প্রশ্নঃপাপ না করলে আল্লাহ এমন জাতি সৃষ্টি করতেন যারা পাপ করতো?
লিখেছেনঃ এমডি আলী।
উত্তরঃ ইসলাম বিদ্বেষীরা কিছু হাদিস দেখিয়ে বলতে চায় আল্লাহ মানুষকে পাপ কাজ করার দিকে উৎসাহ দিয়েছে।যদি মানুষ পাপ বা অপরাধ না করতো তাহলে আল্লাহ মানুষকে ধ্বংস করে দিতেন এবং এমন জাতি সৃষ্টি করতেন যারা পাপ কাজ করতো।
সেই হাদিসটিঃ
ihadis.com, সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ৬৮৫৬,৬৮৫৭,৬৮৫৮, সহিহ হাদিসঃ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যখন তাঁর মৃত্যু সমুপস্থিত তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনা একটি হাদীস আমি তোমাদের নিকট হতে গোপন রেখেছিলাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যদি তোমরা পাপ না করতে তবে আল্লাহ তা‘আলা এমন মাখ্লূক বানাতেন যারা পাপ করতো এবং আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিতেন।
হাদিসটির সঠিক ব্যাখ্যাঃ
আনওয়ারুল মিশকাত শরহে মিশাকাতুল মাসাবীহ, ৩ খণ্ড, ৫১৬ পৃষ্ঠায়, অত্র হাদীসে মূল উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার প্রশস্ততা বুঝানো।মহান প্রভু তাঁর গফুর নামে মর্যাদা প্রকাশের জন্য এত বেশি ক্ষমাকারী যে মানুষ যেন তার পাপের ক্ষমা পার্থনার জন্য ত্রুটি না করে। অতএব হাদীসের মাধ্যমে গুনাহের প্রতি উৎসাহ প্রদান উদ্দেশ্য নয়,কেননা পাপের কর্ম হতে বাঁচার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তা’লা হুকুম প্রদান করেছেন আর তিনি প্রিয় হাবীব মহানবী (সা)কে দুনিয়াতে এজন্য প্রেরণ করেছেন যে তিনি মানুষকে পাপের কর্ম হতে বের করে এনে আনুগত্য ও সৎকর্মে লাগিয়ে দেবেন। - মাযাহেরে হক, ৩ খণ্ড,১৭২ পৃষ্ঠা।
ihadis.com, মিসকাতুল মাসাবিহ, হাদিসঃ ২৩২৮, সহিহ হাদিসঃ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।
হাদিসের শেষ অংশে কিন্তু স্পষ্ট বলা হচ্ছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত আর আল্লাহ ক্ষমা করে দিতেন।এখান থেকেই স্পট যে বান্দাকে তওবার দিকে উৎসাহ দেয়াই এই হাদিসের মূল উদ্দেশ্য।
অজ্ঞাতসারে যদি কে ভুল করে এবং অনুশোচনা বোধে তওবা করে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।
ihadis.com,আদাবুল মুফরাদ,হাদিসঃ৪,সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলো। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য লাভে যত্নবান হও। আতা (র) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই।
অভিযোগকৃত হাদিসটি তওবার অধ্যায় তথা “ইস্তিগ্ফার ও তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়া প্রসঙ্গে” শিরোনামে বর্ণনা করা হয়েছে। ihadis.com, সহিহ মুসলিম, তওবা অধ্যায়ের ৬৮৫৬ থেকে ৬৮৫৮ হাদিস দেখুন।
প্রশ্নঃআইয়ূব (রাঃ) কেন এই হাদিসটি গোপন রেখেছিলেন?
উত্তরঃএকদম সহজ জবাব।উনি ভেবেছিলেন মানুষ যদি এই হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে অথবা ভুল ভাবে বুঝে তাই,যদিও উনি ঠিকই হাদিসটি পরে বর্ণনা করেছেন।এই হাদিসের উদ্দেশ্য যদি জবরদস্তি পাপ কাজ করাই হতো তাহলে উনি যেহেতু এই হাদিস বলেছেন তাহলে এটাও বলেই দিতেন যে এই হাদিসে মানুষকে পাপ কাজ করতে বলা হয়েছে।অথচ উনি এমন কিছুই বলেন নাই।কিন্তু খেয়াল করুন আবু হুরায়রা (রা) ঠিকই সরাসরি হাদিস উল্লেখ করেছেন। আর আবু হুরায়রা (রা)ও এটা বলেন নাই যে এই হাদিসের উদ্দেশ্য পাপ কাজ করতে উৎসাহ দেয়া। আর নবীজি (সা) এমন কিছুই বলেন নাই।
নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে এই হাদিসের ব্যাখ্যা কি?
নাস্তিকতা শব্দের অর্থ স্রস্টার অস্তিত্বে অস্বীকার করা।এই সুত্রে হাদিসটি নিয়ে নাস্তিকদের অভিযোগ করা কিভাবে যৌক্তিক হতে পারে? অর্থাৎ এই হাদিস নিয়ে নাস্তিক্যধর্ম ডিল করে না। যেখানে নাস্তিক্যবাদ এই হাদিস নিয়ে ডিল করে না সেখানে নাস্তিক্যধর্মে/বাদে অনুসারীরা কিসের ভিত্তিতে এই হাদিস নিয়ে কথা বলে? পক্ষে অথবা বিপক্ষে কোনটাই তো নাস্তিক্যধর্ম ডিল করে না অথবা সমর্থন করে না। একজন নাস্তিক নাস্তিকতার সুত্র থেকে বের হয় কিভাবে?
কোন নাস্তিক যদি এটা বিশ্বাস করে উক্ত হাদিসের উদ্দেশ্য পাপ কাজের দিকে উৎসাহ দেয়া তাহলে তো স্বয়ং আল্লাহ অপরাধী হয়ে যায় – এই বিশ্বাস করলে একজন নাস্তিক,নাস্তিক থাকে কিভাবে? কারন নাস্তিকদের দাবী স্রষ্টা অপরাধী অথচ নাস্তিকতা অর্থ স্রস্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করা ? কোনটি সঠিক? নাস্তিকতার অর্থ নাকি নাস্তিকদের দাবী? দাবী সঠিক হলে নাস্তিকতার অর্থ ভুল আর নাস্তিকতার অর্থ ঠিক থাকলে নাস্তিকদের দাবী ভুল। নাস্তিক্যধর্মে এই সমস্যার সমাধান কি? নাস্তিকান্ধরা কি সমাধান পেশ করতে পারবে? যেই নাস্তিক সমাধান দিবে সে কি মহাপুরুষ যে সবাই তার দেয়া সমাধান মেনে নেবে?
আমার প্রশ্নঃ
১/এই হাদিস দ্বারা পাপ কাজের দিকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে-এরকম কথা নবীজি (সা) অথবা উনার কোন সাহাবী এটা বলেছেন?
২/এই হাদিসের উদ্দেশ্য যদি পাপ কাজ বৈধ বলা হয় তাহলে তওবার কথা কেন বলা হলো?
৩/আল্লাহর দিকে ফিরে আসা তথা তওবা করার কথা ইসলামে প্রচুর আছে তাহলে এই হাদিসের উদ্দেশ্য কিভাবে পাপ কাজের দিকে উৎসাহ দেয়া হবে?
৪/কুরআনের এমন একটা আয়াত অথবা এমন একটা বিশুদ্ধ হাদিস দেখান যেখানে সরাসরি পাপ কাজ করতে বলা হয়েছে?
৫/ইসলামের কোন গবেষকরা এমন কিছু বলেছেন যে উক্ত হাদিস থেকে পাপ কাজ করা ইসলামে বৈধ?
নিজের পাপ কাজ থেকে ফিরে যেন তওবা করে অর্থাৎ তওবার প্রতি উৎসাহের প্রমানঃ
*সূরা বাকারাহ ২:১৬০,২২২।
*সূরা মায়িদা ৫:৩৯।
*সুরা আনআম ৬:৫৪।
*সুরা তওবা ৯:১১২।
*সুরা হুদ ১১:৩।
*সুরা নাহল ১৬:১১৯।
*সুরা নুর ২৪:৫,৩১।
*সুরা তাহরীম ৬৬:৪।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২১০৫,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৪৬৮,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৫৮১,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৮২৫,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ২৯৯৫,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩০৮৪,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৩৮৫৫,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৪১১৬,সহিহ হাদিস।
*সহিহ বুখারী,হাদিসঃ৪৩০৪,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৪৫,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৪৬,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৪৮,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৪৯,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৫০,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৫১,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৫২,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৫৩,সহিহ হাদিস।
*সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ৬৮৫৪,সহিহ হাদিস।
*রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ১১,সহিহ হাদিস।
*রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ১৪,সহিহ হাদিস।
*রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ১৫,সহিহ হাদিস।
*রিয়াদুস সলেহিন,হাদিসঃ১৬,সহিহ হাদিস।
(হাদিস গুলো ihadis.com থেকে নেয়া)
: