বদ অভ্যাস
এক গ্রামে মোহন নামের এক ব্যক্তি থাকত। সে কৃষি কাজ করত। তার নিজস্ব জমি তো বেশি ছিল না কিন্ত কোন রকম ভাবে তার ছোট পরিবারের পালন পোষণ হয়ে যেত। সে প্রতিদিন সকালে গরু নিয়ে মাঠে চলে যেত আর খুব পরিশ্রম করে সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরে আসত।
একদিন মোহনের একটা গরু অসুস্থ হয়ে পড়ল। গরুর দশা দেখে মোহনের খুব দুঃখ হতে লাগল। আর হবে নাই বা কেন এই দুটো গরু মিলে দীর্ঘদিন ধরে দিন রাত পরিশ্রম করে পরিবারের পালন পোষণ করছে। আবার একটা গরু নিয়ে গিয়ে কোন কাজও হবে না। তাই মোহন খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। তার কাছে তেমন পয়সাও নেই যে গরুটা কে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে।
সে উদাস হয়ে একাই মাঠের দিকে রওনা দিল। যেতে যেতে সে গ্রামের প্রধানের ঘরের জানালা খোলা দেখতে পেল। এবং কাছে গিয়ে জানালার দিকে তাকাতেই সে জানালার কাছে একটা সোনার হার দেখতে পেল। আর এতটা কাছে ছিল যে মোহন সহজেই নিতে পারবে। এবং ঘরের ভিতরেও কেউ নেই।
কিন্তু মোহনের আত্মা আওয়াজ দিল যে চুরি করা মহা পাপ। তাই মোহন ভাবল যে "না" চুরি করব না এবং সে যেতে লাগল। কিন্তু দু চার পা এগোতেই মোহনের অসুস্থ গরুর কথা মনে পড়ল। আর সে ভাবতে লাগল যে যদি চুরি করে নিই তাহলে গরুও সুস্থ হয়ে উঠবে এবং কাজও আগের মত চলতে থাকবে।
তাই সে মনস্থির করল যে চুরি করব। আর মনে মনে সে কসম খেয়ে নিল যে আজ বিপদে পড়ে বাধ্য হয়ে চুরি করছি, আজকের পর আর জীবনে কোনদিন চুরি করব না। ব্যাস, মোহন চুপচাপ এদিক ওদিক তাকিয়ে হার টা তুলে নিল এবং সোজা বাজারে গিয়ে বিক্রি করে দিল।
সেইদিন তো মোহনের সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু এর পর যখনই তার সামনে কোন সমস্যা আসত সে চুরি করার বিষয়ে ভাবতে শুরু করে দিত। যখনই পয়সার প্রয়োজন হত মোহন চুরি করার মনস্থির করে নিত। একবার বিপদে পড়ে সে চুরি কি করল, মোহনের তো মনের দশায় বদলে গেল।
তারপর মোহন আস্তে আস্তে পরিশ্রম করাও কম করে দিল। যখনই প্রয়োজন পড়ত ছোট খাট চুরি করে নিত। আর আস্তে আস্তে মোহনের চুরি করা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। কিন্তু কতদিন সে এইভাবে চুরি করে পরিত্রাণ পাবে। একদিন একজনের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে মোহন হাতে নাতে ধরা পড়ে গেল। গ্রামের লোকজন তাকে খুব মারল এবং তারপর পুলিশের হাতে তুলে দিল। তার জেল হয়ে গেল এবং সাথে এত জরিমানা করল যে মোহনের জমি বিক্রি হয়ে গেল।
সেদিন মোহন খুব আফসোস করতে লাগল, খুব পস্তাতে লাগল যে কেন আমি ঐ প্রথম দিন চুরি করেছিলাম। না আমি সেদিন চুরি করতাম আর না আমার অভ্যাসে পরিণত হত...
Friends:- আমাদের একটু ধ্যান দিয়ে ভাবা দরকার যে আমাদেরও এই ধরণের কিছু বদ অভ্যাস হয়ে যায়নি তো?
অনেক সময় আমরা আমাদের লাভের জন্য একবার মিথ্যা বলি আর পরে গিয়ে সেটা আমাদের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
অনেক সময় আমরা কোন কাজ থেকে বাঁচার জন্য বাহানা করে এড়িয়ে যায় আর এই বাহানা করা আমাদের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
যে কোন অনুচিত কাজ একবারও করা যাবে না কেন না ঐ একবারই আমাদের বারবার করাবে, আর বারবার করতে করতে আমাদের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। এবং আস্তে আস্তে আমাদের সম্পূর্ণ জীবন এইরকম বদ অভ্যাসে ঘিরে যাবে। আর জীবন নরক হয়ে যাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের হাতে শুধু ব্যর্থতাই আসবে।
বদ অভ্যাস যে শুধু চুরি করা বা মিথ্যা কথা বলায় হয় না, এই রকম অসংখ্য বদ অভ্যাস আমাদের জীবনে বাসা বেঁধে আছে।
যেমন :-
কেউ ড্রিঙ্ক করে, কেউ ধুমপান করে, কেউ ফোনে কথা বলতে বলতে ড্রাইভ করে, কেউ তাকে পিছিয়ে দিয়ে চলে গেল তার পিছু ধাওয়া করে, কেউ মুখে আঙুল দেয়, কেউ নাকে আঙুল দেয়, কেউ সর্বক্ষণ মোবাইলের সাথে লেপ্টে থাকে, কেউ অকারণে রাতে দেরিতে শোয় এবং সকালে দেরিতে উঠে, কেউ সর্বদা অপরের খুঁত বের করে, এবং অসংখ্য সেই সব কাজ যে গুলোর জন্য পরে পস্তাতে হয়।
তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন সমস্ত রকম অনুচিত কাজ থেকে। আজকে হয়ত ভাল লাগছে কিন্তু কালকে আপনাকে এর হিসাব দিতেই হবে, আপনাকে লজ্জিত বোধ করতে হবে, আর মোহনের মত পস্তাতে হবে কিন্তু করা কিছুই থাকবে না
All the best 👍
-------------------------------------
: