গল্পের নাম:শুকরিয়া
মাপ নিচ্ছেন নিন না, অন্যজনের মুখের দিকে তাকানোর কি দরকার?
-- এক নিশ্বাসে বলে দিলাম। কোনো কিছু না ভেবে।
আমার ছোট বোন শিমুকে নিয়ে এসেছি টেইলার্স এর কাছে। স্কুলের ড্রেস টা খুব বেশি পুরনো হয়ে গেছে সবদিক দিয়ে মেনেজ করতে পারিনা। তাই এতদিন সম্ভব হয়নি। টিউশনির টাকা বাচিয়ে এই মাসে ড্রেস এর কাপর কিনে আনলাম।
আর দোকানে আসতেই এই অবস্থা।কোনোরকম মাপ টা দিয়ে বেড়িয়ে এলাম। শিমুকে বাড়ির রাস্তায় দিয়ে বাড়ি যেতে বললাম। আর আমি আরেক টা টিউশনির জন্য বেড়িয়ে পড়লাম।
টিউশনি শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। একা নিরিবিলি রাস্তা হেটে আসছি। আজকে টিউশনির বেতন পেলাম। ঘরের খরচ, শিমুর স্কুলের বেতন, আমার কলেজ এর রেজিষ্টেশন এর টাকা দিতে হবে এই কয়েক দিনের মধ্যে। হাতে অল্প টাকা কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। বাবার শূন্যতা খুব করে অনুভব করছি। মাথার উপর বটগাছ টা নেই তাই আজ জীবন যুদ্ধে রৌদ্র তাপে পুড়ে মরছি। এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে জল চলে আসল।
ঠিক তখনই কারো কান্নার আওয়াজে থমকে দাড়ালাম। আশেপাশে তাকাতেই একজন মহিলাকে দেখলাম। কাছে যেতে আরো অবাক হলাম সাত আট বছরের একটা ছেলেকে কুলে নিয়ে কান্না করছে। ছেলটির মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।
-- কি হয়েছে ওর..?
-- জানিনা মা, সন্ধ্যায় একটু জ্বর উঠল। আমি মাথায় জল পট্টি দিচ্ছিলাম হঠাৎ করে এই অবস্থা।
-- আপনার স্বামী বা কেউ নেই?
-- মারা গেছেন। আর এই শহরে কেউ নেই। আমি পঙ্গু মানুষ। কাঁথা সেলাই করে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি মা। কি করব বুঝতে পারছি না। হাটতেও যে পারিনা।
আমি তখনি কিছু না ভেবে। একটা অটো থামাই। ছেলেটা কে কুলে নিয়ে মা কে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে যাই। ভাগ্য ভালো ডাক্তার অন ডিউটি তে ছিলেন। ছেলে কে দেখে ইনজেকশন দিয়ে আমার হাতে প্রেসক্রিপশন দিলেন। ঔষধ আনলাম। ছেলেটা কে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। আগে থেকে অবস্থা ভালো। ঔষধের প্যাকেট টা হাত থেকে রাখতেই। ছেলটার মা আমার হাত ধরে কান্নাকাটি শুরু করলেন।
-- তুমি ফেরেশতা হয়ে এসেছ মা। তা না হলে এরকম সময়ে আমাকে তুমি চেননা জানোনা এভাবে সাহায্য করলে এটা কোনো মানুষ করতে পারে না।
-- আল্লাহ মানুষকে মানুষের জন্যই তৈরি করছেন। যদি এসব না থাকত তাহলে মানুষ কে মানুষ বলা হত না।
উনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম হাসপাতাল থেকে। হঠাৎ হাতের দিকে তাকাতেই মন টা একটু ভারী হয়ে গেল। হাতে আছে পাঁচশত টাকা। টিউশনির দু হাজার টাকার মধ্যে হাতে এখন আছে এই টাকাটা। কি করব বুঝতে পারছি না। যা হবে দেখা যাবে একটা বাচ্চা কে তার মায়ের কাছে ভালো করে তো দিতে পেরেছি। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছলাম।
দরজায় ঠুকতেই শিমু দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল।
-- কি ব্যাপার আজ এত খুশি?
-- হ্যা রে, খুশির খবর তো খুশি হবে না..
-- কি হয়েছে মা?
-- আপু আমি বৃত্তি পেয়েছি। এই দেখ পুরস্কার।
-- আলহামদুলিল্লাহ, মা দেখেছ আমার পিচ্চি বোনটা কত বড় পুরস্কার পেয়েছে।
-- হ্যা। দেখ প্রাইজ মানি চার হাজার টাকা, ক্রেস্ট আর সার্টিফিকেট।
-- চার হাজার টাকা প্রাইজ মানি..!
-- হ্যা, আপু।
আমি কেঁদে ফেললাম। সত্যি মাথার উপর একজন আছেন, যিনি তার বান্দা কে কখনও নিরাশ করেন না।
-- কি রে তুই কাঁদছিস কেন?
মা কে সব বললাম।। আর ভাবলাম ঐ মহিলা থেকে তো আমার অবস্থা ভালো আমার পা আছে, সুস্থ দুটো হাত আছে তাহলে কেন নিজেকে এত নিরাশ ভাবি। উপার্জনের জন্য আর কি দরকার। আর সাথে তো আছেন ই একজন সবসময় ঐ মহান আল্লাহ একা ভাবার তো প্রশ্নই আসে না। উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া জানালাম আর বললাম সবসময় যাতে এভাবে পাশে থাকেন। জীবন টা হেরে যাওয়ার জন্য নয়, যুদ্ধ করে সৎ ভাবে বেঁচে থাকাতে যে সার্থকতা তা ঐ দশ তলা বিল্ডিং এ বাস করার মধ্যে নেই।
: