দারুন এক বিয়ের গল্প | বাংলা নতুন গল্প 2021 | Bengali New Story 2021

Post a Comment

                                  গল্পের নাম:সংসার

আমার বাবার বাড়ি থেকে কুরবানির মাংস আসতে ই আদিব তা দেখে

কেমন জানি চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল।

তার এরকম রাগান্বিত চেহারা দেখে আমি অনেকটা ভয় পেয়ে

গেলাম। কি হয়েছে জানতে চাইলেও সে এতটা ই রেগে ছিল

যে কিছু ই বলতে পারল না।

শুধু বলল,

__তুমি বুঝো না কিছু! তুমি চেনো না আমাকে? আমার সম্মান

নেই?

কথাগুলো বলে ই সে রুমে চলে গেল। হুট করে এতটা

রাগের কি এমন কারণ বুঝলাম না।

আমার ভাই রিফাত এসেছিল মাংস নিয়ে। সে এরকম কিছু দেখে

জানতে চাইল কি হয়েছে?

যেখানে আমি নিজে ই কিছু বুঝতে পারছি না সেখানে ওকে কি

বলব।

আমাদের বিয়ে হয়েছে দু বছর হল। আদিব নিজের কাজে

দেশের বাইরে ই এটা নিয়ে ওর সাথে আমার ২য় ইদ। নতুন যখন

বিয়ে হয় তখন বিয়ের দু মাস পর রমজান ইদ পাই একসাথে। মাঝে

আরো দুটো ইদ আদিবকে ছাড়া ই কাটিয়েছি।

আর এই কুরবানি ইদের কিছু দিন আগে ছুটি কাটাতে দেশে

আসে।

ঘরে আরো কিছু মেহমান ছিলেন সাথে একটু কাজও বেশি ছিল।

স্বাভাবিক কুরবানি দিলে অন্য ইদের তুলনায় একটু বাড়তি কাজ থাকে।

অবশ্য সেটা আমার অভ্যাস আছে। মায়ের সাথে টুকটাক কাজ

সেই ছোটবেলা থেকে ই করতাম।

কিন্তু আদিবের এমন আচরণে আমার কেমন জানি খারাপ লাগা শুরু

হল।

কোনদিক দিয়ে কি কম হয়ে গেছে? মাংসের পরিমান কি কম

লাগছে যা আদিবের কাছে পেস্টিজ এর ব্যাপার। হ্যা আমার

শ্বশুরবাড়ির তে এ বছর তিনটা গরু কুরবানি দেয়া হয়েছে। সচরাচর

দুটো দেওয়া হয় এ বছর আদিব আসায় আরো একটা

বেড়েছে।

কিন্তু আমার বাবা তো একটার বেশি কুরবানি দেওয়ার মত এতটা সাধ্য

নেই।

আর একটা ই যে খুব বেশি বড় এমনও না মাঝারি সাইজের। আর

সেখান থেকে আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশি আরো যারা অসহায়

লোকজন আসে তাদের সহ পরিবারের জন্য কিছুও রাখতে হয়।

সব মিলিয়ে এখান থেকে বেশি পরিমান মাংস কাউকে দেওয়ার মত

থাকে না।

তবুও আমার শ্বশুরবাড়িতে অনেকটা পাঠিয়েছেন যতটা দিয়েছেন

মনে হয় না বাবা আমাদের ঘরের জন্যেও এতটা রেখেছে।

.

আমার শাশুড়ি কেমন জানি চুপচাপ হয়ে আছেন। আমি মাংসের ব্যাগ টা

রান্নাঘরে নিয়ে গেলাম। খুব খারাপ লাগছিল মনে মনে। রিফাতকে

নাস্তা দিয়ে আবারো রান্না শেষ করতে রান্নাঘরে আসলাম।

আমার মন খারাপ দেখে ফুলি বুয়া বলল

__ ভাবী সাহেবা মন খারাপ কইরেন না। আমাগো মাইয়্যা গো

জীবন এমন ই গরিব হইলেও দোষ। আবার জামাই বড়লোক

হইলেও দোষ। কোন দিক দিয়া সামলানি যায় না। না বাপের বাড়ি

টানোন যায় না সোয়ামির বাড়ি।

আমি নিজের ভাব টা লুকিয়ে রেখে মুখে একটু হাসি টেনে ই

বললাম, আরে না।

আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। আদিব মোটেও এমন না হয়ত কোন

কাজের কারণে রেগে আছে। সেটা ই খুঁজছি।

কথাগুলো বলে ফুলিকে বুঝ দিলেও নিজেকে বুঝাতে পারলাম

না। ভেতর ভেতর কতটা খারাপ লাগছিল।

আসরের নামাজ পড়ার আগে আমার শাশুড়ির চা খাওয়ার অভ্যাস

আছে।

চুলায় চা বসাতে ই রিফাত রান্নাঘরে আসলো আমার কাছে থেকে

বিদায় নিতে।

যখন ই চলে যাওয়ার কথা বলছিল তখন ই আবার আদিব এসে বলল

পেছন থেকে বলল..

__ কোথায় যাবে এখন? চল বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি

এরপর এসে দুজন মিলে খাওয়াদাওয়া করবো তারপর যাবে।

তোমার আপু চা বানাতে পারে না মোটেও।

কথাটা শুনে রিফাত বলল,

__আপু খুব ভালো চা বানায়। বাসার সবাই তো সন্ধ্যায় আপুর চায়ের

অপেক্ষা করতো। কি যে বলেন দুলাভাই।

__ আরে ওসব বিয়ের আগে পারতো হয়ত। এখন না। এরকম

হাসিঠাট্টা করে দুজন দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

আদিব আবার পেছন থেকে এসে বলল,

মাংসের ব্যাগ টা যেন খোলা না হয়। যেভাবে আছে সেভাবে ই

যেন থাকে।

গম্ভীর চেহারায় এরকম ভারি কথার আওয়াজ আবারো মনটা খারাপ

করে দিল।

বুঝলাম একটু আগে রিফাতের সাথের কথা গুলো শুধু বাইরে

থেকে মন ভুলানো।

কেন জানি কান্না পাচ্ছিল।

আমি তো কখনো ওর মাঝে দাম্ভিকতা দেখিনি। নাকি আমার

চোখে পরেনি।

আদিব ফিরল মাগরিবের নামাজ শেষ করে।

এসে ই বলল রেডি হও বাইরে যাব। রিফাত চলে গেছে বাসা

থেকে ফোন আসছিল বার বার। আমাকে এই কথা বলে মা'কেও

বলল তৈরি হতে। যদিও কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না এত এত

কাজ শেষে ক্লান্ত লাগছে কিন্তু উপায় নেই।

আদিব খুব রাগি স্বভাবের। এমনি তে মেজাজ চড়া হয়ে আছে কথা

বলছে না।

রেডি হয়ে গেলাম।

গাড়ি তে উঠে রাস্তা খেয়াল করতে ই বুঝলাম বাড়ির দিকে ই যাচ্ছি।

মা বাবা আগের দিন ফোন করে বলেছিলেন যাওয়ার জন্য।

বাসায় গিয়ে সবার সাথে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে রান্নাঘরে ভাবীর

সাথে গল্প করছিলাম।

এর মাঝে ই বাবা ডাক দিলেন।

ড্রয়িংরুমে যেতে ই টি টেবিলের উপর মাংসের বড় ব্যাগ টা

চোখে পড়ল!

একি, আদিব এটা এনেছে কেন? আর এভাবে সবার সামনে রাখা

কেন!

আদিব ব্যাগ টা নিচে নামাতে নামাতে বলল

__জানেন বাবা আমি যখন খুব ছোট তখন আমার বাবা মারা যান। আমরা দু

ভাই পিঠাপিঠি আমি ৫ বছরের আর ভাই টা ৪ বছরের। আমাদের অবস্থা

খুব একটা ভালো ছিল না। বাবা কারখানায় কাজ করতেন তা দিয়ে কোন

রকম খেয়ে বাঁচার অবলম্বন ছিল। বাবার মারা যাওয়ার পর বেঁচে থাকাটা

ই ছিল খুব কষ্টের।

গ্রামে আমাদের কিছু ই ছিল না। তাই শহরে খেটেখুটে বাস

করতাম। কিন্তু এখানেও বাবা নামক বটগাছের ছায়া আমাদের মাথার

উপর বেশি দিন রয় নি। সৃষ্টিকর্তা কেড়ে নেন এক দূর্ঘটনায়।

এরপর থেকে মা বাসা বাড়িতে কাজ করে করে আমাদের সংসার

চালাতেন। এর মাঝে মাও বেশ অসুস্থ হয়ে যান বার বার তখন

অনেকবার আমি নিজেও চায়ের দোকানে রাতে কাজ করেছি।

যত দিত তত ই মেনে নিতাম। একবারো বলতাম না এত টাকা না

আরেকটু বাড়িয়ে দেন তখনো সেই বুঝ টুকু আমার মাঝে

আসে ই নি।

ঠিক তেমনি এক কুরবানি ইদে আমরা দু ভাই ইদের নামাজ শেষ

করে ঘরে আসি। এসে ই দেখি মা বিছানায় শুয়ে। কয়েকবার নাকি

বমিও করেছেন।

ইদের আগের দিন কয়েকজনের বাসায় খুব বেশি কাজের ভার

দিয়েছিল। দু টাকা বেশি পাওয়ার আশায় শরীরের উপর তোয়াক্কা না

করে কাজ করেন তাও শেষ হয়নি পুরোপুরি ।

কিন্তু শরীর কি আর টাকার মায়া বুঝে।

ইদের দিন মা অসুস্থ। অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি কাজে যেতে

চান। ঘরে সেমাই আর চাল ছাড়া কিছু নেই ইদের দিন ছেলেরা কি

খাবে একটু কাজ করলে যদি কিছু মিলে।

তখন আমরা ছোট। বছরের এই একটা সময় গরুর গোশত খাওয়ার

সুযোগ হয়। ইদের এক মাস থেকে দিন গুনছি আমরা। কতদিন খাই

না..!

মা অনেক ভালো রান্না করে গোশত। এসব ভাবতে ভাবতে দু

ভাই বলতাম খুব মজা করে পেট ভরে ভাত খাব ইদে ভাবতে ই

জিবে জল আসতো দুজনের।

এসব কিছু মায়ের অজানা নয়।

তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে যেতে চাইল।

মানা করলাম বললাম তোমার বদলে কাজ আমি করে দিয়ে

আসবো ও বাড়িতে। এসব বলে মাকে রেখে বেড়িয়ে

পড়লাম।বেশ বড় বাড়ি ২ টা বড় গরু জবাই হয়েছে। ঘরের মহিলাকে

মায়ের কথা বলতে ই বললেন

__আমি আগে ই জানতাম এমন কিছু হবে! নিশ্চিই অন্যবাড়ি বেশি

পাওয়ার লোভে চলে গেছে। আর তোকে এখানে

পাঠিয়েছে যা পারিস আদায় করে নিতে?

কথাগুলো শুনা মাত্র ই চোখ পানিতে ভরে গেল! অনেক বার

বললাম মায়ের কথা আমার মা এমন করে না। কেউ শুনল না। গরুর কাটা

শেষ দাড়িয়ে রইলাম অনেক্ষন টুকটাক কাজ করলাম বাইরে।

কাজ শেষে ৫০ টাকার একটা নোট দিলেন আমার হাতে!

অথচ আমি তাকিয়ে আছি ওই গোশতের দিকে। বললাম আমাকে

কিছু গোশত দিবেন।

ওরা দিল না তাড়িয়ে দিল আমাকে। বলে মাংস দিয়ে আমরা কি

করবো!

মনে মনে বললাম ও আচ্ছা গরিবের জন্য মাংস কোন কাজের না।

অথচ আমি দেখছিলাম এক বড় গাড়ি নিয়ে আসা লোককে

লোকের অনিচ্ছা সত্ত্বে ব্যাগ ঠেশে গোশত ভর্তি করে

দিয়েছেন।

এটা দেখার পর শুধু চোখ বেয়ে পানি পরছিল।

আমার ছোট্ট ভাইটার কথা মনে পরছিল। আজকের দিনে দু ভাই

আর মা মিলে পেঠ ভরে খাওয়ার স্বপ্ন টা শুধু স্বপ্ন ই রয়ে

গেল।

কান্না করতে করতে সেদিন বাড়ি এসেছিলাম। প্রতিজ্ঞা

করেছিলাম কোন দিন আর বড়লোকদের দরজায় যাব না।

নিজে কাজ করে করে দু ভাই পড়াশোনা করেছি পলিটেকনিক্যাল

থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আজ এ অব্দি আলহামদুলিল্লাহ্‌ !

তবে ওই দিনগুলোর কথা আজ অব্দি ভুলিনি। বিশেষ করে কুরবানি

ইদের কথা। আজ রিফাতের হাতে এত বড় ব্যাগ দেখে আমার রাগ

না কষ্ট হচ্ছিল। আমার তো আছে!

তাহলে আমাকে এত দেয়ার কি দরকার।

যাদের নেই তাদের একটু দিন না এসব!

দেখবেন তারা মন থেকে দোয়া করবে আর কতটা খুশি হবে

আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

হ্যা সৌজন্যতাবশত দেয়া লাগে দিবেন তবে অল্প।

আসলে আমরা ভুলটা এখানে ই করি যাদের দিলে আল্লাহ খুশি

হোন তাদের না দিয়ে যাদের দিলে মানুষ খুশি হয় তাদের দেই।

তেল মাথায় তেল দেওয়া আমাদের জন্মগত স্বভাব। বিশ্বাস

করবেন না বাবা আজ আমার দুয়ারে আসা একটা মানুষকেও আমি খালি

হাতে ফিরিয়ে দেই নি।

খুশি মনে মন ভরে দিয়েছি ওদের।

কারণ আমি জানি আমি ছিলাম এমন একসময়ে ।

আদিব কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছিল।

সবকিছু শুনে আমি যে কখন কান্না শুরু করেছি বুঝতে ই পারিনি।

বাবা আদিবকে জড়িয়ে ধরলেন।

বললেন

__ কে বলেছে তোমার বাবা নেই! আজ থেকে তুমি আমার

মেয়ের জামাই নও শুধু আমার ছেলে তুমি।

পৃথিবীতে কিছু সুখ আছে যা হৃদয়কে নাড়া দেয়। এক পরম

ভালো লাগায় ভরে যায় মন। এক পবিত্র সম্পর্কে এর থেকে

বড় আর কিছু হতে ই পারে না।

প্রত্যেক মানুষের ই রাগের পেছনে অনেক কষ্টের কিছু

লুকিয়ে থাকে। আর সেই কষ্ট টা মানুষকে পুড়িয়ে খাঁটি সোনায়

পরিনত করে।

আমার ভালোবাসার মানুষটা যে এমন খাঁটি একটা মানুষ তার জন্য শুধু

ভালোবাসা না সম্মান শ্রদ্ধা দ্বিগুন রূপে বেড়ে গেল।

একটা সংসার জীবন শুধু রমণীর গুণে পূর্ণতা পায় না একজন সৎ

ভরসা করার মত পুরুষের ছায়া লাগে।

' অবশেষে

আমি পাইলাম তাহাকে ই পাইলাম

ঝিনুকের মুক্ত রূপে।'

Related Posts

There is no other posts in this category.

: