বি-পজেটিভ আসলেই কি গরুর রক্ত!

Post a Comment

 

কারো রক্তের গ্রুপ ‘বি পজেটিভ’ (B +ve) জানার পর আমরা প্রায়ই হেসে বলি, তোমার তো গরুর রক্ত। আসলেই কি মানুষের দেহে গরুর রক্ত থাকে? অর্থাৎ, গরুর রক্ত আর মানুষের বি পজেটিভ রক্ত কি একই? যদি তাই হয় তবে এ গ্রুপের অধিকারী কোনো ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন হলে গরুর দেহ থেকে কেন রক্ত নেওয়া হয় না?

মূলত পৃথিবীতে যত মেরুদণ্ডী প্রাণী রয়েছে তাদের সকলের রক্তই সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে রাসায়নিক গঠনের জন্য পার্থক্য সৃষ্টি হয়। আর তাই কোনো প্রাণীর রক্ত কখনই অন্য কোনো প্রাণীর অনুরূপ নয়।

প্রথমেই জানা যাক রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে। রক্তের গ্রুপ হল রক্তের লোহিত কণিকায় অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি। এটি বংশগতভাবে নির্দিষ্ট করা থাকে। অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের বিভিন্ন ধরনের গ্রুপিং সিস্টেম করা হয়েছে।

মানুষের ক্ষেত্রে ABO সিস্টেম ও Rh ফ্যাক্টর সিস্টেম পুরো পৃথিবীতে প্রচলিত। এই দুই সিস্টেম অনুযায়ী A, B, O ও AB এই চার ধরনের রক্তের গ্রুপের প্রতিটির (+) ও (-) অ্যান্টিজেন রয়েছে। অর্থাৎ, মানুষের দেহে এই আট ধরনের রক্তের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

অপরদিকে গরুর রক্তে রয়েছে ১১টি প্রধান রক্তের গ্রুপ। এগুলো হল- A, B, C, F, J, L, M, R, S, T ও Z। তার মধ্যে কেবলমাত্র B গ্রুপটিরই রয়েছে ৬০ এর বেশি অ্যান্টিজেন। এর বাইরেও রয়েছে আরও কিছু অপ্রধান গ্রুপের রক্ত যেগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, গরুর রক্ত মানুষের দেহে তো দূরের কথা, এক গরুর রক্ত অন্য গরুতে সঞ্চালন করাই দূরহের ব্যাপার।

কথা হচ্ছে, তাহলে বি পজেটিভ রক্তকে কেন গরুর রক্ত বলা হয়? আমাদের এশিয়া মহাদেশে অন্য যে কোনো গ্রুপের চাইতে বি পজেটিভ গ্রুপধারী মানুষের সংখ্যা বেশি। এশিয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যক্তি এ রক্তের গ্রুপের অধিকারী। আর এই সহজলভ্যতার বিষয়টি বোঝাতে বি পজেটিভ রক্তকে গরুর রক্ত বলা হয়।

তাই বলে ইউরোপ বা আমেরিকায় কিন্তু এ রক্তের গ্রুপকে গরুর রক্ত বলা হবে না। কারণ, সেখানে কেবলমাত্র ৮.৫ শতাংশ ব্যক্তি বি পজেটিভ রক্তের গ্রুপধারী। আমেরিকায় সবচেয়ে সহজলভ্য রক্তের গ্রুপ ‘এ পজেটিভ’। প্রায় ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যক্তি এ গ্রুপের রক্ত বহন করে। সুতরাং সেখানে এ পজেটিভই তথাকথিত ‘গরুর রক্ত’!

Related Posts

: