কলেজ থেকে এসে ব্যাগটা খাটের উপরে রেখে লুঙ্গি পরছিলাম, ঠিক এমন সময় আম্মু রান্না ঘর থেকে ডাক দেয়
= এই রবিন
আমি তারাতারি লুঙ্গি টা পরে রান্না ঘরে যাই।
=কি হইসে?
=তোর বাবার দুপুরের খাবারটা দিয়ে আয়।
=আম্মু আমার একটু বাইরে কাজ আছে।
=খাবারটা দিয়া পরে যা।
আমার বাবা একজন ষ্টেশনারী দোকানদার, খুবি কড়া ও গাম্ভীর্যপূর্ণ লোক। আমার জীবনে যে কোন নারী সঙ্গ নেই, সেটারও ক্রেডিট উনাকেই দিতে হয়। ছোট বেলা থেকেই আমাকে বয়েজ স্কুলে ভর্তি করে দেয়, স্কুল শেষ করার পর আবার বয়েজ কলেজ। মনে হয় ইন্টার শেষ করার পরে উনি আমার জন্য বয়েজ ইউনিভার্সিটি খুজবে। মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমাকে আজীবন সিঙ্গেল রাখার পণ করেছে।
written by
হাসানুর রহমান
= এই রবিন
আমি তারাতারি লুঙ্গি টা পরে রান্না ঘরে যাই।
=কি হইসে?
=তোর বাবার দুপুরের খাবারটা দিয়ে আয়।
=আম্মু আমার একটু বাইরে কাজ আছে।
=খাবারটা দিয়া পরে যা।
আমার বাবা একজন ষ্টেশনারী দোকানদার, খুবি কড়া ও গাম্ভীর্যপূর্ণ লোক। আমার জীবনে যে কোন নারী সঙ্গ নেই, সেটারও ক্রেডিট উনাকেই দিতে হয়। ছোট বেলা থেকেই আমাকে বয়েজ স্কুলে ভর্তি করে দেয়, স্কুল শেষ করার পর আবার বয়েজ কলেজ। মনে হয় ইন্টার শেষ করার পরে উনি আমার জন্য বয়েজ ইউনিভার্সিটি খুজবে। মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমাকে আজীবন সিঙ্গেল রাখার পণ করেছে।
দকানে গিয়ে লাঞ্চ বক্সটা তেবিলের উপরে রেখে “আব্বু তোমার লাঞ্চ” এই কথাটা বলে আমি দোকান থেকে বের হওয়ার জন্য হাটা শুরু করলাম। দুই পা সামনে হাটতেই পিছন থেকে আব্বুর আওয়াজ
=এই দাড়া, দোকানে বস, আমি ব্যাংকে যাবো।
=কিন্তু আব্বু আমার...
=জানি, আপনার কোন কাজ নাই, আপনি টোটো কপানির মেনেজার। ( আমার মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে)
আমি আর কথা না বাড়িয়ে দোকানে বসে পড়লাম, দুপুর-অক্ত এই সময় দোকানে লোক কম থাকে। আমাদের দোকানের স্টাফ বিভিন্ন জিনিস ঝারা-মুছা করছে, ওর নাম সুমন আমার সাথে ওর খুবি ফ্রেন্ডলি সম্ম্পর্ক। অনেক ক্ষণ যাবত বসে আছি আর সুমনের সাথে কিছু টুকটাক কথা বলছি। হঠাৎ দোকানে ভীষণ সুন্দরী একটি মেয়ের আগমন, গায়ে সাদা কলেজ ড্রেস, চাদের মত উজ্জল মুখ, হালকা গোলাপি ঠোঁট যেন গোলাপের পাপড়ি, গাড় কাজল কালো বড় বড় চোখ, চেহারার মধ্যে একটা শিশুসুলভ ইনোসেন্ট ভাব যেন স্বর্গের অপ্সরী। আমি হা করে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে, এমন সুন্দরী মেয়ে হয়। এভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে আছি আমি নিজেও জানিনা।
আমার ভাবনায় ছেদ ফুটিয়ে মেয়েটি বলল “একটা এমবি কার্ড দেন”( ইন্টারনেট ডাটা স্ক্রাচ কার্ড, সহজে এমবি কার্ড) সাথে বিশ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি কার্ড বের করে দিতেই বাইরে থেকে একটি মেয়ে বলল-
= এই নিতু তারাতারি আয়
বুঝলাম ওর নাম নিতু, মেয়েটা আমার হাত থেকে কার্ড নিয়ে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম, সুমন আমার কাধে হালকা ভাবে হাত রেখে বলে-
= নিতু নাম, এই এলাকায় নতুন, পবিস(পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি) অফিসারের মেয়ে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশের ভবনেই থাকে।
= ভালইত খবর রাখো দেখা যায়!
=আরে ভাইজান সুন্দরী মেয়ে, অনেক ছেলের নযরে পরছে, পছন্দ হইলে মাঠে নাইম্মা পরেন, পরে কিন্তু মিশন ইম্পসিবল।
এর পর থেকে কলেজ ছুটির সময় দোকানে গিয়ে বসা আমার নিয়মিত কাজ হয়ে গেছে। কোন দিন নিতুর দেখা পাই আবার কোন দিন পাই না। এখনত নিতুকে নিয়ে ভাবতেও একটা অন্যরকম প্রশান্তি ফীল করি, আয়নাতে, নদীর পাড়ে বালিতে নিতুর নাম লেখতে ভালো লাগে; ওকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে; ওর আসা-জাওয়ার পথে হাঁটতে ভালো লাগে; সবকিছুই কেমন জানি রঙিন রঙিন লাগে।
কিন্তু সমস্যা হইল নিতু আমাকে সেই ভাবে খেয়াল করেনা, আমার দিকেত ভালোভাবে তাকায়ও না। কিভাবে নিতুর মনে আমার জন্য একটা যায়গা তৈরি করব? কিভাবে ওর হৃদয়ে আমার ফট সেট করব? কিভাবে নিতুর সাথে কথা স্টার্ট করব? আমার ভালবাসার কথা কিভাবে নিতুকে জানাবো? কিভাবে কি করব কিছুই বুঝতে পারতেসিনা, সব কিছুই কেমন ওলট-পালট লাগতাসে।
এরই মধ্যে এক বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় আব্বুর জন্য দোকানে লাঞ্চ নিয়ে যাই, কিন্তু আমার ভাগ্য এত খারাপ যে দোকানের সামনে এসে আমি পরে যাই কিন্তু লাঞ্চ বক্সের কোন ক্ষতি বা ময়লা লাগে নাই। দোকানের ভিতর থেকে আব্বু, সুমন, নিতু আর ওর বান্ধবিরা পুরো ঘটনাটা দেখল, আমি ভাবলাম এইত সময় নিতুর সামনে হিরো সাজার, আমি দোকানে ঢুকে আব্বুকে বললাম
= দেখস আব্বু আমি আছার খাইয়া পইড়া গেসি, কিন্তু লাঞ্চ বক্সের কিছু হইতে দেইনাই।
= হুম আপনেত সুপারম্যান, গাধা কোথাকার, এত বড় হয়ে গেছে এখনও ঠিক করে হাঁটতে শেখেন নাই। (আমারে একেবারে হিরো থেকে জিরো বানায় দিসে)
কথা গুল শেষ করেই আব্বু আমার হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পরল। আর এদিকে নিতু আর ওর বান্ধবিরা মিট মিট করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। এর মধ্যে নিতুর এক বান্ধবি বলে উঠল
১ম বান্ধবি= এই চল যাই
নিতু= আরে দেখছিস না বৃষ্টি হচ্ছে, তুইত আছার খেয়ে পরে যাবি। আর এখনতোঁয় সুপারম্যান ও আছার খায়
২য় বান্ধবি= আছার কিরে?
নিতু= এইযে আপনাদের দোকানে কি আছার পাওয়া যায়? (কথাটা বলার সময় মনে হচ্ছে ওর হাসি আটকে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে)
কথাটা বলেই নিতু আর ওর বান্ধবিরা আবার হাসতে শুরু করল। কথা গুলযে আমাকে ইন্ডিকেট করে বলেছে এটা বুঝতে আমার একটুও বাকি রইল না। একটু আগে আব্বু ক্রিতিসাইজ করল এখন আবার নিতু ক্রিতিসাইজ করছে, বিষয়টা আমার একটুও ভাল লাগলো না। তাই একটা অভিমানী ভাব নিয়ে নিতুর সামনে দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পরলাম।
পরের দিন রাস্তার মধ্যে হাঁটছিলাম, কে যেন পেছন দিক থেকে ডাক দিল “এইযে মিঃ রবিন” পিছনে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেলাম, আমার চোখ ছানাবড়া, এটাতো নিতু। আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা, নিতু আমাকে ডাক দিয়েছে! আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
=তুমি আমার নাম জানলে কিভাবে?
=আপনার নাম জানা কি খুব কঠিন কাজ, সুমনের কাছ থেকে জেনেছি। গতকালকের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত, I am really sorry.
=It’s ok
=আপনি মনে হয় আমাকে এখন মাফ করেন নাই।
=না, আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।
=কিন্তু আপনার মুখ দেখে মনে হয়না
=সত্যি আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি
= আমার বিশ্বাস হয়না
= আচ্ছা কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে?
= আমি যা বলব আপনি তা করবেন?
=হুম
= তাহলে আমার বায়োলজি ব্যাবহারিক খাতা করে দেন
এটা বলেই ওর ব্যাগ থেকে একটা ব্যাবহারিক খাতা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল এক সপ্তাহর মধ্যে কমপ্লিট করে দিবেন। বলতেই পিছন দিকে ফিরে হাটা শুরু করল। এইটা কি হইল দোষ করল সে, সরি বলল সে, আর পানিশমেন্ট আমারে? কিভাবে আমারে প্যাচে ফালাইয়া দিল। কিছুই বুঝলাম না, সব কিছু কেমন মাথার উপর দিয়া জাইতাসে। সব কিছু মিলাইয়া যা বুঝলাম নিতু মেয়েটা সাংঘাতিক চালাক।
যাওয়ার সময় পিছন দিকে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল, ওর সেই হাসি আর মিষ্টি চাহনি দেখলে যে কোন ছেলের হার্ট-বিট বন্ধ হয়ে যাবে।
এর পর থেকে নিতু কেমন জানি চেঞ্জ হইয়া গেসে; দিনে তিন-চার বার দোকানে আসে; প্রতিদিনই ছোটছোট এসএমএস এর মাদ্ধমে আমার খোঁজখবর নেই, আমি কোথায়, কি করি, ইত্যাদি; আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে; বিভিন্ন বাহানায়, কথার ছলে আমার হাত ধরে, গায়ে হাত রাখে; আমার সাথে ইচ্ছা করে এক্সিডেন্টলি ধাক্কা খায়; আমার যে কোন সিলি কৌতুকে হেসে উঠে। বুঝতাসিনা নিতুর মনে কি চলতাসে, তাহলে কি সত্যিই আমি নিতুর মনে যায়গা করে নিতে পেরেছি?
আজ দুইদিন যাবত নিতু আমার একটাও ম্যাসেজেরও রিপ্লাই করে নাই, একবার ফোনও রিসিভ করে নাই। দুই দিন পূর্বে আমাদের এলাকার এক মেয়ে দোকানে এসে আমার সাথে দুষ্টামি শুরু করে দেয় (ওর নাম শাকিলা ও আমার এক ফ্রেন্ড এর সাথে প্রেম করে, নাম মামুন, একটু বদমাইশ আর বান্দর টাইপের পোলা)। এক পর্যায় শাকিলা আমার হাত ওর মুঠির মধ্যে ধরে রাখে, ঠিক তখনি নিতু আসে দোকানে আর এই দৃশ্য দেখে ফেলে। সেই থেকে নিতু আমার উপর অভিমান।
দুইদিন যাবত ক্লাসে জাইনা, সারা দিন দোকানে বসে থাকি এই ভেবে যদি নিতুর দেখা পাই। হঠাৎ কাচের গ্লাস ধাক্কা দিয়ে নিতু প্রবেশ করল, দোকানে ঢুকেই সুমনকে বলল একটা এম্বি কার্ড দেন। আমি বললাম কি হয়েছে নিতু? দুইদিন যাবত একটা কল না, ম্যাসেজ না।
= হঠাৎ আমার সাথে কথা বলতে মনে চাইল? আজ কি উনার গার্লফ্রেন্ড আসে নাই? (সুমনের দিকে তাকিয়ে)
=আমি বললাম এসেছে তবে সুমনের সাথে কথা বলছে।
এখন নিতুর চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে, এক মুহূর্ত এভাবে দারিয়ে থেকে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল নিতু। আমার বুকে মাথা রেখে সাথেসাথে দুইটা কিলও বসিয়ে দিল, আমিও নিতুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
=এই দাড়া, দোকানে বস, আমি ব্যাংকে যাবো।
=কিন্তু আব্বু আমার...
=জানি, আপনার কোন কাজ নাই, আপনি টোটো কপানির মেনেজার। ( আমার মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে)
আমি আর কথা না বাড়িয়ে দোকানে বসে পড়লাম, দুপুর-অক্ত এই সময় দোকানে লোক কম থাকে। আমাদের দোকানের স্টাফ বিভিন্ন জিনিস ঝারা-মুছা করছে, ওর নাম সুমন আমার সাথে ওর খুবি ফ্রেন্ডলি সম্ম্পর্ক। অনেক ক্ষণ যাবত বসে আছি আর সুমনের সাথে কিছু টুকটাক কথা বলছি। হঠাৎ দোকানে ভীষণ সুন্দরী একটি মেয়ের আগমন, গায়ে সাদা কলেজ ড্রেস, চাদের মত উজ্জল মুখ, হালকা গোলাপি ঠোঁট যেন গোলাপের পাপড়ি, গাড় কাজল কালো বড় বড় চোখ, চেহারার মধ্যে একটা শিশুসুলভ ইনোসেন্ট ভাব যেন স্বর্গের অপ্সরী। আমি হা করে তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে, এমন সুন্দরী মেয়ে হয়। এভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে আছি আমি নিজেও জানিনা।
আমার ভাবনায় ছেদ ফুটিয়ে মেয়েটি বলল “একটা এমবি কার্ড দেন”( ইন্টারনেট ডাটা স্ক্রাচ কার্ড, সহজে এমবি কার্ড) সাথে বিশ টাকার একটি নোট বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি কার্ড বের করে দিতেই বাইরে থেকে একটি মেয়ে বলল-
= এই নিতু তারাতারি আয়
বুঝলাম ওর নাম নিতু, মেয়েটা আমার হাত থেকে কার্ড নিয়ে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম, সুমন আমার কাধে হালকা ভাবে হাত রেখে বলে-
= নিতু নাম, এই এলাকায় নতুন, পবিস(পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি) অফিসারের মেয়ে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশের ভবনেই থাকে।
= ভালইত খবর রাখো দেখা যায়!
=আরে ভাইজান সুন্দরী মেয়ে, অনেক ছেলের নযরে পরছে, পছন্দ হইলে মাঠে নাইম্মা পরেন, পরে কিন্তু মিশন ইম্পসিবল।
এর পর থেকে কলেজ ছুটির সময় দোকানে গিয়ে বসা আমার নিয়মিত কাজ হয়ে গেছে। কোন দিন নিতুর দেখা পাই আবার কোন দিন পাই না। এখনত নিতুকে নিয়ে ভাবতেও একটা অন্যরকম প্রশান্তি ফীল করি, আয়নাতে, নদীর পাড়ে বালিতে নিতুর নাম লেখতে ভালো লাগে; ওকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে; ওর আসা-জাওয়ার পথে হাঁটতে ভালো লাগে; সবকিছুই কেমন জানি রঙিন রঙিন লাগে।
কিন্তু সমস্যা হইল নিতু আমাকে সেই ভাবে খেয়াল করেনা, আমার দিকেত ভালোভাবে তাকায়ও না। কিভাবে নিতুর মনে আমার জন্য একটা যায়গা তৈরি করব? কিভাবে ওর হৃদয়ে আমার ফট সেট করব? কিভাবে নিতুর সাথে কথা স্টার্ট করব? আমার ভালবাসার কথা কিভাবে নিতুকে জানাবো? কিভাবে কি করব কিছুই বুঝতে পারতেসিনা, সব কিছুই কেমন ওলট-পালট লাগতাসে।
এরই মধ্যে এক বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় আব্বুর জন্য দোকানে লাঞ্চ নিয়ে যাই, কিন্তু আমার ভাগ্য এত খারাপ যে দোকানের সামনে এসে আমি পরে যাই কিন্তু লাঞ্চ বক্সের কোন ক্ষতি বা ময়লা লাগে নাই। দোকানের ভিতর থেকে আব্বু, সুমন, নিতু আর ওর বান্ধবিরা পুরো ঘটনাটা দেখল, আমি ভাবলাম এইত সময় নিতুর সামনে হিরো সাজার, আমি দোকানে ঢুকে আব্বুকে বললাম
= দেখস আব্বু আমি আছার খাইয়া পইড়া গেসি, কিন্তু লাঞ্চ বক্সের কিছু হইতে দেইনাই।
= হুম আপনেত সুপারম্যান, গাধা কোথাকার, এত বড় হয়ে গেছে এখনও ঠিক করে হাঁটতে শেখেন নাই। (আমারে একেবারে হিরো থেকে জিরো বানায় দিসে)
কথা গুল শেষ করেই আব্বু আমার হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পরল। আর এদিকে নিতু আর ওর বান্ধবিরা মিট মিট করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে। এর মধ্যে নিতুর এক বান্ধবি বলে উঠল
১ম বান্ধবি= এই চল যাই
নিতু= আরে দেখছিস না বৃষ্টি হচ্ছে, তুইত আছার খেয়ে পরে যাবি। আর এখনতোঁয় সুপারম্যান ও আছার খায়
২য় বান্ধবি= আছার কিরে?
নিতু= এইযে আপনাদের দোকানে কি আছার পাওয়া যায়? (কথাটা বলার সময় মনে হচ্ছে ওর হাসি আটকে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে)
কথাটা বলেই নিতু আর ওর বান্ধবিরা আবার হাসতে শুরু করল। কথা গুলযে আমাকে ইন্ডিকেট করে বলেছে এটা বুঝতে আমার একটুও বাকি রইল না। একটু আগে আব্বু ক্রিতিসাইজ করল এখন আবার নিতু ক্রিতিসাইজ করছে, বিষয়টা আমার একটুও ভাল লাগলো না। তাই একটা অভিমানী ভাব নিয়ে নিতুর সামনে দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পরলাম।
পরের দিন রাস্তার মধ্যে হাঁটছিলাম, কে যেন পেছন দিক থেকে ডাক দিল “এইযে মিঃ রবিন” পিছনে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেলাম, আমার চোখ ছানাবড়া, এটাতো নিতু। আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা, নিতু আমাকে ডাক দিয়েছে! আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
=তুমি আমার নাম জানলে কিভাবে?
=আপনার নাম জানা কি খুব কঠিন কাজ, সুমনের কাছ থেকে জেনেছি। গতকালকের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত, I am really sorry.
=It’s ok
=আপনি মনে হয় আমাকে এখন মাফ করেন নাই।
=না, আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি।
=কিন্তু আপনার মুখ দেখে মনে হয়না
=সত্যি আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি
= আমার বিশ্বাস হয়না
= আচ্ছা কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে?
= আমি যা বলব আপনি তা করবেন?
=হুম
= তাহলে আমার বায়োলজি ব্যাবহারিক খাতা করে দেন
এটা বলেই ওর ব্যাগ থেকে একটা ব্যাবহারিক খাতা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল এক সপ্তাহর মধ্যে কমপ্লিট করে দিবেন। বলতেই পিছন দিকে ফিরে হাটা শুরু করল। এইটা কি হইল দোষ করল সে, সরি বলল সে, আর পানিশমেন্ট আমারে? কিভাবে আমারে প্যাচে ফালাইয়া দিল। কিছুই বুঝলাম না, সব কিছু কেমন মাথার উপর দিয়া জাইতাসে। সব কিছু মিলাইয়া যা বুঝলাম নিতু মেয়েটা সাংঘাতিক চালাক।
যাওয়ার সময় পিছন দিকে ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল, ওর সেই হাসি আর মিষ্টি চাহনি দেখলে যে কোন ছেলের হার্ট-বিট বন্ধ হয়ে যাবে।
এর পর থেকে নিতু কেমন জানি চেঞ্জ হইয়া গেসে; দিনে তিন-চার বার দোকানে আসে; প্রতিদিনই ছোটছোট এসএমএস এর মাদ্ধমে আমার খোঁজখবর নেই, আমি কোথায়, কি করি, ইত্যাদি; আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে; বিভিন্ন বাহানায়, কথার ছলে আমার হাত ধরে, গায়ে হাত রাখে; আমার সাথে ইচ্ছা করে এক্সিডেন্টলি ধাক্কা খায়; আমার যে কোন সিলি কৌতুকে হেসে উঠে। বুঝতাসিনা নিতুর মনে কি চলতাসে, তাহলে কি সত্যিই আমি নিতুর মনে যায়গা করে নিতে পেরেছি?
আজ দুইদিন যাবত নিতু আমার একটাও ম্যাসেজেরও রিপ্লাই করে নাই, একবার ফোনও রিসিভ করে নাই। দুই দিন পূর্বে আমাদের এলাকার এক মেয়ে দোকানে এসে আমার সাথে দুষ্টামি শুরু করে দেয় (ওর নাম শাকিলা ও আমার এক ফ্রেন্ড এর সাথে প্রেম করে, নাম মামুন, একটু বদমাইশ আর বান্দর টাইপের পোলা)। এক পর্যায় শাকিলা আমার হাত ওর মুঠির মধ্যে ধরে রাখে, ঠিক তখনি নিতু আসে দোকানে আর এই দৃশ্য দেখে ফেলে। সেই থেকে নিতু আমার উপর অভিমান।
দুইদিন যাবত ক্লাসে জাইনা, সারা দিন দোকানে বসে থাকি এই ভেবে যদি নিতুর দেখা পাই। হঠাৎ কাচের গ্লাস ধাক্কা দিয়ে নিতু প্রবেশ করল, দোকানে ঢুকেই সুমনকে বলল একটা এম্বি কার্ড দেন। আমি বললাম কি হয়েছে নিতু? দুইদিন যাবত একটা কল না, ম্যাসেজ না।
= হঠাৎ আমার সাথে কথা বলতে মনে চাইল? আজ কি উনার গার্লফ্রেন্ড আসে নাই? (সুমনের দিকে তাকিয়ে)
=আমি বললাম এসেছে তবে সুমনের সাথে কথা বলছে।
এখন নিতুর চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে, এক মুহূর্ত এভাবে দারিয়ে থেকে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল নিতু। আমার বুকে মাথা রেখে সাথেসাথে দুইটা কিলও বসিয়ে দিল, আমিও নিতুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
written by
হাসানুর রহমান
: