আমার বাড়ি কলকাতায় না।
দু-চারবারের বেশি যায়নি আমি, কিন্তু
যেতেও ইচ্ছা করে না। কারন কোলকাতা যেমন ভেবেছিলাম তেমন নয়।
গিয়ে দেখলাম এক অন্য কোলকাতা!
রাস্তার পাশে একগাদা ঘরহীন লোকের পড়ে পড়ে থাকে, যারা খেতেও পায়না ঠিক করে।
তাহলে একটা গল্প বলি এখন...
পার্ক স্ট্রীটে একটু কাজ ছিল বলে সন্ধার দিকে চলে গিয়েছিলাম।
একটু পর একটা ছেলে এসে দোকানদার কে বলল --"কার্টুন আছে?"
না আজকে নাই।
কথাটা শুনে ছেলেটার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আমি আর আমার দুই বন্ধু ছেলেটাকে ডাকলাম কিন্তু আসতে চাইল না।
পরে অনেক বুঝানোর পর আমাদের সাথে এসে একটু সময় দিল।
ছেলেটার পরনে একটা ছেড়া প্যান্ট আর একটা ছেড়া গেঞ্জি।
কাধের উপর একটা বস্তা। চুলগুলো বেশ অগোছালো আর শরীরের ময়লার কথা না হয় নাই বললাম।
ছেলেটাকে দেখেই কেমন যেন মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম।
-- নাম কি তোমার?
বিকি।
-- থাকো কোথায়?
ব্রিজের নিচে।
-- বাবা মা?
-- নেই। পিসির সাথে থাকি।
-- কার্টুন কুড়িয়ে প্রতিদিন কত টাকা পাও?
-- ৫০-৬০ টাকা। পিসিকে দিই পিসি বাজার করে।
-- কি খাবে বলো?
-- কিছু না স্যার।
-- বলো, আজ তুমি যা খাবে তাই খাওয়াবো।
-- কিছু টাকা দেবেন?
-- কত টাকা? একদিনে যা পাও তা দিলে হবে?
-- হুম।
--আচ্ছা পড়তে ইচ্ছে করে না?
--কাজ না করে পড়লে খাবো কি! তাছাড়া পিসি মারবে তো।
কি আজিব দুনিয়া! গতকাল যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন ঠিক ওর বয়সী একটা ছেলেকে দেখলাম বড় একটা ট্যাব হাতে নিয়ে অনেক সুন্দর ড্রেস পরে দাড়িয়ে আছে। আর আজ ওর কি অবস্থা? বিলাসিতা তো দূরের কথা। তিনবেলা খাবার জোটাতেই সারাদিন রোদে পুরে কাজ করতে হয় আর কান দুটোকে প্রস্তুত করে রাখতে হয় মানুষের গালি শুনতে। বড়লোকের ছেলেরা পড়ালেখা না করলে মারা হয় আর ও পড়ালেখা করলে মারা হবে। কি কপাল নিয়েই না জন্ম!
টাকা দেবার পর আবার জিজ্ঞেস করলাম, ভাত, মিষ্টি, বা অন্য কিছু খাবে কিনা?
আসলে আমাদের ইচ্ছাই ছিল ওকে একটু ভাল খাওয়ানো। কিন্তু ও বলল লিচু আর আম খাবে। কি আর করা কোনদিন কারো ভালবাসা পায়নি বলে হয়ত আজকে আমাদের বিশ্বাস করে ভাল কিছু খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারছে না। লিচু আর আম কিনে যখন হাতে দিলাম তখন ওই মনমরা শিশুটার মুখে যে হাসি ফুটে উঠল তাতে মনে হল যে, ও কোটিপতি হয়ে গেছে। আসলে ওদের চাওয়াটা এত ছোট যা আমরা চাইলেই পূরন করতে পারি।
আসুন সবাই ওদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।
: