকেই বা

কতোটুকু দোষ বলা চলে? নিজের ভাইয়ের এমন পরিস্থিতিতে

কোন ভাইই বা চুপ থাকতে পারে? আমি ভেবেছিলাম গল্পটা

হয়তো এখানেই শেষ। মেয়েটির গল্পটায় সবাই তার নিজের

যায়গায় ঠিক আছে। তাই কি বলে মেয়েটিকে সহানুভূতি দেখানো

যায় তার ভাষা পাচ্ছিলাম না।। সান্তনা দেওয়ার জন্য আমি তার কাধে হাত

রাখতেই সে আমাকে চমকে দিয়ে উচ্চস্বরে হেসে

উঠলো। আমি আচমকা ২ কদম পিছয়ে যাই। চাঁদের আবছা

আলোয় আমি যেনো তার চোখ দিয়ে অশ্রুর বদলে রক্ত

গড়াতে দেখি।মেয়েটির বিদঘুটে হাসি আর রক্তিম অশ্রু আমার

কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম সঞ্চার করছে। একমুহুর্ত যেনো আমার

গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। চোখের পলক পরতেই লক্ষ করি

মেয়েটির চোখে শুধু নোনা পানি। রক্তের বিন্দু মাত্র নেই।

আমার শ্বাস আটকে আসে, তবে কি সবটাই আমার মনের ভুল?

মেয়েটা তখনো উচ্চস্বরে হাসছে। হঠাৎ সে থেমে যায়। ২

কদম আমার দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে,

সেঃ আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?

আমি তার কথা শুনে চমকে উঠি। গলায় অদ্ভুত ব্যথা অনুভব করছি।

ইচ্ছে করছে চিৎকার করি। কিন্তু কোন অশরীরী শক্তির কাছে

যেনো আমি প্রতি মুহুর্তে হার মানছি।

এমন সময় সে আবার বলতে শুরু করে।

সেঃ জানেন, এতো কিছুর পরেও কিভাবে যেনো সব স্বাভাবিক

হচ্ছিলো। ২ বছরে আরফান হয়তো আমাকে অনেকটাই

মেনে নিয়েছিলো। আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর

সম্পর্ক ছিলোনা। কিন্তু তারপরেও খুব খুশি ছিলাম আমি। আরফান

হয়তো আমাকে ধীরে ধীরে ভালোবাসছিলো।.....নয়তো

আমি অসুস্থ হলে রাত জেগে আমার মাথায় পানি কেনো

দেবে? কেনো আমি একবার মাত্র বলাতে সে অফিস থেকে

জলদি বাড়িতে আসবে? কেনো আমার কিছু পছন্দ হলে চাওয়ার

আগেই সেটা আমার সামনে এনে দেবে? কেন? বলতে

পারেন? কেনো সে সেদিন রাত ১২টার পর সবার অলক্ষে

আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলো? সে আমাকে

ভালোবাসে, এটা বলার জন্যই কি আমাকে নিয়ে যেতে

চেয়েছিলো?

আমি তখনো ভীত। অস্পষ্ট ভাবে বললাম, "নিশ্চই"।

সে আবার হো হো করে হেসে উঠলো। আমার হাত

কাঁপছে। তার সাথে বারছে কৌতুহল।

এক মুহুর্ত থামলো সে। এবার কান্না জাড়ানো কণ্ঠে বলতে শুরু

করলো।

সেঃ যদি তাই হবে, তবে কেনো আমাকে জংগলের ভেতর

নিয়ে গেলো? স্ত্রীকে ছুড়ি দিয়ে টুকরো টুকরো করে

কোন স্বামী তার ভালোবাসা প্রকাশ করে? বলতে পারেন?

এ কথা শোনার পর আমার সারা শরীরে শিতল শিহরণ বয়ে

গেলো,

মনে হচ্ছিলো এই মুহুর্তে আমি উত্তেজনা আর ভয়ে মারা

যাবো। এমন সময় পেছন থেকে বড় আপুর গলার স্বর শুনতে

পেলাম। আমার নাম ধরে ডাকছে। আমি পেছন ফিরে তাকালাম

আপুঃ এই রিয়া, কখন থেকে ডাকছি তোকে? এখানে কি করছিস?

আমিঃ এই মেয়েটা....

আমি সামনে তাকাতেই অবাক হলাম, আসে পাশে কেও নেই।

আপুঃ এই কি হয়েছে? কোন মেয়েটা? এতো ঘামছিস

কেনো তুই?

আমার নিশ্বাস ঘন হচ্ছে। কিছু বলার আগেই আপু বলতে শুরু

করলো।

আপুঃ তারাতারি চল বরপক্ষ চলে এসেছে!

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আপু আমাকে টেনে নিয়ে

গেলো।

Related Posts

: