এই তোর কাছে দুইটাকার নোট আছে?’ চোখ পাকিয়ে বলল মারিয়া।ভার্সিটিতে ঢুকতে যাব এমন সময় মারিয়া ভার্সিটির গেটে রিকশা থেকে নেমে কথাটা বলল। এই খুব সাধারন কথাটা চোখ পাকিয়ে বলার কী প্রয়োজন হতে পারে ঠিক বুঝতেপারলাম না।একবার মারিয়াকেদেখে নিয়ে মানিব্যাগ বের করলাম। বেশ কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করে একটা পাঁচটাকার নোট বাড়িয়ে দিলাম ওরদিকে।
‘এটা কী?’
‘পাঁচটাকার নোট।’
‘যতদূর মনে পড়ে, আমি তোর কাছেদুইটাকার নোট চেয়েছিলাম।'
‘দুইটাকার নোট নাই।’
‘তাহলে এটা দিচ্ছিস কেন?’
‘রিকশা ভাড়া দিয়ে দে।’
মারিয়ারমুখ লাল হয়ে গেল।অল্পতেই হয়। প্রখররোদে নামলে হয়, সামান্য লজ্জাপেলে হয়, প্রচন্ড রাগেও হয়। এখন কেনহল? সম্ভবত রাগেই।
‘তোর কি ধারনা, আমার কাছে ভাড়ানাই?’
‘তো থাকলে দিয়ে দে।’
সাধারন লালথেকে টকটকে লাল হয়ে গেলমারিয়ার চেহারা।
‘ত..তারমানে তুই আসলেই ভাবছিসআমার কাছে টাকা নাই?আমিফকিরনী?'
রাগে কথা আটকে আটকেগেল মেয়েটার। হতাশায় মাথানাড়লাম।
'আমি আবার কখন বললাম এইকথা?’
‘এইমাত্র বলেছিস।’
আমি আবারও মাথানাড়লাম। মারিয়া বলেই যেতে লাগল,‘তুই যদি ভেবে থাকিস আমার কাছে
ভাড়া নাই বলে তোর কাছে টাকাচেয়েছি, তো তুই ঠিক ভাবিস নাই।রিকশা ভাড়া বারোটাকা এইজন্য তোর কাছে দুইটাকা চেয়েছি।পাঁচটাকার নোট আমার কাছেও আছে।’
‘শুনে খুশি হলাম।কিন্তু তোকে এমন অদ্ভুতভাড়া ঠিক করতে বলেছে কে?’
‘অদ্ভুত ভাড়া মানে?’
‘এই যে বারোটাকা। হয় পনেরো টাকাদিবি নয়ত দশটাকা।বারো টাকাআবার কি রকম ভাড়া?’
‘তোর কাছে দুইটাকার নোট চেয়েছি,জ্ঞান চাই নাই।
’ উফ! এই মেয়ে এত কথা প্যাঁচায় কেন?সমস্যা কী?
‘আফা,ভাড়াডা দেন,যামুগা।’রিকশাওয়ালা বিরস মুখে বলল।
এই ধরনের অর্থহীন কথা শোনারচাইতেও জরুরি কাজ পড়ে আছে তার।মারিয়া বিমর্ষমুখে পনেরো টাকা
রিকশাওয়ালার দিকে বাড়িয়ে ধরল।খপ করে টাকাটা পকেটস্থ করেইরিকশায় চড়ে বসল লোকটা। প্যাডেলেচাপ দেয়ার আগে আমার দিকেতাকিয়ে ভূবন ভোলানো একটা হাসিদিল। সেটা অবশ্যই আমার সুবাদেপ্রাপ্ত বাড়তি তিনটাকার চাইতেদামী। আমি ম্যানিব্যাগ পকেটেরাখতে যাচ্ছি, এমন সময় চিল চিৎকারছাড়ল মারিয়া। আমি হকচকিয়েগেলাম।
‘ওয়েট ওয়েট, তোর মানিব্যাগ বের করতো।’
‘কেন?’
‘বের করতে বলেছি বের কর।’
আমি কথানা বলে মানিব্যাগটা বের করলাম।আমি কিছু বুঝে ওঠারআগেই মারিয়াহাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলমানিব্যাগটা। ব্যাগ খুলে সিআইডিরএসিপি প্রদিউমান যেভাবেএভিডেন্স ধরে ঠিক তেমন ভঙ্গিতেএকটা চকচকে কাগুজে নোট দু আঙ্গুলেধরে বের করে আনল।
‘এটা কী?’
আবারো চোখ পাকালো
মারিয়া।
‘দুই টাকার নোট।’ আমিনির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম।
‘সেটা তো আমিও দেখছি।’
‘তো?’
‘তো মানে? তুই মিথ্যা বললি কেন যেতোর কাছে দুই টাকার নোট নাই?’
গলা উত্তেজনায় চড়ে গেল মারিয়ার।
‘এটা খরচ করা যাবে না।’
আমিমারিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ নাদিয়ে টাকা আর মানিব্যাগটাহাতিয়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটা ধরলাম। একবার পেছন ফিরেতাকালে হয়ত মারিয়ার কাজল দেয়াচোখে এক পৃথিবী বিস্ময় দেখতে পেতাম।
দুই
পড়ন্ত বিকেলে এক তরুণের হাত ধরেপ্রায় টানতে টানতে এক তরুনীর হেঁটেযাবার দৃশ্যটা যে কতটা অদ্ভুত তা হয়তমারিয়া নামের ওই তরুনীর জানা নেই।ক্লাস শেষ বের হয়েছি এমন সময় হুট করে আমার হাত ধরল মারিয়া। আমিপ্রতিবাদ করে কিছু বলার আগেইদেখলাম, আমি রেস্টুরেন্টে বসে আছি! রেস্টুরেন্টটা ভার্সিটির পাশেই।প্রতিদিন ক্লাস শেষে এখানে ভীড়বাড়তে থাকে স্বপ্নবোনা জুটিদের।আমি এদের নাম দিয়েছি স্বপ্ন-তাঁতী।আমার স্বপ্ন নেই, স্বপ্ন বোনারঝামেলাও নেই। তাই কখনো আসাওহয়নি এখানে। আজ প্রথমবার এসে বুকেরমধ্যে কেমন যেন একটা হাহাকারতৈরি হল।
‘হুম, এবার কাহিনী শেষ কর।’
মারিয়ারকথায় ফিরে তাকালাম ওর দিকে।
বললাম,‘কিসের কাহিনী শেষ করব?’
‘তখন যেটা শুরু করেছিলি।দুইটাকারনোটের কাহিনী।’
‘কোনো কাহিনী নাই।’ নিস্পৃহ আমারগলা।
‘না বললে কিন্তু তোর অনেক বড় সমস্যাহয়ে যাবে।’
‘কিসের সমস্যা?’
‘হবে অনেক বড় সমস্যা। এখান থেকেসোজা হাসপাতালে যেতে হবে।’
বাংলা ছবির এক ডাঁকসাইটেভিলেনের মত ভঙ্গিতে আমাকে হুমকিদিল মারিয়া।আমি হেসে ফেললাম। ‘হাসছিস যেবড়?’
‘দুইটাকার নোটের একটা কাহিনীআছে, কিন্তু আমি তোকে সেটা বলবনা। তুই পারলে কিছু করে দেখা।’
‘আমি কী করব সে সম্পর্কে তোর কোনোধারণাই নাই।’
‘আসলেই নাই।ধারণা পাবার জন্যই তোবললাম।’
‘আমি কী করব জানিস? এই মুহুর্তেচিৎকার করে বলব তুই আমার সাথে চিটকরেছিস। আমাকে ভালবাসার অভিনয়করে আমাকে প্রেগন্যান্ট বানিয়েদিয়েছিস!’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।এইমেয়ে বলে কী! পরমুহহুর্তেই চিন্তাকরে দেখলাম, যার মাথায় এমন অদ্ভুতচিন্তা আসতে পারে সে সেটা করেওদেখাতে পারে।আর সত্যি সত্যি করেবসলে পরবর্তীতে কী ঘটবে আমার সেসম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই। তবেভাল কিছু যে নয়, সেটা নিশ্চিত।এখানে যারা উপস্থিত, তারা প্রায়সবাই প্রেমিক-প্রেমিক া। ভালবাসায়প্রতারণার ব্যাপার স্বাভাবিকভাবেনেবার সম্ভবনা কম। আচ্ছা, মারিয়াকি ইচ্ছে করেই এই রেস্টুরেন্ট বেছেনিয়েছে? সেক্ষেত্রে সর্বনাশ!তারমানে ও মিথ্যে বোলচালদেখাচ্ছে না! আমার গলা শুকিয়ে এল।অজান্তেই একটা ঢোক গিললাম।সেটা বোধহয় দেখে ফেলল মারিয়া।মুখে তৃপ্তির হাসি এনে বলল, ‘এবার বল।’
‘টাকাটা জেরিন দিয়েছিল।’ আমি মুখকাঁচুমাচু করে বললাম।
‘এই জেরিনটা আবার কে?’
‘আছে একজন।’
‘তোর প্রেমিকা।’ আমি জবাব দিলামনা। মারিয়া জবাব পেয়ে গেল।
‘তো দুইটাকার ইতিহাসটা কী?
দুইটাকা দিতে গেল কেন?’
‘আমি চেয়েছিলাম। ওর প্রথম টিউশনিরবেতন পেলে বলেছিলাম, তোমারজীবনের প্রথম কামাই থেকে আমাকেএকটা দুইটাকার নোট দেবে। আমি ওটাসবসময় রেখে দেব আমার কাছে।বেশিবড় নোট হলে খরচ হয়ে যেতে পারে।’
‘হুম। রোমিও জুলিয়েট টাইপ কাহিনী।’
সব কিছু বুঝে ফেলার ভঙ্গিতে মাথানাড়ল মারিয়া।
‘তা সেই জুলিয়েটবেগমের কী খবর।’
‘জানি না।’
‘জানিস মানে?’
‘আমি উঠি, বাসায় কাজ...’ মারিয়াচোখ পাকাতেই থেমে গেলাম।
‘পুরো কাহিনী না বলে ওঠাউঠি নাই।’
‘ওর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্কনেই।’
‘ওমা!’
প্রায় আর্তনাদের মত করে বলেউঠল মারিয়া।‘আমি তো ভেবেছিলামএটা অমর প্রেমকাহিনী!’
আমি কিছু বললাম না। মাথা নীচু করেআছি। মারিয়ার রসিকতা তেমন একটাভাল লাগছে না
‘কী হয়েছিল রে?’
আচমকা রসিকতার সুরউধাও হয়ে গেল মারিয়ার গলাথেকে। হঠাৎ করে আমার মনে হতেলাগল কথাগুলো কাউকে জানানো খুবপ্রয়োজন।আমি আর একা একা নিতেপারছি না এই কষ্টের ভার।নুয়ে পড়ছিবারবার। হাত ধরে ওঠানোর মত কেউআমার আশেপাশে নেই। বেশ কিছুক্ষন চুপ
থেকে বললাম,‘জেরিন আসলে অন্য একজনকে
ভালবাসত।’
‘তাহলে তোর সাথে ভালবাসারমিথ্যে অভিনয় করল কেন?’
‘জানি না। জানলেও বলতে ইচ্ছে করছে না।’
মারিয়া এবার আরজোরাজুরি করল না শোনার জন্য।আমরাদুজনেই চুপ করে আছি। চারদিকের স্বপ্ন তাঁতীদের ফিসফিস আওয়াজের মধ্যেনীরবতা জমাট বেঁধে রইল বেশঅনেকটা সময়।
‘তুই এখনো তাহলে ওইমেয়ের টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরেবেড়াচ্ছিস কেন?’
‘ও হয়ত আমাকে ভালবাসেনি, কিন্তুআমি তো বেসেছিলাম।’ খানিকবিরতি। ‘এখনো বাসি।’
‘হুম, ভাল, তা ওর ভালবাসায় আর কী কীপ্রতিজ্ঞা করেছিস?’ আবারও দুষ্টুমিরছোঁয়া পেলাম মারিয়ার গলায়। আমিমাথা ঝাঁকালাম।
‘আছে আরেকটা।’
‘হাংকিপাংকি না করে বলে ফেল।’
‘হাসবি না তো?’
‘না না, হাসব কেন?’ মারিয়া চোখমুখশক্ত করে বলল।
আমি একবার ভালমত দেখে নিলাম,ব্যাপারটা রসিকতা কিনা। চোখমুখশক্ত করে থাকায় ঠাহর করা গেল না।
‘মেয়েটা খুব চুইংগাম পছন্দ করত। আমিওকে একদিন বলেছিলাম, তোমারসাথে বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত আমিচুইংগাম খাবো না। বিয়ের পর...’
থেমে গেলাম।
‘বিয়ের পর কী?’
‘কিছু মনে করবি না তো।’
‘নাহ।’ এবারও দাঁতমুখ খিঁচে বললমারিয়া।’
‘বিয়ের পর ওর মুখ থেকে নিয়ে খাবো।’
“হিক” জাতীয় একটা আওয়াজ করে উঠলমারিয়া। আমি কিছুটা সময় পর বুঝতেপারলাম ওটা আসলে হাসি ছিল। আমি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলামমারিয়ার দিকে। হাসি থামতেমারিয়া বলল,
‘এরপর থেকে আর খাসনিচুইংগাম?’
‘নাহ।’
হি হি করে আরো এক দফা হেসে নিলমারিয়া। আমি মাথা চুপ করে রইলাম।মারিয়ার মত পাগলী মেয়ে কখনইবুঝতে পারবে না এই ছোট্ট দুটোপ্রতিজ্ঞার মধ্যে কতটা ভালবাসালুকিয়ে আছে। কতটা দুঃখ নিয়ে
এতগুলো দিন একটা কাগুজে নোটকেআগলে রাখা যায়। আমি জানি, আমিআর জেরিনকে কখনই ফিরে পাব না,কিন্তু এই মেয়েটাকে যে আমি কতটাভালবেসেছিলাম, সেটাও তো কেবলআমিই জানি।আমার সামনে বসেনিরন্তর হেসে যাওয়া এই মেয়েটা নয়।এই মানুষগুলো জানে না পর্যন্ত,ভালবাসার উৎসটা কোথায়, বুকের ঠিককতটা গভীর থেকে উঠে আসে।মারিয়ার হাসি একসময় থামল। এবংআমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, মারিয়ারচোখে পানি! আমার কেন যেন মনেহচ্ছে,এই পানি হাসির প্রাবল্যে নয়।এই
জল অশ্রুর! কথাটার সত্যতা প্রমাণেরজন্যই যেন মাথা নীচু করে রইলমারিয়া। এরপর ব্যাগ থেকে কাগজ কলমবের করে খসখস করে কী যেন লিখল।
বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। ‘এই যেতোর প্রেসক্রিপশন।’
‘কিসের প্রেসক্রিপশন?’
‘পড়ে দেখ, কিসের প্রেসক্রিপশন। আমিগেলাম। কফির বিলটা দিয়ে দিস।’
মারিয়া চলে গেল।আমি কিছুক্ষনস্থাণুর মত বসে থেকে কাগজটা খুললাম।একটা চিঠি।
মারিয়া লিখেছেঃ
তুই কি জানিস, আমি তোকে কতটাভালবাসি? জানিস না তো? জানবিকিভাবে? আমি বলেছি নাকি! আজওবলা হত না।হয়ত কোনোদিনও না। কিন্তুআজ সকালের ঘটনায় আমার মনেহয়েছিল, গোপন কোনো ব্যাথা আছেতোর। এইমাত্র সব শোনার পর আমি বুঝতেপারলাম, জেরিনের জন্য তোর মনে যে
ভালবাসা আছে তার ছিটেফোঁটাপাবার যোগ্য আমি কখনই ছিলাম না।ওরকম ভালবাসা খুব বেশি মানুষের
কপালে জোটে না। সেজন্য তোকেভালবাসার কথা বলে তোকে বিব্রতকরতে চাই না।জানি, জেরিনকে ভুলেতুই আর কাউকে ভালবাসতে পারবিনা। শুধু জানিয়ে গেলাম, আমি তোকেভালোবাসি।
পুনশ্চঃ আমি হুট করে চলে গেলাম কেনজানিস? আর কিছুক্ষন এখানে বসেথাকলে আমি তোকে জড়িয়ে ধরেহাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিতাম।আমি আস্তে করে চিঠিটা ভাঁজ করেপকেটে রেখে দিলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে। কয়েকটা লাইনের চিঠিটাসব কিছু এভাবে উলটপালট করে দিলকেন? পৃথিবীর সব কিছু নিয়ে রসিকতাকরতে থাকা এই পাগলী মেয়েটা যেএতটা আবেগী সেটা তো কখনই বুঝতেদেয়নি কাউকে। আচ্ছা এই মেয়েটাওকি আমারই মত গোপন কোনো দুঃখ বয়েযায় কে জানে? আমিউঠে দাঁড়ালাম।বিলটা রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে।
***
পুরোপুরি সন্ধ্যা নেমে গেছে।একটু পরনামবে রাত। একেবারে ঝপ কর ঝকঝকে নগরীর এই ব্যাস্ত মানুষগুলোরমধ্যে ঠিক কতজন গোপন দুঃখ বয়ে নিয়েবেড়ায়, আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে।রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ইতিউতিতাকালাম।ওই তো, দেখা যাচ্ছে।আমি এগিয়ে গেলাম সেদিকে।দোকানটার সামনে পৌঁছেমানিব্যাগ খুলে একমাত্র চকচকেদুইটাকার নোটটা বের করলাম। আমিমারিয়াকে আমার তৃতীয় প্রতিজ্ঞারকথাটা বলিনি।আমি আরেকটাপ্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যদিকোনোদিন জেরিনকে ভুলে অন্য কাউকে ভালবাসতে পারি সেদিন এইদুইটাকার নোটটা দিয়েই একটাচুইংগাম কিনে খাবো। নোটটাবাড়িয়ে দিলাম দোকানির দিকে।
‘একটা চুইংগাম।’
উপসংহার চুইংগামটা এক হাতে শক্তকরে ধরে পথ হাঁটছি আমি। আমার দুইচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানিপড়ছে।আমি সেই জলে বাঁধ দেবারকোনো চেষ্টাই করছি না। বুঝতেচেষ্টা করছি, এই কান্না জেরিনকে
ভুলতে পারার দুঃখে নাকি মারিয়ানামের অসম্ভব আবেগী এক পাগলীমেয়েকে ভালবেসে ফেলার আনন্দে।
‘এটা কী?’
‘পাঁচটাকার নোট।’
‘যতদূর মনে পড়ে, আমি তোর কাছেদুইটাকার নোট চেয়েছিলাম।'
‘দুইটাকার নোট নাই।’
‘তাহলে এটা দিচ্ছিস কেন?’
‘রিকশা ভাড়া দিয়ে দে।’
মারিয়ারমুখ লাল হয়ে গেল।অল্পতেই হয়। প্রখররোদে নামলে হয়, সামান্য লজ্জাপেলে হয়, প্রচন্ড রাগেও হয়। এখন কেনহল? সম্ভবত রাগেই।
‘তোর কি ধারনা, আমার কাছে ভাড়ানাই?’
‘তো থাকলে দিয়ে দে।’
সাধারন লালথেকে টকটকে লাল হয়ে গেলমারিয়ার চেহারা।
‘ত..তারমানে তুই আসলেই ভাবছিসআমার কাছে টাকা নাই?আমিফকিরনী?'
রাগে কথা আটকে আটকেগেল মেয়েটার। হতাশায় মাথানাড়লাম।
'আমি আবার কখন বললাম এইকথা?’
‘এইমাত্র বলেছিস।’
আমি আবারও মাথানাড়লাম। মারিয়া বলেই যেতে লাগল,‘তুই যদি ভেবে থাকিস আমার কাছে
ভাড়া নাই বলে তোর কাছে টাকাচেয়েছি, তো তুই ঠিক ভাবিস নাই।রিকশা ভাড়া বারোটাকা এইজন্য তোর কাছে দুইটাকা চেয়েছি।পাঁচটাকার নোট আমার কাছেও আছে।’
‘শুনে খুশি হলাম।কিন্তু তোকে এমন অদ্ভুতভাড়া ঠিক করতে বলেছে কে?’
‘অদ্ভুত ভাড়া মানে?’
‘এই যে বারোটাকা। হয় পনেরো টাকাদিবি নয়ত দশটাকা।বারো টাকাআবার কি রকম ভাড়া?’
‘তোর কাছে দুইটাকার নোট চেয়েছি,জ্ঞান চাই নাই।
’ উফ! এই মেয়ে এত কথা প্যাঁচায় কেন?সমস্যা কী?
‘আফা,ভাড়াডা দেন,যামুগা।’রিকশাওয়ালা বিরস মুখে বলল।
এই ধরনের অর্থহীন কথা শোনারচাইতেও জরুরি কাজ পড়ে আছে তার।মারিয়া বিমর্ষমুখে পনেরো টাকা
রিকশাওয়ালার দিকে বাড়িয়ে ধরল।খপ করে টাকাটা পকেটস্থ করেইরিকশায় চড়ে বসল লোকটা। প্যাডেলেচাপ দেয়ার আগে আমার দিকেতাকিয়ে ভূবন ভোলানো একটা হাসিদিল। সেটা অবশ্যই আমার সুবাদেপ্রাপ্ত বাড়তি তিনটাকার চাইতেদামী। আমি ম্যানিব্যাগ পকেটেরাখতে যাচ্ছি, এমন সময় চিল চিৎকারছাড়ল মারিয়া। আমি হকচকিয়েগেলাম।
‘ওয়েট ওয়েট, তোর মানিব্যাগ বের করতো।’
‘কেন?’
‘বের করতে বলেছি বের কর।’
আমি কথানা বলে মানিব্যাগটা বের করলাম।আমি কিছু বুঝে ওঠারআগেই মারিয়াহাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলমানিব্যাগটা। ব্যাগ খুলে সিআইডিরএসিপি প্রদিউমান যেভাবেএভিডেন্স ধরে ঠিক তেমন ভঙ্গিতেএকটা চকচকে কাগুজে নোট দু আঙ্গুলেধরে বের করে আনল।
‘এটা কী?’
আবারো চোখ পাকালো
মারিয়া।
‘দুই টাকার নোট।’ আমিনির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম।
‘সেটা তো আমিও দেখছি।’
‘তো?’
‘তো মানে? তুই মিথ্যা বললি কেন যেতোর কাছে দুই টাকার নোট নাই?’
গলা উত্তেজনায় চড়ে গেল মারিয়ার।
‘এটা খরচ করা যাবে না।’
আমিমারিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ নাদিয়ে টাকা আর মানিব্যাগটাহাতিয়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটা ধরলাম। একবার পেছন ফিরেতাকালে হয়ত মারিয়ার কাজল দেয়াচোখে এক পৃথিবী বিস্ময় দেখতে পেতাম।
দুই
পড়ন্ত বিকেলে এক তরুণের হাত ধরেপ্রায় টানতে টানতে এক তরুনীর হেঁটেযাবার দৃশ্যটা যে কতটা অদ্ভুত তা হয়তমারিয়া নামের ওই তরুনীর জানা নেই।ক্লাস শেষ বের হয়েছি এমন সময় হুট করে আমার হাত ধরল মারিয়া। আমিপ্রতিবাদ করে কিছু বলার আগেইদেখলাম, আমি রেস্টুরেন্টে বসে আছি! রেস্টুরেন্টটা ভার্সিটির পাশেই।প্রতিদিন ক্লাস শেষে এখানে ভীড়বাড়তে থাকে স্বপ্নবোনা জুটিদের।আমি এদের নাম দিয়েছি স্বপ্ন-তাঁতী।আমার স্বপ্ন নেই, স্বপ্ন বোনারঝামেলাও নেই। তাই কখনো আসাওহয়নি এখানে। আজ প্রথমবার এসে বুকেরমধ্যে কেমন যেন একটা হাহাকারতৈরি হল।
‘হুম, এবার কাহিনী শেষ কর।’
মারিয়ারকথায় ফিরে তাকালাম ওর দিকে।
বললাম,‘কিসের কাহিনী শেষ করব?’
‘তখন যেটা শুরু করেছিলি।দুইটাকারনোটের কাহিনী।’
‘কোনো কাহিনী নাই।’ নিস্পৃহ আমারগলা।
‘না বললে কিন্তু তোর অনেক বড় সমস্যাহয়ে যাবে।’
‘কিসের সমস্যা?’
‘হবে অনেক বড় সমস্যা। এখান থেকেসোজা হাসপাতালে যেতে হবে।’
বাংলা ছবির এক ডাঁকসাইটেভিলেনের মত ভঙ্গিতে আমাকে হুমকিদিল মারিয়া।আমি হেসে ফেললাম। ‘হাসছিস যেবড়?’
‘দুইটাকার নোটের একটা কাহিনীআছে, কিন্তু আমি তোকে সেটা বলবনা। তুই পারলে কিছু করে দেখা।’
‘আমি কী করব সে সম্পর্কে তোর কোনোধারণাই নাই।’
‘আসলেই নাই।ধারণা পাবার জন্যই তোবললাম।’
‘আমি কী করব জানিস? এই মুহুর্তেচিৎকার করে বলব তুই আমার সাথে চিটকরেছিস। আমাকে ভালবাসার অভিনয়করে আমাকে প্রেগন্যান্ট বানিয়েদিয়েছিস!’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।এইমেয়ে বলে কী! পরমুহহুর্তেই চিন্তাকরে দেখলাম, যার মাথায় এমন অদ্ভুতচিন্তা আসতে পারে সে সেটা করেওদেখাতে পারে।আর সত্যি সত্যি করেবসলে পরবর্তীতে কী ঘটবে আমার সেসম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই। তবেভাল কিছু যে নয়, সেটা নিশ্চিত।এখানে যারা উপস্থিত, তারা প্রায়সবাই প্রেমিক-প্রেমিক
‘টাকাটা জেরিন দিয়েছিল।’ আমি মুখকাঁচুমাচু করে বললাম।
‘এই জেরিনটা আবার কে?’
‘আছে একজন।’
‘তোর প্রেমিকা।’ আমি জবাব দিলামনা। মারিয়া জবাব পেয়ে গেল।
‘তো দুইটাকার ইতিহাসটা কী?
দুইটাকা দিতে গেল কেন?’
‘আমি চেয়েছিলাম। ওর প্রথম টিউশনিরবেতন পেলে বলেছিলাম, তোমারজীবনের প্রথম কামাই থেকে আমাকেএকটা দুইটাকার নোট দেবে। আমি ওটাসবসময় রেখে দেব আমার কাছে।বেশিবড় নোট হলে খরচ হয়ে যেতে পারে।’
‘হুম। রোমিও জুলিয়েট টাইপ কাহিনী।’
সব কিছু বুঝে ফেলার ভঙ্গিতে মাথানাড়ল মারিয়া।
‘তা সেই জুলিয়েটবেগমের কী খবর।’
‘জানি না।’
‘জানিস মানে?’
‘আমি উঠি, বাসায় কাজ...’ মারিয়াচোখ পাকাতেই থেমে গেলাম।
‘পুরো কাহিনী না বলে ওঠাউঠি নাই।’
‘ওর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্কনেই।’
‘ওমা!’
প্রায় আর্তনাদের মত করে বলেউঠল মারিয়া।‘আমি তো ভেবেছিলামএটা অমর প্রেমকাহিনী!’
আমি কিছু বললাম না। মাথা নীচু করেআছি। মারিয়ার রসিকতা তেমন একটাভাল লাগছে না
‘কী হয়েছিল রে?’
আচমকা রসিকতার সুরউধাও হয়ে গেল মারিয়ার গলাথেকে। হঠাৎ করে আমার মনে হতেলাগল কথাগুলো কাউকে জানানো খুবপ্রয়োজন।আমি আর একা একা নিতেপারছি না এই কষ্টের ভার।নুয়ে পড়ছিবারবার। হাত ধরে ওঠানোর মত কেউআমার আশেপাশে নেই। বেশ কিছুক্ষন চুপ
থেকে বললাম,‘জেরিন আসলে অন্য একজনকে
ভালবাসত।’
‘তাহলে তোর সাথে ভালবাসারমিথ্যে অভিনয় করল কেন?’
‘জানি না। জানলেও বলতে ইচ্ছে করছে না।’
মারিয়া এবার আরজোরাজুরি করল না শোনার জন্য।আমরাদুজনেই চুপ করে আছি। চারদিকের স্বপ্ন তাঁতীদের ফিসফিস আওয়াজের মধ্যেনীরবতা জমাট বেঁধে রইল বেশঅনেকটা সময়।
‘তুই এখনো তাহলে ওইমেয়ের টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরেবেড়াচ্ছিস কেন?’
‘ও হয়ত আমাকে ভালবাসেনি, কিন্তুআমি তো বেসেছিলাম।’ খানিকবিরতি। ‘এখনো বাসি।’
‘হুম, ভাল, তা ওর ভালবাসায় আর কী কীপ্রতিজ্ঞা করেছিস?’ আবারও দুষ্টুমিরছোঁয়া পেলাম মারিয়ার গলায়। আমিমাথা ঝাঁকালাম।
‘আছে আরেকটা।’
‘হাংকিপাংকি না করে বলে ফেল।’
‘হাসবি না তো?’
‘না না, হাসব কেন?’ মারিয়া চোখমুখশক্ত করে বলল।
আমি একবার ভালমত দেখে নিলাম,ব্যাপারটা রসিকতা কিনা। চোখমুখশক্ত করে থাকায় ঠাহর করা গেল না।
‘মেয়েটা খুব চুইংগাম পছন্দ করত। আমিওকে একদিন বলেছিলাম, তোমারসাথে বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত আমিচুইংগাম খাবো না। বিয়ের পর...’
থেমে গেলাম।
‘বিয়ের পর কী?’
‘কিছু মনে করবি না তো।’
‘নাহ।’ এবারও দাঁতমুখ খিঁচে বললমারিয়া।’
‘বিয়ের পর ওর মুখ থেকে নিয়ে খাবো।’
“হিক” জাতীয় একটা আওয়াজ করে উঠলমারিয়া। আমি কিছুটা সময় পর বুঝতেপারলাম ওটা আসলে হাসি ছিল। আমি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলামমারিয়ার দিকে। হাসি থামতেমারিয়া বলল,
‘এরপর থেকে আর খাসনিচুইংগাম?’
‘নাহ।’
হি হি করে আরো এক দফা হেসে নিলমারিয়া। আমি মাথা চুপ করে রইলাম।মারিয়ার মত পাগলী মেয়ে কখনইবুঝতে পারবে না এই ছোট্ট দুটোপ্রতিজ্ঞার মধ্যে কতটা ভালবাসালুকিয়ে আছে। কতটা দুঃখ নিয়ে
এতগুলো দিন একটা কাগুজে নোটকেআগলে রাখা যায়। আমি জানি, আমিআর জেরিনকে কখনই ফিরে পাব না,কিন্তু এই মেয়েটাকে যে আমি কতটাভালবেসেছিলাম, সেটাও তো কেবলআমিই জানি।আমার সামনে বসেনিরন্তর হেসে যাওয়া এই মেয়েটা নয়।এই মানুষগুলো জানে না পর্যন্ত,ভালবাসার উৎসটা কোথায়, বুকের ঠিককতটা গভীর থেকে উঠে আসে।মারিয়ার হাসি একসময় থামল। এবংআমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, মারিয়ারচোখে পানি! আমার কেন যেন মনেহচ্ছে,এই পানি হাসির প্রাবল্যে নয়।এই
জল অশ্রুর! কথাটার সত্যতা প্রমাণেরজন্যই যেন মাথা নীচু করে রইলমারিয়া। এরপর ব্যাগ থেকে কাগজ কলমবের করে খসখস করে কী যেন লিখল।
বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। ‘এই যেতোর প্রেসক্রিপশন।’
‘কিসের প্রেসক্রিপশন?’
‘পড়ে দেখ, কিসের প্রেসক্রিপশন। আমিগেলাম। কফির বিলটা দিয়ে দিস।’
মারিয়া চলে গেল।আমি কিছুক্ষনস্থাণুর মত বসে থেকে কাগজটা খুললাম।একটা চিঠি।
মারিয়া লিখেছেঃ
তুই কি জানিস, আমি তোকে কতটাভালবাসি? জানিস না তো? জানবিকিভাবে? আমি বলেছি নাকি! আজওবলা হত না।হয়ত কোনোদিনও না। কিন্তুআজ সকালের ঘটনায় আমার মনেহয়েছিল, গোপন কোনো ব্যাথা আছেতোর। এইমাত্র সব শোনার পর আমি বুঝতেপারলাম, জেরিনের জন্য তোর মনে যে
ভালবাসা আছে তার ছিটেফোঁটাপাবার যোগ্য আমি কখনই ছিলাম না।ওরকম ভালবাসা খুব বেশি মানুষের
কপালে জোটে না। সেজন্য তোকেভালবাসার কথা বলে তোকে বিব্রতকরতে চাই না।জানি, জেরিনকে ভুলেতুই আর কাউকে ভালবাসতে পারবিনা। শুধু জানিয়ে গেলাম, আমি তোকেভালোবাসি।
পুনশ্চঃ আমি হুট করে চলে গেলাম কেনজানিস? আর কিছুক্ষন এখানে বসেথাকলে আমি তোকে জড়িয়ে ধরেহাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিতাম।আমি আস্তে করে চিঠিটা ভাঁজ করেপকেটে রেখে দিলাম। মাথা ঝিমঝিম করছে। কয়েকটা লাইনের চিঠিটাসব কিছু এভাবে উলটপালট করে দিলকেন? পৃথিবীর সব কিছু নিয়ে রসিকতাকরতে থাকা এই পাগলী মেয়েটা যেএতটা আবেগী সেটা তো কখনই বুঝতেদেয়নি কাউকে। আচ্ছা এই মেয়েটাওকি আমারই মত গোপন কোনো দুঃখ বয়েযায় কে জানে? আমিউঠে দাঁড়ালাম।বিলটা
***
পুরোপুরি সন্ধ্যা নেমে গেছে।একটু পরনামবে রাত। একেবারে ঝপ কর ঝকঝকে নগরীর এই ব্যাস্ত মানুষগুলোরমধ্যে ঠিক কতজন গোপন দুঃখ বয়ে নিয়েবেড়ায়, আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে।রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ইতিউতিতাকালাম।ওই তো, দেখা যাচ্ছে।আমি এগিয়ে গেলাম সেদিকে।দোকানটার সামনে পৌঁছেমানিব্যাগ খুলে একমাত্র চকচকেদুইটাকার নোটটা বের করলাম। আমিমারিয়াকে আমার তৃতীয় প্রতিজ্ঞারকথাটা বলিনি।আমি আরেকটাপ্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যদিকোনোদিন জেরিনকে ভুলে অন্য কাউকে ভালবাসতে পারি সেদিন এইদুইটাকার নোটটা দিয়েই একটাচুইংগাম কিনে খাবো। নোটটাবাড়িয়ে দিলাম দোকানির দিকে।
‘একটা চুইংগাম।’
উপসংহার চুইংগামটা এক হাতে শক্তকরে ধরে পথ হাঁটছি আমি। আমার দুইচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানিপড়ছে।আমি সেই জলে বাঁধ দেবারকোনো চেষ্টাই করছি না। বুঝতেচেষ্টা করছি, এই কান্না জেরিনকে
ভুলতে পারার দুঃখে নাকি মারিয়ানামের অসম্ভব আবেগী এক পাগলীমেয়েকে ভালবেসে ফেলার আনন্দে।
: