রিকশাওয়ালার ছেলে হলেন IAS Officer!

Post a Comment
       রিকশাওয়ালার ছেলে হলেন IAS officer




যদি কেরিয়ারের হিসেবে দেখা যায় তাহলে ভারতে তিনটি আই এর উর্ধে কেউ যেতে পারবে না, আই আই টি, আই আই এম এবং আই এ এস। আবার এদের মধ্যে আই এ এস এর সম্মান সবচেয়ে অধিক।



প্রতি বছর অসংখ্য পরীক্ষার্থী আই এ এস হওয়ার আশা নিয়ে সিবিল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসে, কিন্তু মাত্র কয়েক জনই আই এ এস অফিসার হতে পারে। সহজেই অনুমান করা যায় যে আই এ এস অফিসার হওয়া কতটা কঠিন। আর কেউ যদি এই কঠিন কার্য কে পুরো করতে পারে তাহলে তাদের প্রতি সকলের মনে একটা আলাদা ছবি তৈরি হয়ে যায়। আর যদি এইটা একটা সাধারণ গরীব পরিবারের ছেলে করে তাহলে তার জন্য আমাদের মনে আরো বেশি সম্মান আসা টা স্বাভাবিক।



আর আজকে আপনার সাথে এমনি এক ব্যক্তির সফলতার কাহিনী শেয়ার করছি যে অসংখ্য সমস্যা কে পার করে নিজের ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রমের বলে অসম্ভব কে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।



এই কাহিনী টি হল গোবিন্দ জাইসওয়াল (Govind Jaiswal) এর। গোবিন্দের পিতা একজন রিকশা চালক ছিলেন। বেনারসের ব্যস্ত এলাকায় 12/8 বর্গফুটের একটি ছোট ভাড়ার ঘরে সম্পূর্ণ পরিবারের সঙ্গে খুব কষ্টে জীবন যাপন করতেন। উপর থেকে ঘরটি এমন জায়গায় ছিল যেখানে কান ফাটানো শব্দের কোন অভাব ছিল না, কেন না আশে পাশে অবস্থিত ফ্যাক্টরি এবং বড় বড় জেনারেটরের আওয়াজে একে অপরের সাথে কথা বলাও কঠিন হয়ে যেতো।



স্নান করা, খাওয়া দাওয়া থেকে নিয়ে সমস্ত কাজ গোবিন্দ এবং তার মাতাপিতা এবং দুটো বোন এই ছোট্ট ঘরের মধ্যেই করতেন। কিন্তু এই রকম পরিস্থিতির মধ্যেও গোবিন্দ শুরু থেকেই নিজের সম্পূর্ণ ধ্যান পড়াশোনাতে দিয়েছিলেন।



নিজের পড়াশোনা এবং বই খাতার খরচের জন্য তিনি অষ্টম শ্রেণি থেকেই টিউশন পড়াতে শুরু করে দিয়েছিলেন। একটা অশিক্ষিত পরিবেশে থাকা গোবিন্দ কে পড়াশোনা করার জন্য লোকের অনেক কথা শুনতে হতো যে - "যতো পড়াশোনায় করো না কেন অবশেষে রিকশায় চালাতে হবে"। কিন্তু এইসব কথাই ধ্যান না দিয়ে গোবিন্দ পড়াশোনাতেই লেগে থাকতেন।
গোবিন্দ বলেন -

 "আমাকে বিমুখ করা অসম্ভব ছিল। যখনই কেউ আমাকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করত আমি আমার পারিবারিক পরিস্থিতি কে ভাবতাম"।



আশেপাশের আওয়াজ থেকে বাঁচতে তিনি কানে তুলো লাগিয়ে পড়তে বসতেন। যখন আওয়াজ অতিরিক্ত হত তখন তিনি গণিত নিয়ে বসতেন, আর যখন একটু শান্তি হত তখন আবার অন্য সাবজেক্ট পড়তেন। রাতে পড়ার জন্য অধিক সময়ই তিনি মোমবাতি বা লন্ঠনের ব্যবহার করতেন। কেন না ঐ এলাকায় 12-14 ঘন্টা বিদ্যুত থাকত না।



যেহেতু তিনি শুরু থেকেই স্কুল টপার ছিলেন তাই উচ্চ মাধ্যমিকের পর অনেকেই ইনজিনিয়ারিঙ্গ করার পরামর্শ দিয়েছিল। তার মনেও একবার এই ভাবনা এসেছিল, কিন্তু যখন জানতে পারলেন যে এপ্লিকেশন ফর্মের ফী 500 টাকা তখন তিন এই আইডিয়া ছেড়ে দিলেন, আর BHU থেকে Graduation করতে শুরু করলেন। যেখানে মাত্র 10 টাকা ফী ছিল।



গোবিন্দ নিজের আই এ এস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন কে সাকার করার জন্য পড়ছিলেন আর finale preparation এর জন্য দিল্লি চলে গেলেন, কিন্তু সেই সময় তার পিতার পায়ে একটা গভীর চোট লেগে গেল আর তিনি একদম বেকার হয়ে গেলেন। এমত অবস্থায় পরিবারের একমাত্র সম্পত্তি একটা ছোট জায়গা 30'000 হাজার টাকাই বিক্রি করে দিলেন, যাহাতে গোবিন্দ তার কোচিং সম্পূর্ণ করতে পারে।



আর গোবিন্দ ও তাদের নিরাশ করেননি, তিনি প্রথম প্রয়াসেই (2006) 474 সফল পরীক্ষার্থী দের মধ্যে 48 নম্বর স্থান নিয়ে নিজের এবং নিজের পরিবারের জীবন সর্বক্ষণের জন্য পরিবর্তন করে দিলেন।



গণিতে দখল থাকার সত্বেও তিনি প্রধান অংশ হিসেবে ফিলোসাফি আর ইতিহাস বেছে নিলেন।আর প্রারম্ভ থেকেই তার অধ্যয়ন শুরু করলেন। তিনি বলেন যে -

"এই পৃথিবীতে কোন সাবজেক্টই কঠিন নাই, শুধু আপনার মধ্যে তাকে crack করার will-power থাকতে হবে"।

ইংরেজি তে অধিক জ্ঞান না থাকার জন্য তিনি বলেন-  


"ভাষা কোন অসুবিধার কারণে নেই, শুধু আত্ম বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়। আমার হিন্দি পড়ার আর ব্যক্ত করার শক্তি আমাকে অর্জনকারী করেছে। আপনি যদি আপনার ভাবনা কে ব্যক্ত করতে সুনিশ্চিত থাকেন তো কেউ আপনাকে সফল হতে রুখতে পারবে না। কোন ভাষা কখনোই নিকৃষ্ট বা উৎকৃষ্ট হয় না। এটা সমাজের বানানো একটি প্রক্রিয়া। ভাষা শেখা এমন কিছু কঠিন না - নিজের উপর ভরসা রাখুন। আমি প্রথমে শুধু মাত্র হিন্দি জানতাম। আই এ এস অ্যাকাডেমি তে আমি আমার ইংরেজি কে সঠিক করলাম। আমাদের পৃথিবী সমতল - এটা তো মানুষের উপলব্ধি যে একে শীর্ষস্থ করে , আর তারা কাউকে নিকৃষ্ট তো কাউকে উৎকৃষ্ট করে দেয়"।




গোবিন্দ জাইসওয়াল এর সফলতা এইটা দর্শাই যে, যতই অভাব অনটন থাকুক না কেন যদি কেউ নিজের দৃঢ় সংকল্প আর কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য প্রাপ্তিতে লেগে যায় তো তার সাফল্য লাভ নিশ্চয় হয়। আর উনার এই সংঘর্ষের কাহিনী আমাদের সর্বক্ষণ প্রেরিত হতে থাকব।



ধন্যবাদ



                -----------------------------------------

Related Posts

: