পুকুরপাড় আমার খুবই ভালো লাগে।এই ভালো লাগাটা কেমন তার প্রমান আমি দিতে পারবো না।ভালো লাগার প্রমান হয়তো কেউই দিতে পারবে না তারপরেও আমরা এই "ভালো লাগাতাকেই" মেনে নেই।কেন? কারন আমরা অনুভব করতে পারি।অনেক সময় এই অনুভব করার শক্তি আমাদের থেকে চলে যায়।যেমন বুখারের সময় আমাদের মুখের স্বাদ চলে যায়।এই সময় পোলাও কোরমা এনে নিলেও ভাল লাগে না।আর মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব খাবার খেলেও সেই মজাটা অনুভব করা যায় না।
আমার ভাইয়া পুকুরপাড়ে একা একা বই পড়ছে। ভাবলাম ওকে এইবার ভাইয়ার সাথে দেখা করাবোই।
ওকে কে? আচ্ছা বলছি।আমার এক বন্ধু সে নিজেকে মুক্তমনা নাস্তিক দাবী করে থাকে।তো আমাকে ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ প্রশ্ন করতো।আমি আমার দিক থেকে উত্তর দিতাম।কিন্তু আমি তো এই বিষয় এক্সপার্ট না।তাই ভাবলাম আমার বড় ভাইয়ার কাছে একে নিয়ে যাই।
আমার বড় ভাইয়ার অনেক ফ্রেন্ড ছিল যারা আগে নাস্তিক ছিল পরে নিজেদের ভুল অনুধাবন করতে পেরে ইসলামেই ফিরে এসেছে।শুনলাম কয়েকজন ইসলামের সত্য দাওয়াতের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছে।আর বাকিরা প্রাক্টিসিং মুসলিম এবং নিজেদের সংসার নিয়ে আছে।
আমার বন্ধু আকীলকে নিয়ে গেলাম ভাইয়ার কাছে।
ভাইয়া আসসালামুআলাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। - ভাইয়া সালামের জবাব দিলেন।
এই যে, এই সেই আমার বন্ধু আকীল,যার কথা তোমাকে জানিয়েছিলাম।তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবে।সময় দিতে পারবা?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, তো আকীল কেমন আছো তুমি?
জি ভাইয়া ভালো। আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ।
তো আকীল মন খুলে প্রশ্ন করো কেমন!
ভাইয়া আমাকে তিন কাপ চা বানিয়ে আনতে বললো।আমি জিজ্ঞাশা করলাম তিন কাপ কেন?
ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন আরে বোকা তুই খাবি না।আমরা চা খাব আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি নাকি?পরে তো আমাদের পেট খারাপ করবে।
ভাইয়ার কথা শুনে আমরা দুই বন্ধু হেসে দিলাম।
আকীল বলল ভাইয়া আপনি দেখি বেশ মজা করে কথা বলেন।
হাসিখুশি থাকা নবীজি (সা) এর সুন্নাহ।(১)বুঝেছো।
চা নিয়ে আসলাম।আকীল চায়ে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করলো ভাইয়া কুরআন অনুসারে আল্লাহ সব দেখেন তাহলে তিনি সর্ব প্রথম যে জিনিস সৃষ্টি করেছিলেন তা সৃষ্টি করার আগে তিনি কি দেখতেন?
সুন্দর প্রশ্ন করেছো যদিও দুর্বল। আচ্ছা উত্তর দেয়ার আগে বলি।তোমাকে নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে উত্তর দিলে তুমি খুশি হবে নাকি ইসলামের দৃষ্টিতে?
ভাইয়া ইসলামের দৃষ্টিতেই প্রথমে প্রশ্নের উত্তর দিন - বলল আকীল।
আমি জানতাম তুমি প্রথমে এটাই বলবে।আচ্ছা মনোযোগ দিয়ে শোনো তাহলে।ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তর হচ্ছে আল্লাহ এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করার আগে তিনি কি দেখতেন বা কি দেখেছিলেন সেটা আমাদেরকে জানান নাই।এবং এটা আমাদের জন্য জানা জরুরিও না।কেউ যদি এই প্রশ্নের উত্তর জীবনে নাও জানে তারপরেও তার, না লাভ হবে আর না ক্ষতি।
কেন ভাইয়া? - প্রশ্ন করলো আকীল।
ধরে নেও যুক্তির খাতিরে আমি উত্তর দিলাম।যেহেতু সব কিছু সৃষ্টির আগে আল্লাহর অস্তিত্বই বিরাজমান ছিল সেহেতু আল্লাহ উনার অস্তিত্বই দেখে থাকবেন।এখন বলো এই উত্তর জেনে তোমার কি লাভ হয়েছে অথবা না জানলেই বা কি ক্ষতি হতো?
ওহহো। আচ্ছা ভাইয়া বুঝতে পেরেছি।
এখানে আরেকটা বিষয় বুঝিয়ে বলছি।আল্লাহর দেখা আর মানুষের দেখা এক না।আল্লাহর কোন কিছু দেখতে যে মানুষের মতো চোখ লাগবে এটা জরুরি নয়।কারন কুরআনের আল্লাহ বলেছেনঃ তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।(২) তাহলে চোখ দিয়েই মানুষের মতো আল্লাহকে দেখতে হবে এটা গলদ কথা। আল্লাহ কিভাবে দেখেন এটা উনি ভালো জানেন।
ভাইয়া আরেকটু সহজে বুঝিয়ে দিবেন। - আকীল বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যখন ঘুমাও তখন কিন্তু সপ্নও দেখো মাঝে মাঝে রাইট?
হ্যাঁ ভাইয়া দেখি মাঝে মাঝে।
তখন কি তোমার চোখ বন্ধ থাকে নাকি খোলা?
আমি তো ঘুমেই থাকি। চোখ আবার খোলা থাকবে কি করে?
তাহলে দেখো,তুমি সম্পুর্ন ঘুমন্ত থাকা অবস্থা যেখানে তোমার চোখ তোমার নিয়ন্ত্রণেই নেই।এরপরেও সপ্নে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছো,বাস্তবে চোখের সাহায্য ছাড়াই।তাহলে চোখের সাহায্য ছাড়াই যদি সপ্নে স্পষ্ট দেখতে পাও তাহলে আল্লাহর দেখতে চোখের সাহায্য কেন নিতে হবে? তুমি কি আমার ওই সাধাসিধা উদাহরণটি বুঝতে পেরেছো আকীল?
আকীল মাথা চুলকাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কিরে বুজেসিছ?
আকীল বলল এভাবে তো কখনো চিন্তাই করি নাই ভাইয়া।
আরও মজার ব্যাপার দেখো আকীল,তুমি এই মুহুর্তে যদি কল্পনা করো আগামীকাল কি করেছ? সব কিন্তু এই মুহুর্তে তোমার চোখের সামনে ভাসছে। তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছ অথচ নিজের চিন্তা জগতে ভিন্ন কিছু দেখতে পাচ্ছো তাই না?
হ্যাঁ ভাইয়া।
তাহলে যেই মহাবিশ্বের স্রস্টা এই সুন্দর সিস্টেম কোন কিছুর ডেমো ছাড়াই সৃষ্টি করতে পেরেছেন,মহাবিশ্বের সৃষ্টির আগে উনার দেখতে কি অনেক অসুবিধা হবে? উনি যাই দেখুক অসুবিধা হবে কি?
ভাইয়ার এমন অকল্পনীয় বিশ্লেষণ শুনে মন চাচ্ছে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে।অন্তর থেকে দোয়া করি।- ভাবলাম আমি।
আচ্ছা ভাইয়া আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে কি করতেন?এখন কি করছেন?এই মুহুর্তে কি করছেন? - প্রশ্ন করলো আকীল।
এটার সহজ সরল জবাব হচ্ছে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
ভাইয়া এটা আবার কেমন উত্তর?
হ্যাঁ, তোমার কাছে ভালো লাগলেও এটাই উত্তর।তোমার কাছে ভাল না লাগলেও এটাই উত্তর।
তাহলে ভাইয়া বুঝিয়ে বলুন।
ধরো তুমি বরিশালে যাওয়া পথে লঞ্চ ডুবে মারা গেলে।মারা যাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে তুমি তোমার মাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলে মা তোমার জন্য একটা চিঠি লিখতেসি।সেখানে আমার মনের কিছু কথা লিখা থাকবে যা আমি কখনোই কাউকে জানাই নাই।তোমার মা এই কথা তোমার বাবাকে বলেছে।এখন তুমি যে মারা গেলে তোমার মাকে যদি বাবা প্রশ্ন করে আমাদের ছেলেটা নাকি কি একটা চিঠি লিখেছিল সেখানে কি লেখা ছিল? খেয়াল করে শুনো সেই চিঠিতে কি লেখা ছিল? এটার একমাত্র উত্তর হচ্ছে স্রেফ তুমিই জানো।আর কেউই জানে না।এই সাহজ উদাহরণ বুঝে থাকলে বলো আল্লাহ সব কিছু বানানোর আগে কি করতেন? এখন কি করছেন? এসবের একমাত্র সহজ উত্তর আল্লাহই ভাল জানেন। যেহেতু উনি আমাদেরকে জানান নাই।
ও আচ্ছা এইবার বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা ভাইয়া আপনি নাস্তিকতাবাদ দিয়ে নাকি এসব প্রশ্নের জবাব দিবেন। সেটা দেন তো।
ভালো কথা বলেছ আকীল।মজার কথা হচ্ছে আল্লাহ আগে কি করতেন? এখন কি করছেন? পরে কি করবেন? এসব আসলে নাস্তিক্যধর্ম বিরুদ্ধ প্রশ্ন।
কিভাবে ভাইয়া?
নাস্তিকতা অর্থ কি বলো তো?
স্রস্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।
তাহলে দেখো তুমি নিজে যেখানে এটা মানো যে স্রস্টা বলে কেউই নাই সেখানে এটা জানতে চাওয়া কি অযৌক্তিক নয় যে স্রষ্টা এখন কি করছেন এখন বা আগে অথবা পরে? এটার উত্তর পেলেই কি সমস্ত নাস্তিকরা ওদের নাস্তিক্যধর্ম ত্যাগ করবে? আকীল খেয়াল করো আমি কিন্তু আগেই এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছি তোমাকে।
আকীলের চেহারা পুরো ফেকাসে হয়ে গেল।কপালে কিছুাটা ঘাম বেরুচ্ছে।আকীল এক গ্লাস পানি পান করলো।
ভাইয়া বলা শুরু করলোঃ
নাস্তিকতা অনুপাতে স্রস্টার অস্তিত্ব যদি বাতিল হয় তাহলে স্রস্টা এখন কি করছে? এই প্রশ্নটিই অটোমেটিক নাস্তিক্যধর্মের দৃষ্টিতে বাতিল হয়ে যাচ্ছে।স্রস্টা এখন কি করছেন? এই প্রশ্ন তখনই যৌক্তিক যখন স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হবে। আর স্রস্টাকে মেনে নিলে এই প্রশ্নের জবাবও একদম সহজ আর তা হচ্ছে একমাত্র স্রস্টাই জানেন তিনি এই মুহুর্তে কি করছেন? যেহেতু উনি আমাদেরকে জানান নাই,তাই।
বুঝতে পেরেছো আকীল?
আকীল কিছু না বলেই,বললো ভাইয়া আবার আরেকদিন কথা বলবো।এখন যাই।
আকীলকে খুবই চিন্তিত মনে হচ্ছে।
==================================
🔹মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে আল্লাহ কি দেখতেন?
✍ এমডি আলী।
👉 তথ্যসূত্রঃ
[১] ihadis.com, সুনানে আন নাসায়ী, হাদিসঃ১৩৫৮,সহিহ হাদিস।
[২]সুরা শুরা, অধ্যায় ৪২, আয়াত ১১।
=================================
: