নাস্তিকতাও ধর্ম > প্রমান ও যুক্তি

Post a Comment

🎥বিষয়ঃ নাস্তিকতাও ধর্ম > দলিল ও যুক্তি
🔏লিখেছেনঃ এম ডি আলী
🔰ভূমিকাঃ নিজেদের নৈতিকতা গোপন করে অন্য মতবাদ বিষয়ে বেশি ওস্তাদী! দেখানোর অন্যতম পঁয়তারা করে খগেন সমাজ । তাদের নৈতিকতা ভেজ নিয়ে কথা বলতে গেলেই তারা আপনাকে সেটির উত্তর দিতেই পারবে না এবং তাদের বেশির ভাগই লজ্জিত তাদের এই দুর্বল অবস্থা দেখে । ধরুন একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে সম্মান করবে । প্রশ্ন হল কেন করবে ? এই "কেন"র উত্তর তারা আজ পর্যন্ত দিতে পারে নেই আর পারবেও না । যদি নাস্তিক ধর্ম যুক্তির উপর ভিত্তি করেই চলে তাহলে এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর কেন তারা প্রদান করতে পারেন না।
আসলে ধর্ম মানে কি? ধর্ম শব্দটি আসে সংস্কৃত √ধৃ হতে। এই √ধৃ -এর অর্থ 'ধারণ'। 'একজন ব্যক্তি তার জীবনে তার যত প্রকার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে সব মিলিয়ে হয় তার ধর্ম।' তার বিশ্বাস, তার পরম্পরাগত শিক্ষা, তারা আচার ব্যবহার ইত্যাদি এই সবই তার ধর্ম। যেভাবে আগুনের ধর্ম দহন করা, পানির ধর্ম শীতলতা, পশুর ধর্ম পশুত্ব, ক্ষুধার ধর্ম খাওরা, পাখির ধর্ম আকাশে উড়া, চোখের ধর্ম দেখা ইত্যাদি ।
আমরা সবাই জানি ধর্ম শব্দের শাব্দিক অর্থ হল ধারন করা । আপনি যা ধারন করবেন সেটাই হবে আপনার ধর্ম । এখন এই পয়েন্ট সামনে রেখে খুবই সহজেই প্রমান হয় যে "নাস্তিকতা" নাস্তিকরা বিশ্বাস করে বা ধারন করে এই সূত্রে নাস্তিকতাও একটি ধর্ম এতে কোন সন্দেহ নেই । যদি কেউ বলে যে নাস্তিকতা কোন ধর্ম না । এরমানে দাড়ায় নাস্তিকতাকে সে ধারন করছে না , যেহেতু সে নাস্তিকতাকে ধারন করছে না তাহলে কিভাবে তারা নাস্তিক হয় ? আমার বুঝে আসে না ।
নাস্তিক অনুসারীরা স্বীকার করতে চায় না যে "নাস্তিকতাও ধর্ম" কারন একে ধর্ম বলে স্বীকার করলে তাদের এই লুলা মতবাদের যে বেহাল দশা সেটি বিবেকবান মানুষ সহজেই বুঝে যাবে এবং এই নাস্তিক ধর্মে যে যুক্তি আর বিজ্ঞানের নাম করে মানুষকে ভ্যাজাল বয়ান শুনিয়ে আসছে কতক বছর ধরে সেটিও চিন্তাশীল মানুষ স্পষ্ট করেই বুঝে যাবে তাই তারা একে ধর্ম বলে স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু তারাও বিশ্বাস করে স্রষ্টা নেই, তারাও বিশ্বাস করে বিবর্তনবাদ সত্য, তারাও বিশ্বাস করে আমাদের সকলের উচিৎ নাস্তিক হয়ে যাওয়া , তারাও বিশ্বাস করে একটি মানুষ স্বাধীনভাবে চলবে কেউই তাকে বাধা দিবে না, তারাও বিশ্বাস করে মৃত্যুই শেষ এরপরে কিছুই নেই, তারা বিশ্বাস করে অন্যান্য সব মতবাদ মিথ্যা শুধুই তাদের এই নাস্তিকতাই মুক্তির পথ, মানতার পথ ইত্যাদি । এত কিছুর উপর বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা , ধারন করার পরেও কিভাবে নাস্তিকতা ধর্ম হয় না সেটাই তো এক বিরাট প্রশ্ন ! পাঠকদের জন্য এই প্রশ্ন রেখে দিলাম ।
সুতরাং যৌক্তিক দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে প্রমান হয় > ধর্ম মানে ধারন করা - নাস্তিকতা নাস্তিকরা ধারন করে - সুতরাং নাস্তিকতাও ধর্ম । যদি এর বিপরীত হয় যেমন ধর্ম মানে ধারন করা , নাস্তিকতা কোন ধর্ম না তাহলে নাস্তিকরা যেহেতু তাদের নাস্তিকতাকেই ধারন করছে না, অবিশ্বাস করছে সুতরাং নাস্তিকদের কাছেই নাস্তিকতা মূল্যহীন । অথবা ধর্ম মানে ধারন করা > নাস্তিকরা নাস্তিকতাকে ধারন করে না > তাহলে তারা নাস্তিক হয় কিভাবে ? নাস্তিকতা ধারন না করে কেউ নাস্তিক হতেই পারে না এটি অসম্ভব ।
➡️শাব্দিক সুত্রের আলোকেঃ

ডঃ সোলায়মান কবীর এবং মনিরুল মোমেন তাদের "বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি" কিতাবের ১২৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন √ধৃ+ম = ধর্ম । আবার "বাংলা ভাষার ব্যাকরণ" কিতাবের ৮০ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ধৃ মানে ধারন করা । সুতরাং ধর্ম মানে ধারন করা ।
"সংসদ বাংলা অভিধান" থেকে জানা যায় = নাস্তিক মানে হল ঈশ্বরের অস্তিত্ব যে বিশ্বাস করে না , নিরীশ্বরবাদী ।
"বাংলা একাডেমী আধুনিক বাংলা অভিধান" পৃষ্ঠা ৭৩০ , থেকে জানা যায় = নাস্তিক মানে হল ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না এমন, নিরীশ্বরবাদী ।
"OXFORD ADVANCED LEARNERS DICTIONARY BENGALI TO ENGLISH" থেকে জানা যায় = ধর্ম শব্দের ইংলিশ শব্দ যথাক্রমে Faith , Duty , Morality , Law , Character । এই ইংলিশ শব্দের অর্থ করলে হয় faith অর্থ আস্থা । Duty অর্থ দায়িত্ব । Morality অর্থ নৈতিকতা । law অর্থ নিয়ম কানুন । Character অর্থ চরিত্র ।
Bangla Academy English-Bangla Dictionary , page 605 = Religion শব্দের অনেক অর্থ আছে এর মধ্যে ধর্মবিশ্বাস এবং বিবেকের বিষয় অর্থ অন্যতম । আবার Religious আরেক অর্থও হল বিবেকী ।
Bangla Academy English-Bangla Dictionary , page 604 = Reliable শব্দের অর্থ নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য ।
Bangla Academy English-Bangla Dictionary , page 69 = Belief শব্দের অর্থ বিশ্বাস , আস্থা । আবার Believe শব্দের অর্থও বিশ্বাস করা , আস্থা রাখা ।
"OXFORD ADVANCED LEARNERS DICTIONARY BENGALI TO ENGLISH" পৃষ্ঠা ৪১৭ থেকে জানা যায় = ধারন এর ইংলিশ শব্দ হচ্ছে Supporting । এর মানে হল কোন কিছু সমর্থন করা ।
উপরে বর্ণিত সকল সুত্র অনুযায়ী যৌক্তিক সিদ্ধান্ত আসা যায় যে যেহেতু নাস্তিকতা নাস্তিকরা ধারন করে , বিশ্বাস করে , আস্থা রাখে , ভরসা করে , নাস্তিকতাকে সকলের কাছে পৌছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তারা পালন করে, নাস্তিকতায় কিছু নৈতিকতাও রয়েছে , আছে চরিত্র , আছে নিয়ম কানুন , নাস্তিকতাকে নাস্তিকরা বিবেকময় অথবা বিবেকবান মনে করে, নাস্তিকতাকে নাস্তিকরা নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্যও মনে করে এবং এসকল কিছুইকেই তারা সমর্থন করে সুতরাং "নাস্তিকতাও ধর্ম" এবং এটি যৌক্তিক প্রমাণিত সত্য ।

♻️শুধু মাত্র যৌক্তিকভাবেই নয় এছাড়া "নাস্তিকতাও ধর্ম" এর পক্ষেই বহু প্রমান আছেঃ
* গবেষক ও চিন্তাবিদ গোলাম মোস্তফা তার "ইসলাম ও কমিউনিজম" বইয়ের ৮৭ ও ৮৮ নং পৃষ্ঠায় Pan-Islamism and Bolshevism বই পৃষ্ঠা ৪১৬ ও ৪১৭ এর রেফারেন্স উল্লেখ করে বর্ণনা করেছেনঃ লেনিনের মৃত্যুর পর নাস্তিকতাই সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধর্ম হয়েছিল । লেলিনের মৃত্যুর পর মে, ১৯২৯ সালে নাস্তিকতাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের "রাজ ধর্ম" অর্থাৎ "রাজকীয় ধর্ম" বলে ঘোষণা করা হয় এবং নাস্তিকদের নিজেদের মত প্রচার করার একচেটিয়া অধিকার দিয়ে একটি রাজকীয় ফরমান (বিধান) জারি করা হয় । অতএব সোভিয়েত সরকার দ্রুত শিক্ষা সচিবকে ধর্মহীনতা প্রচার করার একটি নতুন "ইনস্পেটকর" বিভাগ খোলার নির্দেশ দেন । এই বিভাগের কাজ ছিলঃ নতুন নতুন বিধান সর্বত্র চালু করা , গির্জার স্বাধীনতা খর্ব করা এবং কোন প্রকার ধর্ম বিষয়ক প্রচারণা যাতে কেউ চালাতে না পারে।
* গবেষক চিন্তাবিদ অভিজিৎ রায় তার "অবিশ্বাসের দর্শন" কিতাবের ৩০৭ নং পৃষ্ঠায় আরেক নাস্তিক ধর্ম প্রচারক প্রবীর ঘোষের একটি ফতোয়া উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেনঃ আগুনের ধর্ম যেমন দহন, ছুরির ধর্ম যেমন তিক্ষতা তেমনই মানুষের ধর্ম হওয়া উচিৎ মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন আর সে হিসেবে নামাজ না পড়েও বা শনি শীতলার পূজা না করেও আমরা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরাই প্রকৃত ধার্মিক কারন আমরা মনুষ্যত্বের চরম বিকাশ চাই । - এখানে স্পষ্ট পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করা হয়ছে যে নাস্তিকতা শুধু ধর্মই নয় বরং তারা নাস্তিক ধর্মের ধার্মিকও।
* নাস্তিক ধর্ম প্রচারক রিচার্ড ডকিন্স বলেন তার "RICHARD DAWKIS, THE GOD DELUSION; P. 14 (LONDON: BANTHAM PRESS 2006) বলেনঃ দার্শনিক বস্তবাদি অর্থে নাস্তিক হলো এমন ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে পার্থিব, ভৌত জগতের বাইরে কিছু নেই। কোনো স্রষ্টা নেই যিনি দৃশ্যমান এই মহাবিশ্বের পিছনে চুপিসারে কলকাটি নাড়ছেন। আত্মার কোন অস্তিত্ব নেই যা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে, নেই অলৌকিক বলে কোনো কিছু। কেবলই রয়েছে জাগতিক ঘটনাবলী, যা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারি নি। - এই বিখ্যাত রিচার্ড ডকিন্স হুজুরের ফতোয়াই পরিস্কার করে দিচ্ছে যে নাস্তিকরাও বিশ্বাস করে > আর যার উপরের বিশ্বাস করা হয় , আস্থা রাখা হয় , ভরসা করা হয় সেটাই ধর্ম কারন ধর্ম মানে ধারন করা । আর নাস্তিকতাও ধর্ম > সহজ একটি ব্যাপার ।
* Francis Collins যিনি U.S. National Institutes of Health এর ডিরেক্টর এবং এর পাশাপাশি তিনি একজন নামকরা বিজ্ঞানী যিনি Human Genom সম্পর্কে অনেক গবেষণা করেছেন তিনি বলেনঃ দেখুন এখানে কোন বৈপরীত্যই নেই ঈশ্বরে বিশ্বাসে এবং সমসাময়িক বিবর্তনবাদকে মেনে নেওয়ায়। অর্থাৎ স্রষ্টাকে স্বীকার করা যেমন বিশ্বাস ঠিক বিবর্তনবাদকেও স্বীকার করাও বিশ্বাস ।
প্রমানঃ Francis Collins - [ https://www.nih.gov/…/biographical-sketch-francis-s-collins… ] সমসাময়িক American Association for the Advancement of Science নামক প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত পেপারেও এই কথাটি এসেছে।
প্রমানঃ American Association for the Advancement of Science AAAS paper pdf - [https://www.aaas.org/sites/default/files/QA_Evolution_0.pdf ]
* অক্সফোর্ড প্রেস থেকে Michale Ruse যিনি নাস্তিক ধর্ম প্রচারক তার একটি বই প্রকাশ করেন যার নামই ছিল " Darwinism as Religion " ।
 প্রমানঃ Darwinism as Religion by Michale Ruse - [ https://global.oup.com/…/darwinism-as-religion-978019024102…& ]
আপনি হয়ত বলতে পারেন যে, এরসাথে নাস্তিকতার সম্পর্ক কি? বিবর্তনবাদ ধর্ম এর মত থাকুক বা যাই থাকুক এতে নাস্তিকতার সম্পর্ক কি? এক্ষেত্রে আমি বলব জ্বি অবশ্যই সম্পর্ক আছে। আর সম্পর্ক টা হল নাস্তিকরা বিবর্তনবাদকে যেভাবে প্রচার করেন যে এটি আসলে কোন ফ্যাক্ট হয়ে গেছে। অনেকটা ধর্মের মতই করে থাকেন। আর আমি কখনো দেখিনি কেউ নাস্তিক অথচ বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে না । খুবই দুর্লভ ।
* বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Michale Ruse বলেনঃ বিবর্তনবাদকে এর চর্চাকারীরা শুধু বিজ্ঞান নয় বরং এর চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে প্রচার করছে। বিবর্তনবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে একটি ভাবাদর্শ, একটি সেকুলার ধর্ম হিসেবে... আমি একজন অত্যন্ত গোড়া বিবর্তনবাদী কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাকে স্বীকার করতেই হবে বিবর্তনবাদ একটি ধর্ম। একথা বিবর্তনবাদের শুরুতে যেমন প্রযোজ্য ছিল এখনো সেরকমই আছে।
প্রমানঃ https://www.google.com/…/s/m.huffpost.c…/us/entry/904828/amp
* Robert H. Nelson এক জার্নালে সেকুলারিজমকে " ধর্মনিরপেক্ষ ধর্ম নিরপেক্ষ নয় " বলে আখ্যায়িত করেছেন। নিচে সম্পুর্ন উদ্ধৃতিটি দেয়া হলঃ সেকুলারিজম ধর্মের বিপরীত হওয়ার চেয়ে এটি নিজেকে একটি উহ্য ধর্ম হিসেবে প্রকাশ করে যা পূর্বের প্রভাবশালী ধর্মগুলোর ঐতিহ্য বহন করে বিভিন্ন সমাজভেদে। যেমন এক সময় খ্রিষ্টান ধর্মের ঐতিহ্য গুলো প্রভাব বিস্তার করতো। যেমন সেকুলার প্রোটেস্টেনিজম, ক্যাথলিজম, অর্থডক্সি ইত্যাদি। সেকুলার ধর্ম এখন আর ততটা সেকুলার নাই। যতটা সমাজ বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন।
প্রমানঃ Robert H. Nelson, "The Secularization Myth Revisited: Secularism as Christianity in Disguise,"Journal of Markets & Morality 18, no. 2 (Fall 2015): 279-308. Pdf link - [http://www.marketsandmorality.com/…/m…/article/view/1095/957 ]
* এককালে সেরা Evolutionary Biologist, Stephen Jay Gould একাধারে হার্ভার্ড এবং নিউ ইয়োর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন তিনি এই ডারুইনিজম এবং নাস্তিকতার ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বলেনঃ হয় আমার অর্ধেক সহকর্মীরা হচ্ছে বেকুব, মূর্খ আর নাইলে ডারউইনিজমের বিজ্ঞান, যা পুরোপুরিভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নাস্তিকতার সাথে এর সামঞ্জস্যতা পুরোটাই ।
প্রমানঃ Stephen Jay Gould, 'Impeaching a Self-appointed Judge', Scientific American 267, No.1, 1992, pp.118-121
* বিজ্ঞানী Ken Wilber যিনি উনার Integral Theory র জন্য বেশ জনপ্রিয় তিনি বলেনঃ তাদের জন্য যারা পদার্থবিজ্ঞান কে ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়ে মাথা নত করছেন। আমি জিজ্ঞাস করতে চাই তাদের, এটির অর্থ কি ? আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা, তাত্ত্বিকরা যেসকল ধারণা (Theory) প্রবর্তন করেছেন যার পুজো আপনি করছেন, অথচ সেগুলোর প্রত্যেকটিই রহস্য।
প্রমানঃ Ken Wilber, Quantum Questions (Boston: Shambhala, 2001), pp.ix-xii (his emphasis)
* পশ্চিমা জনপ্রিয় একটি সাইন্টিফিক ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল " Is Secular Humanism a Religion? " এছাড়া ২০০৬ সালে BBC কর্তৃক একটি অনুষ্টানের আয়োজন করা হয় যার শিরোনাম ছিল " The Trouble with Atheism " যেখানে তারা বলেন যে নাস্তিকরাও এক প্রকার ধার্মিক।
প্রমানঃ
Is Secular Humanism a Religion? - [ https://quillette.com/…/…/11/is-secular-humanism-a-religion/ ]
The Trouble with Atheism - [ https://www.youtube.com/watch?v=g6MrktRKfJU ]
* নিউ সাইন্টিস্ট ম্যাগাজিনে Nonreligion and Secularity Research Network at the University of Kent in Canterbury, UK এর পরিচালক Lois Lee বলেনঃ যখন মানুষ বলে নাস্তিকতা একটি ধর্ম তখন তারা তাদের এই ভাবটি অনেকটা মানহানিকর পন্থায় প্রকাশ করে। কিন্তু এখানে একটি বিষয় পরিস্কার আর তা হল নাস্তিকরা ভন্ড, দ্বিমুখী।
প্রমানঃ Faith of the faithless: Is atheism just another religion? - [ https://www.google.com/…/mg23431212-800-faith-of-the-f…/amp/ ]
* নাস্তিকতাও ধর্ম এর আরেকটি বড় প্রমান হল বৌদ্ধ ধর্ম । বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টায় অস্বীকার করা হয় এবং মানা হয় সব কিছু যুক্তি দিয়েই সমাধান করতে হবে ।
প্রমানঃ http://bn.banglapedia.org/index.php
* উইকিপিডিয়ায় "সোভিয়েত ইউনিয়ন" বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । এবং সেখানে রাষ্ট্রীয় ধর্ম নাস্তিক্যবাদ উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রমানঃ https://bn.wikipedia.org/…/%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A…
* সন্ত্রাসী বিখ্যাত নাস্তিক ভ্লাদিমির লেনিন এর ধর্ম ছিল নাস্তিকতা ।
প্রমানঃ https://bn.wikipedia.org/…/%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A…
* "Religion in Russia" তে "Atheists" কে ধর্মের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ হিন্দু , খৃষ্টান , ইত্যাদি ধর্মের মত নাস্তিকতাও একটি ধর্ম ।
* "ENCYCLOPÆDIA BRITANNICA" তেও অন্য ধর্মের মধ্যে নাস্তিকতাকেও অ্যাড করা হয়েছে । দেখুন "Religious affiliation 2005" চার্টে অন্য ধর্মের সংখ্যা বর্ণনা করতে গিয়ে "নাস্তিক ধর্মের" সংখ্যা সবুজ রং দিয়ে দেখানো হয়েছে । এখানে অন্য ধর্মের মধ্যে নাস্তিকতাকেও অ্যাড করে ধর্ম হিসেবেই দেখানো হয়েছে ।
🌀(প্রশ্ন উত্তর পর্ব)💤
প্রশ্ন ১ = নাস্তিকতা কোন ধর্ম নয় । যদি নাস্তিকতা ধর্ম হয় তাহলে অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল বলতে হয়, টাককে বলতে হয় চুলের রঙ , ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলতে হয়, বাগান না করাও একটি শখ, ক্রিকেট না খেলাও একটি খেলা , মদ সেবন না করাও একটি নেশা বলে হয় আপনি কি মানবেন ?
উত্তরঃ উপরে এত এত যৌক্তিক আর দলিল প্রমান পড়ার সত্ত্বেও এই অবুঝ শিশুর মত কেউ আমাকে প্রশ্ন করবে আমি ভাবিনি । যাই হক । আমি শিশুদের প্রশ্ন খুব ভালবাসি । নিচের পয়েন্ট গুলা খেয়াল করুণ তাহলে প্রশ্নের ধাপ্পাবাজির জাগাটি আপনারা নিজেই ধরতে পারবেন ।
মুক্তমনা দাবিঃ নাস্তিকতা ধর্ম হলে তাহলে অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল বলতে হয় , টাককে বলতে হয় চুলের রঙ এবং ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলতে হয় ।
🆗মুক্তমনে খণ্ডনঃ কেউ যদি অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল না বলে বা টাককে চুলের রঙ কেউ না বলে অথবা ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি না বলে তারমানে এই না যে নাস্তিকতাকে ধর্ম বলা যাবে না । নাস্তিকতাকে ধর্ম বলতে হলে আমাকে কেন বলতে হবে যে "অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল" বা "টাককে চুলের রঙ" বা "ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলতে হয়" ? এর পিছনে যৌক্তিক কারন সমূহ কি ? নাস্তিকতাকে ধর্ম বলতে হলে একজন মানুষকে অফ বাটনকে টিভি চ্যানেল, টাককে চুলের রঙ এবং ষ্ট্যাম্প না জমানোকে ছবি বলতে হবেই এই নীতি সেট করার আপনি কে ? আর যদি কোন মানুষ এসব বলেও তাহলেই বা ভুল কথায় ? আর এই ভুল ঠিক করার আপনি কে এবং কেন ? কিভাবে এটি ভুল? নাস্তিক ধর্ম দিয়ে সমাধান দিন ।
⭕️মুক্তমনা দাবিঃ নাস্তিকতা ধর্ম হলে বাগান না করাও একটি শখ, ক্রিকেট না খেলাও একটি খেলা , মদ সেবন না করাও একটি নেশা বলে হয় ।
🆗মুক্তমনে খণ্ডনঃ আগের পয়েন্টে খুশি না হলেও এইবার খগেনরা আমার প্রতি অনেক খুশি হবেন কারন আমি এই পয়েন্ট মেনে নিয়েছি । আশা করি তারাও এইবার স্বীকার করবে যে "নাস্তিকতাও ধর্ম" । নাস্তিক ধর্মে পাপ পুণ্য বলে কিছুই নেই সেহেতু আমি যদি আমার জন্য বাগান না করাও এটি শখ হিসেবে, ক্রিকেট না খেলাও আমার জন্য একটি চমৎকার ইউনিক খেলা হিসেবে এবং মদ সেবন না করাও একটি নেশা (ভাল নেশা যেমন বই পড়ার নেশা) হিসেবে আমি বেঁছে নেই এতে তো আমার কোন পাপ হবে না নাস্তিক ধর্ম অনুযায়ী । এরপরে আর কোন কথাই থাকে না ।
প্রশ্ন ২ = নাস্তিকতা ধর্ম বলে বোবা লোকেও ভাষাবিদ ডাকতে হবে , দাতবিহীন লোককে দাত আছে বলতে হয়, উপোস থাকাকেও এক ধরনের খাদ্যগ্রহন বলতে হয় , চাকরি না করাটাও একটি পেশা বলতে হয়, বই না পড়াকেও পাঠাভ্যাস বলতে হয়, পোশাক খুলে ফেলাটাও এক ধরনের পোশাক পরিধান বলতে হয় , চশমা না পরাটাও এক ধরনের সানগ্লাস ফ্যাশন বলতে হয়, সারাজীবন বিয়ে না করাটাও এক প্রকার বিয়ে বলতে হবে , নির্লোভ থাকার চেষ্টাকেও এক ধরনের লোভ বলতে হবে, রোগবিহীন মানুষকেও এক ধরনের রোগ বলতে হবে । আপনি কি এসব বলবেন ?
উত্তরঃ এখানে একটি বুঝার বিষয় হল নাস্তিকতাকে ধর্ম বলতে হলে আমাকে আপনাদের বর্ণিত সব শর্ত মানতে হবে এমন কথা কি নাস্তিক ধর্ম বলে ? উত্তর হচ্চে না । যদি না বলে তাহলে আমি উপরের বর্ণিত শর্ত মানবই না কেন আর যদি মেনেও নেই তাতেই বা আমার ক্ষতি কি নাস্তিক ধর্ম অনুযায়ী ? উত্তর দিতে পারবেন আপনারা ! "বোবা লোককে ভাষাবিদ থেকে শুরু করে রোগবিহীন লোকেও রোগী বলা পর্যন্ত" এই শর্ত সমূহ আমি যদি হ্যাঁ বলি তাহলে কিভাবে আপনারা মেনে নিবেন যে নাস্তিকতাও ধর্ম ? এই শর্তর সাথে নাস্তিকতা ধর্ম নাকি না এর সম্পর্ক কি ? নাস্তিকতাকে ধর্ম দাবি করতে হলে আমাকে আপনাদের দেয়া শর্ত মানতে হবে এই ওহী আবার নাস্তিক ধর্মে কে নাজিল করলো?
উদাহরণ স্বরূপ ধরুন আসিফ মহিউদ্দিন নামের এক সস্তা নাস্তিক যিনি ক্লাস ওয়ানেই তিনবার ফেইল করেছিল, সে নাস্তিকতার সংজ্ঞা ফিট করলো। বর্ণনা করলো যেঃ নাস্তিকতা হচ্ছে যে স্রষ্টার প্রমানের অভাবে , স্রষ্টা বিষয়ে যত দাবিগুলা আছে তা বাতিল করে দেয়াকে বলে নাস্তিকতা বা নাস্তিক্যবাদ । এখন আর সাথে কে কার সাথে ঘুমাবে, বন্ধুত্ব করবে তার কোন সম্পর্ক নেই । অন্য মানুষ কে কি করলো সেটি নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করে না । যেমন ধরুন ফুটবল খেলার কিছু নিয়ম আছে এখন এই খেলা বলছে না যে কানিজ নামক আরেক সস্তা খগেন কার সাথে সমকামিতা করবে, রাত কাটাবে ইত্যাদি > এই বিষয়ে ফুটবল খেলার নিয়ম কানুনে তার বক্তব্য নাই । মানুষ যাই করবে সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার । এটা নিয়ে ফুটবল খেলা ডিল করে না । এই দুটি আসলে ভিন্ন ব্যাপার ।
উপরের এই সংজ্ঞা আসলে সংজ্ঞা অনুযায়ীই বাতিল । এটা প্রমান করার আগে আমার বিষয়টা ক্লিয়ার করে নেই । নাস্তিকতা ধর্ম হলে যে আমাকে উপরের শর্ত মানতে হবে এই দাবিই আসিফের সংজ্ঞা অনুযায়ী বাতিল । কারন নাস্তিকতায় কে কি করলো নাকি করলো না সেটি নিয়ে ডিল করে না সুতরাং আমি যদি উপরের শর্ত মানি বা নাই মানি এর সাথে নাস্তিক ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই ।
🔛সস্তা নাস্তিক আসিফের সংজ্ঞা নিয়ে আমার কিছু মুক্তমনে প্রশ্ন আছেঃ
1️⃣ "নাস্তিকতা প্রমানের অভাবে স্রষ্টা বিষয়ে সকল দাবি বাতিল করে দেয়" এই দাবি কে প্রথম ঠিক করেছে ? সে কি মানুষ ছিল ?
2️⃣ "নাস্তিকতা কে কি করলো সেটি নিয়ে ডিল করে না কারন সেটি তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার" এই ফতোয়া যদি কোন মানুষ দিয়ে থাকে তাহলে সংজ্ঞা অনুযায়ী এই লাইন ভুল আর যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে নাস্তিকতার সংজ্ঞাই ভুল তাহলে সঠিক সংজ্ঞা কোনটি ? এবং কেন ? সেটি কে ঠিক করবে ? যদি কোন মানুষ ঠিক করে তাহলে তো সংজ্ঞা অনুযায়ী কোন মানুষ কে কি করলো সেটি নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করে না । তাহলে সমাধান কি ?
3️⃣ উপরের সংজ্ঞা সঠিক ধরে নিলে দুনিয়ার সব মতবাদ বিষয়ে নাস্তিকতার সংজ্ঞা স্বয়ং সমালোচনা করতে নিষেধ করছে । কারন কোন মতবাদে কে কি করেছে নাকি করেনি এটি অবশ্যই তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার এটি নিয়ে অবশ্যই নাস্তিক ধর্ম ডিল করে না । সমাধান কি ? আপনি কেন এই সমাধান দিবেন ? আপনি তো মানুষ ? আর আপনি যাই বলবেন সেটাই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার এটি নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করবে না , এখন ? সংজ্ঞা অনুযায়ী সংজ্ঞা কিভাবে সঠিক প্রমাণিত হয় এবং কেন ?
4️⃣ ফুটবল খেলা তো অন্য মতবাদ নিয়ে বিন্দুমাত্র কোন কথা বলে না তাহলে অনলাইনের সস্তা খগেনা কেন অন্য মতবাদ নিয়ে সমালচনা করে ? এটি তো সংজ্ঞা অনুযায়ী বাতিল বাতিল এবং ভুলে ভরা ।
5️⃣"ফুটবল খেলা বিয়ে নিয়ে কথা বলে না তাই নাস্তিকতাও বিয়ে নিয়ে কিছু বলে না" এটি বলার আপনি কে ? এটি তো আপনার ব্যাক্তিগত মতামত আর ব্যাক্তিগত মতামত দিয়ে তো নাস্তিকতা ডিল করে না । এখন ?
6️⃣ উপরের সংজ্ঞা সঠিক ধরে নিলে একজন নাস্তিক যদি চায় তাহলে সম্মতিতে তার নিজ মায়ের সাথে > বোনের সাথে > মা নিজ মেয়ের সাথে > বাবা তার ছেলের সাথে > নাস্তিক ভাই তার ভাইয়ের সাথে > নাস্তিক বোন বোনের সাথে ইত্যাদি ইত্যাদিতে সমকামিতা , লেসবিয়ান এবং ফ্রি সঙ্গম করতে পারবে এই কথা আপনারা স্বীকার করেন না কেন ? নাকি উপরের সংজ্ঞা ভুল বলতে চান না আবার সংজ্ঞা সঠিক হলে এই কথাও আপনারা মানতে চান না ? আসলে সত্য কি ?
7️⃣ নাস্তিকরা নিজেদের গোঁজামিল লুকাতে আরেকটি ত্যানা প্যাঁচায় সেটি হল যদি কোন মতবাদ নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করে এবং একজন নাস্তিককে সেই দিকে দাওয়াত দেয় তাহলে নাস্তিক তখন সেটি সমালোচনা করতে পারবে > প্রশ্ন হচ্ছে আপনাদের এই ফতোয়া উপরের সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরাটাই বাতিল হয়েছে । যদি উপরের সংজ্ঞা সত্য হয় তাহলে এই ফতোয়া ভুল আর যদি এই কথা সত্য হয় তাহলে উপরের সংজ্ঞা বাতিল এখন সমাধান কি ? আর কোন মতবাদ নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলছে নাকি বলছে না বা অন্যকে দাওয়াত দিচ্ছে সেটি নিয়েই কেন নাস্তিক ধর্ম ডিল করবে যেখানে কোন মানুষ যাই বলুক সেটি নিয়ে নাস্তিকতা ডিল করে না । এখন কি সমাধান ?

Related Posts

: