আমিই অপরাধী

Post a Comment
love story, valobashar golpo, ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, ভালবাসার গল্প
পর্ব-১
এইটা আমার জীবনের বাস্তব গল্প।আসলে আমি লেখিকা না বাংলা লিখতে ঠিক মত পারি না। অনেক কষ্টে ১ মাস সময় লাগিয়ে লিখলাম। বানান ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি এখন শুধু মাত্র বেচে আছি বাচ্চাটার (সামিয়া) মানে আমার মেয়ে জন্য। বিশেষ কারণেই বাচ্চাটার ছবি দিতে পারলাম না।
বাচ্চাটা না থাকলে মনে হয় অনেক আগেই মারা যেতাম। বাচ্চার দিকেই মুখ চেয়ে বেচে আছি। আমি আসলে অনেক নিষ্ঠুর খারাপ একটা মেয়ে।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে হটাত করেই শুনি আমার বিয়ে তখন আমি সবে মাত্র HSC পরীক্ষা দিয়েছি। ছেলে কবে দেখে গেছে আমি নিজেও ঠিক মত জানি না। গ্রামের মেয়ে আমি আমার মতামত নেওয়ার কোন দরকার মনে করেনি তারা। আমার প্রেমিক তখন অনার্সে পরে ১ম বর্ষে।
আমি বিয়েতে রাজি হইনি পরে আমাকে অনেক মারছে বাসায়। তাতেও কাজ হয়নি। পরে আমার বাবা আমাকে বলছে আমি ঐখানে কথা দিয়ে ফেলছি এখন যদি তুই রাজি না হস আমি আত্মহত্যা করব।এর পরে আর কোন মেয়ের পক্ষে বিয়েতে রাজি না হয়ে থাকা সম্ভব না। ভাইরা আমার মুখ দেখতে চায় না।মা নাকি আমাকে জন্ম দিয়ে পাপ করেছে। তাদের দোষ দিতে পারি না কারণ কোন বাবা মা চাইবে না তার মেয়ে খারাপ থাকুক। আর সব মিলিয়ে ভাল ছেলে পাওয়া যায় না তেমন একটা।
এদিকে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে আমার প্রেমিক আমাকে পালিয়ে আসতে বলছে সেটা আমার দ্বারা ঐ মুহূর্তে সম্ভব ছিল না।।পরে আমার বাসায় প্রস্তাব দেয় রাজি হয়নি আমার পরিবার।এই দিকে ওর ফোনের অপ্রর প্রান্ত থেকে শুধু কান্নার শব্দ পাচ্ছিলাম শুধু কান্না পাগলের মত কান্না। আমি তখন কেমন জানি পাথর হয়ে গেলাম। কোন বোধ শক্তি ছিল না। এর পরে এক দিন ওকে ফোন দিয়ে ইচ্ছা মত বকাবকি করলাম, খারাপ গালি দিলাম আর বললাম জীবনে যেন আর কল না দেয়।
এর মূল কারন হল ও আমার বাসায় অনেক কল দিচ্ছিল। ফ্যামিলির লোক জন অনেক বিরক্ত হচ্ছিল। পরে ফ্যামিলির চাপে পরে ওকে এই সব বলতে বাধ্য হলাম। আমার বাবা-মা আমাকে তাদের মাথা ছুয়ে কছম কাঁটাল যাতে করে আর কোন দিন আমি আমার প্রেমিক এর সাথে কথা না বলি তাহলে তাদের মরা মুখ দেখতে হবে।
.
এই চার বছরের প্রেম আমি মাত্র ৪ দিনে কোরবানি করলাম পরিবারের জন্য। আমার শুধু একটাই কথা মাথায় ছিল তখন। ওর কি হবে ও কি ভাবে থাকবে।
দুনিয়ার আর কেউ না জানলেও আমি জানি ও যে আমাকে কি পরিমাণ ভালবাসে। ওর সাথে আমার অনেক কম দেখা হত কারন ও দূরে থাকত। ফোনেই কথা হত তবে বেশি না, দিনে একবার হলে ও হত।
আসলে সত্যি কারের ভালবাসা অনুভব করা যায়।আমার সাথে দেখা হলে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা হাত ধরে বসে থাকত। চাইলে আমার বিয়ে ও ভাঙতে পারত কিন্তু আমি এইটা জানি ও এই কাজ কোন দিন করবে না শুধু মাত্র যদি আমি একবার বলি তাতেই ও এই কাজ করবে।
এবং যথা সময়ে আমার বিয়ে হয়ে গেলো একটি ছেলের সাথে। বাসর রাতে আমার স্বামীর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না মনে হচ্ছিল আমার স্বামী না ও আছে সেখানে। শুধু বার বার চিন্তা হচ্ছিল ও না উল্টা পাল্টা কিছু একটা করে বসে। ও এখন কি করছে। মানুষের বাসর রাত অনেক আনন্দের থাকে কিন্তু আমার ছিল জাহান্নাম এর মত।
বিয়ের এক মাসের মধ্যে প্রেগন্যান্ট হলাম। আর নিরবে শুধু কান্না করতাম। ভাবতাম ও কেমন আছে কি করছে। আমি আমার নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম বিয়ের আগেই। তখন ফেসবুক চালাতাম না।
ও হয়ত ভাবছে আমি লোভী টাকার জন্য অন্য একটা ছেলে কে বিয়ে করে ফেলেছি। আসল সত্যি হল আমি যা করেছি পারিবারিক চাপে। বাবা মার মুখের দিকে তাকিয়ে করেছি।
আমার স্বামীও দূরে চলে গেলো চাকরীর জন্য।সে কল দিত আমার কথা বলতে ভাল লাগত না বা কি বলতাম নিজের মনে থাকত না সে কিছু জিজ্ঞেস করত সেটার জবাব দিতাম।
এদিকে আমার বিএফ এর নাম্বার আমার মুখস্ত আছে আমার হাতে মোবাইল আমি ওকে কল দিতে পারছি না এর থেকে বড় কষ্ট আবার কি হতে পারে।অনেক বার চিন্তা করেছি আত্মহত্যা করে ফেলি শুধু বাচ্চা টার জন্য পারছি না। এই টুক বলতে পারি আমি লোভী ছিলাম না এখন ও নই যা করছি আমার ফ্যামিলির জন্য করছি।
পর্ব ২(শেষ)
আমার বিয়ের ঠিক হওয়ার আগে এবং পরে এমন কোন প্রকার চেষ্টা নেই যে আমার বয়ফ্রেন্ড আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য করনি। ও আমার এক ধরণের রিলেটিভ হত (গ্রাম সম্পর্কের)তাই টুকটাক খবর পেতাম।
কিন্তু আমি যে নিষ্ঠুর পাষাণ আমি পাথরের মত শক্ত ছিলাম ওর সাথে আর যোগাযোগ করব না। আজ পর্যন্ত করিনি। এখন বলি আমার শশুর বাড়ির কথা আলাদা করে বলার কিছু নেই অন্য ৮-১০ টা শশুর বাড়ির মত আমার টা ভাল খারাপ মিলিয়ে।
.
বিয়ের পরে আমার ভিতরে এক ধরণের অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল। নিজে কে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নিলাম। আমার পরিবার ছাড়া কোন ধরণের কোন আত্মীয় স্বজন এমন কি আমার কলেজের সব বান্ধবি কারোর সাথেই যোগাযোগ করলাম না।মাথায় শুধু একটা জিনিষ ঘুরত আমি একটা ধোঁকাবাজ।
অনেক বড় ধরণের ধোঁকাবাজ খারাপ একটা মেয়ে। এক সাথে দুটি মানুষকে ঠকিয়েছি আমার ওকে আর আমার স্বামীকে। কারন আমার মনে একজন আর আমি বাস করি আরেক জনের সাথে।
.
এই কথা আমি কাউকে না পারছি শেয়ার করতে না পারছি সহ্য করতে এই ভাবে আজকে ৩.৫ বছর পার করলাম। শুধু নীরবে চোখের পানি ফেলে। আমি যদি একবার সাহস করে বলতাম বিয়ের সময় আমাকে তুমি নিয়ে যাও।ও যে ভাবেই হোক নিয়ে যেত। সেটা করতে পারি নি কারন আমি নিষ্ঠুর একটা মেয়ে। নিজের ভালবাসার বিনিময়ে পরিবারের সম্মান বাচিয়েছি।
.
স্বামীদের একটা জন্ম গত অধিকার থাকে সেটা হল স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলা। বিয়ের কয়েক বছর গেলেই সেটা শুরু হয়ে যায়।যেমন আমার বাবা তুলছে মায়ের গায়ে,আমার স্বামী তুলে আমার গায়ে, আমার মেয়ের গায়েও তুলবে অন্য কেউ।
তবে সব ছেলেরা এমন না।আমার ভিতর টা অনেকটা রোবট টাইপ হয়ে গেছে।কিছুতেই কিছু যায় আসে না শুধু মাত্র আমার মেয়ের ব্যাপারটা ছাড়া।তাই বলে যে প্রতিদিন মারে তা না মাসে হয়ত এক বার বা দুই মাসে একবার এই।।আবার মারার পরে আমাকে সরিও বলে। বলতে ভুলে গেছি,বাচ্চা হওয়ার পরে আমার স্বামী আমাকে ঢাকা নিয়ে আসছে।
.
এই তেমনি এক দিন আমার স্বামী সামান্য কারনে আমাকে ইচ্ছা মত মারল।আমি কিছু বললাম না চুপ করে মার খেলাম কোন প্রতিবাদ করলাম না কান্নাও করলাম না যেন বিষয়টা স্বাভাবিক ছিল যে ও আজকে আমাকে মারবে।ওকে ভাত বেরে খাওয়ালাম মেয়েকে ঘুম পড়লাম। রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করলাম ওয়ো কি আমার গায়ে হাত তুলত? সেদিন আমার আচরণ দেখে আমার স্বামী ভয় পেয়ে গিয়েছিল।যদিও মার খাওয়ার পরে আমার তেমন খারাপ লাগেনি।মারার সময় আমি মনে মনে বলি, মারুক মেরে মেরে শেষ করে দিক। এই জীবনের প্রতি ঘৃনা ধরে গেছে।
আমার পরিবারের কেউ কল দিলেও খুব বিরক্ত লাগত ঠিক মত কথা বলতাম না বাসার কারোর সাথে। এখন মনে হয় আমাকে এই ভাবে বিয়ে দেওয়ার জন্য কিছুটা অনুতপ্ত। লাভ কি! এখন আর আমার জীবনটা তো শেষ।।সেই সাথে বিনা দোষে আরেকটা ছেলের জিবন নষ্ট করছি।
.
আর আমার এই গরুটা এমন একটা গরু নতুন কাউকে খুজে নিবে সেটা না সেই গরু এখন ও আমার জন্য পরে আছে।এই বার ঈদে বাড়ি যাওয়ার পরে এক বান্ধবির সাথে দেখা হল এক সাথে পড়তাম আমরা।
কথায় কথায় জানতে পড়লাম সেই গরুটা নাকি এখন ও কলেজের পিছে মাঠে একা গিয়ে চুপ চাপ বসে থাকে যেই জায়গাটায় আগে বসে আমরা গল্প করতাম। কথাটা শুনে বুকের ভীতর হুহু করে কেদে উঠল। মানুষ এত বলদ হয় নাকি। আমি এখন মা হয়ে গেছি এখন কেন পরে আছিস আমার জন্য খুজে নে না নতুন কাউকে। আমি তো ধোঁকা বাজ আমার জন্য কেন তুই বসে আছিস। আমাকে ঘৃনা করতে শিখ.....
.
আমার এখন এমন একটা অবস্থা কিছুতেই কিছু যায় আসে না। নিজের জীবনের প্রতি কোন মায়া নেই।আর আমার শশুর বাড়ি অনেক রক্ষণ শীল স্বামীর সাথে শেয়ার করা সম্ভব না।।
এই যুগেও আমার স্বামী ফেসবুক চালায় না। ও অনেক ভাল মানুষ কিন্তু হলে কি হবে আমি তো ভাল না। আল্লাহর কাছে নামাজ পরে অনেক কান্নাকাটি করি ওকে মন থেকে এক বারে মুছে দেওয়ার জন্য কিন্তু কিছুই হয় না আর বেশি করে মনে পড়ে।
.
সব চেয়ে আসল কথা যেটা বলব সেটা হল আমার বিয়ে দুই বছর পরে গরুটা কি ভাবে জানি আমার নাম্বার যোগাড় করেছে।। দুপুর বেলা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। রিসিভ করে সালাম দেই। ঐ পাশ থেকে শুধু কান্না ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাই না। বুঝতে বাকি থাকে না এইটা সেই গরুটা। ওর সাথে কথা বলার জন্য মন থেকে কথা গলা পর্যন্ত এসে থেমে যায়।
কি করব আমি? আমার মাথার উপরে বাবা-মার কসম আমি নিষ্ঠুর পাষাণ।
আমি জিজ্ঞেস করি কে? ও ওর নাম বলার পরে কঠিন করে বলে দেই এই নামে কাউকে চিনি না।জানি না এই কথা শুনে কতটা কষ্ট ও পেয়েছে।আর কোন দিন যাতে কল না আসে এই নাম্বারে। তার পরেও কল আসে এসএমএস আসে। এখন কিছুটা ভয় ধরে মনে,যদি স্বামীর হাতে যায় ফোন, আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। পরকীয়ার অপবাদ নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়তে হবে। তখন সেই আবার পরিবারের সম্মান হানি হবে। পরে,
একটা এসএমএস করি ওকে আর একটা এসএমএস বা কল দিলে আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়ে দিবে। এর পরে ওর মোবাইল থেকে শুধু মাত্র একটা এসএমএস আসে সুখে থাকো।। হ্যাঁ আমি অনেক সুখে আছি। এখানে শেষ আর কোন দিন কল বা এসএমএস দেয়নি।।
.
ওর সাথে আমি কথা বলি না দুইটা কারণ। এক, আমার বাবা-মার কসম। দুই, আমার জীবন গেছে এখন আর এই জীবনে ওকে জড়াতে চাই না।
ও যে পরিমাণ পাগল যদি বলি আমাকে নিয়ে যাও এসে নিয়ে যাবে। চাইনা ওর সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে।
এমনি যা করেছি সেটার জন্য নিজের মরে যেতে ইচ্ছা করে। আর ঐ দিন যদি আমি কথা বলতাম সেটা ঐখানেই থামতো না। পরে অনেক ভয়ংকর রুপ নিতো।
সেটা আমাদের দুই জনের জন্য খারাপ হত। সেই থেকে আজকে দেড় বছর পর্যন্ত ও আমাকে সপ্তাহে এক দিন সোমবার ঠিক ৩ টা বাজে ছোট করে একটা মিস কল দেয়। আর কোনো কল না কোনো এসএমএস ও না। কারণ ও সব পারলেও আমার সংসার ভাঙতে পারবে না। ওর ভালবাসার কাছে নিজেকে খুব তুচ্ছ ও অসহায় মনে হয়।।
.
জানি আমার মত এত খারাপ মেয়ে এই আল্লাহর দুনিয়ায় আছে নাকি?
আমার খুব ইচ্ছা ওর পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাই। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে এখন ঠিক আগের মতই ভালবাসি তোকে। কিন্তু কি ভাবে বলব আমি যে খারাপ, একটা পাষাণ- নিষ্ঠুর মেয়ে। আজ কত বছর তোমার মুখটা দেখি না কণ্ঠ টা শুনি না। তোমার যেমন কষ্ট হয় আমার ও হয়। সারাক্ষণ মনে হয় আমি একটা ধোঁকা বাজ। বেচে আছি বাচ্চার জন্য। আর মনটা অনেক আগেই মরে গেছে। অথচ হাসি মুখে সবার সামনে বেচে আছি কেউ দেখলে বলতে পারবে না আমার মনে কি আছে।
.
যদি পারিস ক্ষমা করে দিস আমায়। আমার কোন অধিকার ছিল না তোর জীবনটা নিয়ে এমন করার। বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করে করিনি। অপরাধী গানটা আমার জন্য একদম ঠিক একটা গান। এত খারাপ কেন আমি?

Related Posts

: