ভালবাসার প্রথম অনুভূতি - অসাধারণ গল্প

Post a Comment

আমার বাইকের পাশে মিলির স্কুটিটা দেখে এক
প্রকার বিরক্ত হলাম।এত জায়গা থাকতে আমার
বাইকের পাশেই ওকে ওর স্কুটি কেন রাখতে
হবে,আমার বোধে আসেনা।
এটা ও ইচ্ছে করেই করে কিনা কে জানে?
.
মিলির স্কুটিটা দেখলে আমার মাথা ও প্রচুর গরম
হয়,মনে হয় স্কুটিটা এখনি ভেঙ্গে গুড়ো করে
ফেলি। এই স্কুটিটার জন্য মিলি আমার বাইকে
যায়না,তাই শুধু আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা আমার।
.
মিলিকে যে সাহস করে বলে ফেলব,মিলি আমার
সাথে আমার বাইকে এসো,তাও কেন জানি হয়না।
কোন অজানা ভয়ে বারবার ভীত হয়ে যাই।
ওর স্কুটি টা কেন জানি নষ্টও হয়না কখনো নষ্ট
হলেও আমার একটা চান্স থাকে মিলিকে সাথে
নিয়ে আমার বাইকে ঘোরা ফেরা করার।
.
-কি দেখছেন?
পিছন এ ফিরে দেখি মিলি দাড়িয়ে।
-না,কিছুনা। আপনার স্কুটিটা।
-স্কুটি দেখার কি আছে?
-না খুব ভাল স্কুটি নষ্ট হয়না কখনো,
-হুম,
-আচ্ছা,যাই আমি,
-আচ্ছা।
.
মিলির বাসা আর আমার বাসা একদিকেই,ওর স্কুটিটা
না থাকলে খুব সুন্দর ভাবেই ওকে আমার বাইকে
করে আসা যাওয়া করতে হত।কারণ এমন জায়গায়
আমাদের অফিস যেখান থেকে মিনিট দশেক
হাঁটলে তারপর রিকশা পাওয়া যায়। তাই এত রাতে
হাঁটার চিন্তা বাদ দিয়ে অবশ্যই মিলি আমার বাইকে উঠে আসত।
.
বাইকে উঠে যেই স্টার্ট দেব তখনি নজর পড়ল
মিটার বাক্সের দিকে,এক ফোটা ফুয়েল ও নেই।
বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষন বাইকেই বসে রইলাম।
.
-কোন সমস্যা মিষ্টার?
.
আমি মিলির প্রশ্ন শুনে মিলির দিকে তাকালাম,ও
হাসি
হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি
কোন জবাব দিলাম না। ও আবার জিজ্ঞেস করল,
-যাবেন না,
-তেল শেষ গাড়ির,
-তাহলে?
-জানিনা,
-আসুন আমার সাথে,
-সমস্যা নেই,রিকশায় যাব।
-আরে আসুন, এক দিকেই তো যাব,
.
মিলির এক প্রকার জোড়াজুড়িতে ওর স্কুটিতে উঠে
পড়লাম।অবশ্য এক দিক দিয়ে ভালই হল ,ও আমার
বাইকে ওঠে না তো কি হয়েছে,আমি ওর
স্কুটিতে তো উঠতেই পারি।
আমি আমাদের মাঝে একটু ফাঁক রেখেই ওর
স্কুটিতে বসলাম,যেন ও ব্রেক ধরলে ওর গায়ে
গিয়ে না পরি।গায়ে পড়লে ভাববে এডভান্টেজ
নিচ্ছি।
.
মিলি ভালই গাড়ি চালায়,তবে গাড়ি চালাতে ভয় করে।
কেন করে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা।মাঝে মাঝেই
ব্রেক ধরছে। মাঝ রাস্তায় গিয়ে হঠাৎ ওর স্কুটি
বন্ধ হয়ে গেল। কি সমস্যা কিছুতেই বোঝা
গেল না।অনেক চেষ্টা করেও স্টাট করা গেলনা।
.
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হল?
-বোঝা যাচ্ছেনা,
-এখন কি করবেন?
-জানিনা,
-সামনে একটা গ্যারেজ আছে,ওখানে স্কুটিটা
দেখাই
-আচ্ছা,,,
.
গ্যারেজে স্কুটিটা নিয়ে গিয়ে দেখাতেই
মেকানিক বলল,
-আজ হবেনা সকালে এসে নিয়ে যাবেন।
.
গ্যারেজ থেকে বের হয়ে আমি মিলিকে বললাম,
-হঠাৎ নষ্ট হল কেন?
-হয়ত আপনি চাননা আমার বাইক টা ভাল থাকুক,
-মানে?
-কিছুনা,
.
মিলি কি বলল,কিছুই বুঝলাম না।
গ্যারেজের সামনে অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম।
কোন যানবাহন নেই, তাই মিলিকে বললাম,
-দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই,চলেন হাঁটাহাঁটি শুরু
করি,উউম্য
-আচ্ছা,
.
মিনিট দশেক হয়ে গেল হাঁটছি।এখনো কোন
যানবাহন পাওয়া যায়নি।তবে এতে বিরক্ত হচ্ছিনা।
হাঁটতে ভালই লাগছে।
হাঁটা হাঁটি শুরু করার থেকেই ইচ্ছা হচ্ছিল ওকে
মনের কথাটা বলে দেই।প্রায় বছর খানেক ধরে
একসাথে কাজ করছি,মেয়েটা কি কিছুই বোঝেনা।
আচার আচরণে এত প্রকাশ করি তবুও বোঝেনা।
.
আমি একটু সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম,
-আপনাকে একটা কথা বলার ছিল?
-হুম বলেন,
-আসলে কিছু মনে করবেন না,
-না কিছু মনে করব না।
-আমি আপনাকে...
তখনি পাশ দিয়ে একটা ট্যাক্সি গেল,মিলি ডাক দিল,
ট্যাক্সি।
.
সাথে সাথে ট্যাক্সি টা দাঁড়িয়ে গেল।ট্যাক্সি
দাঁড়াতেই মিলি বলল,
-চলুন ট্যাক্সিতে উঠে শুনব,
আর বলা হল না ওকে মনের কথা।ট্যাক্সি তে উঠে
ও কয়েক বার জিজ্ঞেস করল,কি কথা?
আর বলিনি,সাহস হচ্ছিল না কেন জানি?
.
মিলির বাসা আসতেই নেমে গেল ও,আমি একা একা
আমার বাসায় চলে আসলাম।
.
পরের দিন মিলি স্কুটি ছাড়াই অফিসে এল। জিজ্ঞেস
করলাম স্কুটি কই?মিলি বলল,
-আরো সময় লাগবে সারাতে,
.
অফিস ছুটির কিছুক্ষন আগে মিলির ডেস্কের
সামনে গিয়ে বললাম,
-কিভাবে যাবেন?
-রিকশায়
-আসুন আমার সাথে,
-নাহ
.
ও প্রথমে না করল।আমি বললাম,
- আগের দিন তো আমি গেলাম আপনার সাথে,
আজ আপনারো উচিত তাই না?
-হুম,আচ্ছা,যাব।
.
মিলি আমার বাইকে বসল আমার ঘাড়ে হাত রেখে।
অদ্ভুত রকমের ফিলিংস।
কিছুদূর আসতেই ও বলল,
-কাল কি যেন বলতে চেয়েছিলেন,
-হুম,,
-বলে ফেলেন,
.
আমি আর নিজেকে আটকা আটকির চেষ্টা করলাম
না,
সোজা বলে দিলাম,
-মিলি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই,
.
আমি ভেবেছিলাম মিলি বাজে রকমের রিয়াকশন
দিবে।হয়ত বাইক থামাতে বলবে, তারপর বাইক
থেকে নেমে নিজে নিজে হাঁটা শুরু করবে।
ও তেমন কিছু করল না,শুধু জিজ্ঞেস করল,
-বিয়ে করে কি হবে?
-আমাদের একটা মেয়ে হবে,
-উম না,আমাদের ছেলে হবে।
-আমি তো ভেবেছি আমাদের একটা মেয়ে
হবে তোমার মত,
-না তাহলে বিয়ে করব না,আমাদের ছেলে হলে
বিয়ে করব।
.
আমি একটু বাধ্য হয়েই বললাম,
-আচ্ছা আমাদের ছেলেই হবে,
.
আমার কথা শুনে মিলি হেসে ফেলল।আমিও
হাসলাম। মেয়েটা এত দ্রুত রাজী হবে ভাবিনি।
মিলি কিছুক্ষন বাদেই আমার ঘাড় থেকে হাত টা
নামিয়ে নিয়ে নিচে দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে
আমাকে জড়িয়ে ধরল।
তারপর বলল,
-আমি ভেবেছিলাম তুমি অনেক আগেই
প্রপোজ করবে,
-করতে চেয়েছিলাম, বাট ভয় করতাম।
-কিসের ভয়,,
-জানিনা,
-আমার ডেস্কের উপর ফুল গুলো তুমি রেখে
আসতা তাই না?
-হুম,
-এজন্যই সবার আগে অফিসে আসতা?
-হুম,আর দেবনা,
-কেন?
-তুমি তো রাজি,
-রাজী হইছি দেখে ভালবাসবানা,
-আচ্ছা,দেব।
.
আমার কথা শুনে মিলি হাসল, তারপর বলল,
-বিয়ের আগ পর্যন্ত দাও,পরে আর এত কষ্ট
করতে হবেনা,,
আমি ওর কথা শুনে হাসলাম কিছু বললাম না।
.

##লিখেছেন -নাহিদ পারভেজ নয়ন (ফেইসবুক থেকে সংগ্রহীত)

 (গল্পটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন )

Related Posts

: